অন্য চার পাঁচটা মেয়ের মত তৃপ্তিরও সপ্ন যে তার ভালোবাসার মানুষটি হবে তার জীবনসঙ্গী । তৃপ্তি একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে । তৃপ্তি কখনো কোন ছেলের সাথে বন্ধুত্ব দূরে থাক কথা বলারও চিন্তা করেনি । কিন্তু তার জীবনটা হঠাৎ যেন এলোমেলো হয়ে গেল ।
ভার্সিটির ১ম দিন, এনাম স্যার পাঁচ জনের গ্রুপ করে দিল সবাইকে । সেখানেই তৃপ্তির পরিচয় রুদ্রর সাথে । অল্প কয়েকদিনে তৃপ্তি আর রুদ্র খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়, আর দেখতে দেখতে সে ভাল বন্ধু খুব কাছের মানুষে পরিণত হয় । একদিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে হুট করে রুদ্র তৃপ্তিকে তার মনে তৃপ্তির জন্য লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার কথা বলে । তৃপ্তিও রুদ্রকে তার মনের কথা বলে । তখন থেকে দুজনের ভালোবাসার অধ্যায় শুরু ।
কথায় আছে কারো কারো কপালে নাকি সুখ সয় না । তৃপ্তিও হয়ত তাদেরই একজন । ভালই চলছিল তাদের কিন্তু কোথা হতে তৃপ্তির ফুপি তৃপ্তির জন্য বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসে । তৃপ্তি একথা রুদ্রকে জানালে রুদ্র বলে এটা তৃপ্তির ভালোবাসার পরীক্ষা… তৃপ্তি যদি সত্যি রুদ্রকে ভালোবাসে তবে সে কিছুতেই বিয়ে বসবে না । সেদিনই তৃপ্তি তার বাসায় তার আর রুদ্রর কথা জানায় আর তার পরিবারকে বলে সে রুদ্র ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না । তৃপ্তির বাবা ছিলেন দুর্বল চিত্তের মানুষ । সে তার সবচেয়ে আদরের মেয়ের এমন ব্যবহার সহ্য করতে পারেন না আর অসুস্থ হয়ে পরেন । তৃপ্তি তার বাবার এই অবস্থার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে । সে রুদ্রর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু সেদিন থেকে ওর বাসা থেকে বের হওয়া আর ফোন ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয় । রুদ্রও তৃপ্তির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু যোগাযোগ করতে পারে না । এদিকে তৃপ্তির বাবার শরীর অনেক খারাপ, ডাক্তার তাকে সকল প্রকার টেনশনমুক্ত রাখতে বলেছেন এবং তার কথার অমত না করার পরামর্শ দিয়েছেন । তৃপ্তির এখন একটাই উপায় হয় সে তার বাবাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে না হয় রুদ্রকে ভুলে যাবে ।
আজ তৃপ্তির ৩য় বিবাহবার্ষিকী । সে সেদিন তার বাবার দিকে তাকিয়ে নিজের ভালোবাসার বিসর্জন দিয়েছিলো । আজ সে একজন সফল মা এবং গৃহিণী কিন্তু স্ত্রী ও প্রেমিকা হিসিবে অসফল । সে তার স্বামীকে মন দিয়ে ভালবাসতে পারে না । স্বামীকে দেখলেই তার রুদ্রর কথা মনে পরে । সে আজও রুদ্রকে ভুলতে পারেনি, এখনও সে রুদ্রকে অনেক ভালবাসে । এখন সে তার জীবনের শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে, যেদিন সে তার এই অভিশপ্ত জীবন হতে মুক্তি পাবে ।
আর রুদ্র । রুদ্র ভাল আছে । সে এখন কোন মেয়েকেই বিশ্বাস করে না । তার মতে মেয়েরা হল বিশ্বাসঘাতক আর লোভী । রুদ্রও আজও জানে না কোন অবস্থার মধ্য দিয়ে তৃপ্তি বিয়ের জন্য হ্যাঁ করেছে । যা জানে তা হল আজ তৃপ্তির অনেক বড়লোক স্বামী আছে আর তৃপ্তি অনেক সুখে আছে।