কয়েকদিন আগে রিনরিনে গলার এক মেয়ে আমায় ফোন করল। কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই বুঝতে পারলাম আসলে মেয়ে না, মহিলা। ভদ্রমহিলা বিবাহিত। প্রথম দেখায় কারো প্রেমে পড়লে তাকে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট বলে। কিন্তু প্রথমে ভয়েস শুনে প্রেমে পড়লে তাকে কী বলে আমার জানা নেই। ভদ্র মহিলা জাদুঘরে, মানে আমাকে ফোন করেছিল বিশেষ একটি প্রয়োজনে। তাদের বাসায় না-কি পুরনো দিনের অনেক জিনিসপত্র আছে। সেগুলো জাদুঘরে দিয়ে দিতে চান। অফিসে আমার কাজ হলো ফোন রিসিভ করা। আমি আমার কাজটা খুব একটা পছন্দ করি না। যেখানে মানুষ ন্যাশনাল ইমারজেন্সি নাম্বার ৯৯৯-এ কল করে সিঙ্গারা অর্ডার দিতে পারে, সেখানে এমন একটা কাজ কী করে পছন্দ করি আপনারাই বলেন!
আমার কাজ ফোনে কথাবার্তা বলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বাসায় গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করার কাজ নাফি ভাইয়ের। সেদিন নাফি ভাইয়ের সাথে আমিও গেলাম। যে মানুষের ভয়েস শুনে এভাবে প্রেমে পড়ে যাওয়া যায় তাকে দেখতে পাওয়ার এরকম সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। হোক না বিবাহিত। রাস্তায় নাফি ভাই আমাকে বললেন, ‘জিনিসপত্র জাদুঘরে রাখার মতো তো? ভালো করে খোঁজ-খবর নিছ তো?’ যদিও অামি ওসব কিছুই করিনি, তবুও মাথা ঝাঁকালাম। বুঝালাম সব ঠিক আছে। নাফি ভাই আবার বললেন, ‘তুমি যাচ্ছ! নিশ্চয় কোনো ঘাপলা আছে। প্লিজ, একদম উল্টাপাল্টা কিছু করবা না। এমনি পরিচালক স্যারের সাথে আমার সম্পর্কটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। কোনো কারনে কমপ্লেন করলে চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হবে।’
আমি আবার মাথা ঝাঁকালাম। বুঝালাম আমি অমন কিছু করার মতো ছেলেই না। বাসায় গিয়ে ডোরবেল বাজাতেই ভদ্র মহিলা এসে দরজা খুলে দিল। আমরা পরিচয় দিয়ে ভিতরে গিয়ে বসলাম। আমাদের চা-নাস্তা দেয়া হলো। কিন্তু আমার গলা দিয়ে কিছু নামছে না। আমি মহিলার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি, আর মনে মনে ভাবছি আমি কী জন্য আরো দশটা বছর আগে পৃথিবীতে আসলাম না! আমার নিজের মা-বাবার প্রতি আমার এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে। তারা আর কয়টা দিন আগে বিয়ে করলে তাদের কী অমন ক্ষতি হয়ে যেত! নাফি ভাই তাড়া দিচ্ছে। তার না-কি কী আবার কাজ আছে। আরেকটা বাসায় যেতে হবে। ভদ্র মহিলা জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিতে আমাদের পাশের একটা রুমে নিয়ে গেলেন। সম্ভবত তার ছেলের ঘর।
রুমে ঢুকেই খেয়াল করলাম ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ুয়া একটা ছেলে খাটে বসে খুব মনযোগ দিয়ে ফোন টিপছে। গেমস খেলছে বোধহয়। ইম্পর্ট্যান্ট কোনো লেভেলে আছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও একবার আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকাল। ভদ্রমহিলা আমাদেরকে খাটের পাশে ধুলাবালি পড়া একটা কাঠের টেবিলের সামনে নিয়ে গেলেন। তারপর আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘নেন ভাই, এইগুলো নিয়ে যান।’ একবার নাফি ভাই আমার দিকে তাকাচ্ছে। একবার আমি নাফি ভাইয়ের দিকে। কতক্ষণ এভাবে চাওয়া-চাওয়ির পরে আমি তোতলাতে তোলাতে বললাম, ‘মামামাআনে?’
-আর বইলেন না, ভাই! ছেলেটা যে কত বছর আগে লাস্ট চেয়ার-টেবিলে বসছিল ভুলেই গেছি। রোজ এত বলি, এত বলি..যে পড়ো, নইলে এইগুলা যাদুঘরে দিয়ে দিব; কিন্তু কে শুনে কার কথা! তাই আজ আপনাদের ডেকে দিয়েই দিলাম।
নাফি ভাই রাগে আমার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে। তবে আমার রাগ করা উচিত না হাসা উচিত এখনো আমি তা বুঝে উঠে পারছি না।
গল্পের বিষয়:
গল্প