সাইন্সের স্টুডেন্ট

সাইন্সের স্টুডেন্ট
মনে মনে ঠিক করে রাখছি বিয়ের পর স্বামীকে জ্বালিয়ে খাব। কারণ আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট। বিয়ে করবো আর্টস এর কোনো ছেলেকে। তারপর সাইন্সের বিষয় ধরে তাকে হেনস্তা করবো। কেবল ক্লাস টেনে পড়ি। তেমন সাইন্সের বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারিনি। কিন্তু আমার বাবা মা আমাকে এখনি বিয়ে দিয়ে দিবে। কি আর করার। তো একটা সম্বন্ধ আসলো। ছেলে নাকি তেমন লেখাপড়া জানে না এটাই জেনেছি। আমি আর ওতো ভেবে চিন্তে দেখিনি,সরাসরি মত দিয়েছি বিয়ের জন্য । কারণ আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট। শেষমেস বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের রাতে বাসর ঘরে সে ঢোকার সাথে সাথে তাকে সালাম করলাম একটু পর তাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি H২O খাবো। শুনে তো জামাই টাস্কি খেয়ে গেল। আমি তো মনে মনে হাসছি। আমি বললাম যান, আমার জন্য H২O নিয়ে আসেন। বেচারা আমার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলেন। আমি বললাম, H২O মানে জানেন না। পানি নিয়ে আসেন পানি।
তো তারপর দিন থেকে তাকে জ্বালানো শুরু করলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে বললাম, আপনি কি ট্যানিক এসিড খাবেন। বেচারা এসিডের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। সে বললো, কি?? তুমি আমাকে এসিড খাওয়াবে। আমি বললাম, তো কি হয়েছে। আপনাকে খেতেই হবে। আমি আবার বললাম, সাইট্রিক এসিড দিয়ে খাবেন নাকি ল্যাকটিক এসিড দিয়ে খাবেন। তারপর আমি গিয়ে চা এনে দিলে সে অবাক হয়ে গেল। সে বললো, তুমি না আমাকে এসিড খাওয়াবে। এটাই তো। চায়ে ট্যানিক এসিড থাকে। সেইজন্য বলি এমন অশিক্ষিত ছেলেকে বিয়ে করতে নেই। কি যে হবে আমার। সারাজীবন কিভাবে কাটাবো।।৷। তারপর আমি তাকে বললাম। বাজার করে নিয়ে আসেন। তিনি বললেন, কি কি আনবো। আমি বললাম, ঘরে সিদ্ধ oryza sativa নেই।
৫০ কেজি oryza sativa আনবেন। তারপর Solanum tuberosum, allium cepa, catla catla, tenualosa ilisha এগুলো আনবেন। ঘরে বড্ড periplaneta americana এর উপদ্রব বেড়ে গেছে। তাই তার ঔষধ নিয়ে আসবেন। আর মা mangifera indica আর artocarpus hetetophyllus খেতে চেয়েছে। এগুলো কিনে আনবেন। দেখলাম সে চুপচাপ কিছু না বলে বাজারে গেল। বাজার থেকে দেখি সে সব কিছু কিনে আনছে। যা যা বলেছিলাম। আমি তো অবাক। ও এসব জানলো কেমনে। তারপর খাবার সময় সে আমাকে দমক দিয়ে বললাম, খাবারে সোডিয়াম ক্লোরাইড কম হয়েছে কেন। তোমার বুঝি hypermetropia হয়েছে। ঘরে যে সোডিয়াম ক্লোরাইড আছে সেটা দেখনি। শোনো মায়ের জন্য ম্যাগেনেশিয়াম হাইড্রক্সাইড এনেছি। এটা দিয়ে আসো। আমি তাকে বললাম, তোমার জন্য কি spherical mirror আনবো। ঘরে তো নেই।
আমি তো এটার মানে জানি না। কি হবে, যদি বলি কি বললেন, তাহলে তো আমার মান সম্মান শেষ। হাজার হলেও আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট। আমি তাকে বললাম, আচ্ছা আপনাদের স্টোর রুমটা কোথায়। সে বললো, এখান থেকে ঠিক ১০ মিটার সামনে যাবে। তারপর ১০ m/s বেগে ১০ সেকেন্ড দৌড় দিবে। তারপর ভূমির সাথে যে ঘরটির ছাদ ৪৫° কোন উৎপন্ন করছে সেটিই স্টোর রুম। কথাগুলো শুনে আমি টাস্কি খেলাম। আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট হলেও অঙ্কে কাচা। এবার আমি কি করবো।সে আমাকে বললো C১২H২২O১১ দিয়ে এক গ্লাস সরবত বানিয়ে আনো। সাথে C৬H৮O৭ যোগ করো। আর আমার জামাকাপড় গুলো ধুয়ে দিও। সোডিয়াম লরাইল সালফেট কিনে আনছি। আর জামাকাপড় ধুয়ে পটাসিয়াম স্টিয়ারেট দিয়ে গোসল সেরে নিও। তার কথা গুলো শুনে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।
আমি তো এতকিছু জানি না। কিভাবে কি করবো। কিন্তু সে এসব জানলো কি করে। সে তো পড়াশোনা জানে না।
তারপর থেকে শুরু হলো আমার উপর টর্চার। কারণ আমার জ্ঞান এসব বিষয়ে খুবই অল্প। আমাকে তো উঠতি বসতে বিজ্ঞানের ভাষায় সব কিছু বলছে। আর না পারলে ধমক গালি গালাজ দিচ্ছে। আমাকে যা যা করতে বললো, তার একটাও বুঝিনি কি বললো। যেমন ঃ ক্যালসিয়াম ক্লোরো হাইপোক্লোরাইট দিয়ে বাড়ির চারপাশে স্পে করতে, সোডিয়াম বাই কার্বোনেট দিয়ে কেক তৈরি করতে, নিম্ন মানের অ্যামাইনো এসিড রান্না করতে, তার জন্য বিশুদ্ধ ডাই হাইড্রক্সি অক্সাইড আনতে, আরো বললো দেখে শুনে চলাফেরা করতে। আর চলাচলের সময় নিউটনের তৃতীয় সূত্র প্রয়োগ করতে। এসব কথা শুনে তো আমার অবস্থা খারাপ।
কি থেকে কি করবো। সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আমি আর দেড়ি করলাম না। দৌড়ে গিয়ে তার পায়ে ধরে বললাম। আমাকে মাফ করে দিন। আমি আর আপনাকে বিরক্ত করবো না। আমাকে মাফ করে দিন। আমি নত স্বীকার করছি। আর ঘাট হয়েছে। আমার কথা শুনে তার মনে হয় দয়া হলো। বললো ঠিক আছে। এখন থেকে সব স্বাভাবিক ভাবেই বলবো। তো রাতে ঘুমানোর সময় তাকে বললাম, আপনি এত কিছু জানলেন কি করে। আপনি তো পড়াশোনা করেননি শুনেছি। উত্তরে সে বললো তোমার একটা ডায়েরি খুঁজে পাই। যেখানে তুমি তোমার ইচ্ছের কথা লিখে রাখছিলে। তাই তোমার বাবা মাকে বলেছিলাম,আমার পড়াশোনার বিষয় গোপন রাখতে। কারণ আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট।।।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত