লিচু

লিচু
জরিনা খালা টেবিলে বসে বসে আম খাচ্ছে। রুপন্তীর আম্মু সিরিয়াল দেখছে। মানে তাদের কোন টেনশন নাই!
এদিকে আমি টেনশনে মরছি। কিছুদিন ধরে ব্যাবসা খারাপ যাচ্ছে। সামনে বোধহয় না খেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু এদের কোন চিন্তাও নাই। এরা বিন্দাস! ও হ্যালো জরিনা খালা! একটু আস্তে খাও! আগামীকালের জন্য কিছু রাখো! ভাইজান, কাইলকার চিন্দা কইরা আইজকের দিন ক্যান খারাপ করমু? চিল ভাইজান! চিল! হ চিল! হাজার হাজার চিল আমার মাথার উপর ঘুরতাছে। আর তোমরা চিল করো!
রুপন্তীর আম্মু বললো, আরে রুপন্তীর পাপ্পা! আপনি এতো টেনশন নেন কেন? সব ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাবসা একটা
 গেলে আরেকটা আসবে! শুধু শুধু টেনশন নিয়ে লাভ আছে? মাথায় পানি ঢেলে ঘুমাতে চলে গেলাম। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে একটু হাঁটতে গেলাম। দেখি পুরো বাগানভর্তি আম আর আম! দুই তিন ট্রাকের মতো আম হবে। চিল্লাইয়া রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালারে ডাকলাম! এতগুলো আম কে অর্ডার করছে? রুপন্তীর আম্মু বললো, আমি জানি না! জরিনা খালা বললো, আই কিছু কইত ন ফারি! এতো আম আসলো কোথা থেকে? দারোয়ান বদরুদ্দীনরে ডাকলাম। সে বলল, রাতে কেউ আসেনি। তাহলে হয়তো দেয়াল টপকিয়ে কেউ আম ফেলে গেছে। কোন চোরাকারবারির কাজ না তো আবার! জরিনা খালা বললো, আরে ভাইজান টেনশন লন ক্যা? উপরওয়ালা থেইকা আম আইছে মনে কইরা খাইয়া লইবেন আর বেচবেন।
জরিনা খালা আর রুপন্তীর আম্মু আম বেচা শুরু করে দিছে অলরেডি। আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি, বন্ধুবান্ধব সবাইরে আম বিক্রি করছে। একদিনে বিনা পুঁজিতে অনেক লাভ আসছে। সন্ধ্যায় আমি আম খেতে খেতে বলছিলাম, মাথায় ঢুকছে না এতো আম কিভাবে আসলো? জরিনা খালা বললো, আরে ভাইজান আন্নে আম খান না বিচি ক্যান গুনতাছেন? পরেরদিন সকালে, আবার বাগানভর্তি আম আর আম! জরিনা খালা বললো, ভাইজান আর মনে অয় এহানে আমবৃষ্টি অয় রাতে! তোমার মাথা খারাপ? আমবৃষ্টি হতে যাবে কেন? রুপন্তীর আম্মু তুমি সত্যি করে বলতো, এত আম কোত্থেকে? তিন সত্যি! রুপন্তীর পাপ্পা আমি কিচ্ছু জানি না! সেদিনও অনেক টাকা লাভ আসছে আম থেকে। বুঝে উঠতে পারছি না আম আসলো কোথা থেকে!
সেদিন রাতে আর ঘুমালাম না। বাগানের ওদিকে পাঁয়তারা করতেছি। দারোয়ান বদরুদ্দীনকেও বলে দিয়েছি যেনো খেয়াল রাখে। জরিনা খালা আর রুপন্তীর আম্মু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমিও হাঁটতে হাঁটতে একসময় বাগানে গাছে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে বদরুদ্দীন ডাকছে। ভাইজান ও ভাইজান! উঠেন! আজকে আম আসেনি! যাক আজকে টেনশন মুক্ত। এমন সময় জরিনা খালা দৌড়ায় আসলো, ভাইজান বাড়ির হেছনদি আম আর আম। বাড়ির পেছন সাইডে গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি আম আর আম। এবার বুঝতে পারছি আমাকে কোন আধ্যাত্মিক শক্তি হেল্প করছে আম দিয়ে। সেদিনও হাজার হাজার টাকার আম বিক্রি করলাম। রাতারাতি আমি ধনী হতে লাগলাম। প্রতিদিন বাগানভর্তি আম আর আম। এখন আর পাহারা দিই না।
ব্যাবসা জমজমাট চলছে। দেশের আনাচে কানাচে রুপন্তীর পাপ্পার আমের ব্যাবসা চলছে। প্রতিদিনের আম প্রতিদিনই বিক্রি হয়ে যায়। এদিকে জরিনা খালা বাথাটবে আমের জুস বানিয়ে গোসল করে প্রতিদিন। আর রুপন্তীর আম্মু আমের রস দিয়ে রান্নাবান্না, কাপড় কাঁচা, থালাবাসন ধোয়া, ঘর মোছা সব কাজ করায়। পানি নাকি আমের জুসের চেয়ে অনেক দামী। রুপন্তী এখন আমের বিছানায় ঘুমায়। পুরো ঘরে এখন আমের গন্ধ। রাতে তরকারিতেও আম। আমের তরকারি, আমের বর্তা, আমের চাটনি, আমের বরা, আমের দুপিয়াজা, আমের কাটলেট, আমের বার্গার, আমের পিৎজা, আমের ছড়ছড়ি। বাড়ির সব জায়গায় আম আর আম!
এমনকি টয়লেটও সারতে হয় আমের জুস দিয়ে। পুরা টাংকিতে জরিনা খালা আমের জুস ঢেলে দিছে। বাড়ির পাশ দিয়ে কেউ গেলে খালি আমের গন্ধ পায়। তাই সবাই এখন বাড়ির নাম দিয়েছে ‘আমবাড়ি ‘! আমবাড়ি বললে যেকোন গাড়ি পৌছে দেয়। গলির নামও রাতারাতি পরিবর্তন করে ‘আমগলি ‘ হয়েছে। অনেকের কাছ থেকে শুনেছি এই এরিয়াকে ‘ আমপাড়া ‘ বলে। আমিও সবার মুখে ‘আমভাই ‘ নামে পরিচিত। চারিদিকে খালি আম আর আম। এদিকে আম বিক্রির টাকা পেয়ে রুপন্তীর আম্মু আর জরিনা খালা প্রচুর শপিং করছে। হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আম আসে নি। এদিকে অর্ডার এসে বসে আছে। তারপরদিনও দেখি আর আম আসলো না। আম আসা বন্ধ হয়ে গেছে। অর্ডার দিতে না পেরে কাস্টমারের গালি খাওয়া লাগছে প্রতিদিন।
একদিন সকালে উঠে দেখি গেইটের সামনে অসংখ্য মানুষ। যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই দাঁড়িয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। বদরুদ্দীন থামিয়ে রাখতে পারছে না। কি হয়েছে বদরুদ্দীন, এরা কারা? ভাইজান, এরা সবাই আম চাই আম চাই স্লোগান দিচ্ছে। আমি বিনীত স্বরে বললাম, ভাই দেখেন আমার আমের স্টক শেষ হয়ে গেছে। আর আম দিতে পারবো না। এদের একজন বললো, ও হ্যালো! আপনার আম মানে? এগুলো আমাদের আম! এতোদিন যত আম খেয়েছেন সব ফেরত দিবেন।কি সব আবুল তাবুল বকছেন? আপনাদের আম মানে? ও হ্যালো! সাদিয়াকে ডাকেন, আরেকজন বললো, সোমাইয়াকে ডাকেন, কেউ বললো, ফারজানাকে ডাকেন, আবার কেউ বললো, এন্জেল ফারিয়াকে ডাকেন! কোথায় আপনাদের মিম? ডাকেন এগুলো কারা ভাই? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না?
হ এখন ন্যাকা সাজছেন? এতোদিন এদেরকে দিয়ে আমাদের রাজশাহীর ছেলেপেলে এমনকি বুড়োদের সাথেও প্রেম করিয়ে ট্রাকের ট্রাক আম হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন বলছেন কিছু জানেননা? আমি দ্রুত ঘরে এলাম, রুপন্তীর আম্মুরে কড়াভাবে জিজ্ঞেস করাতে সে বললো, সব জরিনা খালার আইডিয়া! জরিনা খালা বললো, ভাইজান আন্নের দুঃখ সহ্য কইতে হারিয়েন্না। তাই আফারে দিয়া ফেইক আইডি খুইলা রাজশাহীর পোলাপাইনরে দিয়া আম আনছি। তোমার এই কান্ডে আমি আরো ফেসে গেলাম। এখন এদের থামাবা কেমনে বলো? জরিনা খালা কইলো, ভাইজান টিয়া দি দেন। তোমরা সব টাকা উড়িয়ে দাও প্রতিদিন! এখন এতো টাকা কই পাবো? এমন সময় বদরুদ্দীন দৌড়ায় আসলো, ভাইজান এরা সবাই চলি গেছে। বাহ! কিভাবে মানালে? ভাইজান লিচু দিয়ে! লিচু?
হ ভাইজান! আট দশ ট্রাক লিচু আসছে বাসার সামনে আপনার নামে। সবাইরে ভাগ করে দিয়ে মানিয়ে নিয়েছি।
আমি জরিনা খালা আর রুপন্তীর আম্মুর দিকে তাকালাম! তোমরা এখন কি দিনাজপুর জেলায় হামলা দিয়েছো? দুজনে জোড়া গলায় বললো, না না! আমরা এখন কিছু করিনি! তাহলে লিচু আসলো কোত্থেকে? রুম থেকে রুপন্তী এসে বললো, পাপ্পা লিচু পাইছো? বদরুদ্দীন বললো, হ পাইছে! রুপন্তী ফোনে যেনো কাকে বলছে, ” থ্যাংকিউ নিলয় তোমার লিচুর জন্য ” এরপর থেকে সবাই আমারে ‘ লিচুভাই ‘ বলে ডাকে!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত