আলগা পিড়িত

আলগা পিড়িত
‘বাবু আমি মরে যাব, আমি ২০ তলা বিল্ডিং এর উপরে উঠলাম। তুমি আমায় ক্ষমা করো বাবু।’ সিয়াম তার গার্লফ্রেন্ডের ফোন থেকে এমন মেসেজ পেয়ে লাফ দিয়ে ওঠে। পটাপট করে আগুন বরাবর রিপ্লে করে…..
–নাআআআআ…এ হতে পারেনা বাবু।
-কেন হবেনা বাবু, আমি আর বাঁচতে চাইনা।
–তুমি এটা করতে পারোনা বাবু, আমি কাকে নিয়ে বাঁচব, কার সাথে ঝগড়া করব?
সিয়াম এসব মেসেজ করছে আমি আমার মোবাইল দিয়ে দেখছি। ওর আইডি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ফোনে লগইন করছি। তাই ও যা বলছে সব দেখছি। কিন্তু এমন কথাবার্তায় মোটামুটি শিহরিত। সিয়ামের গফ মিম মেসেজ দিলো….
–তুমি আমাকে আঁটকিও না সিয়াম, এই জীবন আমি চাইনা।
-প্লিজ গুলুমুলু ইঁন্দুরের ছাউটা তুমি এটা করোনা।
–আমি করব করব, আমার লাফিয়ে মরার শখ বাবু।
-এখন কেন মরবা? প্লিজ আমার চিকার ছাউটা এমন করেনা।
–আমায় বাঁধায় দিওনা বাবু। আমি লাফ দিলাম….
-না দিওনা লাফ।
–দিলাম বাবু, আআআআআআ……
-এইতো আমি উড়াল দিলাম…ঐইইইইইই হুশশশশ… উফ ধরে ফেলছি বাবু।
–এটা কেন করলে তুমি বাবু। আমাকে মরতে দিলেনা?
-আমি বেঁচে থাকতে তোমার কিচ্ছু হতে দিবনা।
–এত ভালোবাসো আমায়?
-অনেক ভালোবাসি বাবু। ঠিক যেমন ইঁন্দুর গর্তে ধান নিতে যতটা ভালোবাসে।
–উফফফ…আমার সোনাটা লাপ্পিউউ….
-উম্মাহ বাবু।
এতক্ষণ সিয়ামে আর মিমের এমন কনভার্সেসন দেখে পুরাই আবুল হায়াৎ হয়ে গেলাম। কেমনে কি ম্যান? মেসেঞ্জারে ২০ তলায় উঠলো সেখান থেকে লাফ দিলো আবার সিয়াম উড়াল দিয়ে তাকে বাঁচালো। অথচ সিয়াম দিব্বি আমার পাশে শুয়ে আছে। হাউ ইট পসিবল বেয়াই? নু নু এটা হতে পারেনা। এমন আলগা পিড়িত দেখে আমি শিহরিত হলাম। আবেগে চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। তারপর আর বের হলোনা। পেঁয়াজও নেই যে চোখে দিয়ে কাঁদব।
সিয়ামকে শোয়া থেকে টেনে তুলে পাছায় সজোরে লাথি মারলাম। সিয়াম কুইইই শব্দ করে উপুড় হয়ে পরলো। আমি দৌঁড়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে কাঁদলাম। আবেগে মনের ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠলো। সেই আবেগ নিয়ে মনে থাকা সাদিয়া, মালিহা, পলি, ইসরাত, নুসরাতকে নিয়ে প্রচুর ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। আধা ঘন্টা আবেগ বিসর্জন দিয়ে রুমে চলে আসলাম। সিয়াম কথাই বলে যাচ্ছে। মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড। সিয়াম বলল….
–বাবু, রুবেল আমায় লাথি মেরেছে।
-ইসসস রুবেল ভাইয়া খারাপ। ব্যথা পেয়েছো?
–হুম।
-আচ্ছা ফুঁ দিয়ে দিচ্ছি সেরে যাবে। ফুঁউউউউ…..ব্যথা কমেছে বাবু?
–হ্যা বাবু এখন আর ব্যথা নেই….তুমি অনেক বড় ডাঃ বাবু ফুঁ দিয়ে সাড়িয়ে দিলা।
-উম্মাহ বাবুটা।
আমি এমন কথোপকথন দেখে হতাশ হয়ে চেয়ে রইলাম। মনে পাহাড় সমান রাগ নিয়ে বললাম….’ডিমের গরে ডিম তুই বালের ডাঃ।’ সেদিন-ই বন্ধুর আইডি লগআউট করে ফেললাম। আলগা পিড়িত দেখে ডিপ্রেশনে পরার কোন মানে হয়না। দিনদিন সিয়ামের এই পিড়িত বেড়েই চলছে। আমার মনের অবস্থাও ভালো না। সিদ্ধান্ত নিলাম কি করা যায়। অতঃপর বুদ্ধিও পেলাম। সঠিক দিনক্ষণ দেখে সিয়ামকে বললাম….
–তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।
-কি সারপ্রাইজ?
–প্লাজা বিল্ডিং এর ২০ তলায় উঠিস আগামিকাল।
-কিন্তু কেনো?
–তোর আর মিমের পবিত্র ভালোবাসার জন্য ট্রিট দিব।
সিয়াম খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বলল..’অবশেষে আমাদের ভালোবাসায় সাপোর্ট দিলি।’ আমি মুচকি হেসে মাথা ঝাকালাম। পরদিন আমি ২০ তলার ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর সিয়াম আর মিম আসলো। ছাদে একটা টেবিল ছিলো, সেখানে বড় কেক আর বেলুন দিয়ে সাজানো ছিলো। এসব দেখেই ওরা অবাক হয়ে গেলো। খুশিতে মিম আমাকে বাদ দিয়ে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরলো। ভাগ্যিস হাতে গুলি ছিলনা। নইলে পুট্টুস করে গুলি করে মারতাম হ্রামজাদি একটা। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ওদের ডাকলাম। একসাথে মিলে কেক খেলাম। তারপর সিয়াম আর মিমকে বললাম….
–তোমরা দু’জন ছাদের রেলিং এর পাশে উল্টো ঘুরে দাড়াও।
-কেনো?
–উহু ঘুরে দাড়াও, সারপ্রাইজ আছে।
-উফফফ ভাইয়া আপনি না, পাগল একটা। আচ্ছা ঘুরলাম। (মিম)
ওরা দুজন ঘুরলো। আমি বললাম চোখ বন্ধ করতে। আমার কথা অনুযায়ী ওরা চোখ বন্ধ করে ফেলল। আমি মনে মনে কতক্ষণ লুঙ্গী ডান্স দিলাম। তারপর দিলদারের মতন ক্যারাটি স্টাইলে দৌঁড়ে গিয়ে ডিগবাজি দিয়ে দুজনের পিঠে ধারাম করে কিল বসালাম। কিল সামলাতে না পেরে দুজনই ‘আআআআআ’ বলে চিৎকার দিয়ে নিচে পরে গেলো। আমি মুচকি হেসে বললাম ‘আমার ডিকশনারিতে কোন আলগা পিড়িতের জায়গা নেই।’ পুনশ্চঃ আজ ২০ দিন পর সিয়াম আর মিমের চল্লিশা খেতে যাচ্ছি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত