বিয়ের তিনমাস পর থেকে, একটা জিনিস লক্ষ্য করছি বেশ। আমার বউ নেহার মধ্যে এই তিন মাসে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। নেহার ঘুমের মধ্যে কথা বলা রোগ আছে। আমি প্রায়ই চুপ করে শুনি নেহার কথা গুলো। আস্তে করে তিন চারবার, নেহা নেহা বলে ডাক দেওয়ার পর নেহা চুপ হয়ে যায়।
শুনেছি ঘুমের মধ্যে, মানুষকে বোবাওলা ধরে। তাহলে কি, নেহাকে বোবাওলা ধরে। কি করব বুঝতেছি না।
পাশের গ্রামে নামকরা এক পীর থাকে। এই পীর যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাঁকে সবাই “গাইছা বাবা” বলে ডাকে। এই গাইছা বাবার অনেক ক্ষমতা, তাঁকে দিনের বেলা গাছে পাওয়া যায়। কিন্তু রাতে তাঁকে গাছে পাওয়া যায় না। রাতে সে অদৃশ্য হয়ে কোথায় যান, কেউ জানে না। লোক মুখে শুনেছি, ১৯৮৮ সালে ভয়ানক বন্যা হয়। সেই বন্যায় বাড়ি ঘর সব তলিয়ে যায়। তখন সবাই গাছে চরে জীবন যাপন করে। বন্যা শেষে সবাই গাছ থেকে নেমে পড়ে, কিন্তু এই “গাইছা বাবা” গাছ থেকে নামেনি। তিনি গাছের মধ্যেই জীবন যাপন করতে থাকেন। সেই থেকে সবাই তাকে, “গাইছা বাবা” বলে ডাকে।
পরদিন সকালে গাইছা বাবার কাছে গিয়ে, পুরো ঘটনা খুলে বললাম। গাইছা বাবা গাছের মগ ডালে চোখ বন্ধ করে বসাছিল। সব শুনে বলল, “বৎস তোকে কিছু বলতে হবে না, আমি সব জানি।” আমি বললাম, “বাবা আপনি সব জানেন, আগে বলবেন তো। তাহলে কষ্ট করে বলতাম না।” চোখ বন্ধ করেই বাবা আমাকে ধমক দিলেন, খামোস। গাইছা বাবা দুইটা পাতা নীচে ফেলে বলল, “পাতা দুইটা তোর বউ এর বালিশের ভেতর রেখে দিবি। এখন তুই যা, তার আগে গাছের গোড়ায় ৫০১ টাকা দক্ষিনা দে। যাবার সময় ভুলেও পেছনে তাকাবি না।” আমি ৫০১টাকা দক্ষিনা দিয়ে, পাতা দুইটা হাতে নিয়ে, পেছন দিকে না তাকিয়ে চলে আসলাম। মনে মনে ভাবলাম, বাবা টাকা দিয়ে কি করবে? হয়ত কোন সাধনার জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করিবে। বাড়িতে এসে পাতা দুইটা বউ এর বালিশের মধ্যে রেখে দিলাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না। ঘুমের মধ্যে নেহার কথা বলা রোগ কমল না। বরং আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ পর, বউ এর বালিশ চেক করে দেখি পাতা দুইটা পইচা গেছে।
বুঝতে পারলাম, এইসব গাইছা বাবা টাবার কোন ক্ষমতাই নাই। ভাবলাম, ভালো কোন ডাক্তারের কাছে যাবো। ডাক্তারের কাছে গেলে, নেহাকে সাথে নিতে হবে। নেহাকে বলতে হবে, তার সমস্যার কথা। কিন্তু নেহাকে এখনো বলা হয়নি, সে ঘুমের মধ্যে কথা বলে। রাতে শুয়ে আছি। আদুরে গলায় নেহাকে বললাম, তোমাকে নিয়ে কালকে ডাক্তারের কাছে যাব? নেহা অবাক হয়ে বলল, “আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে কেন? আমার তো কিছু হয়নি!” আমি বললাম, “তোমার ঘুমের মধ্যে কথা বলা রোগ আছে। তুমি ঘুমের মধ্যে উল্টা-পাল্টা বলো।” নেহা অবাক হয়ে বলল, “ঘুমে মধ্যে কি উল্টা-পাল্টা বলি?” তুমি ঘুমের মধ্যে বলো, শয়তান বেডা খাটাশের মত নাক ডেকে ঘুমায়। এই সংসারে আইসা কি পাইছি? কুত্তা কপাল আমার।
খাচ্চর বেডা কোনদিন ঘুরতেও নেয় না! হাড়কিপ্টা বেডা কোনদিন শপিং করতে নেয়না। কি দেইখা এমন ভুড়ি ওয়ালার কাছে বিয়া দিল? এই ছিলো আমার কপালে। হায় খোদা তুইলা নাও আমায় নেহা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, “হায় হায় কি বলো! এগুলো তো আমি ঘুমের মধ্যে বলি না। আমি ভাবি, তুমি ঘুমাই গেছ, তাই জেগে থেকেই বলি।” নেহার কথা শুনে চিরিৎ করে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো।
গল্পের বিষয়:
গল্প