এরকম হবে আসমা কখনো ভাবেনি।
মাত্র বছর দুই আগে একমাত্র ছেলে অরুকে ভর্তি করাল ঢাকার নামি-দামী এ স্কুলটায়।
হাসিখুশি উচ্ছল প্রাণবন্ত এক মহিলা। সামান্য পৃথুলা হলেও যথেষ্ট লম্বা ; পাঁচ ফুট চার-টার তো হবেই। ভরাট মুখ ; টকটকে ফর্সা গায়ের রং। চোখ দুটো ডাগর ; আঁখিযুগলে কিঞ্চিৎ কৌতুকপ্রিয়তা মিশে রয়েছে; মাথাভর্তি শ্যাম্পু করা চুল; বাতাসে ওড়াওড়ি সারাক্ষণ। সামান্য সাজগোজেও আসমাকে লাগে সাবলীল, সম্ভ্রান্ত ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক মহিলা।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সবাইকে আপন করে নেবার ক্ষমতা। ব্যস, কদিনের ভেতর তৈরি হয়ে গেল ওর নিজস্ব দল। সেই দলের অকথিত লীডার হয়ে গেল আসমা।
ছেলেকে স্কুলের গেটে ঢুকিয়ে দেবার পর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় চাদর পেতে শুরু হয়ে যায় আসমা ও তার দলের আড্ডাবাজি।
আড্ডার আরম্ভটা হয় আপন আপন ছেলের লেখাপড়া নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা দিয়ে। মাঝখানে থাকে স্কুল-শিক্ষকদের আচার-আচারণ ও সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে কথাবার্তা। সবশেষে আসে শাড়ি-গয়নার উপর নিজেদের ভেতর পারস্পরিক তুলনা ও নিজ নিজ স্বামীদের অবিমৃশ্যকারিতা নিয়ে গৃহিনীদের নিন্দার ঝড়। সমাপনী পর্যায়ে আর্থাৎ ছেলেদের যখন ছুটি হবার সময় ঘনায় তখন চলে তুমুল খাওয়া-খাদ্যের উৎসব। আসমা যদি হটপটে করে নুডুল নিয়ে আসে তো সুলতানা আনবে কষা গরুর মাংশের সঙ্গে ভারি পরোটা। লিজা বাদ যাবে কেন ? বগুড়ার দই আছে ওর ভান্ডে। শম্পার রান্নার হাত অপূর্ব, পত্রিকার পাতায় রেসিপি দেখে দেখে নতুন ধরনের চিংড়ি আর টোনাফিশের যুগলবন্দি এক কাবাব তৈরি করে নিয়ে আসবে। তুমুল হিঃহিঃ-তে মুখর হয়ে উঠবে স্কুল-চত্বর।
অন্যান্য দলগুলোর সদস্যরা, যারা এখানে-সেখানে ওদেরই মত বসা , তাদের চোখে কিছুটা বিস্ময় , ঈর্ষা , সন্দেহ আর বিরক্তির মাখামাখি। নিজেদের ভেতর হয়তো বলেও বসবে ,‘বেশি বাড়াবাড়ি। এইটা স্কুল না বিয়ে-পার্টি বোঝেই না। আজব।’
এরকম মন্তব্য যার কন্ঠ থেকে বেরুল সে-ই একটু বাদে আসমার দলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠবে,‘ খুব মজা করতাছেন আসমাভাবী ? আজকের মেন্যু কি ?’
‘বেশি কিছু না। ডালপুরি আর কষা মাংশ। শম্পা ভাবীর হাতের খাবার। সঙ্গে আছে লিজা ভাবীর আনা কুমিল্লার রসমালাই। দেবর এসেছে তো দেশ থেকে। নিয়ে এসেছে সঙ্গে করে। আপনাদের ?’ আসমা পাল্টা প্রশ্ন করে ওকে।
‘আমরা গরিব মানুষ। কী আর খাব ?’ ঠোঁট উল্টে দেয় পাশের দলের প্রধান তিন্নি ভাবী।
‘গলা শুকাবেন না তিন্নি ভাবী। কাস্টমসে কত পয়সা আমরা জানি। কি খাওয়া দাওয়া আজ ?’ আসমা হাসতে হাসতে জানতে চায়।
‘তেমন কিছু না। স্টার কাবাবের কাচ্চি। জায়ানের আব্বা গতকাল আনছিল তো, ও তো আর কোনকিছু কম করে আনতে পারে না , এতগুলা নিয়া আসছে। বলেন ভাবী , অত কাচ্ছি খাওয়া যায় ? মুখ ফিরাইয়া আসে না ? নিয়া আসছি। ফ্রিজে রাইখা দিছিলাম। আসার আগে একটু ওভেনে ঢুকায়া দিছিলাম । একদম টাটাকা রয়ে গেছে।’
‘গরিব মানুষই তো কাচ্চি খায়। হিঃ হিঃ হিঃ’। আসমা হেসে ওঠে জোরে।
‘আপনারা যেরকম ভাবেন সেরকম কিছু নয় ভাবী। অনেক খরচ আমাদের। শ্বশুরবাড়ি পুরোটই পালা লাগে আমার। অনেক খরচ।’ বলতে বলতে পাশের দলে ফিরে যায় তিন্নি। ওর চোখেমুখে এমন এক ভীতিকর মুদ্রা তৈরি হয় যে মনে হবে কেউ ওর কাঁধে বিল্ডিংশুদ্ধ পুরো শ্বশুরবাড়িটি বুঝি চাপিয়ে দিয়েছে। কিছুতেই এ চাপ সে সহ্য করতে পারছে না। স্পন্ডেলাইসিসের যন্ত্রণা শিরদাঁড়া আর কাঁধ জুড়ে !
আসমা কথা না বাড়িয়ে ফিরে আসে নিজেদের ভেতর। মশগুল হয় চর্ব-চোষ্যময় রসালো আড্ডায়।
এর ভেতর বাচ্চাদের সমপানী পরীক্ষা চলে এল। মায়েদের নীরব প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল নিজেদের ভেতর। কার বাচ্চা কত ভাল তা প্রমাণ করার জন্য সারাদিন কোচিং সেন্টারে ছুটাছুটি। স্কুলে আসার আগে একবার প্রাইভেট কোচিং যদি হয় এলিফ্যান্ট রোডে, তো বিকালে স্কুলের পর আরেক দফা কোচিং হবে মালিবাগে। শুক্র-শনিবারের স্কুলের কোচিং তো রয়েছেই। আট কেজির শিশুকে কাঁধে করে বইতে হয় বার-তের কেজির বই আর খাতা। ভোর থেকে রাত অব্দি শিশুটিকে লড়তে হয় এসব নিষ্ঠুর গার্জিয়ানদের চোখ লাল করা ধমকধামকের সঙ্গে। তাদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী কোচিংএর পড়া আর স্কুলের পড়া সব ঠোঁটস্থ করে রাখতে হয়। কিছুতেই লেখাপড়ায় মন্দ, এমন কী, মধ্যমও হওয়া যাবে না। সবসময় এ-প্লাস পেতে হবে পরীক্ষার খাতায়। নিজেদের জীবনে যেসকল উচ্চাকাক্সক্ষাগুলো ডানা মেলতে না পেরে মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়েছে , এখন সেই সকল মৃত উচ্চাকাক্সক্ষাগুলোয় প্রাণস্পন্দন ঘাটতে তাগিদ দিচ্ছেন সন্তানদের । এজন্য যত টাকা আর শ্রম খরচ করা লাগে তা খরচ করতে রাজি গার্জিয়ানকূল। বন্ধুর এ পথে চলতে গিয়ে অবোধ শিশুদের মুখে ফেনা চলে এলেও গার্জিয়ানকূল হাত থেকে সাফল্যের চাবুকটি ফেলবে না ; বরং একটু পরপর সেই চাবুক দেখিয়ে চেঁচিয়ে উঠবে,‘ জোরে , আরো জোরে ? অবশ্যই তোমাকে এ + পেতে হবে। কোন কমপ্লেন নয় । কোন আরগুমেন্ট নয়, ওকে ? গো এহেড।’
এসব দেখেশুনে ও আচানক এ পদ্ধতির মার্কেটিং-সাফল্যে তুষ্ট, নিয়ত আত্মশ্লাঘায় ভুগতে থাকা সৃজনশীল কর্তৃপক্ষ রোবটিক কন্ঠে মিষ্টি করে বলবে,‘ কী সুন্দর এডুকেশন-সিস্টেম, না ? ’
পরীক্ষার ঠিক আগের দিন আসমা বলল ,‘ আমার একটা প্রপোজাল আছে । শুনবেন ?’
‘কি ব্যাপার ভাবী ?’ সুলতানা পরোটা আর কষা মাংশ মুখে দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে প্রশ্ন করে।
‘আমাদের ছেলেরা যদি প্রাথমিক সমাপিকা পরীক্ষায় এ+ পায় তো আমরা চারজন যার যার বাসায় একদিন করে পার্টি দেব। পার্টি মানে খাওয়া দাওয়া আর কি । রাজি ?’ আসমা খলবল করে ওঠে।
লিজা বলল,‘ প্রস্তাব মন্দ নয়। আমাদের সবার পরিচয় আর ঘনিষ্ঠতা সব তো এ স্কুলচত্বরেই সীমাবদ্ধ। একটা উপলক্ষ্যে যদি একে অপরের বাসায় যাওয়া আসা শুরু করি তো মন্দ কি। আমাদের ঘনিষ্ঠতা চিরজীবী হউক , হিপহিপ হুররে। ’
সবাই এসকসঙ্গে হৈ-হৈ রৈ-রৈ করতে করতে সমর্থন জানিয়ে কন্ঠ মেলায় ,‘ হিপহিপ হুররে। ’
একটা চনমনে আবেগ সবার ভেতর ; উজ্জ্বল ভষিষ্যতের আয়নায় যেন নিজেদের দেখতে পাচ্ছে সবাই। ফুরফুরে মেজাজের ছাপ চোখেমুখে।
এর ভেতর হঠাৎ করে সুলতানা বলে উঠল ,‘ আগে দোয়া করেন , আমরা রোদে পুড়ে , বৃষ্টিতে ভিজে যে পরিশ্রম করছি বাচ্চাগুলার জন্য , তা যেন সার্থক হয়। ওরা যেন সবাই ভাল করতে পারে পরীক্ষায়। ’
লিজা উত্তর দিল,‘ অবশ্যই ভাল করবে। আল্লাতালা দেখছেন না ? আমরা তো কোথাও ফাঁকি দিচ্ছি না। ’ বলে ঝাঁ-চকচকে রোদেলা আকাশের দিকে করুণাপ্রার্থী হয়ে তাকিয়ে থাকে সে।
অন্যরাও চুপচাপ হয়ে যায়। ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এক ধরনের বিষণ্নতার জন্ম দেয় ওদের ভেতর। ওরা অনেক্ষণ কেউ কারো সঙ্গে কথা বলতে পারে না।
তবু ওদের নিত্যদিনের আনন্দ-স্ফূর্তি থেমে নেই। চুটিয়ে আড্ডা মারা আর খাওয়া-দাওয়ার ভেতর আসমা আনমনা হয়ে আচমকা ভাবতে শুরু করে,‘ অরুটা এ + পাবে তো ? ’
ধীরে ধীরে চিন্তাসূত্রটির সংক্রমণ ঘটে সবার ভেতর। ওরা অনেক্ষণ নিজেদের ভেতর কথা বলতে পারে না। কঠিন বাস্তবতার এক কালো ছায়া যেন গিলে ফেলতে চাইছে সবাইকে।
সবার হয় না, ওদের বেলায় মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হল ।
শম্পা, সুলতানা, লীজা আর আসমার চোখ ভেজা। এ কৃতকার্যতা শুধু সন্তানের নয়, ওদেরও। একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,‘ ভাবী , আমরা সাকসেসফুল। ’
আসমার চোখে শিশিরবিন্দুর মত আনন্দাশ্রæ। বলে উঠল,‘ আগামি শুক্রবার আমার বাসায় সবার দাওয়াত। ’
আসমাকে আবার সবাই জড়িয়ে ধরল। পরীক্ষা-যুদ্ধে বিজয়ী হতে পেরে মায়েরা যেমন আত্মহারা , শিশুগুলোও মায়েদের শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থেকে জয়ী হবার সেই আনন্দ শুঁষে নিচ্ছে।
পরের সপ্তাহে আসমার মাইক্রোবাস পৌঁছে গেল একে একে সবার বাসায়।
লীজা , সুলতানা আর শম্পাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিল আসমার মেহমানদারীর জৌলুস। এসি গাড়ি করে আনা-নেয়া , সকালের ব্রেকফাস্ট, দুপুরের কোর্মা-পোলাও, বিকালের টিফিন আর বিদায়বেলায় দামি ব্র্যান্ডের গিফট সবাইকে বুঝিয়ে দিল আসমাদের সম্ভ্রান্ত বনেদীয়ানা।
আসমার স্বামী ব্যাংকের মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তা। পনেরোশ স্কোয়ার ফিটের নিজস্ব গুছানো ফ্ল্যাট ওদের। একদিনের আতিথেয়তায় সবাইকে রীতিমত মুগ্ধ করে ছাড়ল আসমা ও স্বামী মোকাদ্দেছ।
সুলতানার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে একান্নবর্তী পরিবার। যদিও নিজেদের চারতলা বাড়ি খিলগাঁ এলাকায়, তবু ওদের আয়োজন কেবল দুপুরবেলাকার। পরিবহন যার যার ; কোন গিফট নেই।
সুলতানার বর একটা প্রাইভেট কুরিয়ার কোম্পানীতে চাকুরি করে। ছুটির দিনেও তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। দশ মিনিটের জন্য এসেই আবার অফিসে চলে যেতে হল তাকে। পারিবারিক পরিবেশে দাদা-চাচা-ফুফুদের মাঝখানে স্কুলভাবীদের সময় কাটে বেশ চাপের ভেতর। খেয়ে দেয়ে কখন ওরা বের হবে তা-ই সবাইকে তাড়া করে ফিরছিল সারাক্ষণ। সন্তানদের ফলাফল নিয়ে নিজেদের ভেতর প্রাণখোলা কথাবার্তা বলার মত এটুকু মানসিক বিনোদনেরও কোন সুযোগ ছিল না। এর চেয়ে স্কুল-চত্বটাই তো ভাল , সুলতানার ভারি পরোটা আর কষা মাংশ খেতে খেতে আড্ডা মারা যায় , সারাক্ষণ মুরুব্বীদের মাঝখানে মুখবন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকবার তো দরকার পড়ে না।
লীজার স্বামী ব্যবসায়ী। গার্মেন্ট-এক্সেসরি যোগান দেয় গার্মেন্ট-ইনডাস্ট্রীতে। টাকা-পয়সার কমতি নেই। ফ্ল্যাট-গাড়ি সবই আছে। কিন্তু স্বামীটি ধর্মীয়ভাবে প্রচন্ড গোঁড়া হওয়ায় বাড়িতে স্ত্রীর বান্ধবীদের এই আগমনকে সহজভাবে নিতে পারছে না বলে অন্য ভাবীদের ধারণা হয়েছে। তাই, শরীয়া মেনে কোনরকমে খাওয়া-দাওয়া সেরে লীজা ভাবীর বাসা ত্যাগ করতে হয়েছে সবাইকে।
শম্পাদের নিজস্ব বাড়ি পুরনো ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা গোঁসাইবাড়ি এলাকায়। স্বামী ইলিয়াস মৌলভীবাজার এলাকার চিনির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ; খুব আন্তরিক। শম্পা নিজ হাতে চায়নিজ রেধে খাইয়েছে সবাইকে। হাসিঠাট্টায় সময়টা বেশ ভালোই কেটেছে সবার।
সবই ঠিকঠাক চলছিল। সহসা একদিন লীজা ফিসফিস করে আসমার অগোচরে সুলতানা আর শম্পাকে জানাল,‘ আচ্ছা ভাবী, কেউ কাউকে একবেলা খাইয়ে খোটা দিলে তাকে কি বলব বলেন ?’
সুলতানা সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝিয়ে ওঠে,‘ ছোটলোক । আস্ত ছোটলোক। আসমা ভাবীর কেস তো ? ’
লীজা চোখমুখ উল্টে দেয় ,‘আর কে ? আচ্ছা ভাবী , কে বলেছিল উনাকে আমাদের বাসা থেকে গাড়ি দিয়ে পিক করতে ? কে বলেছিল আমাদের গিফট দিতে ? নিজে বড়লোকিপনা দেখাবে আবার কথায় কথায় খোটা দেবে। উনিই একমাত্র বড়ঘরের মেয়ে আর আমরা সব ছোটলোক ? ’
সুলতানা ভেংচি কাটে এসময় ,‘ বড়লোক না ছাই। কেন , শম্পা ভাবীও তো আমদের আদর-আপ্যায়ন কম করে নি । কই উনি তো কথায় কথায় ঢেঁকুর তুলে অন্যকে ছোট করে না ? আল্লাহতালা আপনাকে তৌফিক দান করেছেন , আমাদের আপ্যায়ন করেছেন । আমরা পারি না। কী করব , ভাবী বলেন ?’
মিতভাষী শম্পা আনেক্ষণ ধরে ওদের কথা শুনে মন্তব্য করল ,‘ আসমাভাবীর লোক দেখানো ব্যাপারটা খুব বেশি। অত ভাল না। ’
আসমা আসতেই ওরা চুপ হয়ে গেল। আসমার সঙ্গে তিন্নি।
ওদের সামনে এসে খলবল করে আসমা বলে ওঠে ‘, ভাবী সোনার-গাঁ হোটেলে যাবেন ? থাই মেলা চলছে। কমদামে জিনিসি কেনা যাবে ? তিন্নি ভাবী রাজি , আপনারা যাবেন ?’
সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝিয়ে ওঠে লীজা,‘ সরি ভাবী । আমাদের অত টাকা নেই যে সোনার-গাঁ হোটেলে গিয়ে বসে থাকব। আপনি যান। ’
‘যাওয়ার ব্যবস্থা না হয় আমি করব। আমার জামাইকে বলে দিলেই হবে। আপনারা যাবেন কি না বলুন। ’
সুলতানা এবার উত্তর দেয় ,‘আমার জামাই মানা করছে অন্যের গাড়িতে চড়তে। যেদিন নিজেন গাড়ি হবে, সেদিনই সেই গাড়িতে চড়তে। আমি তো আমার জামাইর কথা ফেলতে পারি না। তার খাই , তার পড়ি , তার টাকায় বাহাদুরি করি , তাই না ভাবী ? ’ তীর্যক দৃষ্টি আসমার উপর।
আসমা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ওর দলের ভাবীদের দিকে। বুঝতে পারে না কেন ওরা এরকম করছে।
এ-দলে শম্পা ধীরস্থির লেখাপড়া জানা মহিলা। আসমা মরিয়া হয়ে প্রশ্ন করে ,‘ ‘শম্পা ভাবী ? আপনিও যাবেন না ?’
‘আপনি যান ভাবী । সরি।’ শম্পা মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।
কদিন মুখ বুঁজে চেষ্টা করেছিল আসমা , কাজে দেয় নি।
অন্য ভাবীদের নির্মোহ নিষ্ক্রিয়তা এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে পড়েছিল যে প্রাণবন্ত আসমার পক্ষে সেই দলে চুপচাপ বসে থাকা দুঃসহ হয়ে উঠল।
আসমা অভিমানী টাইপ। স্বামী মোকাদ্দেছের উপর কোন কারণে অভিমান হলেও তা সে চেপে রাখে নিজের ভেতর। অগ্রণী হয়ে শেষ পর্যন্ত মোকাদ্দেছকেই অভিমানের শেকড় খুঁজে নিয়ে তারপর তা উপড়ানোর চেষ্টা করতে হয়। তবেই আসমা স্বাভাবিক নিজেকে খুঁজে পায়।
এখানেও আসমা ভেবেছিল , স্কুলভাবীরা বুঝি মোকাদ্দেছের মতই শেষ অব্দি কাছে টেনে নেবে ওকে । সম্পর্কের উষ্ণতা ফের ফিরে আসবে আগের মতন।
কিন্তু তা আর হল কই । কোনকিছু বুঝতে না পেরে অগত্যা আসমা তিন্নির দলে যোগ দিয়ে দেয় একদিন। নিজের দল ছেড়ে তিন্নির সঙ্গে বসতে শুরু করে সে। এ-ও এক অভিমানী ঢং ওর; আশা, যদি ওর পুরনো বন্ধুরা সবকিছু ভুলে ওকে ফের কাছে টেনে নেয় !
তিন্নি খুশিতে একেবারে ডগমগ। ওকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে ‘, আমার কী ভাগ্য যে আপনাকে পেয়েছি ভাবী । চন্দনের মর্ম কি সবাই বোঝে বলেন ?’ বলে চোখের ইশারায় আসমার পুরনো দলটি দেখিয়ে দেয়।
বলল বটে; তবে আসমার অনুপস্থিতিতে সুলতানাদের দলে এসে ওর বিপক্ষে পরচর্চা করতেও বাধে না ওর ।
সুযোগ মিললেই সে উস্মা ঝরতে শুরু করে সুলতানাদের কাছে,‘ উফ্, এরকমও মহিলা হয়? এত ঠাঁটবাট নিয়ে এখানে বসে থাকা কেন বলেন ভাবী ? গাড়িতে এসে গাড়িতে চলে গেলেই পার। গরিবের সঙ্গে সময় কাটানো কেন ? ভাল করেছেন , ফাস্ট ক্লাস কাজ করেছেন, বেটিকে আপনাদের দল থেকে বের করে দিয়ে। এখন আমি কী করি ? আল্লা , রাস্তা দেখাও।’ বিপদগ্রস্ত মহিলার মত চেহারায় এসময় কাতরতার অভিব্যক্তি ভাসিয়ে তোলে তিন্নি।
আসমা আর তিন্নির ভেতর প্রায়ই উপহার বিনিময় হয়। আসমা যদি শো-পিস দেয় তো তিন্নি পরদিনই জাগুয়ার পারফিউম নিয়ে আসে ওর জন্য। যদি কোনদিন তিন্নি আসমাকে দামী নেলপলিশ লিপস্টিক উপহার দেয় তো কদিন পর আসমা নিয়ে আসে দামী ব্রান্ডের ঘড়ি। আসমা যদি তিন্নি ও তার দলকে চায়নিজে নিয়ে স্যুপ-ওয়ানথন খাওয়ায় তো পরের হপ্তায় ওদের অবশ্যই কস্তুরিতে পাওয়া যাবে। ওরা চিতল মাছের কোপ্তা আর মুড়িঘন্ট দিয়ে দুপুরের খাবার সারছে।
এমনি ওদের ঘনিষ্ঠতা ; তবু আসমা কোনদিন অনুপস্থিত থাকলেই তিন্নি সুলতানাদের কাছে গিয়ে ওর দেয়া কোন একটা উপহার দেখিয়ে বলে উঠবে,‘ দেখছেন ভাবী, আপনাদের ঠাঁটওলা আসমার রুচি ? এসব শোপিস আজকাল কেউ কাউকে দেয় ? আমি আমার কাজের ময়েকে দিয়ে দেব। যতসব। ’
আসমার সামনে এলে অন্যরূপ তিন্নির। চোখেমুখে গদগদ ভাব। মুখে বলে ,‘ ভাবী যে কত গিফট দেন। এসব দেখে আমার কাস্টমসের ইন্সপেক্টর জামাইটা কী বলে জানেন?’
‘কি ?’
‘ও ভাবে আমার বুঝি স্কুলে একটা বয়ফ্রেন্ড জুটেছে। হিঃ হিঃ হিঃ । একবার এসে দেখেও গেছে । আপনাকে দেখে কী বলে জানেন ?’
‘না বললে কী করে জানব ?’ হাসি হাসি মুখ আসমার।
‘বলে তোমার বান্ধবী এ বয়সেও এত সুন্দর থাকে কী করে ? তুমি পার না কেন ? বলেন ভাবী, সবাই কি সমান ? প্রায়ই আপনার সঙ্গে পরিচয় কিরয়ে দিতে বলে । আমি বলি , তুমি হইলা একটা মিচকা শয়তান , তোমার সঙ্গে আমার ল²ী ভাবীর কোনদিন পরিচয় করায়া দেব না। ঠিক বলি নাই ভাবী?’
‘একদিন ভাইকে নিয়ে বাসায় আসেন। পরিচয় হবে।’ নির্মোহভাবে বলে আসমা। চোখ দুটো ঘুরপাক খেতে খেতে একসময় পুরনো দলের উপর গিয়ে পড়ে। মনটা নিমিষে বিষন্ন হয়ে ওঠে। কেন যে ওরা ওকে এড়িয়ে যেতে চায় , তা এখনো স্পষ্ট নয় আসমার কাছে।
এর ভেতর আসমা দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় স্কুলচত্বরে আসা-যাওয়া অনিয়মিত হয়ে ওঠে। কাজের মেয়ে গাড়ি করে অরুকে স্কুলে নিয়ে আসে ; আবার ছুটি হলে নিয়ে যায়।
মাঝে মাঝে অরুকে নিয়ে আসমার স্কুলে আসা হলেও তা অনিয়মিত। আগেকার সেই প্রাণটুকু অনেকখানি ¤্রয়িমান হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ বসে থেকে শুষ্কমুখে ও চলে যায়।
সহসা একদিন সুলতানা ছুটে আসে তিন্নির এখানে,‘ ভাবী শুনেছেন?’
‘কি ?’
‘আসমা ভাবীর থ্রি-পিস মহিলার কাছে নাকি বিশ হাজার টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। দেব-দিচ্ছি করে দিচ্ছে না। ভাবীকে ফোন করলেই নাকি বলে , তোমার টাকা আমি কি নিয়ে যাব ? বলেন , মহিলা গরিব মানুষ। কয়টাকা আর লাভ করে থ্রি-পিস বিক্রি করে। তার টাকা এভাবে আটকে রাখা কি ঠিক হচ্ছে , বলেন?’
পাশ থেকে লীজা বলল,‘ বাকিবক্কা করে আলগা ঠাঁট দেখানোর কি দরকার ? ফালতু। এখন জ্বালা হয়েছে আমাদের। থ্রি-পিছ মহিলা এখন আমাদের কাছে এসে ঘ্যানর ঘ্যানর করে? কি করি বলেন?’
শম্পা চোখমুখ কুঁচকে গম্ভীভাবে মন্তব্য করল ,‘ এগুলো বড়াবাড়ি। এর একটা সমাধান হওয়া দরকার। ’
ওরা রোজ থ্রি-পিছ বিক্রেতা মহিলাকে নিয়ে আসর জমাতে শুরু করে। এর ও-কথা , তার সে-কথা মিলেমিশে একাকার; তুমুল আড্ডা জমে যায় আসমার বাকী রাখা টাকা উদ্ধারকে কেন্দ্র করে।
সুলতানা বলে,‘ থ্রি-পিছ তো আমরাও কিনি ? তাই বলে গরিবের পেটে লাথি দিতে হবে ? ছিঃ । ’
লিজা মুখ ঝামটা দেয় ,‘ ওসব লোকদেখানো ঠাঁটবাটের খেতা পুড়ি । আমার দরকার নাই এসবে। গরিবের টাকা বাকি রেখে বড়ালোকিয়ানা দেখানোর শিক্ষা আমরা পাই নাই। ছিঃ । ’
শম্পা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল ‘, এরকম এক ফালতু মহিলার সঙ্গে আমাদের ভাব ছিল তা ভাবতেই লজ্জা করছে। রাস্তার একটা দোকানদারের কাছে বাকি রাখতে যার আত্মস্মানে বাধে না , সে আবার ফুটানি করে, ছিঃ’।
শুধু তিন্নি বলল,‘ এসব না বলে মহিলার কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের রাস্তা বের করেন । আমার ইন্সপেক্টর জামাই কী বলে জানেন ?’
সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে ‘, কি বলে ভাই ?’
‘বলে, যে মহিলা রাস্তার বিক্রেতার কাছে টাকা ধার করে ফুটানি করে বেড়ায়, সে নাকি তার ফুটানি বজায় রাখবার জন্য অনেক খারাপ কাজও করতে পারে। সেটা নাহয় বললাম না।’ বলে তিন্নি রহস্যময় চোখে তাকায় সবার দিকে। সবাই আঁচল চাপা দিয়ে দেয় এসময়। আসমার চরিত্র সম্পর্কে অশ্লীল ইঙ্গিতটি সবাইকে সুড়সুড়ি দিতে থাকে।
তিন্নি এবার বিক্রেতা মহিলাকে ডেকে নিয়ে এল। ওর সঙ্গে অনেক্ষণ ধরে আসর বসিয়ে কথা বলল সবাই। অন্যান্য মহিলারাও এসে সেখানে যোগ দেয়। এ এক উপাদেয় ও মুখরোচক বিষয় হয়ে দাঁড়ায় সবার কাছে । আসমাকে নিয়ে কেউ হাসে, কেউ ব্যঙ্গ করে আবার কেউ বা অবহেলার তীর ছুঁড়ে দেয়। সবাই ওকে নিয়ে মত্ত; এরকম একজন মহিলা কিভাবে গরিব এক বিক্রেতাকে ঠকিয়ে চলেছে দিনের পর দিন , তা যেন সবার কাছে এক বিস্ময়।
কেউ বলে ,‘ দেশটাই চলছে এই করে। গরিবকে ঠকিয়ে। ’
‘গরিবের পেটে লাথি দিলে আল্লার আরস কেঁপে ওঠে। জানেন না?’ একথা অন্যজনের ঠোঁট থেকে ঝরে ।
আরো একজন আগ বাড়িয়ে বলে ‘, দেখেন না , ব্যাংকগুলার অবস্থা ? টাউট বাটপারগুলো লোন নেবার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে , টের পান না ? শুনেছি , এ মহিলার জামাইটা ব্যাংকার। টাউট না হলে কেউ এরকম করে?’ এমনভাবে বলছে যেন এরা সবাই সৎ, ঝুট-ঝামেলাহীন নিরুপদ্রব জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত। এদের কেউ কস্মিনকালেও ধার-দেনা করে না; কারো কাছেই ক্রেডিট কার্ড নেই। সবাই যা রোজগার করে তার ভতরই কেবল চলাফেরা করে ! মোদ্দাকথা , আসমাকে নিয়ে সবার ভেতর সততার বৃষ্টি হচ্ছে এখানে ।
অনেক্ষণ এবং বেশকদিন ধরে এ বিষয় নিয়ে কচলাকচলি করবার পর তিন্নিই প্রথম বুদ্ধিটা দেয় থ্রি-পিছ বিক্রেতা মহিলাকে। নিজের মোবাইল খুঁজে খুঁজে একটি সেল নম্বর বের করে কাগজের টোকায় সেটি লিখে দিয়ে বলে উঠল,‘ নাও, এই নম্বরটা ওই মহিলার হাজব্যান্ডের। টেলিফোন কর। ’
মহিলা আমতা আমতা করতে থাকে। বলে ‘, আর কডা দিন অপেক্ষা করলে বালা অয় না আফা ?’
‘যার লাইগা কাইন্দা মরি , হের বাড়িত বিয়া। আরে বেটি , অক্ষণ রিং কর। কামে দিব। আমরা গরিবের দুঃখ বুঝি। তাড়াতাড়ি কর। ’ বলে তাড়া দেয় তিন্নিসহ সবাই।
এর দুদিন পর আসমা এসে উপস্থিত হয় স্কুলে। আসমাকে বেশ কাহিল দেখাচ্ছে তখন। হাঁটতে পারছে না ঠিক মত। ওকে দেখেই ছুটে গেল তিন্নি ,‘ ভাবী , বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে তো?’
উত্তরে আসমা কোন কথা বলল না। কাজের মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে চলে এল থ্রি-পিছ বিক্রেতা মহিলার কাছে । ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে কুড়ি হাজার টাকা ওর হাতে দিয়ে প্রশ্ন করল ,‘ মোকাদ্দেছের নম্বরটা কে দিছে তোমারে ? তিন্নি ভাবী ?’
মহিলা মাথা নেড়ে সায় জানায়। অপরাধবোধ ওর সমস্ত চেহারায় ; মাথা তুলতে পারছে না। কারণ, বিপদে পড়ে যখনি ওর কাছে হাত পেতেছে, খালি হাতে ফেরত আসে নি কোনদিন।
আসমা ঘাড় ঘুরিয়ে আড়চোখে একবার তিন্নিকে দেখে নেয়। চোখেমুখে বিস্ময় আর উস্মা মেশানো মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
আসমার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। তবু হাঁফাতে হাঁফাতে তিন্নির সামনে এসে দাঁড়ায়।
সঙ্গে সঙ্গে তিন্নি লাফ দিয়ে উঠে আসমাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে ,‘ আসমা ভাবী , কদ্দিন পর দেখা হল। কাল রাতে আপনাকে স্বপ্নে দেখেছি। টেলিফোন করব-করব করছি। এরই মধ্যে এসে গেলেন। মনের মিল আর কাকে বলে বলেন ! ’
‘আচ্ছা ভাবী , থ্রিপিছ বিক্রেতা ফেরদৌসীকে কি আপনি আমার হাজব্যান্ডের নম্বর দিয়েছেন ?’ তিন্নির আবেগের ধারে কাছে না ঘেঁষে সরাসরি প্রশ্ন করে আসমা।
‘ও যে চাইল। কোন অসুবিধা ভাবী ?’ যেন আকাশ থেকে পড়ল তিন্নি। কিছুই জানে না সে।
অদূরে সুলতানার দল মুখ টিপে হাসছে। মনে হচ্ছে , একটা সিনেমা চলছে চোখের সামনে।
‘ও কিছু টাকা পায় তো আমার কাছে ভাবী। সেটা কমপ্লেন করেছে মোকাদ্দেছের কাছে। আপনারা থাকতে ও কাজটা কিভাবে করল ?’ আসমার ক্লান্ত অবসন্ন চোখ দুটোয় ভিড় করে রয়েছে একরাশ বিস্ময়, লজ্জা আর ক্ষোভ।
‘হায় হায় ভাবী। কি বলেন ? ফেরদৌসীর এতবড় সাহস ? কটা টাকার জন্য এরকম করে? চড় মারতে পারলেন না ? আমি হলে তো আগে একটা চড় দিতাম , তারপর সব ফয়সালা। আমি আবার এসব বেআদবী একদম সহ্য করতে পারি না। ফাজিল মহিলা কোথাকার।’
আসমার শরীর দুর্বল ; সন্তানসম্ভবা হবার পর যত দিন গড়াচ্ছে তত ব্লাড-প্রেশার, রক্তশূন্যতা আর ক্ষুধামন্দা ওকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। এখন ওর মত এক উচ্ছল মহিলার বেশি কথা বলতে গেলেও নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। হাঁপরের মত ঘন ঘন দম নামে আর ওঠে।
আসমা আর কথা বাড়ায় না। কাজের মহিলার হাত চেপে কোনরকমে স্কুলগেটের দিকে চলে যায়।
গাড়ির সীটে শরীর এলিয়ে দিয়ে বিড় বিড় করে বলে ওঠে ,‘ আল্লাহ তুমি রহম কর। ওদের মনে শান্তি এনে দাও।’ আপনাআপনি চোখদুটো ভিজে যায় ওর।
ভ্যানিটি-ব্যাগ খুলে দ্রুত সানগ্লাস পরে নিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।