গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলল,
-বাবু, কালকে আমার জন্মদিনে কি গিফট দিবা। আমি আহ্লাদিত কন্ঠে বললাম।
-বাবু তোমার বিশতম জন্মদিনে তোমাকে সেরা গিফটাই দিবো, তুমি কোনো টেনশন করো না।
গার্লফ্রেন্ড খুশিতে টুটটুট করে ফোনটা কেটে দিলো। আমি ভাবতে লাগলাম মিমের বিশতম জন্মদিনে কি গিফট দেওয়া যায়। চার বছর ধরে মিমের সাথে রিলেশন আমার। এই চার বছরে তিন তিনটা জন্মদিনে ভালো কোনো গিফট দিতে পারি নাই। এই কারনে ভেবেছি, যে করেই হোক মিমকে ভালো একটা গিফট দিতে হবে। সকাল সকাল রওয়ানা দিলাম, মার্কেটে ঢুকে কিছু কেনা কাটা করলাম। তারপর একটা শপিং ব্যাগে সেগুলো প্যাকেট করলাম। এরপর একটা গিফটবক্সে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে চলে আসলাম। মিম আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমাকে দেখেই মুচকি একটা হাসি দিলো মিম। আমিও মিষ্টি একটা হাসি হেসে বললাম। “হ্যাপি বার্থডে” মিম বলল,
-আমার গিফট আমি পিছন থেকে বক্সটা বের করে মিমের হাতে দিয়ে বললাম।
“মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্ন অব দ্যা ডে” মিম কিঞ্চিৎ হাসি হেসে বলল,
“কি আছে বক্সটাতে, খুলে দেখি”
“খুলে দেখার দরকার নেই আমিই বলে দিচ্ছি কি আছে বক্সটাতে”
“বলোনা কি আছে”
“বক্সটাতে একটা হিজাব, একটা বোরখা, আর একটা জায়নামাজ আছে”
আমার কথা শুনে মিমের মুখটা শুকিয়ে গেল। মুখ গোমরা করে বলল, “গার্লফ্রেন্ডের বার্থডেতে কেউ বোরখা গিফট করে” “কেউ করে না তাতে কি হয়েছে, আমি করলাম, কেনো পছন্দ হয়নি তোমার” মিম রাগান্বিত হয়ে বলল, “আসলে তোমার সাথে প্রেম করাই আমার ভুল হয়ছে, আমার বোঝা উচিৎ ছিলো তুমি একটা কিপ্টা। তোমাকে কি “থামো, তোমার কথা বলার আগে আমি কিছু কথা বলতে চাই। মিম থেমে গেল, আমি বলতে শুরু করলাম। “তুমি আমাকে যাই বলোনা কেন তাতে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নেই কোনো অভিযোগ। আমাকে হয়তো তুমি সাময়িকের জন্য ভালো বাসো, কিন্তু আমি তোমাকে সারা জনমের জন্য ভালো বাসি।
তোমাকে বোরখা এই জন্য দিয়েছি যাতে অন্য কেউ তোমাকে না দেখতে পারে। জায়নামাজটা পরে তুমি নামাজ পরবে। আজ থেকে দুনিয়ার সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু আখিরাতের জন্য কাজ করবে। দুনিয়া দুই দিনের আর আখিরাত চিরদিনের, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় দুইদিনের জন্য পেতে চাই না, তোমাকে আমি চিরস্থায়ী আখিরাতে জনম জনমের জন্য পেতে চাই। দুনিয়াতে তোমাকে না পেলেও আমার কোনো আফসোস নেই, কিন্তু আখিরাতে তোমাকে আমি হারাতে চাই না। হয়তো তুমি ভাবছো এগুলো সামান্য গিফট, কিন্তু এগুলো মোটেও সামান্য গিফট নয়। এই তিনটা জিনিসের জন্য যদি তুমি চিরস্থায়ী আখিরাতের জন্য কাজ করতে পারো, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।
জানি তুমি আমাকে আবুল মার্কা প্রেমিক ভাবছো, যে এই বর্তমান যুগে গার্লফ্রেন্ডের বার্থডেতে বোরখা গিফট করে সে তো আবুলই। তবুও একটা বার এই আবুলের গিফট পড়ো, একটাবার আবুলের দেওয়া জায়নামাজ পরে নামাজ আদায় করো, দেখবে আল্লাহ সুবহানুওতায়ালা তোমাকে কতটা প্রশান্তি দান করেন। আজকের পর থেকে হয়তো তুমি আমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না, তবুও আমার কোনো দুঃখ নেই। যদি আখিরাতেই তোমাকে না পাই, এই দুই দিনের দুনিয়া না পাওয়ায় সবচেয়ে ভালো। সবশেষে একটাই কথা বলবো, তোমাকে দুই দিনের জন্য না চিরোদিনের জন্য পেতে চাই” কথাগুলো বলেই চলে আসলাম। মিম ঠাই দারিয়ে রইলো। হয়তো ভাবছে আমার কথাগুলো।
শরিরটা ক্লান্ত লাগছে, বাড়িতে আসতেই আছরের নামাজের আযান দিলো। মসজীদে গেলাম নামাজ আদায় করতে, মোবাইলটা অফ করে নামাজে দারিয়ে পরলাম। সারা দিনের ক্লান্তি যেন নিমিশেই দূর হয়ে গেল। ঈশা’র নামাজ শেষে ফোনটা বের করে দেখলাম ফোন অফ। অন করার সাথে সাথেই মিমের ফোন আসলো। কিছুক্ষন পর ফোনটা রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। আমি বললাম। “কি ব্যাপার কান্না করতেছো কেন? মিম কান্নাজরিত কন্ঠে বলল, “তুমি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলে, আবার ফোনটাও অফ করে রেখেছ। একবার জানতে চাইলে না আমি তোমার মতো তোমাকে চিরস্থায়ী ভাবে পেতে চাই কি না। এই তোমার ভালো বাসা। আমি প্রশান্তির একটা হাসি দিয়ে বললাম।
“কালকে আমার পরিবার তোমাদের বাড়িতে যাবে বিয়ের কথা বলতে। আমাকে বিয়ে করতে কি তোমার কোনো আপত্তি আছে? “তুমি চাইলে এখনই বিয়ে করতে রাজি। আমি মুচকি হেসে বললাম। “নামাজ পরেছো। “হুমম পরলাম। কালকে বিকেলে আমার সাথে দেখা করবে, তোমার বোরখা আর হিজাব পরে আসবো” আমি তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললাম। “আমার দেওয়া আবুল মার্কা গিফট পরে আসবা” মিম রাগান্বিত সুরে বলল, “মোটেও আবুল মার্কা বলবে না। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে সেরা গিফট”।
গল্পের বিষয়:
গল্প