বিয়ে হলে নতুন সংসারে মেয়েদের একটি অবস্থান নির্ধারণ হয়, সে বাড়ির বউ হয়, বউ হওয়া মানে একটি নতুন জন্ম সুখ দুঃখ অনেক কিছু মিলিয়ে আপন ভুবন-সংসারের কর্তৃত্ব-এমন একটি ধারণা ছিল মতিজানের। কিন্তু এই সংসারে ওর অবস্থানটা যে কোথায় তা ও বুঝতে পারে না। এই সংসারের ওর কি প্রয়োজন সেটাও জানে না। মাথার ওপর আছে শাশুড়ি, সংসার তার, সে সংসারে মতিজান বাড়তি মানুষ। এই বাড়তি মানুষ হওয়ার কষ্ট ওর বুক জুড়ে। শাশুড়ির তীক্ষ্ন বাক্যবাণ বুক পুড়িয়ে খাক্ করে দেয়। তখন মতিজানের হৃদয় থেকে সংসারের সাধ উবে যায়। ও বিধবা হতে চায়।
মতিজানের শাশুড়ি গুলনূর, তার ছেলে আবুল। ছেলের জন্মের দেড় বছরের মধ্যে বিধবা হয়েছিল, এভাবে বাইশ বছর কেটেছে। স্বামীর ভিটে-জমি যা ছিল বেশ শক্ত হাতে তার দেখাশোনা করে সংসারটা টিকিয়েছে, ছেলেকে বড় করেছে। না, শ্বশুরকুল- না, বাপের কুল কারো কাছে কোনো সাহায্যের জন্যে গিয়ে দাঁড়ায়নি। গাঁয়ের লোকে বলে, বড়ো শুক্ত ম্যায়ামানুষ গো। এই অহংকার আছে গুলনূরের মনে। শক্ত হওয়াটাকে ও গৌরব মনে করে এবং এই হওয়ার ব্যাখ্যা ওর কাছে ব্যাপক। ফলে ও যা করে মনে করে সেটাই যথার্থ, এর বাইরে আর কিছু হতে পারে না। মতিজানের আশা ছিল স্বামীর কাছে, কিন্তু দেখল সে জায়গাও দখল করে রেখেছে শাশুড়ি। কখনো ওর মনে হয় মায়ের সংসারে আবুলও বাড়তি মানুষ। স্বামীকে নিয়ে সংসারের সাধ মিটল না বলে ওর প্রবল অভিমান যখন তীব্র হয়, তখন আবুল সংসার থেকে পালিয়ে যায়। মতিজানকে পরিষ্কার বলে দেয়, হামাক কিছু কব্যা না। হামি কিছু জ্যানি না। কিছু করব্যার প্যারমো না। মা-ই সব। হামার বুকের মদ্যি পা থুয়্যা চ্যাপা র্যাখছে।
আবুল হাত নেড়ে, ঠোঁট উল্টে কথা বলে খিস্তি আওড়ায়। খিস্তি কাকে উদ্দেশ্য করে ওর কথায় তা বোঝা যায় না। মতিজান দু’চোখ মেলে স্বামীকে দেখে। উদ্ভ্রান্ত চেহারা, রক্তাভ চোখ, সংসার সম্পর্কে উদাসীন। সংসারের ধার ধারে না। ওর গাঁজার আড্ডা আছে, মাস্তানি আছে, পকেটে টাকা নিয়ে গঞ্জে রসুইয়ের ঘরে ঢুকে পড়ে অনায়াসে। ওর কাছে মা কিছু নয়, বউও কিছু নয়। মতিজান এই সত্যটি বুঝে যাবার ফলে ওর ভেতরে রোখ চাপে। ও শাশুড়ির মতো শক্ত হতে চায়। শাশুড়ির গঞ্জনা ওকে ভেতরে ভেতরে জেদি করে তোলে।
বিয়ের এই নয় মাসে ওর চোখ এখন একদম খোলা-সেটা কোনোভাবেই বুঝতে পারে না। ডানে ফিরে না, বামে ফিরে না-নিচে তাকিয়ে না, উপরে তাকিয়ে না। চারদিক সাফ, কোথাও কুটোটি পড়েও ওর দৃষ্টি আড়াল করতে পারে না। এই সংসারের শুরুটাই কি খুব ভালো ছিল? নতুন সংসারে কয়দিন তো ঠিকমতো কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। এখন ভেবে দেখে বিয়ের সাতদিনও ওর ভালো কাটেনি। শাশুড়ি ভার, ঠিকমতো কথা বলে না। মতিজান ভয়ে ভয়ে সে মুখের দিকে তাকায়। স্বামীকেও বুঝতে পারে না। সেও ভালো করে কথা বলে না। রাতদিন বিড়ি টানে, ধোঁয়ায় ঘর ধোঁয়াটে করে রাখে। জোর করে শ্বাস টেনে হাঁফ ছাড়ারও উপায় নেই। মতিজান কিছু বলতে পারে না। এই গুমোট পরিবেশে ওর কেবলই ভয় করে। পা ফেলতে ভয়, হাঁচি দিতে ভয়। ইলিশ মাছের কাঁটা বাছার সময় হাত থমকে যায়। ভাতের গ্রাস মুখে তোলার সময় আড়চোখে দেখতে পায় শাশুড়ি ঝাঁঝালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মতিজানের বুকের ভেতর গুড়গুড় ধ্বনি গড়ায়, বর্ষায় মহানন্দার তুললে ও আতঙ্কে সিঁটিয়ে যায়। তখন কেবল খাওয়া শেষ হয়েছে। এলুমিনিয়ামের থালাটায় ঝোলের একটা চিত্র আঁকা হয়ে আছে। গুলনূর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, বিহার সুময় তুমহার বাপে কহাছিল আমার আবুলক ঘড়ি দিবে, সাইকেল দিবে। অক্যুনও প্যাঠালে না ক্যানহে?
মতিজান চুপ করে থাকে। তর্জনী দিয়ে থালার বুকে আঁকিবুকি কাটে। বাপের অবস্থা ও জানে, যা আয় তার চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয় সংসারে। কেমন করে ঘড়ি আর সাইকেল কিনবে? কোথা থেকে এতকিছু জোগাড় হবে না জেনেই ওর বাবা এইসব দেয়ার কথা কবুল করেছিল। এখন ? গুলনূর ঝাঁকিয়ে ওঠে, কথা কহাচ্ছো না যে ? মতিজান কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে, হামি কিছু জ্যানি না। গুলনূর চিৎকার করে ওঠে, জ্যানবে না ক্যানহে? জ্যানতি হবে।
মতিজান থরথর করে কাঁপে। থালার ওপর আঙুল স্থির হয়ে যায়। ভাতগুলো যেন গলার কাছে এসে থমকে আছে আর কিছু চেঁচামেচি হলে ওগুলো গলগলিয়ে বেরিয়ে আসবে। আর ফ্যাকফ্যাচ কর্যা ল্যাগবেন্যা। যাও থালাবাসনগুলা মাজ্যা আনো।
কাজ পেয়ে বর্তে যায় মতিজান। পালিয়ে বাঁচার এ এক দারুণ পথ। ও বাসন কোসন, হাঁড়িকুড়ি নিয়ে ডোবার ধারে আসে। তখন ভরা দুপুর, খরখরে রোদ চারদিকে। মতিজান নির্মিমেষে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে পারে ওর কোথাও কিছু পুড়ছে, দহন নেই- জ্বালাও নেই। কেবল বাবার ওপর প্রবল অভিমানে ওর কান্না পায়। হাঁটুতে মুখ গুঁজে চাপা কান্নায় নিজেকে উজাড় করতে চায়। বাবা কেন মিথ্যে আশ্বাস দিল? ওর বিয়ে না হলে কি ক্ষতি হত? ও তো চেয়েছিল গ্রামে সমবায়ের কর্মী বেলি বুয়ার সঙ্গে নকশী কাঁথার কাজ করতে। নিজের রোজগার নিজে করবে বলে ওর জেদ হয়েছিল। বাদ সাধল বাবা। মেয়ের বিয়ে না হলে তার মানসম্মান থাকবে না। যে কোনো উপায়ে বিয়ে দিতে হবে। কেন? কেন? মতিজান লাথি দিয়ে বাসন-কোসন ডোবার জলে ফেলে দিতে চায়। হায় বিয়ে, কোথায় সংসার, কোথায় স্বামী ? এই কি বাবার মান-সম্মান? গরীবের মান-সম্মান তো ভাত-কাপড়। খর দুপুরের রোদ মতিজানের মাথায় ঢুকতে থাকে বিড়ির ধোঁয়ায় ধোঁয়াটে হয়ে থাকা ঘরটা একটা রঙিন ফানুস হয়ে যায় ক্রমাগত উড়ছে, উড়ছে। ছোঁয়ার সাধ্য ওর নেই। তখন দুপুরটা ওর ভেতরে শত্র হয়ে জমতে থাকে। ও ভাবে, আমিও একটা শক্ত মেয়েমানুষ হব।
দ্রুতহাতে বাসন মেজে ঝকঝকে করে তুলতে হয় ওকে। ঝকঝকে না হলে গুলনূর ওকে ঘরে উঠতে দেয় না। মাঝে মাঝে সামান্য খুঁত ধরে রাগারাগি করে আবুল। রাগ হলে সেও মতিজানকে ঘরে ঢুকতে দেয় না। তখন বারান্দায় বসে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে মতিজান। ওর চোখ ধরে আসে না। মাথা ঝিমঝিম করে না। ওর বুকের ভেতর অন্ধকার শক্ত হতে থাকে। তখনও ও ভাবে, ওকে শক্ত মেয়েমানুষ হতে হবে।
দিন তো গড়াবেই, দিনের নিয়ম। মতিজানেরও দিন গড়ায়। ও বুঝে গেছে আবুল ওর জীবনে থেকেও নেই। মাসের অর্ধেক দিন রসুইয়ের ঘরে কাটায়। প্রথম প্রথম মতিজান এ নিয়ে কথা বলে মার খেয়েছে। এখন এ প্রসঙ্গটি আর তোলে না। ছেলের ঘরে ফেরা না ফেরা নিয়ে গুলনূর মাথা ঘামায় না। ছেলে যা করে তাতেই তার সায় আছে। বরং ছেলে ঘরে না ফিরলে সে বেশ স্বস্তিতেই থাকে। মতিজানকে বেশ নিংড়ানো যায়, আবুল সামনে থাকলে সবসময় সেটা হয়ে ওঠে না। নেহাৎই চক্ষু লজ্জার খাতিরে ছেলেকে মানতে হয়। তাছাড়া যৌতুকের ব্যাপারটি নিয়ে গুলনূর এখন সরাসরি ক্রোধ প্রকাশ করে। চেঁচিয়ে বলে, তুমহার বাপ একটা মিথ্যুক, প্রতারক। সাইকেল, ঘড়ি দিতে না পারবে তো কহাছিল ক্যানহে ?
গুলনূর উত্তেজনায় গালাগাল, চেঁচামেচি করে। আবুলও মায়ের সঙ্গে যোগ দেয়। সেদিন মতিজানের কণ্ঠ ধরে আসে, চুপ থাকতে পারে না। কাঁপা গলায় বলে, বাপজান ঠগ লয়, গরীব। বাপজান মিথ্যুক লয়। পয়সা ন্যাই বুল্যাক, ঘড়ি সাইকেল কিনব্যার সময় লাগচ্ছে।
চোপ হারামজাদি। আবার বড় কথা।
গুলনূর ওর চুলের মুঠি ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। গলায় দড়ি দিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। সারাদিন খেতে দেয়নি। মতিজান অনুভূতিশূন্য হয়ে যায়। চোখে জল নেই, বুকে জ্বালা নেই। বোধহীনতা ওর ভেতর শক্ত হয়ে জমতে থাকে। ও শক্ত মেয়ে মানুষ হতে চায়। সন্ধ্যায় গুলনূর দড়ি ধরে টেনে ডোবার ধারে নিয়ে গিয়ে বলে, হামি আর তুমহাক ভাত খ্যাওয়াবার প্যারমো না। খ্যাও, খ্যাও, ঘাস খ্যাও।
প্রচণ্ড কৌতুকে মায়ের সঙ্গে হাসাহাসি করে আবুল গঞ্জে রসুইয়ের কাছে চলে যায়। রাত হলে মতিজানকে বারান্দায় এনে এক থালা ভাত দেয় গুলনূর। ও শান্ত, সুবোধ হয়ে নিঃশব্দে ভাতগুলো খায়। তারপর ঘরের দরজা লাগিয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার নামে দু’চোখের সামনে। সারারাত ও একফোঁটা ঘুমোতে পারে না। বিছানায় ছটফট করে, মেঝেতে গড়িয়ে নেয়। শান্ত থাকার চেষ্টা করেও পারে না। অন্ধকারের সঙ্গে কথা বলে, অন্ধকার তুই বলে দে কেমন করে প্রতিশোধ নিতে হয়। কেমন করে? কেমন নিঃশব্দতার এই চরম মুহূর্তে ওর মনে হয় ওর একজন সঙ্গী দরকার, খুব কাছের কেউ, যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারবে। এখন ওর আনন্দ চাই। এভাবে মার খাওয়া জীবন আর নয়। মাতাল, জুয়াড়ি, পরনারী আসক্ত স্বামীর জন্যে ও কোনো দায় অনুভব করে না। একজন প্রতিপক্ষই ও সামনে দেখে, যে শক্ত ম্যায়ামানুষ বলে এই গ্রামে খ্যাত। তার সঙ্গেই মতিজানের যুদ্ধ।
দিন তো গড়াবেই, দিনের নিয়মÑমতিজানেরও দিন গড়ায়। আবুল কখনো বাড়ি আসে, কখনো আসে না। শাশুড়ি যৌতুক নিয়ে গালাগালি করলে মতিজান চুপচাপ শোনে। ও কতোদিন বাবার বাড়ি যায় না। বাবার বাড়ি থেকেও কেউ আসতে পারে না। ওর বড়ো ভাই দু’বার এসেছিল। গুলনূর খারাপ ব্যবহার করেছে। সাইকেল, ঘড়ি না নিয়ে আসতে নিষেধ করেছে। মাস ছয়েক হয়ে গেল কেউ আসেনি। গতবার বড়ো ভাই যাবার সময় চুপিচুপি বলেছে, তুই একনাও মন খ্যারাপ করব্যু না কয়্যা দেল্যাম। হামি আর বাপজান ঘড়ি আর সাইকেল জোড়া করব্যার চেষ্টা করিচ্ছি।
বড়ো ভাইকে তীব্র চোখে শাসিয়েছে মতিজান, না আপনেরা কষ্ট করবার প্যারবেন না। বাবা তো মিথ্যুক আর ঠগ হয়্যা গেছে। কিসের আবার ঘড়ি, সাইকেল ? আর হামি ? হামি তো গরু হয়্যা গেনু। ওরা হামাক ঘাস খ্যাবার কহে। খি খি হাসিতে মতিজান বাড়ি মাতিয়ে তোলে। এ বাড়িতে আসার পর এই প্রথম ওর বাঁধভাঙা হাসি। ওর ভাই বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। বারান্দা থেকে গুলনূর এমন বেয়াদবি হাসির জন্য তীব্র কণ্ঠে বকাবকি করে। মতিজান এই প্রথম শাশুড়িকে উপেক্ষা করে। উপেক্ষা করে হাসতেই থাকে। ওর ভাই মতিজানের অস্বাভাবিক চেহারা এবং হাসির শব্দে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়। এই পলায়নে মতিজানের মনে দুঃখ হয়Ñকষ্ট ওর বুক ছিঁড়েখুঁড়ে দেয়। ও চুপচাপ গোয়ালে আসে। গোয়ার পরিষ্কার করে ঘুঁটে বানাতে বসলে ওর দুপুর গড়িয়ে যায়। খররোদ পড়ে আসে তখন থেকে মতিজানের বুকের ভেতর উপেক্ষা করার শক্তি শক্ত হয়ে যায়।
সেদিন অনেক বেলায় প্রচণ্ড খিদে নিয়ে ভাত খেতে গেলে গুলনূর রান্নাঘরের দরজায় ওকে বাধা দেয়। মতিজান বুঝতে পারে গুলনূর আজ দুপুরে না ঘুমিয়ে ভাত পাহারা দিচ্ছে। ওকে আজ বেয়াদবি হাসির শাস্তি দেবে। বাধা পেয়ে মতিজান ঠাণ্ডা গলায় বলে, হামি ভাত খ্যামো। হামার ভুক ল্যাগেছে।
গুলনূর বলে, ভাত ন্যাই।
মতিজান চেঁচিয়ে ওঠে, ক্যানহে?
গুলনূর দাঁতমুখ খিঁচিয়ে হাত উল্টে বলে, ভাত দ্যামো না। ঘাস দ্যামো।
হামি তো এই বাড়ির কামের মানুষ। কাম কর্যা ভাত খ্যাই। বস্যা বস্যা ভাত খ্যাই না। হামাক ভাত দেয়্যা ল্যাগবি। মানষে কামের মানুষক ভাত দ্যায় না ?
মতিজান শাশুড়ির পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে। হাঁড়িকুড়ি উল্টে ভাত পায় না। ছিকার ওপর এক সানকি ভাত ঢাকা দেয়া ছিল। ওটায় হাত দিতেই শাশুড়ি ছুটে আসে, হাত দ্যাবা না কয়্যা দেল্যাম। ইগুলান আবুলের ভাত।
সেই খি খি হাসি হেসে ওঠে মতিজান। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, তার লিগা রসুই ভাত রান্ধ্যা থুছে। আপনার ভাবনা কি ?
কি কল্যা? তুমহার এত বড়ো সাহস ?
মতিজান কোনো জবাব দেয় না। সানকিতে রাখা ভাত-তরকারি বুকের কাছে জাপটে ধরে খেতে থাকে। বুঝতে পারে সানকি হাতছাড়া করে খাওয়া যাবে না। বসে খেতে গেলেও শাশুড়ি আক্রমণের সুযোগ পাবে। সুতরাং ও এমন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে খায় যে গুলনূর এগিয়ে আসার আগেই ও সানকিটা ছুড়ে মারতে পারবে, ঠিক মাথা বরাবর। আবুলের জন্য মাছের বড়ো টুকরো রাখা হয়েছিল, আজ তা ওর কপালে, কি ভাগ্য! নাকি অধিকার? বেলি আপা তো এভাবেই বলত, নিজের অধিকার বুঝে নেয়া, ভাবতেই মতিজানের ঠোঁটে চিকন হাসি খেলে যায়। প্রচণ্ড খিদে নিয়ে ও গপগপিয়ে ভাত খেতে থাকে। শাশুড়ির দিকে তাকায় না। আড়চোখে দেখে নেয় তার অবস্থানটা, না সে একপাও সামনে এগুচ্ছে না। ও বুঝতে পারে গুলনূর বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শক্ত মেয়েমানুষের এ পরাজয় বড় বেশি অভাবনীয়। ওর বুকের ভেতরে জয়ের মহানন্দা, ঘন কুয়াশার আবরণ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে।
বিকেলে ও ডোবার ধারের বাঁশবাগানে আসে। জায়গাটা নিরিবিলি, ছায়াচ্ছন্ন। গাছের মাথায় ঘন পাতার জমাট আঠা যেন রোদ আটকে ধরে, সে রোদ নিচে পৌঁছয় না। স্যাঁতসেঁতে ভেজা মাটি নরম স্নিগ্ধ। মতিজানের কাছে পরাজিত শাশুড়ি ঘরে হয়তো ঘুমিয়েছে, সাড়াশব্দ নেই। দুপুরের ঘুম না ঘুমুলে তার স্বস্তি নেই, এ এক প্রিয় অভ্যেস? বাঁশঝাড়ের নিচে বসে মতিজান গুনগুনিয়ে গান গায়। বিয়ের পর এই প্রথম ওর খুব ভালো লাগছে। ডোবার ওপাশে বাছুর দুটো বাঁধা। গাই দুটো চরাতে লয়ে গেছে বুধে, ভারি ছটফটে ছেলে। একদণ্ড বসতে পারে না। মাঝে মাঝেই মতিজানকে বলবে, একটা গপ্প কহান না ক্যানহে ভাবী !
কিসের গপ্প ? রাজার ?
ও মাথা নাড়ে। মতিজান ওকে রাজার গল্প বলে। সাত-সমুদ্র তেরো নদীর কথা বলে। শুনতে শুনতে বারো বছরের বুধের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই মুহূর্তে বাড়িতে বুধে নেই। মতিজানের মনে হয় আজ ওর বুকভরা রাজার গল্পও নিজেই সাত-সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে চলে যাচ্ছে। বুধেকে ওর এই কথা জানানোর খুব ইচ্ছে হয়।
বাঁশঝাড় পেরিয়ে বাড়ির সদরে আসতেও ও লোকমানের মুখোমুখি হয়। লোকমান ওকে দেখে হাসে। লম্বা, পাতলা শরীর, চোখে চোখ পড়লে শরীর কেঁপে যায়। অনেকবার এ বাড়িতে এসেছে। আবুলের বন্ধু। আবুল বেশ কয়েকদিন বাড়ি না ফিরলে লোকশানের হাতে সদাইপাত্তি পাঠায়। লোকমান এই পথে প্রতিদিন গঞ্জেও যাতায়াত করে। লোকমানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল না, সাহসও ছিল না। আজ লোকমান ওকে সদরে দেখে অবাক হয়।
-ভাবী ক্যাংকা আছেন ?
– ভালো।
মতিজান সহজে হাসে। হাসিতে মুক্তো ঝরে, লোকমান চমকিত হয়।
-ন্যান। আপন্যাকেরে সদাই।
মতিজান হাত বাড়িয়ে সদাই নেয়। সহজভাবে বলে, চলেন ছ্যাওয়ায় বসবেন হানে। পান খ্যাবেন ?
কথায় সুর ঝরে। লোকমান চমকিত হয়। ইচ্ছে হয় দু’দণ্ড বসে যেতে। তবু দ্বিধা নিয়ে বলে, আজ য্যাই।
-আবার অ্যাসবেন। অ্যাসবেন তো ?
-অ্যাসবো, আবার অ্যাসবো।
লোকমান দু’চোখ উজ্জ্বল করে বলে। মতিজান ঘাড় ঝাঁকিয়ে সহজ ভঙ্গিতে হেঁটে বাড়িতে ঢোকে। চলায় ছন্দ উথলে ওঠে। লোকমান চমকিত হয়। এতদিনের দেখা মানুষটা কি এইরকম ছিল ? ওর দ্বিধা কাটতে সময় লাগে।
সদাইপাতি বারান্দায় রেখে উদাস হয়ে বসে থাকে মতিজান। গুলনূর এখনো ঘুমুচ্ছে। উঠেই সদাই খুলতে বসবে। সদাই মতিজান খুলতে পারে না। খোলার কোনো ইচ্ছাও ওর হয় না। আজ আরও অবহেলায় ফেলে রেখেই ওর স্বস্তি। পারলে ঐ ঝোলাটা ও ডোবায় ফেলে দিত, কিন্তু শাশুড়ির সঙ্গে অকারণ ঝগড়া ও বাধাতে চায় না। ওর বিষণ্নতা ওর চারপাশে তুমুল বৃষ্টির মতো প্রবল হয়ে ওঠে। বছর গড়িয়ে গেলো তবু মা হতে পারল না। ওর শরীর মোড়ায়, হাড়গোড় থেকে কষ্টের কড়কড় শব্দ উঠছে। রসুইয়ের ঘরে আবুল সব লুটছে। ওর চারদিকে ব্যাপক শূন্যতা। মতিজানের উদাসীনতা কাটে না।
সেই পরাজয়ের পর গুলনূরের কণ্ঠে এখন ভিন্ন সুর। যখন তখন খোঁচা দেয়। বাঁকা কথায় খলবলিয়ে ওঠে কণ্ঠ। সরাসরি জিজ্ঞেস করে, তুমহার ছওয়াল হয় না ক্যানহে ?
মতিজান হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এ প্রশ্নের কি জবাব হয় ? একবার বলতে চায়, আপনার ছাওয়ালেক পুছ করেন না ক্যানহে ? কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নেয়। কথার কোনো জবাব না দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে কাজে চলে যায়। পেছন থেকে শুনতে পায় শাশুড়ি কণ্ঠ চড়িয়ে বলছে, হামার বংশের বাত্তি কুণ্ঠে পামু গো ? ও আল্লাহরে।
সেই সুর শুনে মতিজানের শরীর চিড়বিড় করে। ধম্ করে পা ফেলে ঘুরে দাঁড়ায়। দেখে শাশুড়ি পেছন দরজা দিয়ে পাশের বাসায় যাচ্ছে। ও ফিরে এসে বারান্দায় বসে, মাথা ঝিমঝিম করছে। বুঝতে পারে শাশুড়ি এখন ওর বিরুদ্ধে বাঁজা মেয়েমানুষের অভিযোগ ওঠাবে। শরীর অসাড় লাগে মতিজানের। তাইতো, কেন ওর সন্তান হচ্ছে না? ও নিজেও তো মা হতে চায়। এ প্রশ্নের উত্তর ওকে কে বলে দেবে? দুঃখে কণ্ঠে মতিজানের চোখ ছলছল করে।
বুধে এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। কোঁচড় ভর্তি জাম নিয়ে এসেছে।
-ভাবী খ্যান। দ্যাখেন কত্ত জাম।
মতিজান দু’চোখ মেলে বুধের দিকে তাকিয়ে থাকে। কথা বলে না। অন্যদিন হলে ও চেঁচামেচি করতো। বলত, বুধে একটা সোনার ছেলে। আজ এই প্রশংসাটুকু না পেয়ে বুধে মাথা ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে, বুজছি, আম্মা খারাপ কথা কহাছে না ?
মতিজান জবাব দেয় না। বুধেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করে। বুধেকে তো বলা যায় না যে শাশুড়ির খারাপ ব্যবহারে আজ ওর দুঃখ নয়, দুঃখ মা না হতে পারার যন্ত্রণায়।
বুধে ফিকফিসিয়ে বলে, ক্যান্দবেন না ভাবী। আপনের শাশুড়িটা খুব খারাপ গো।
জামগুলো বারান্দায় ফেলে রেখে বুধে দৌড়ে চলে যায়। তখন গুলনূর পাশের বাড়ির নূরের মাকে বলে, বুবু হামার বৌটা বান্জা গো। নইলে ছাওয়াল হয় না ক্যানহে ?
নূরের মা খি খি করে হাসে, বান্জা তো কি হয়েছে? ছাওয়লক আবার বিয়্যা দাও। অক্যুন মেলা টেকা লিয়া বিয়া দিও।
গুলনূর খুশি হয়ে এসে মতিজানকে একথা শুনিয়ে দেয়। বংশের বাতি না হলে তার জীবন যে বৃথা হয়ে যাবে একথাও ঘোষণা করে। মতিজান সাড়াশব্দ করে না। মাথার মধ্যে প্রবল ঘূর্ণির মতো বিয়ে শব্দ ঘুরপাক খায়। দুদিন পর আবুল বাড়ি ফিরলে রাতে বংশ রক্ষার কথা ওঠায় মতিজান। শুনে খেঁকিয়ে ওঠে আবুল। বলে, বংশের পোঁদে লাথ্থি।
-তুমহার মা যে চ্যাহে?
-মাকে কহাস…
বলেই থেমে যায়। অস্ফুট শব্দে খিস্তি করে। সে খিস্তি শুনে মতিজান বেকুব বনে যায়। মনে হয় পেটের ভেতর কোনোকিছু নড়েচড়ে উঠে নাড়িভুঁড়ি খামচে ধরে। অসুস্থ লাগে ওর। তবু আবুলের মুখভরা গাঁজার গন্ধে শ্বাস নিয়ে মতিজান নিজের জীবনের ওপর রেগে উঠতে চায়। লাথি দিয়ে ফেলে দিতে চায় শরীরের ওপর চেপে থাকা আবুলকে। কেবলই মনে হয়, সময়ের অপেক্ষা, শুনতে পায় বুধের ডাক। গাঁজার গন্ধ বুকের ভেতর শক্ত হয়ে উঠলে লোকমানের দীর্ঘ, ছিপছিপে শরীরটা ওর হাতের কাছে চলে আসে। ও ছুঁয়ে দেখার জন্যে হাত বাড়ায়। এবং সেই শরীরটা ওর মুঠোর মধ্যে পুঁটলি পাকিয়ে ঢুকে যায়।
একদিন দুপুরবেলা মেঘ করে বাতাস ওঠে, আকস্মিক ঝোড়ো বাতাস, বুধে মাঠ থেকে ফেরেনি। কাছাকাছি কোথাও থেকে গরুর হাম্বা শোনা যায় না। গুলনূর সকালে কানসাট গেছে, ভাসুরের বাড়ি বেড়াতে। বলেছিল, বিকেল নাগাদ ফিরবে। দু’দিন ধরে আবুল বাড়ি নেই। মতিজান বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে রুমালে ফুল তোলে। শাশুড়িকে লুকিয়ে এ কাজটি করতে হচ্ছে ওকে। রুমালটা লোকমানকে দেবে। লোকমানের সঙ্গে ওর একটা সহজ সম্পর্ক হয়ে গেছে। লোকমান জানে কখন গুলনূর ঘুমোয়। কখন বুধে থাকে না, কখন বাঁশঝাড়ের রোদ ছায়ার মতো বিছিয়ে থাকে। তখন মতিজানের হাতে অঢেল সময়, সাত-সমুদ্র তেরো নদী পেরোতে থাকে।
ঝোড়ো বাতাসে উঠোনের ধুলো উড়ে এসে মতিজানের চোখমুখ ধাঁধিয়ে দেয়, চুল এলোমেলো হয়ে যায়। ও নিজেকে সামলাতে না সামলাতে দেখতে পায় দৌড়ে উঠোন পেরিয়ে লোকমান বারান্দায় এসে ওঠে। হাতে একগাদা সদাই।
তখন ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে, কিছুক্ষণের মধ্যে সেটা মূষলধারায় গড়াতে থাকে। বাজ পড়ে, বিদ্যুৎ চমকায়। ঘরের ভিতর লোকমান দুই হাতে মতিজানকে বুকের ভেতর চেপে ধরে। এই প্রথম, এই প্রথম মতিজান একজন পুরুষের স্পর্শ প্রবল আবেগে অনুভব করে। বুঝতে পারে আবুলের সঙ্গে লোকমানের অনেক ব্যবধান।
দিন গড়ায়, দিন তো গড়াবেই, দিনের নিয়ম। মতিজানের দিনগুলো এখন অন্যরকম। ও মা হবে। সেদিনের ঘটনার পর প্রথম মাসে ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল মতিজান, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া-একলা ঘরে নিজের সঙ্গে উথাল-পাতাল। মতিজানের সামনে সব বন্ধ দরজা খুলে যায়। খবরটা শোনার পর বাঁকা চোখে তাকায় আবুল, ত্যালে বংশরক্ষা হল।
শাশুড়ি শুনে প্রথমে খুশি হতে পারে না, থম ধরে থাকে। এ তার দ্বিতীয় পরাজয়। এত দ্রুত পরাজিত হবে ভাবতেই পারে না। তারপর বাঁকা চোখে তাকিয়ে রূঢ় কণ্ঠে বলে, মাইয়া ছাওয়াল বিয়াবার পারব্যা না।
মতিজান বলে, আপনার আবার পুরুষ ছাওয়ালের শখ ক্যানহে? আপনার ছেলে তো আপনাকে পুছে না।
-না পুছলে তোর কি রে হারামজাদি। তুই ছেলে বিয়োবি, না বিয়ালে ভালো হবে না কহ্যা দিল্যাম।
শাশুড়ির নিঃশ্বাসে গরম হলকা, তা মতিজানের মুখে এসে লাগে। ও জানে এ বছর দারুণ খরা। ফসল পুড়ছে, মাটি ফাটছে। মতিজানের শরীর জুড়ে ক্লান্তি। ক্লান্ত শরীর ছিঁড়েখুঁড়ে যেতে চায়। শারীরিক দুর্বলতাকে উপেক্ষা করে মানসিক শক্তি দিয়ে।
যথাসময়ে একটি মেয়ের জন্ম দেয় মতিজান। আবুল হো হো করে হেসে বলে, বংশরক্ষা তো হল না।
গুলনূর গম্ভীর। নাতনির মুখও দেখেনি। শুধু বুকের ভেতর মেয়েকে আঁকড়ে ধরে মতিজান, আবেগে সোহাগে নিজেকে উজাড় করে ফেলে। মেয়ের জন্মের কারণে চারদিকের এতকিছু উপেক্ষার মধ্যেও এক অন্তহীন আনন্দের মহানন্দা ওর চারপাশে থৈ থৈ করে। শাশুড়ির মুখের সামনে মতিজান মেয়েকে নাচায়, দোলায় এবং গান গেয়ে ঘুম পাড়ায়। মতিজানের এই আনন্দ সহ্য হয় না গুলনূরের । সে মারমুখী হিংস্র হয়ে ওঠে। মতিজান ভেতরে ভেতরে শক্ত হয়ে বলে আমি পারলে শত মেয়ের জন্ম দিতাম। এখন ও আর চুপ করে থাকে না। তারস্বরে কথার জবাব দেয়, ঝগড়া করে। গুলনূর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ইদানীং আবুল ঘরে একরকম ফিরেই না। মতিজান শুনেছে রসুইকে ছেড়ে দিয়ে ও আর একজনের সঙ্গে জুটেছে। ওর এখন ব্যস্ত সময় কাটে। মতিজানের জেদ হয়।
বছর ঘুরতে আবার লোকমান, এবারও একটি মেয়ের জন্ম দেয় মতিজান। গুলনূর সাত দিন চুপচাপ থাকে। তারপর ঘোষণা দেয়, যে বউ কেবল মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয় তাকে সে সংসারে রাখবে না। ছেলে বাড়ি এলে এই বউকে তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবে।
মতিজান চুপচাপ শাশুড়ির এই ঘোষণা শোনে। ওর এখন বেশি কিছু ভাবার সময় নেই। বাচ্চাদের নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটে। তার ওপর সংসারের প্রতিটা কাজও করতে হয়। ক্লান্তিতে-শ্রান্তিতে শরীর ভেঙে আসে।
মাসখানেক পরে আবুল ফিরে এলে গুলনূর তার ঘোষণার কথা সরবে ছেলেকে বলে। গাঁজার ঘোরে ছিল আবুল। মা’র কথা শুনে চমকে ওঠেÑ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে য়ায়। গুলনূর চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে, অক্যুনই অক্যুনই হারামজাদিরে বাড়ি থিকা ব্যার করবো।
আশেপাশের বাড়ির লোকজন এসে উঠোনে ভিড় করে। মতিজান দু’মেয়েকে দু’হাতে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে ভিড়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। গুলনূর তখনো সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে, গালিগালাজের তুবড়ি ছুটছে। মতিজান রুখে দাঁড়ায়, মুখ খ্যারাপ করব্যান না, কহা দিল্যাম।
গুলনূর চেঁচিয়ে বলে, আজ থিকা হামার সংসারে তুমহার ভাত ন্যাই। হামি হামার ছাওয়ালোক আবার বিয়া করমো। হামার বংশে বাত্তি লাগবে।
সবাইকে সচকিত করে দিয়ে খি খি করে হেসে ওঠে মতিজান। বলে, বংশে বাত্তি ? আপনের ছাওয়ালের আশায় থ্যাকলে হামি এই দুডাও পেতাম না।
– কি কহালা ?
গ্রামের শক্ত মেয়েমানুষ গুলনূর বিস্ফারিত দৃষ্টিতে মতিজানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভিড়ের মধ্যে গুঞ্জন। দু’হাতে দু’মেয়েকে বুকের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রেখেছে মতিজান। মায়ের বুকের ভেতর থেকে জ্বলজ্বলে চোখে সবার দিকে তাকায় মতিজানের মেয়েরা।