একরাশ অনুশোচনা

জীবন যাপনের এই প্রবাহমান স্রোতে কখন যে ভালোবাসার আচমকা জোয়ার লাগে তা কে জানে? পৃথিবীর কিছু সম্পর্ক জন্ম থেকে হয় আর কিছু হয় জন্মের পর। দ্বিতীয় সম্পর্কেও গতিপ্রকৃতি বড় বেপরোয়া।সামাজিক ব্যাকরণে যে সব সম্পর্ক অনৈতিক সে রকম কিছু ঘটলে সমাজ সংসারে অমোঘ তর্জনী এসে পথ রোধ করে দাঁড়ায়। কিন্তু দু’টি মনের এই নিভৃত চাওয়া পাওয়ার মাঝে সে সামাজিক সম্পর্ক কি কখনো সীমারেখা টানতে পারে? অধরা ভাবতে থাকে , তার ভাবনাগুলি যখন কল্পনার ফানুস ওড়িয়ে জীবনের অন্তিমতায় পৌঁছে তখন সে বিগত দিন গুলোর হিসাব মিলাতে পারেনা। জীবনের হিসাবের খাতায় সে তো শুন্য পেতে চায়নি।সে চেয়েছিল সত্য, সুন্দর অনাবিল একটা জীবন। দুঃখ, কষ্ট তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা।বসন্তের এই আমেজ প্রকৃতিতে পড়ন্ত বিকেলে বাতায়ন পাশে শুয়ে শুয়ে ভাবছে অধরা।সে যখন কল্পনার পথ দিয়ে অতিক্্রম করছে তখনই স্নেহময়ী মায়ের ডাক, – এই অধরা এসো নাস্তা করে যাও।উত্তরে অধরা যখন কিছু বলছেনা তখন মা তার রুমে এলো ।অধরার দু’চোখ দিয়ে তখন টপটপ করে বরষা ধারা বইছে। মা বলল কিরে হয়েছেটা কি মেয়েটার । কিরে লক্ষী কাদঁছিস কেন ? অধরা তখন বাস্তবে ফিরে এল ।কিছু বলছ মা? কি তোর চোখে জল? কই না তো ।অধরা বলল, মা কলেজ থেকে আসার পর বড্ড মাথা ধরেছে ।মা বলল, ও তাই বুঝি। দাঁড়া কড়া করে এক কাপ চা করে দিই । খেযে চুপটি মেরে শুয়ে থাক। মা চলে যাওয়ার পর অধরা ভাবে,এইতো মাত্র এক বছর আগে অর্ণব হাত জোড় করে বলছিল ‘অধরা’ তোমার জন্য আমার হৃদয়ে ভালোবাসার সেই মহিরুটি আজ বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। তুমি কি দেখবে তোমার জন্য আমার কতো আয়োজন? ফুলের বাগান, দক্ষিণা বারান্দা তাবৎ গানের সিডি আর জানালার পাশে তোমার প্রিয় লাল গোরাপের টব । সবই তোমার জন্য। কিন্তু তোমার নীরবতায় আমার স্বপ্নীল পাখিরা মুখথুবড়ে পড়েছে।

বিশ্বাস করো অধরা আমি হয়তো বিশাল সাগরকে উপমিত করে বুঝাতে পারবোনা আমার ভালো লাগার গভীরতা। কিন্তু রঙ তুলির আচঁড়ে মোনালিসার মত অক্ষয় মুর্তি ও এঁকে পারবোনা বলতে –অধরা তুমি আমার উচ্চাসিত চাহনী ,তোমার মিষ্টি হাসিই আমার বুকের সিন্ধু সম ভালোবাসা।

-অর্ণব কি করতে পারি আমি তোমার জন্য ? কেন অধরা, তুমি কি পারনা বলতে , আমি তোমাকে ভালোবাসি অর্ণব,পারো না অধরা। অধরা কিচছু ভাবতে পারছেনা । বান্ধবীদের প্ররোচনায় অধরা নিজের মন প্রাণ সব কিছু যখন অর্ণবকে সপে দিল । তখন থেকে শুরু হলো তাদের দু’জনের পবিত্র ভালোবাসা।এভাবে মান- অভিমান,সুখ-দুঃখ,অতিক্রম করে চলে গেলো এক বছর।
ইদানীং অধরা দেখে অর্ণব অনেকটা বদলে গেছে । বদলে গেছ তার পূর্বের ভালোবাসার গভীরতা । কেমন জানি হয়ে গেছে অর্ণব । পূর্বের মতো ফোন করে না । ফোন করলেও তেমন একটা কথা বলে না । এরি মাঝে অধরা অর্ণবকে কলেজে নিমন্ত্রন করলো । অর্ণব আসলো এবং কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বলল, অধরা -তোমাকে আমার প্রয়োজন পুরিয়ে গেছে । তুমি এখন অন্য পথ ধর।পরক্ষণে অধরা বলল, তুমি কি সেই অর্ণব।কি করে এই কথা বলতে পারলে।তবে কেন সেই দিন হাত জোড় করে ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েছিলে? এভাবে আর কতটা অধরার জীবন নষ্ট করেছে । আসলে তোমাদের মতো ছেলেরা সব পারে ।অধরার চারিদিকে অন্ধকার ঘিরে ধরলো, কেন এমন হলো –বিধাতা? কেন। অর্ণব কি তাহলে আমাকে নিয়ে খেলল ? অধরা অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরে এল । বিছানায় হেলান দিয়ে কল্পনা করছে।বেদনায় ওই মুখ বার বার ভেসে ওঠছে।যার নাম অর্ণব। কষ্টের আল্পনা বিষাদের আরাধনায় মনটা ছেয়ে গেছে। রঙতুলির আচঁড়ে অধরা যে ছবি এঁকে ছিল মনের মিউজিয়ামে সে ভালোবাসা কি ভুল ছিল- অর্ণব। চেয়ে দেখ আজ এই বুকে কত শত নীল বেদনা।অধরা শুয়ে আছে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে সুদূর নীল আকাশে। এক ফালি কালো মেঘ ভেসে আসছে ।ওই মেঘ গুলো যেন তাকে ডাকছে হাতছানি দিয়ে। হঠাৎ একরাশ অনুশোচনা অধরার অন্তরে ঠোকর মেরে ওঠলো । কেন জেনে শুনে এমন ভুল করলো অধরা । কেন অর্ণবের ক্ষণ¯হায়ী ভালোবাসার দিকে হাত বাড়াতে গেলো…?

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত