রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষে ওয়েটার ৪৬০ টাকার বিল ধরিয়ে দিলো। পাঁচশো টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে বললাম, বাকিটা তোমার বকশিশ। ওয়েটার ভ্রু কুঁচকে মুখ কালো করে চলে গেলো।
চল্লিশ টাকা বকশিশে মানুষটা যে খুব একটা খুশি হয়নি মুখের ছাপে তা স্পষ্ট। তাকে খুশি করতে না পেরে আমিও খানিকটা কষ্ট পেলাম। মনে মনে ছোটোলোক গরিব বলে কতোগুলো গালি দিয়েছে কে জানে! রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে এক রিক্সাওয়ালাকে ডাক দিলাম; ঐ রিক্সা যাবা? মুরব্বি খুনখুনে বয়সি একটা লোক। শরীরের মাংস থেকে হাড্ডিগুলো এক এক করে গুণা যাবে। ফকিন্নির বাচ্চা না হলে এ বয়সে রিক্সা চালানোর কথা না। রিক্সাওয়ালা কাছে এসে বললো; কই যাইবেন? আমি রিক্সায় উঠে বললাম; নিকেতন ৩নং রোড চলেন রিক্সা চলছে। গার্লফ্রেন্ডকে কল দিতেই আদুরে কণ্ঠে বললো; আমার স্ট বেরি ফ্লেভার আইসক্রিম আনছো? আমি মিনমিন করে বললাম; ইয়ে মানে স্ট বেরি ফ্লেভারেরটা পাইনি, আজকের মতো চকলেট ফ্লেভারটা দিয়ে চালিয়ে নাও কাল যেখান থেকে পারি স্ট বেরি ফ্লেভারের’টা এনে দিবো, জানো এটা কিন্তু হেব্বি টেস্ট আমি খেয়েছি। গার্লফ্রেন্ড কড়া গলায় বললো; তোর হেব্বি টেস্ট তুই খা, রাখছি বাই….
ইতিমধ্যে ফ্রেন্ড একজন ফোন দিয়ে বললো; মামা আজ কিন্তু চিল হবে চিল, তোর কিন্তু পাঁচশো ধরছি। ‘আরে বেটা এটা কোনো ব্যাপার! চলে আসবো’ বলে ফোন কেটে দিলাম। গার্লফ্রেন্ডকে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজে দিয়ে বাবু সোনা ময়না টিয়া ‘কাল এনে দিবো’ বলে অনেকক্ষণ বুঝিয়েও কিছুতে কিছু হলো না, অবশেষে ব্লক লিস্টে পরে ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। ততক্ষণে রিক্সাওয়ালার ‘ মামা নামেন ৩ নম্বর আইয়া পরছি’ শব্দে কোমা থেকে ফিরে ওহ বলে নেমে পরলাম। মানিব্যাগ থেকে দশ টাকার তিনটা নোট বের করে দিয়ে গেটের দিকে হাঁটা ধরলাম…
রিক্সাওয়ালা পিছন ঢেকে বললো; মামা এইডা কি দিলেন? আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম; কি দিছি মানে চিনো না? টাকা না চিনেই রিক্সা চালাইতে আসছো? রিক্সাওয়ালা গামছা দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বললো; মামা আর পাঁচ’টা টেহা দ্যান…গার্লফ্রেন্ডের স্ট বেরি ফ্লেভার না পাওয়ার বেদনা এমনিতেই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ব্লক লিস্টে পরে মাথার টেম্পারেচার হাই লেভেলে অবস্থান করছে, তার উপর আবার রিক্সাওয়ালা বারতি পাঁচ টাকা দাবি করায় মাথা আরো গরম হয়ে গেলো। ঝাড়ি দিয়ে বললাম; আর পাঁচ টাকা দিবো মানে! ভাড়া ত্রিশ টাকা ত্রিশ টাকাই তো দিছি রিক্সাওয়ালা ভীতু গলায় বললো; মিলা রইদ তো মামা, যেহহহ গরম আর রাস্তাও ভাঙ্গাচুরা দেহেন ঘামাই নাইয়া ফালাইছি… আমি ধমকের সুরে বললাম; তো আমি কি এখন তোমায় সাবান এনে ঘসে দিবো? রিক্সাওয়ালা ভিখারি মতো হাত পেতে বললো; পাঁচটা টেহা বাড়াই দ্যান মামা….
মাথা দিয়ে এবার যেনো ধোঁয়া বের হতে লাগলো। বেটাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে রিক্সা থেকে নামিয়ে ফেললাম। কষে একটা থাপ্পড় মেরে গলা চেপে ধরে বললাম; হারামজাদা ভাড়া যা তা দেয়ার পরও পাঁচ টাকা চাস তোর সাহস তো কম না? রিক্সাওয়ালা আকুতি মিনতি করে হাতজোড় করে মাফ চেয়ে বললো; ভুল হইয়া গ্যাছে মামা ভুল হইয়া গ্যাছে, আর চামু না মাফ কইরা দ্যান বেটার হাতজোড় দেখে একটু মায়া হলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো হারামজাদার হাড্ডিগুলো এক এক করে খুলে নেই। নিজেকে সংযত করে বুড়ো টাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ গরম করে বললাম; যা এক্ষুনি চোখের সামনে থেকে বিদায় হ আর যদি কখনো ভাড়া বেশি চাইছিস তো…
রিক্সাওয়ালা তাড়াহুড়ো করে রিক্সা টেনে চলে গেলো। আমি গেটের ভিতর ঢুকে দারোয়ানের উপর রাগ ঝাড়লাম; কোত্থেকে যে এই ফকিন্নি গুলা আসে কে জানে! ওয়েটারকে বকশিস দিয়ে খুশি করতে পারলাম না, গার্লফ্রেন্ডকে খুশি করতে পারলাম না এদিকে ও আসছে ভিক্ষা চাইতে ‘মামা পাঁচটা টেহা বাড়াই দ্যান’। যত্তসব ফকির মিছকিনের দলগুলা…
গল্পের বিষয়:
গল্প