পাইন্দংয়ের বেড়াজালি গ্রামে রেবাদের বাড়ি। এসেছি বিকেলে। চা-নাশতা খেলাম। বিকেলের আলোর খেলা, বিস্তৃত ধানখেত আর দূরের টিলাগুলো দেখলাম। গতবার টিলার রাবার বাগান দেখতে গিয়েছিলাম। বেশির ভাগ গাছে নির্দিষ্ট জায়গায় কেটে টিনের পাত্র বসানো হয়েছে। গাছগুলোকে মনে হচ্ছিল নারী। অব্যক্ত কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে গরুর বড় বড় চোখের চাহনির মতো যে নীরবতা, তা দেখে অসম্ভব ভালো লেগেছিল। টিলা কিংবা পাহাড় দেখলেই আমার ওখানে যেতে ইচ্ছে করে। মনে হয় এক মুঠো শক্তি। সেই শক্তি ছুঁতে পারলে মনে কোনো কালিমা থাকবে না। তাই সুযোগ পেলেই পাহাড়ে বেড়াতে যাই।
অনেক দিন শ্বশুরবাড়ি আসা হয়নি। রেবা কয়েক দিন ধরে বলছে, ‘নতুন বিয়ে করলে ঘন ঘন শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়।’
‘তাই নাকি?’
‘জি হ্যাঁ। বাড়ির জন্য আমার মন কেমন করে বুঝতে পারো না?’
আমি কিছু বলি না। আজ সুযোগ পাওয়া গেল, চলে এলাম।
সন্ধ্যার পর কোনো কাজ নেই। রেবার ছোট বোন কেয়া টিভি ছেড়ে দিল। এখানে ডিশের লাইন আছে। সে একটার পর একটা চ্যানেল পাল্টায়। মনে মনে বলি, দূর, সব বোগাস। টিভি দেখলে মানুষের বোকা হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। হাতের কাছে আমার বাংলা বই। একটা পোস্টার দিয়ে মলাট বাঁধা। মলাটে লেখা আছে: ‘একটু চিন্তা করো। আজ যা তোমার হলো, গতকাল তা আরেকজনের ছিল। পরশু তা অন্যজনের হবে। সুতরাং কেন এত হা-হুতাশ?’
বইয়ের পাতা উল্টাই: ‘আমাদের দেশটা কত সুন্দর। তার নানা রূপ। চারপাশে সবুজ আর সবুজ। মাথার ওপর নীল আকাশ। রুপালি ফিতার মতো নদী বয়ে যায়।
সকালে সূর্য ওঠে। আর নরম আলোয় চারদিক হেসে ওঠে।’
পড়ে মনটা আলো হয়ে উঠল। লেখার শেষে কয়েকটা প্রশ্ন আছে। কেয়াকে জিজ্ঞেস করি, ‘পুকুরে হাঁসগুলো কী কী করে?’
সে হেসে বলে, ‘গল্প করে।’
‘কিসের গল্প?’
‘ভূতের গল্প।’
‘কখনো ভূত দেখেছ?’
‘যাহ!’
‘আমি একবার দেখেছি।’
‘আপনার মাথা দেখেছেন।’
দুই.
অভিজ্ঞরা বলে, মাঝেমধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করা দরকার। ঝগড়ার নাকি অনেক উপকার আছে। ঝগড়ার আবার উপকার! রাতে ইচ্ছে করে ঝগড়া বাধালাম। দুষ্টুমি কতটুকু বুঝতে পারল কিনা জানি। আস্তে করে দরজা খুললাম। শেষবার বললাম, ‘আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।’
রেবা বলল, ‘যাও। তোমাকে এখানে আসতে কে বলেছে?’
আমি বেরিয়ে গেলাম। একটু পর শুনি সে অনুচ্চ স্বরে ডাকছে। আমি জবাব দিই না।
রাত যখন গভীর হয়, তার একটা আওয়াজ থাকে। খায়-খায় ব্যাপারও থাকে। কেউ যেন খেতে আসছে—এই ভয় তখন মনের কোণে আলসেমি ঝাড়ে।
হাঁটা ধরলাম। কিছুদূর আসার পর বড় তেঁতুলগাছ। বুড়ো শক্ত গাছ। অনেক দিন হলো তার বয়স। গা ছমছম করে। যত বড় সাহসীই হোক, গভীর রাতে এ রকম অন্ধকারে একা তেঁতুলগাছের পাশ দিয়ে যাওয়া, চাট্টিখানি কথা নয়। বুকের পাটা লাগে। এদিক-ওদিক তাকাই। মনে হয়, কেউ আমাকে লক্ষ করছে। দ্রুত হাঁটি।
হঠাৎ কয়েকটা শিয়াল লাফিয়ে রাস্তায় উঠল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গেলাম। বুকের অবস্থা কী তা আর নাই-বা বললাম। কী করি! হাতের কাছে কিছু নেই। শত্রুকে আক্রমণ করার ভঙ্গিতে শিয়ালগুলো এগিয়ে আসছে। ডিসকভারিতে দেখা হায়েনার কথা মনে পড়ল। পেলে একেবারে ছিঁড়ে খাবে, কাঁইমাই করবে আর খাবে।
পিছিয়ে গেলাম। শিয়ালগুলোর চোখ জ্বলছে। এক দৌড়ে বাড়িটার কাছে পৌঁছে যাই। গাছের ডাল দেখছি, কোনটা ভাঙা যায়। ছোটর মধ্যে ছিল কয়েকটা মেহগনি। লিকলিকে একেক ঠ্যাঙে দাঁড়িয়ে আছে। একটা মুচড়ে বাঁকা করলাম। ভাঙতে গিয়ে ‘মডর’ করে আওয়াজ হলো। ঘর থেকে কে যেন বলল, ‘কন?’
অর্ধেক ভেঙেছি, ওই অবস্থায় চুপ।
ঘরে নড়াচড়া শুনতে পেলাম। খাটের আওয়াজে বুঝলাম একজন উঠে বসেছে। বুক ধড়ফড় করে। দ্রুত গাছটা ভেঙে দিলাম দৌড়। চিৎকার শুনতে পেলাম, ‘চোর, চোর।’
আমি বললাম, ‘দূর, বউয়ের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে কে বলেছে। শেষ পর্যন্ত চোর!’ দৌড়াতে দৌড়াতে দেখলাম, শিয়ালগুলো আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। ওগুলো ছিল শটিবন আর ভাঁট ফুল গাছের সারি। এমনভাবে সাজানো, বাতাসের দোলায় মনে করেছিলাম জীবন্ত কিছু। ভাঁট ফুলগুলো তারার আলোয় জ্বলছিল। মনে হয় লাল ভাঁট ফুল। নিজের ওপর খুব রাগ হলো।
আরও কিছু লোক ঘর থেকে বের হয়েছে। চলতে চলতে আগা ভেঙে ডালটা ছোট করলাম। মজবুত একটা লাঠি হলো। ধুরুং খালের পাড়ে উঠেছি। সামনে লোকের গলা খাঁকারি শুনলাম। পাড় বেয়ে দ্রুত নেমে গেলাম খালের দিকে। ঝোপের আড়ালে বসে আছি। ধরা পড়লে জামাই আদর করবে। পরিচয়ের কথা আসবে পরে। উঠে যাব, সাহসে কুলাচ্ছে না। একটু পর বুঝলাম, হাত বেয়ে নরম কী একটা চলে গেল। গা শিরশিরিয়ে ওঠে। ইচ্ছে হলো, উঠে দৌড় দিই। খালে গিয়ে ঝুপুর-ঝুপুর কয়েকটা ডুব মারি।
সাপটা আশপাশে কোথাও আছে। ঢোঁড়া হবে হয়তো। দাঁড়াশ হলেই-বা কী? আমি তো আর দেখতে পাচ্ছি না। দূরে এখনো লোকের আওয়াজ। আচ্ছা মুশকিল হলো তো। ঝোপের ফাঁক দিয়ে এক টুকরো আকাশ দেখা যায়। খালের পানি নীরবে বয়ে যাচ্ছে। মানুষও যদি এ রকম নীরবে চলতে পারত!
মানুষও তো একসময় নীরব হয়ে যায়। বলা হয়, মানুষ মাটির তৈরি। মানুষ আর প্রাণীর নীরবতা থেকেই কি মাটির জন্ম! নীরবতার আগে যা কয় দিন থাকি, আমরা কী অর্জন করি? সেই অর্জনে কি মানুষের কোনো উপকার হয়? শরীর, মন নিজেকে ভাবতে চেষ্টা করি। এসব একসময় থাকবে না। আহ! হাহাকারে ভেতরটা মুচড়ে ওঠে।
একা একা রাতের গন্ধে উদাসীন হয়ে যাই। ইতিহাসের দস্যুরা যেভাবে সবকিছু গ্রাস করেছে, মনে হলো সেভাবে আমাকেও কেউ খেয়ে ফেলবে।
উঠে আসব, হঠাৎ চমকে দাঁড়ালাম। সাপের কথা আর মনে নেই। দেখি, মানুষের মতো মুখ, শেওলামাখা শরীর, কী একটা দাঁড়িয়ে আছে। হুম-হুম আওয়াজও আসছে। বুড়োবুড়িরা যে রকম আওয়াজ করে, অনেকটা সে রকম। লাঠিটা একটু দূরে পড়ে আছে। আনব কি না ভাবছি। একটু পর একটা শুশুক ভেসে উঠল। ওমা! ওটা আর ডোবে না। ছোটবেলায় দেখেছি শুশুকরা উঠেই আবার ডুব দেয়। আরও কয়েকটা প্রাণী উঠে এল পানি থেকে। ছোট্ট বালুচরে বসে তারা কথা বলছে। একটু পর কয়েকটা পানিতে নেমে লাফাতে শুরু করল। মাছের মতোই ডুব দেয়, ভেসে ওঠে। তাদের কলকলানি দেখে আমারও ইচ্ছে হলো সাঁতার কাটতে। শুশুকটাও তাদের সঙ্গে খেলছে। কেউ কেউ তার পিঠে ওঠে।
হাঁচি আটকাতে পারলাম না। মনে হয়, নাকের মধ্যে মশা ঢুকে গিয়েছিল। চমকে গিয়ে সবাই টুপটুপ পানিতে ডুব দেয়। একটু পর আবার ভেসে ওঠে।
পিটপিট করে আমার দিকে তাকায়। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হাসির মতো ভঙ্গি করে, লাফিয়ে চরে ওঠে। কেমন বেঁকে-চুরে হাঁটছে। শুশুকটা জলেই রয়ে গেল। চাঁদের আলোয় তার চোখগুলো বাদামের লাল খোসার মতো মনে হলো। রেবাকে দেখাতে পারলে দারুণ হতো।
তারা আমায় ডাকে। ওমম-ওমম শব্দ হয়। মাছের ঘাইয়ের যে রকম শব্দ, তারা সেভাবে কথা বলে। মনে হয় ডাকছে—আয়, আয়।
আমি পেছাতে থাকি। তারা দ্রুত আমাকে ঘিরে ফেলে। ভেজা গা কিছুটা পিচ্ছিল, শেওলার মতো আঁশও আছে। একজন লেজ দিয়ে ছোঁয়। কেঁপে ওঠে আমার শরীর।
হাম-হাম। একজনের মুখ থেকে শব্দ বের হয়। যেন বলছে, ‘চলো আমাদের সাথে।’
আরেকজন বলল, ‘হুওওওওওওম।’
মনে হলো বলছে, ‘আমাদের একটা পৃথিবী আছে।’
হাও হাও হাও হুও হুও। ‘চলো চলো, আমাদের সাথে চলো। যাবে? অদ্ভুত সুন্দর এক জায়গা।’
হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ…‘অসাধারণ সেই জায়গা। সেখানে সবকিছু জলের তৈরি।’
হাঁহাঁহাঁ, হু হিউ। ‘ওখানে কলের কিছু নেই।’
কলের কিছু নেই কিন্তু বলের হয়তো আছে, আমি ভাবি। তারা যদি ফুটবলের মতো লাথি মারে, তাহলে জলের মাঠে পড়ে যাব। শুশুকেরা পিঠে চড়িয়ে জোর করেই নিয়ে যায়। নাকে নলের মতো দুটো জিনিস ঢুকিয়ে দেয়, চোখে দেয় চশমা। পানির ভেতর ঢুকিয়ে ফেলে। তলিয়ে যাচ্ছি। কত দূর যাই বুঝতে পারি না। চারপাশে ছোট জলজ উদ্ভিদ, শেওলা, মাছ—সব দেখতে পাচ্ছি। সামনে আশ্চর্য সুন্দর একটা গেট। কয়েকজন ধাক্কা দেয়। গেটটা স্রোতের মতো খুলে যায়।
এ যে রূপকথার জগৎ! চারপাশে ঘরবাড়ি আছে, নাচ-গান আছে। একটা বড় ঘরে নাটক চলছে। ঝমঝম বৃষ্টি গায়ে পড়লে যেমন লাগে, এদের কথাও তেমন। ঘরের দেয়ালগুলো জলের। আর রং! সেই রং অদ্ভুত সুন্দর। তারা জলের মতো নরম স্বরে কথা বলে। আমাকে ঘরে নিয়ে যায়। বসতে দেয়, জলখাবার দেয়।
জলের বাদ্য বাজিয়ে তারপর গান শোনায়। সেই সুর একবার শুনলে বাকি সুর পানসে মনে হবে। সুরে সুরে মনটা সাফ হয়ে যায়। ইচ্ছে করে কুটিলতা গলা টিপে মারি, সব মিথ্যে মুছে দিই। সহজ করে ফেলি সব। জীবনে দুটো জলের চাকা লাগাই। জীবন যে অনিত্য তা প্রতিদিন অনুভব করি, জীবনকে উপভোগ করি। কীভাবে? মানুষের মঙ্গলে, তার তরঙ্গে তরঙ্গায়িত হয়ে। এসব ভাবছিলাম, ভাবতে ভাবতে খাচ্ছিলাম। খাওয়ার সময় কে যেন ধাক্কা দেয়। আসলে ওটা জলের কম্পন। শরীর পানির মতো নড়ে।
জলে ঘুরতে ঘুরতে পানিভাজা হয়ে যাই। শরীর হয়ে যায় নরম। মোটা মোটা রেখা জাগে। রেখাগুলো দেখি। হাত-পা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। শেওলার শিল্প দেখতে আর ভালো লাগে না। তাদের চোখের ভেতর আর উষ্ণতা পাই না। মনে হয় দইয়ের মতো হয়ে গেছি। কেউ আমাকে চামচ দিয়ে কেটে খেয়ে ফেলছে। চারপাশে তাকাই। উষ্ণতা খুঁজি।
বলি, ‘শেওলা-মানুষ, আমাকে দিয়ে আসো।’
তারা অবাক হয়েছে এমন চোখে তাকায়।
‘এখানে আর ভালো লাগছে না।’
একজন বলে, ‘তোমার গায়ে শেওলা গজাবে।’
‘না।’
‘তখন তোমাকে খুব সুন্দর দেখাবে।’
‘দরকার নেই ওই সুন্দরের।’
‘কিছুদিন পর ছোট্ট একটা লেজও গজাবে।’
‘ওরে বাবারে, তাহলে তো পশুর মতো হয়ে যাব।’
কথা শুনে তারা হাসে। একজন বলে, ‘পশু কি খারাপ? মানুষ কি খুব ভালো?’
একজন ফুক-ফুক শব্দে হেসে গায়ে শেওলা লাগিয়ে বলে, ‘মরে যাওয়াও সুন্দর। তুমি আমাদের মতো হবে।’
মনে মনে বলি, ‘তোর মাথা হব।’
ইচ্ছে হয় কারও মুখে একটা ঘুষি মারি। ঘুষি মারলেই হয়তো কাচের মতো ভেঙে জলজগৎ গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে।
যে আমাকে জোর করে শুশুকের পিঠে বসিয়েছিল সে বলে, ‘তোমাকে এখানেই থেকে যেতে হবে। মানুষেরা যা করছে, যখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন কোথায় যাবে? একটা জগৎ তো খুঁজে নিতেই হবে। জলেরটাই নাহয় নাও।’
তারা কথা বলে ইশারার ঢঙে। কিছু বুঝি, কিছু তার বুঝি না। জানতে ইচ্ছে করে তারা এখানে কোত্থেকে, কীভাবে এসেছে।
প্রশ্ন শুনে একজন বলে, ‘বহু বছর আগে একবার পৃথিবীর বাতাস দূষিত হয়েছিল। মানুষেরা দলে দলে হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় আমরা চলে আসি জলে, হয়ে উঠি জলমানব। জীবন বাঁচানোর এ সংগ্রাম থেকে আর বের হতে পারিনি। দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে শরীর পানির সাথে খাপ খেয়ে গেল। তারপরও পৃথিবীর আহ্বান এড়াতে পানি না। পূর্ণিমা কিংবা তারাভরা রাতে চলে যাই। পৃথিবীর জল-হাওয়ার গন্ধ নিই। পুরোনো পৃথিবী আর পূর্বপুরুষদের অনুভব করার চেষ্টা করি। আত্মধ্বংসী মানুষের জন্য করুণা হয়। তারা এত বোঝে, অথচ কিছুই বোঝে না। সব স্বার্থপর।’
এখানে জলখাবার জলের মতো। হঠাৎ আমার আমের কথা মনে পড়ল। এবার আমাদের উঠানের বড় আমগাছে যা আম হয়েছে! আর খেয়েছিও হেভি। আম নেই আর মজা কী! এখানে কোনো ঋতু নেই মনে হয়। আছে অনন্ত জলকাল। পানসে, ফ্যাকাশে।
অনেক দিন কি হয়ে গেল! সময়ের হিসাবটা নেই। মানুষ না দেখে ভালো লাগছে না। মনে হলো, ফ্যাকাশে জল থেকে নদীর পাড়ের উৎকণ্ঠাই ভালো ছিল। আমার দৌড়াতে ইচ্ছে করে। গা থেকে দরদর করে ঘাম বেরুবে। পুকুর ঘাটে নেমে আয়েশ করে মুখ ধোব। তারপর রেবার চোখে চোখ রেখে পিঠা খাব।
আসলে মানুষজীবনের চেয়ে মজার কিছু নেই। এ কথা ভাবতে ভাবতে জলমানুষদের বলি, ‘আমাকে দিয়ে আসো। এখানে ভালো লাগছে না। তোমাদের পৃথিবী বড্ড ভেজা। আমার এখন রোদের রং মাখতে ইচ্ছে করছে’, বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ি।
তিন.
স্বপ্ন দেখি, বেড়ার ফাঁক দিয়ে রোদের কণা এসে গায়ে পড়েছে। আলসেমি ঝেড়ে উঠে উঠানে দাঁড়াই। সকালের ঝকমকে রোদে ভাপা পিঠার গন্ধ। বেড়াজালির ধানখেত আর টিলাগুলোর দিকে তাকাই। সরকারি রাবার বাগানের গাছগুলো পাতায় পাতায় রোদ নিয়ে খেলছে। আকাশে নীল ছড়ানো। আমাদের দেশ, আসলেই খুব সুন্দর। এই সুন্দরের মাঝে আমার মানুষের মতো বাঁচতে ইচ্ছে করে।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি জল আর জল। আমার জল থেকে সরে যেতে ইচ্ছে করে।