পাশের সিটের মেয়ে

পাশের সিটের মেয়ে
গাড়িতে উঠে আমার সিট টা খুজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আমার পাশের সিটে সেই ছেলেটা বসেছে, যাকে গত তিন বছর যাবৎ আমি ফেইসবুকে ফলো করছি। যার উপর আমি চরম রকমের ক্রাশড্। যার ছবি লেখা যা ই নিউজফিডে আসুক না কেন.. হৃদপিন্ডটা পিংপং বলের মত লাফাতে শুরু করে। আজ তার ই পাশে আমি বসবো। ওহ নো অনুভূতি টা প্রকাশ অসম্ভব। এক কথায় মনটা আনন্দে নেচে ওঠলো।আজ ঘুম ভাঙার পর কার মুখ দেখলাম মনে করার চেষ্টা করছি।
মনে পড়েছে.. আজ ঘুম ভাঙার পর পরই জানালা খুলেছিলাম। আর পাশের বাসার বান্দরটাকে ছাদে দেখেছি।
ধুর ওকে এভাবে বলাটা ঠিক হচ্ছে না।বিশেষ করে আজ।কারণ তার মুখ দেখলাম বলেই তো আজ ক্রাশের পাশে আমার সিট পড়লো। হোক না জানালা খুললে সে ট্যাব ট্যাব করে তাকায়। তবুও আজকের জন্য সে লাকি ছিলো। যাক আজকের মত তাকে বান্দর বললাম না। নামটা জোহান। আর জোহানকে আরে না না জোহানের মুখ টাকে আজকের মত ধন্যবাদ দিয়ে দিলাম মনে মনে। খুব ভাব নিয়ে পাশে বসলাম। আমি যাকে ফেইসবুকে ফলো করি তার আইডি নাম তাহিয়ান। ইশ ছেলেটা বাস্তবেও দারুন।আর তার স্টেটাস থেকে যতটুকু বুঝতে পারি মানুষ হিসেবেও দারুন পরোপকারী। তাকে একদর্শণেই যে কেউ বলবে…সুপুরুষ। ভাল করে তাকাচ্ছি না। যদি বুঝে যায় আর খুব ভাব নেয় তাই।
মিনি আয়না বের করো মুখ দেখার ভান করে আবার দেখে নিলাম। গাড়ি ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। গাড়ি গাতি যত বাড়তে লাগলো আমার মনে তাহিয়ান কে নিয়ে স্বপ্ন আরো ডালপালা নিয়ে বড় হতে থাকলো। একসময় ভাবলাম হয়তো গাড়ি বেশ জোরে একটা ঝাকুনি খাবে।তাতে আমি তাহিয়ানের সাথে নয়তো তাহিয়ান আমার সাথে ধাক্কা খাবে। স্যরি বলবে বা বলবো। তারপর গল্প শুরু করবো। আস্তে আস্তে পরিচিত হবো। তার পর চ্যাটিং মিটিং ডেটিং। কিন্তু গাড়িটা একদম পারফেক্ট চলছে। চালককে খুবই দক্ষ মনে হলো। গাড়ি ঝাকুনি খাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তারপর তাহিয়ান রুমাল বের করলো… তখন ই ভাবলাম রুমাল টা হঠাৎ বাতাসে উড়ে এসে আমার উপর পড়বে। রুমাল টা ফিরিয়ে দিতে গিয়ে হেলো বলে পরিচিত হবো।গল্প শুরু করবো। তার পর চেটিং মিটিং ডেটিং রুমালটা বাতাসে উড়লোই না। তারপর ভাবলাম গাড়িটা যখন কোন বাজার অতিক্রম করতে গিয়ে গতি কমাবে তখন কোন বাদাম ওলার কাছ থেকে বাদাম কিনতে জানালার পাশে বসা তাহিয়ানের হেল্প চাইবো। বাদাম কেনার পর বাদম খেতে দেবো।তার পর গল্প শুরু করবো। আস্তে আস্তে পরিচিত হবো। তার পর চেটিং মিটিং ডিটিং।
নিজের স্বপ্নে যখন বিভোর হঠাৎ খেয়াল করলাম তাহিয়ান জলদি করে পলিথিন ব্যাগ বের করলো। আর হড়হড়িয়ে বমি করতে লাগলো। বেচারার জন্য খারাপ লাগলো আমার। তাড়া তাড়ি করে পানির বোতল এগিয়ে দিলাম।যদিও আমার কারো বমি দেখলে মাথা কেমন কেমন করে। পেটের ভেতর প্রজাপতি উড়াউড়ি করে।তবুও পছন্দের মানুষটার বিপদে নিজের অনুভূতি কে গলাটিপে হত্যা করলাম।মনোবল বাড়ালাম। পানির বোতল নিয়ে মুখে পানি নিলো সে।আমার বোতল থেকে তাহিয়ান পানি খাচ্ছে, কি সুভাগ্য আমার। মনে মনে যখন খুশি হতে যাবো তখন ই পানি সহ আরো বমি তাহিয়ান আমার কাপড়ে উগড়ে দিলো। এবার দেখি আমার কান্না আসছে। নতুন আর খুব প্রিয় জামাটা শেষ। কিন্তু আবার নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলাম। আশ্চর্য হয়ে গেলাম নিজের মনোবল দেখেই। আবার কবিদের কথা বিশ্বাস করলাম..”মেয়েরা তার প্রিয় মানুষের জন্য সব পারে।” তাহিয়ান কোনভাবে স্যরি বললো। আমি তাড়াতাড়ি বললাম না না ঠিক আছে। আপনি ঠিক আছেন তো? তাহিয়ান মাথা দুলিয়ে হ্যা বললো। আমি বললাম আপনি সিটে গা এলিয়ে বসেন। আরাম পাবেন। সে আমার কথা শুনে সিটে গা এলিয়ে দিলো। আমি আরো একটু সরে গিয়ে তাহিয়ান কে স্বস্তিতে বসতে দিলাম।
জামা নোংরা হয়ে আছে তো হোক না। প্রিয় মানুষ টা তো এখন সুস্থ আছে। ভাল লাগছে। তাহিয়ান সুস্থ হলেই আমি ওর সাথে গল্প করবো। পরিচিত হবো। তার পর চ্যাটিং মিটিং ডেটিং একটু পর দেখি তাহিয়ানকে বেশ সুস্থ লাগলো। কথা বলবো যখন ভাবছি তখন দেখি সে ফোন টা বের করে ফেইস বুকে ঢুকছে। এখন নিশ্চই আমার কথা পোস্ট করবে।আচ্ছা কি পোস্ট করবে সে? দারুন মায়াবতী একটা মেয়ে আমার পাশে বসেছে। জীবন সঙ্গী হিসেবে এমন কাউকেই খুঁজছিলাম। নাহ এটা বেশি হয়ে যায়..সে নিশ্চই লিখবে জীবনানন্দের মায়াবতী বনলতা আজ আমার পাশের সিটে। নয়তো লিখবে সুনীলের বরুণাকে সুনীল খুজে না পেলেও আজ পাশের সিটে আমি তাকে পেয়েছি।আমার বরুনাকে পেয়েছি। নাহ অন্য কিছু আরো রোমান্টিক আরো মিষ্টি কিছু। ইশ কি লিখছে তাহিয়ান?
তাহিয়ানের পোস্ট করা শেষ। আমি তার দশ হাজার ফলোয়ারের মাঝে একজন।আমার তো আর একদম তর ই সইছে না। ফেইসবুক অপেন করে জলদি তাহিয়ানের স্টেটাস টা খুজলাম। প্রথমেই ধাক্কা লাগলো তার ঝকঝকে একটা ছবি দেখে। ছবির ক্যাপশনে লেখা… গাড়িতে আছি। আবারো এক ই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। একটা মেয়ে বসেছে পাশে। মেয়েরা তো দূর্বল চিত্তের। এটা যে সব মেয়ের ক্ষেত্রে সত্যি আবার প্রমাণ পেলাম। গাড়ি চলতে শুরু করতেই মেয়েটা হড়বড়িয়ে বমি করা শুরু করলো। যদিও বেপার টা জঘন্য কিন্তু কি আর করা। মানবতার খাতিরে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম।বমিতে কাপড় নোংরা না করে ফেললে আমি হয়তো আজ নবম ক্রাশ টা খেয়েই ফেলতাম।
আর পড়ার মত শক্তি বা ধৈর্য কিছুই ছিলো না।
রেগে মেঘে তাহিয়ানের দিকে তাকালাম। দেখি চোখ বন্ধ করে শোয়ে আছে সিটে। খুব জোরে একটা চড় মারার ইচ্ছাকে অনেক কষ্টে দমিয়ে রাখলাম। ঘুমন্ত মানুষ কে চড় মারার মত খারাপ মানুসিকতা আমার না। বমি করার পর ও তাহিয়ানকে এত ঘেন্না করে নি এখন যতটা করছি।ওর পাশে বসে থাকাটাকে এখন বিষ এর মত লাগছে। শক্ত করে বসে রইলাম।তবুও কেমন যেন বমি বমি করছে।মনে হচ্ছে একটা কীটপতঙ্গের পাশে বসে আছি। আমার স্টেশন আসলো। গাড়ি ঝাকুনি দিয়ে থামলো। তাহিয়ান চোখ খুলে তাকালো। আমার দিকে তাকাতেই ঠাস করে একটা চড় মেরে তাহিয়ান কে অবাক করে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লাম। পেছনে আর তাকাই নি। নেমেই তাহিয়ানের স্টেটাসে কমেন্ট করলাম…আমি তোর পাশের সিটে বসা মেয়ে। তারপর ব্লক দিলাম। আর জোহান কে আবার বান্দর বলে গালি দিয়ে নিজের পথে রওনা দিলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত