সদ্য সদ্য বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে প্রবেশ করেছি। বাড়িতে ঢুকতেই শুরু হলো পরিচয় পর্ব। এ আসে বলে আমি তোমার হ্যানো। তো ও আসে বলে আমি তোমার ত্যানো। এই পরিচয় পর্ব নিতে নিতে ভিষণ ক্লান্ত হয়ে গেছি। সামনে যাকে দেখছি তার দিকে তাকিয়ে ইচ্ছা না থাকা সত্বে ও সম্মান সূচক একটা হাসি দিচ্ছি। হঠাৎ দেখি একজন ভদ্র মহিলা এসে সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে সম্মান সূচক একটা হাসি দিলাম। বাট এতে তার চেহারার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হলো না। দেখে মনে হচ্ছে উনি আমাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়েই যাচ্ছি। আর মনে মনে ভাবছি এবার তো পরিচয়টা দেন।স্টকের হাসি যে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
~ তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি মনে হচ্ছে? ভদ্রমহিলার কথায় রীতিমত চমকে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম-
~ বিয়ের আগে ছবিতে দেখেছেন হয়তো?
~ নাহ। ছবি আমি দেখিনি। তোমাকে অন্য কোথাও দেখেছি কিন্তু মনে করতে পারছি না।
~ আমি ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে একবার ভালো করে দেখে নিলাম। উনি আমাকে কোথায় দেখবেন নিশ্চয় কোন ভুল হচ্ছে। তবে ভদ্রমহিলাকে আমার ও ভিষন চেনাচেনা লাগছে।
~ তুমি মাগুরাতে পড়াশুনা করো না? আমার বাসা কিন্তু মাগুরা সরকারি কলেজের পাশেই।আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে কলেজ পাড়া কোথাও দেখেছি কিন্তু মনে করতে পারছি না। ভদ্রমহিলার কথায় রীতিমত মাথায় বাজ পড়লো। এবার বুজতে পেরেছি উনি কেন বার বার বলছেন আমাকে আগে কোথাও দেখেছেন। আমি আমতা আমতা করে বললাম –
~আন্টি! আমি ভীষণ ক্লান্ত। আপনার সাথে পড়ে কথা বলি।
কিন্তু উনি নাছর বান্দা। কিছুতেই আমাকে না চিনে ছাড়বেন না। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। হার্টবিট বেড়ে গেছে।আল্লাহ যেন কিছুতেই আমাকে চিনতে না পারে। মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলাম। এদিকে আমার শ্বাশুড়ি এত আম কেঁটে নিয়ে এসেছেন। এখন বসে বসে আম খেতে হবে। কি জ্বালায় যে পড়লাম। ভদ্র মহিলা বলে উঠলো-
~ নাও আম খাও।আমার গাছের কাঁচা মিঠা আম। এমন আম কোথাও পাবা না। জীবনে ও এমন আম খাওনি।একবার খাইলে বার বার খাইতে ইচ্ছা করবে।
~ আমি মনে মনে বললাম- এই আম কত চুরি করে খেলাম।চুরি করতে গিয়ে ধরা পযর্ন্ত খাইলাম।আর বলে কিনা এই আম জীবনে খাইনি। ওরে আম এবার ও খেতে পারতি না। নেহাত পরিক্ষা চলছিল তাই। তারপর আবার বিয়ের ঝামেলাই পড়লাম।
~ কি ব্যাপার তুমি চুপ করে আছো কেন? ‘আম’ খাও।
~ আমি সবে এক টুকরো আম গালে দিয়েছি। আহ সেই পুরানো স্বাদ। বন্ধুদের সাথে গিয়ে চুরি করে খেতাম। একা পারতে পারতাম না বলে আমার বয়ফ্রেন্ড, টয়ফ্রেন্ড,জাস্টফ্রেন্ড সমস্ত ফ্রেন্ডদের নিয়ে গিয়ে আম চুরি করে খেতাম। আর এই ভদ্রমহিলা কি লোক যে ছিল, আল্লাহ বসে বসে পাহারা দিত। কত গালি দিত, ছেলে বন্ধুদের সাথে মিলে আম চুরি করে কি সাহস মেয়ের। “কোথায় যে পায় এত ছেলে বন্ধু আল্লায় জানে”। তবে উনার রেগে যাওয়া দেখতে বেশ ভালোই লাগতো। আমিও ইচ্ছা করে করে এক একদিন এক একজনের সাথে যেতাম। চুরি করে আম খাওয়ার মজা উনি কিভাবে বুঝবে।
~ কি আম মজা না।
~ আমি ঘাবরে গিয়ে মাথা নাড়ালাম। মনে মনে বললাম টেনশনে কি আর আম খেতে পারছি। চিনে ফেললে কি কান্ডটাই না হবে। মান সম্মান সব যাবে। আচ্ছা উনি যদি আমাকে,” আম চোর বলে”। নাহ!! এ সব কি ভাবছি। এমন হতেই পারে না। ভদ্র মহিলা আর একটা আম নিজ হাতে খাইয়ে দিল। গালে আমটা দিয়েই বলতে শুরু করলো, কি আর বলবো,দুঃখের কথা। এইবারি শুধু আমগুলো খেতে পারলাম। একদল আম চোর, না না চোর না চুন্নি। আল্লাহ এমন মেয়ে মানুষ জীবনে দেখিনি। লজ্জা বলতেও তো কিছু থাকা উচিত না কি। এত কথা বলতাম তবুও গাছের একটা আমও রাখতো না।সব চুরি করে খাইছে। এইবার কড়া পাহাড়া দেওয়ার জন্য তুমি একটু ভাগে পাইলে বুঝছো।
~ উনার কথা শেষ না হতেই আম বেশম খেলাম। কাশতে কাশতে জীবন যাওয়ার উপক্রম। সবাই মাথায় সমানে থাপ্পর দিচ্ছে। বলতে ও পারছি না আস্তে দাও।
~ কেউ তোমার কথা মনে করছে বুঝছো নতুন বউ।
~ মনে মনে বললাম, মনে করছে মানে আপনি নিজেইতো “রীতিমত গালি দিচ্ছেন”। কোন মতে কাশি থামিয়ে ঠান্ডা হয়ে বসেছি। ভদ্র মহিলা আবার আম নিয়ে হাজির।
~ নাও আম খাও।তখন তো খেতে পারলে না।এখন খাও।
~ মনে মনে বললাম,নাহ বাবা।আম আর খাওয়া যাবে না।না জানি এখন আবার কি গালি দেয়।যত দ্রুত সম্ভব উনার সামনে থেকে যাওয়াই উওম। চিনে ফেললে মানসম্মান সব যাবে।
~ কি হলো,চুপ করে আছো কেন? নাও আম খাও।
~ নাহ।মানে আমি…..
~ কি আমি আমি করছো। দাঁড়াও খাইয়ে দিই।
উনি আমার দিকে আমের প্লেট নিয়ে এগিয়ে আসছেন। আমি ভয়ে অজ্ঞান। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হসপিটালে। আশে পাশে অনেক লোকজন। পাশ ফিরতেই দেখি ভদ্র মহিলা আমের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এবার আবেগে কাঁন্না কাঁন্না কন্ঠে “আবার আম” বলেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম।এই জ্ঞান আর সহজে ফিরবে না।
গল্পের বিষয়:
গল্প