পার্কের একটা নির্জন চেয়ারে অমিত বসে আছে একা । মাঝে মাঝে দু’চার জন চা’ ওয়ালা, ফুল ওয়ালা এবং বাদাম ওয়ালাও গিজ্ঞেস করে গেল যদি কিছু চাই । বেশীক্ষন হয়নি । মাত্র ১৫ মিনিট হবে হয়তো । ও জানে যে প্রিয়া এক্ষনি চলে আসবে । এমন সময় কানে বাজলো রেশমী কাঁচের চুঁড়ি । নরম দু’হাতখানি দিয়ে অমিত এর চোখ চেপে ধরে বললো, বলোতো কে?
অমিতঃ তুমি ছাড়া আর কে আবার এই অবেলায় আমার কাছে আসবে?
প্রিয়াঃ আর তুমি ছাড়া আর কেই বা এই নির্জনে আমার অপেক্ষআয় থাকবে?
অমিতঃ বেশ বলেছো । এবার আমার সামনে এসে বসো । প্রান ভরে দেখী।
প্রিয়াঃ প্রতিদিন দেখো । মনে হছে আজই প্রথম দেখা।
অমিতঃ কি বেপার, আজ এত সুন্দর করে সেজেছ যে?
প্রিয়াঃ কই, আমিতো প্রতিদিনই সেজে আসি । ওটা তোমার চোখের ভুল । আমি না সাজলেও তোমার মনে হয় আমি সেজে এসেছি।
অমিতঃ কথাটা পুরোপুরি মিথ্যে নয় । তবে আজ লাল সবুজের মিস্রনটা তোমায় চমৎকার লাগছে । হাতের চুড়িগুলো দারুন ম্যাচ করেছে। এবার মেলা থেকে কিনলে বুঝি?
প্রিয়াঃ একটা মারবো ধরে । মেলা থেকে কিনেছি এবং তুমিই কিনে দিয়েছ।
অমিতঃ ও সরি, এবার মনে পরেছে ।
প্রিয়াঃ আজ ভেলেন্টাইন ডে । আমার জন্য কি উপহার এনেছ ?
অমিতঃ সেটা আবার কি ?
প্রিয়াঃ তুমি ভুলে গেছ ? আজ ভেলেন্টাইন ডে, আজ এই দিনে একজন প্রেমিক আর একজন প্রেমিক কে ভালাবাসার জিনিস উপহার দেয় ।
অমিতঃ সেটা আজ হবে কেন ?
প্রিয়াঃ মশাই, সেটা আজই, ১৪ই ফেব্রুয়ারী ।
অমিতঃ আছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করি ? এই আমি যতদিন তোমার সাথে আছি, প্রায় অনেকগুলু বছর । তোমার একটা দিনের কথা মনে আছে যে দিন আমি তোমাকে ভালবাসিনি বা কম বেসেছি ।
প্রিয়াঃ হুম্্্্, না… মনে পরছে না ।
অমিতঃ তার মানে একটি দিন ও নেই ।তাহলে বলো কেন এই দিনটি আমার জন্য স্পেসাল হবে ? তোমার সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয় । প্রতিদিন তোমায় নিয়ে লিখি একটি কবিতা অথবা একটি চিঠি । তুমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকো লেখাটি পরার জন্য ।
প্রিয়াঃ হ্যা, তাই । এখন দাও না, কি লিখেছ, প্লিজ ।আমি আর সইতে পারছি না ।
অমিতঃ তোমার এই ছেলেমানুষী আমার খুব ভাললাগে ।
প্রিয়াঃ সেটা জানি, এখন দাও প্লিজ । তুমি সবসময় ভনিতা কর ।
অমিতঃ দিছি তার আগে বল এই টা কি ?
প্রিয়াঃ কোনটা ?
অমিতঃ এই যে চোখের নীচে কালো দাগ । কাল ঘুমাওনি সারারাত ? কি হলো কথা বলছো না কেন ? এভাবে চুপ করে মাথা নিচু করে থাকলে হবে না ।
প্রিয়া; জানো, কাল সারারাত একটুও ঘুমাতে পারিনি ।
অমিতঃ কেন ?
প্রিয়াঃ তোমায় ভেবে ।
অমিতঃ আমায় ভেবে ?
প্রিয়াঃ হ্যা ।
অমিতঃ তা’ আমার জন্য কি ভাবনা ছিলো তোমার মধ্যে ।
প্রিয়া; কিছু না থাক ।
অমিতঃ কেন থাকবে কেন ? বলো । কই বলো ।
প্রিয়াঃ তুমি আমাকে এত কিছু লিখো । তোমার ভাবনায় আমার জন্য কতকিছু । আমি পাগল হয়ে যাই তোমার এত ভালোবাসা পেয়ে । এটা ওটা ভাবতেই দেখী ভোরের পাখীরা কিঁচির মিঁচির সুরু করেছে ।
অমিতঃ এবার চোট্ট একটা শাষন তোমার জন্য ।
প্রিয়াঃ তুমি আমাকে শাষন করবে ? আজ এই দিনে ?
অমিতঃ হ্যা, আজ এই দিনে । তোমার এইভাবে রাত জাগা চলবে না । তোমার চোখের নীচের কালি দেখলে মনে হয় আমি সারা রাত তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারিনি তাই তুমি ঘুমাতে পারোনি ।
প্রিয়াঃ অমিত, আই লাভ ইয়ু ।
অমিতঃ আই নো , আই লাভ ইয়ু টু ।
প্রিয়াঃ আই নো টু । কিন্তু সেটা কই ?
অমিতঃ কোন টা ?
প্রিয়াঃ তোমার লেখাটা কই ?
অমিতঃ ও তাই বলো । মনে হয় তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না । আমার লেখাকেই বেশী ভালোবাসো ।
প্রিয়াঃ তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমার লেখা আরো বেশী ভালোবাসি । প্লিজ আর ভনিতা করোনা এবার দাও ।
অমিতঃ নাও । এই যে তোমার জান ।এবার হলো ।।
তুমি ছিলে বলে
স্বপ্নের মত গেল চলে,
কৈশরের এতোগুলো
দিন হেলায় ফেলায় প্রতিদিন ।
তুমি আছো তাই
আমি নিজেকে হারাই,
আর খুজে বেড়াই
যেন তোমাকেই পাই ।
তুমি থাকবে ভেবে
আমায় আপন করে নিবে,
সকাল দুপুর সাঁঝে
অনুভবে হিদয়ের মাঝে ।
তুমি ছিলে নিঃস্বাসে
ভরা পু্রনিমায় বুক ভাঁসে ।
তুমি আছো ভালোবাসায়
প্রজাপতিরা নেচে বেড়ায় ।
তুমি থাকবে বিশ্বাসে
যুগ যুগান্তর এক সাথে ।
(প্রিয়া চুপ করে বসে আছে । মাথা তুলছে না । চোখ দু’টো ভেজা ।
প্রিয়াঃ আমি যদি কখনো তোমার আগে মরে যাই ? বাসবে ? এমন করে আমায় ভালোবাসবে ?
অমিতঃ তুমি আর একটাও বাজে বকবে না ।
প্রিয়াঃ বলোনা প্লিজ ।
অমিতঃ তোমার এই পাগলামো প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না আর থাকলেও দিবো না ।
প্রিয়াঃ আমার কেন জানি ভয় হয় ।
অমিতঃ কিসের ভয় ?
প্রিয়াঃ তোমাকে হারাবার ।
অমিতঃ আবারো ।
প্রিয়াঃ এই যাহ । আমাকে যেতে হবে । মা চিন্তা করবে ।
অমিতঃ আর একটু বসে গেলে হয় না ।
প্রিয়াঃ সেটা তোমার প্রতিদিনের আব্দার । আবার দেখা হবে, কাল, এই সময় ঠিক এই খানে ।ঠিক আছে জান ?
প্রিয়া অমিতের গালে আলতো করে স্পরস করে । কাচের চুড়ির ঝন ঝন শব্দে অমিতের কানে পিয়ানোর মত টুংটাং শব্দের ছন্দ তুলে দেয় । প্রিয়া ধীর পায়ে হেটে চলে যায় । বার বার ফিরে দেখে অমিত বসে আছে নির্জন পার্কের বেঞ্চে একা । এর পর প্রিয়া ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় । পরে থাকে একটি গোলাপ পাশে পার্কের সেই বেঞ্চের উপর ।