– তাইলে তুমিই আমার মাইয়ারে পড়াইবা?
– জ্বী খালাম্মা।
– বেয়াদব ছ্যাড়া, আমারে কি দেখতে খালার মত লাগে? জানোস, আমি এহনও চোখ টিপ দিলে এলাকার সব পোলাপান পাগল হইয়া যায়।
মহিলার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ার উপক্রম, দেখে মনে হয় আমার আম্মার থেকেও বয়সে বড়। আমার আম্মার তো সবে ২/৪ টা চুলে পাক ধরছে। আর এই মহিলার দেখি ২/৪ টা বাদে সব চুলই সাদা। মহিলার পাশে বসে থাকা ভদ্র লোকের দিকে তাকালাম, লোকটি চুপচাপ বসে আছে কিছু বলছে না। মহিলাটিকে শান্ত করতে বললাম,
– ভুল হইছে আপা, আপনার চেহারার পিছনের যৌবন রূপ প্রথমে দেখি নাই।[ মহিলা মুচকি হেসে বললেন ]
– আসলে, আমার বয়স কিন্তু বেশিনা। মাইয়া পোলা মাত্র ছয় টা। ঘরের কাম করোনে চেহারায় একটু বয়স বেশি মনে হয়।
– জ্বী আপা, বুঝতে পারছি।
– তা, তুমি পড়া লেহায় (লেখায়) কত দূর?
– আমি মাস্টার্স পাশ।
– হ, তাতো বুঝলাম। মাস্টারি করবা, মাস্টার পাশ তো করবাই। আর কত দূর পড়লা?
– আর…. ও হ্যাঁ, আমি মাদ্রাসা লাইনেও বি এ পাশ।
– দেখতে তো মাশাল্লা, বিয়ার বয়স হইছে, বিয়া পাশ তো করবাই। কিন্তু, আর কত দূর পড়লা?
মহিলার কথার আগাগোড়া বুঝলাম না। আমি বলি মাস্টার্স, উনি বলে মাস্টার। আমি বলি বি এ, উনি বলে বিয়া। আল্লাহ এ কোন ঝামেলায় আনলো?
– আপা, মাস্টার্স পাশের পর আর কোন পড়া তো নাই।
– তুমি কি আমারে মুক্ষ (মূর্খ) ভাবছো হা? মনে করছো আমি কিছু জানি না? আমি গেরামের ইশকুল (গ্রামের স্কুল) দিয়া তিন বার মেট্টিক (মেট্রিক) দিছি। তার পরে দুইবার ইন্টার দিছি। আমারে কি মুক্ষ মনে অয় হা?
বুঝলাম ইনি সম্ভবত ইন্টার রেই বড় লেখাপড়া ভাবেন।
– লা হাওলা অলা কুউয়াতা, এইগুলা কি বলেন আপা। আপনারে আমি মুক্ষ কেন ভাববো? আপনারে দেখেই মনে হয় উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। আপনার মত আমার অত ভাগ্য নাই, তাই আমি একবারই ইন্টার দিছি।
– আহারে, আগে কইবা তো, তুমি ইন্টার দিছো। [ পাশের লোকটিকে মহিলা ঝাড়ি দিয়ে জাগিয়ে তুলে বললেন ]
– হুনো রতনের বাপ, আমার এই মাস্টের ভাল লাগছে। আজ তে ইনিই আমার মাইয়ারে পড়াইবো। আর মাস্টের হুনো, আমার মাইয়া কিন্তু লাজুক পড়ানো কালে বেশি ধমক দিবানা বইলা দিলুম। রতন নাম খানা শুনে বুক খানা ধুপ করে উঠলো। অনেক পরিচিয় নাম। নিজেকে সামলে মহিলাকে বললাম
– জ্বী আপা।
– আর হুনো, ভুলেও আমার মাইয়ার কান ধরবা না। কান ধরলে ও পড়ার কিছু বুঝে না।
– জ্বী আপা।
– তুমি প্রতিদিন আমগোর বাড়িতে এক বেলা খাইবা, আর মাসে দুই হাজার টাকা নিবা। কিন্তু আমার মাইয়ারে উচ্চ শিক্ষিত না বানাইতে পাড়লে কিন্তু বুইঝা লইয়ো।
মহিলা কি আমারে থ্রেড দিলো? বুঝলাম না। প্রতিদিন এক বেলা খাবার, আবার মাস গেলে দুই হাজার টাকা। এত ভালো অফার, ওনার মেয়েরো তো ডাবল শিক্ষিত বানাই দিতে পারবো। তাই রাজি হয়ে গেলাম। মহিলা সাদিয়া বলে ডাক দিতেই একটা অষ্টাদশী বালিকা হেলে দুলে বসার ঘরে আসলো। বাহ এখানেও সাদিয়া, সাদিয়া নাম শুনতেই প্রাক্তন এর কথা মনে পড়ে গেলো। আহাহা এইটা যদি আমার ছাত্রি হয় তাইলে তো ত্রিপল উচ্চ শিক্ষিত বানায় দিবো। কিন্তু আমারে নিরাশ করে মহিলা বললেন,
– কিরে? আমার শিউলি কই?
– শিউলিরে তো মাজা ভাই মাঠে লয়া গেছে।
– কি কস? আচ্ছা হুন ইনি শিউলির নতুন মাস্টের(আমারে দেখিয়ে) এনারে মাঠে নিয়া যা, শিউলির লগে পরিচয় করায় দে।
মেয়েটা আচ্ছা বলে মুচকি হেসে দরজার দিকে গেলো। শিউলি কি তাহলে সাদিয়ার বোন? মহিলা আমায় সাদিয়ার সাথে যেতে বলাতে আমি সাদিয়ার পিছু হাঁটা দিলাম। দুজন পাশাপাশি হাটতাছি, সাদিয়া দেখি বারবার আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে, আর মিটিমিটি হাসছে। বুঝলাম না, নিশ্চই হাসি দিয়ে আমারে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি তো আগেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। মাঠের কাছে আসতেই সাদিয়া ‘মাজা ভাই’ বলে ডাক দিলো। মাঠের মাঝ থেকে একটা ছেলে ছাগল হাতে এগিয়ে আসতে লাগলো। কিন্তু ওই ছেলের সাথে তো কোন অন্য মেয়েকে দেখছিনা। তাহলে আমার ছাত্রি গেলো কই? প্রশ্নটা ওই ছেলেটিকে করবো বলে চুপচাপ ওনার আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম। ছেলেটি কাছে আসতেই আমি হতবাক। কি করবো বুঝতে পারছিনা। দৌড় দিবো? নাহ তারও উপায় নেই, সাদিয়া মেয়েটার সামনে নিজের সম্মান যাবে, কিন্তু সাদিয়ার সাথে ওর কি? তাইলে কি ওরা ভাই বোন?
– ভাইরে ভাই, আপনে আমার পিছু ছাড়বেন না না? শ্যাষম্যাষ (শেষমেশ) আমার গেরামেও আইয়া পড়ছেন? বাহ
স্মিম ভাই বাহ।
– দেখ রতন, তোরে আগেও বলছি আমার নাম নিয়ে কোন ট্রল করবিনা।
– মাফ কইরা দেন ভাই, ক্ষমা চাই, আপনে আমার জীবন তামাতামা কইরা দিছেন। আপনি আমার জীবনের একটা কুফা, আপনার পায়ে ধরি ভাই, আপনে চইলা যান আমার সামনে তে। আপনে আমার সামনে আইলেই আমার লগে খারাপ কিছু হয়।
– দেখ রতন তুই কিন্তু রিতিমত আমার অপমান করতাছিস। আর শোন, আমি এই গ্রামেই থাকবো বুঝলি? এখানে লজিন মাস্টার হবো।
– ভাই যা ইচ্ছা হন, আমার সামনে তে সরেন। “মানে তোমরা দুইজনরে দুইজনে চিনো?” এতক্ষণ সাদিয়া মেয়েটার কথা খেয়ালেই ছিলো না। তাইলে রতন সাদিয়ার ভাই? ওহ শিট, শেষে কিনা রতনের বোনের উপর ক্রাশ? সাথে রতনের বাড়িতেই টিউশনি নিলাম? আল্লাহ, এখন কি হবে?
– কিরে সাদিয়া? তুই এই বাটপারের লগে কি করস?(রতন)
– মাজা ভাই! উনি তো শিউলির নতুন সার(স্যার) তুমি ওনারে বাটপার কও ক্যা?(সাদিয়া)
– সে অনেক ইতিহাস, আর আমি কিছুতেই শিউলিরে এর কাছে পড়তে দিমুনা। এই বেডা একটা চিটার, বাটপার, ধোঁকাবাজ। চল শিউলি, বাড়ি যাই। (রতন) এই টুক বলে রতন চলে গেলো। ওয়েট শেষে রতন কি বললো? “চল শিউলি বাড়ি যাই” কিন্তু রতন তো ছাগল নিয়ে গেলো। অস্তাগফিরুল্লাহ, সাদিয়ারে জিজ্ঞেস করলাম।
– আচ্ছা শিউলি কি…. মানে ওই ছাগল টা?
– খবরদার সার (স্যার) শিউলি আমগো কলিজা। অরে ছাগল কইলে আপনারে মাটির নিচে পুঁতে দিমু।
ইন্না লিল্লাহি অ-ইন্না ইলাইহে রাজিউন। দূরুদ শরীফ পড়তে পড়তে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। সাদিয়া নামের মেয়ে গুলা আসলেই ডেঞ্জার হয়।আর আমই শেষে কিনা ছাগল এর মাস্টারগিরি করতে সেই শহর থেকে আসলাম। নেহাত খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো, ভাবলাম হয়তো কোন গ্রামের জমিদার হবে, এসে দেখি সেই কুখ্যাত রতন । না না, আর কিছু ভাবতে পারছি না। এখানে আর না, আমারে এখন ডিপ্রেশনে যেতে হবে।
গল্পের বিষয়:
গল্প