একে স্বপ্ন বলা যাবে না কোনোমতেই, যেন একটা প্লাস্টিকের সোনালি ঘোড়া, পিঠে শক্তিমান এক ঘোড়সওয়ার। খেলনার বাক্স ছেড়ে তারা দুজন ভেসে বেড়াচ্ছে। রঙিন ঘোড়সওয়ার দেখতে ঠিক যেন জর্জ কাস্টার (মার্কিন গৃহযুদ্ধে অবদানের জন্য বিখ্যাত এক সেনা কর্মকর্তা), তার সবকিছু জুড়ে কেবল লাল। পায়ের জুতা, মাথায় বাঁধা কাপড়, বন্দুকের খাপ, এমনকি চোখের ভ্রু—সবকিছু লাল রঙের। সব হারিয়ে সে যেন এখন কেবল এক ঘোড়ায় চড়া সিপাহি। তার পা-জোড়া নিদারুণ বেঁকে জমে গেছে, যেন এভাবে সোনালি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে ভেসে যাওয়া ছাড়া তার বেঁচে থাকার আর কোনো মানে নেই। যেন আজন্ম বঞ্চিত জাতি কোমাঞ্চি, লুটেরার ভয়ে যারা সতর্ক-সাবধান। তবু এই ঘোড়া আর তার আরোহী উড়ে-ভেসে যেন হারিয়ে যাচ্ছে দূরে। মিনিটে মিনিটে তাদের আবর্তন। সত্যিকারের বাস্কেটবলের অর্ধেক আকৃতির একটা মখমলের বল ঝুলে আছে ছোট্ট বিছানার ওপর। আলমারিতে বন্য হয়ে দুলছে ছোট ছোট শীতের কাপড়। হেলিকপ্টারে পিষে যাওয়া ঘাস যেমন হয়, কার্পেটের সুতাগুলো দুমড়ে-মুচড়ে আছে তেমনভাবে। দেখে মনে হয়, হঠাৎ একটা ঘূর্ণিস্রোত যেন মেঝের মাঝখান থেকে উঠে দৌড়ে চলে যাচ্ছে বাইরে। স্রোত থেমে গেলেই আবার সেই আগের সহজ-স্বাভাবিক কার্পেট।
এভাবে একেকটা ঘটনার চক্র পুরো ঘুরে আসতে সময় নেয় সাড়ে তিন মিনিট।
একটা খালি পড়ে থাকা রকিং চেয়ার খুব বেশি দ্রুত দুলছে, আমাদের পৃথিবীর যেকোনো দাদি-নানির চেয়েও অনেক অনেক দ্রুত। জানালার ওপারে গাছের বাঁকা ডালের ফাঁকে হাসছে নতুন চাঁদ। সাদা কাঠের ঘরগুলোর ওপর তার আলো। গাছেরা ফুল হয়ে ফুটে আছে, ধোঁয়ার মতো ঢলে গলে পড়ছে। সব ঘরের দরজা-জানালা পরম বিশ্বাসে খুলে রাখা। শিশুরা তাদের নিশ্বাসে বালিশ ফুলিয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ির অন্য পারে পাহাড়গুলো বয়ে চলে যাচ্ছে দূরে, যেন শান্ত নীল এক আয়ারল্যন্ড। অ্যানিমেইটেড ছবির রাতগুলোর মতো ঘরের মধ্যেও সেই নীল রং। এমন নীল রাতে বাচ্চারা আঙুল তুলে চাঁদ দেখায়, এলমেল বলে চলে মনের যত কথা। পরিষ্কার একটা ঘ্রাণ আসছে কার্পেট থেকে। কোনো পোকার শব্দ নেই। কোনো রকিং চেয়ারও দুলছে না। জানালার কাচে কোনো বাতাসের খেলাও নেই। কেবল শীতাতপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র বেজে চলেছে। এমন রাতে আমি জানালার কাচ মুছে পরিষ্কার করে রাখি। হাতে থাকে কোমল পানির পাত্র।
এবার অন্য কিছু। এক বৃদ্ধ দম্পতির অশ্লীলতা। তারা যখন প্রথম এল, আমার কোনো দুশ্চিন্তা হয়নি। তারা দুয়ারে এসে দাঁড়াল। বৃদ্ধ লোকটি তার বেসবল ক্যাপটি ঠিক করে নিল। বৃদ্ধা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, ‘পিট, তাকিয়ে দেখো, কেমন? কিছু একটা বলো…’ সবকিছু ঠিক আছে। হাত দুটি পেছনে রেখে লোকটি পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। কাপড় রাখার সিন্দুক হাত রাখার মতন যথেষ্ট মসৃণ কি না, মহিলাটি দেখছে পরখ করে। অবশ্য এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। লোকটি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে জানালার দিকে, মেটে রঙিন আলোর গ্রামের দিকে। সবকিছু দেখতে এখনো খুব বাস্তব মনে হচ্ছে। যখন লোকটির পায়ের আঙুল গিয়ে খাটের কোনায় লাগল, তখনো সবকিছু ভীষণ বাস্তব। এরপর সে নিজের জুতা আর পা রাখল খাটের ওপর, হাত রাখল জানালার ফ্রেমে। নিজেকে তুলে ধরে হেলান দিল জানালার শার্সিতে। এবার আর নিতে পারলাম না আমি। মাইকে গলা চড়িয়ে বললাম, ‘দয়া করে ঘরের জিনিসগুলো থেকে দূরে থাকুন!’ এভাবেই কি সবাই কথা বলে? কখনো কখনো হয়তো বলতে হয়। হঠাৎ লাফিয়ে উঠল লোকটি। তার ঊরুদেশে যেন চিমটি কেটে গেছে কেউ। কেউ এসে মনে হলো কনুইটা ভেঙে দিয়ে গেছে। মুঠোফোনের প্লাস্টিক পাখিগুলোর ভিড়ে তার মাথার টুপিটা আর পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্বেগ-উত্তাপে তার মুখ লাল। মনে হচ্ছে, সেই লালে সাদা দাড়ি-গোঁফ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বুনে রেখেছে কেউ। তারা দুজন দুয়ারে এসে দাঁড়িয়ে থাকল অনেকক্ষণ। লোকটির নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। তারা চায় না তারা যে পালিয়ে যাচ্ছে, এটা কেউ বুঝুক।
‘হলো-চিক হাউসে’র ‘জুয়ারেজ’ আমার খুব পছন্দের। ‘হলো-চিক’ হলো মোটামুটি ফুটবল সাইজের মুরগির মাংসের ফাঁপা টুকরো। ‘হলো-চিক হাউসে’ প্রায় সবই পাওয়া যায়—ভাজা রুটি, টক-মিষ্টি শুয়োরের মাংস, এমনকি হালকা সালাদ পর্যন্ত। ‘জুয়ারেজ’ ভরা থাকে ভাজা শিম, টক ক্রিম আর কালো রঙের কোনো একটা কিছুর অজস্র টুকরা দিয়ে। আমি অতিরিক্ত সসের প্যাকেট নিয়ে খেতে বসে যাই।
‘হলো-চিক হাউস’ এই দেশের সবার কাছে পরিচিত এক নাম। ‘হ্যান্স দ্য হলো চিক’কেও সবাই জানে। টিভির বিজ্ঞাপনে তাকে দেখা যায়, পর্বতজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে, তার ঠোঁট থেকে ধোঁয়া উঠছে। নানা রঙের বিশাল একটা পাখনা সে ছড়িয়ে রেখেছে কয়েকটি বাচ্চার ওপর। বাচ্চাগুলোর মুখে বেশ সুখী সুখী ভাব। ছবির পেছন থেকে ভেসে আসে একটা কণ্ঠস্বর, ‘এই মুরগির ভেতরেও এর বাইরের সমান বিশালতা—বরং আরও বেশি সুস্বাদু।’
‘জুয়ারেজ’ শেষ হলে বেঁচে যাওয়া সসের প্যাকেটগুলো আমার বান্ধবী অ্যানিকে দিই। অ্যানি আগে ‘হাউস’-এর স্টোরেজ শাখায় কাজ করত। পরে বদলি হয়ে এখানে আসে। খাবারের ধরন একই হলেও এখানে পরিবেশ ভিন্ন। ওর মতে আদেশ-নির্দেশ অনেক বেশি পালন করতে হয় এখানে। কাউন্টারে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় দিতে হয়। আমি ভুলে গিয়েছিলাম, আজকের সন্ধ্যা আসলে এখানকার কর্মচারীদের পরীক্ষা দেওয়ার সন্ধ্যা। হঠাৎ আমার মাথা ধরে এল। আনমনে হাতের ছাপ গিয়ে পড়ল কাউন্টারের স্টেইনলেস স্টিলে।
হ্যান্স-স্যুট পরা ম্যানেজার, বার্ট অ্যানিকে ঠেলে এসে হাজির হয়। এমন করে তাকে আসতে দেখে মন খারাপ হয়ে যায় আমার। অ্যানির কাঁধে হাত রাখে সে, অ্যানিকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে কথা দেয়। আমাকে বলে, ‘তোমার দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’ হয়তো সে কিছুই বলে না। তবু আমার মনে হয়, সে এমন কিছু একটা বলছে। তার ঠোঁট গলে বের হচ্ছে কথার ধোঁয়া। যেমন করে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই চলে যায় ম্যানেজার। পোশাকের বাইরে থেকে অ্যানিকে ছুঁয়ে সে কী স্বাদ পায়, কে জানে! অ্যানি চুরি করে এক বোতল ফ্রি কোক দেয় আমাকে। খেতে খেতে ঘরে ফিরি আমি।
আমার এসব কথা যদি তোমাদের বিশ্বাস না হয়, তাহলে তোমরা একেকজন বদ্ধ উন্মাদ।
সব বন্ধ করে বাইরে আসি। সবকিছু ধীরে ভেসে যেন-বা তলিয়ে যাচ্ছে। ঘরের ভেতর আলো এসে পড়ছে। সেই আলোতে সাদা আসবাবের গায়ে রঙের ছোপগুলো বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। খালি জানালার দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, যেন একটা সিনেমার পর্দা। কোনো একজনের বসার ঘরে ছবি শুরুর অপেক্ষা চলছে। ছবিতে দেখা যাবে আঙ্কেল পিট মোহাভির মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, বাস্তব কোনো শিশুর সত্যিকারের ঘরে যেন এরই মধ্যে সকাল হয়ে গেছে। আসলে এখনো মধ্যরাত। আমি উঠে কার্পেট আর বেসবোর্ড পরিষ্কার করি। সোনালি ঘোড়াটার পায়ের তার ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখি। বিছানা গোছাই। আলমারি মুছে রাখি। এমন সময় মনে পড়ে, ঠিক জানালার নিচেই কর্মচারীদের পার্কিংয়ের জায়গা। সেখানে কতবার আমি অ্যানিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেছি! আমার গাড়ির সঙ্গে চেপে পিষে ফেলতে চেয়েছি কতবার—সব গুনে গুনে বলতে পারব আমি। ওর পরনে থাকত পলিয়েস্টারের পোশাক, বুকে ভেস্ট, চামড়ার পুরু শর্টস, মাথায় নেট বাঁধা। তবু নিজেকে আমি ধরে রাখতে পারতাম না, পারিও না কখনো। হাজার হলেও একজন পুরুষ তো আমি!
অ্যানি আমাকে ফোন করে গত রাতে দেখা তার স্বপ্নের কথা বলে: ম্যানেজার বার্ট রাতের খাবার খাওয়ার পোশাক পরে আছে। অ্যানিকে সে বাধ্য করে অদ্ভুত রকমের অন্তর্বাস পরতে। ম্যানেজারকে হ্যান্স-স্যুট ছাড়া এই পোশাকে দেখতে বেশ ভালো দেখাচ্ছে। সরু গোঁফের নিচে লাল হয়ে আছে তার মুখ। অ্যানিকে সে চুমু খায়। তার যৌবনের কোনো একটা করুণ গল্প শোনাতে থাকে। গল্পটি তার নিজের অন্তর্বাস আর একটা কুকুরকে নিয়ে। বলতে বলতে আরও জোরে চুমু খেতে থাকে। স্বপ্নটি ধীরে ধীরে একটা বিকৃত রূপ পায়। লোকটি জোর করে, অদ্ভুতভাবে নিজেকে সঁপে দেয় অ্যানি। ম্যানেজার ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে টিভি সেটটা নিচের গ্যারেজে নামাতে বলে। তারা একসময় এভাবে পৌঁছে যায় অন্য এক জগতে। অবাক সুরে অ্যানি বলে, ‘সবকিছু এত বেশি সত্যি মনে হচ্ছিল, অবিশ্বাস্য!’ উত্তরে আমি শুধু বললাম, ‘ভালো।’
এবার একটা তরুণ বয়সের জুটি। তাদের চোখে অন্ধকার সয়ে গেলে মেয়েটি বলে উঠল, ‘ইশ্!’ ছেলেটি এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল, ‘“ব্যবিলন” (একটি গানের নাম) থেমে যাক।’ মেয়েটি তবু কিছু একটা বলতে থাকে। ছেলেটি বলে, ‘স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’ পেছন থেকে মেয়েটির বুক চেপে ধরে সে। এরপর মেয়েটির হাত নিয়ে নিজের শরীর বেয়ে নামাতে থাকে নিচে। মেয়েটিকে ধীরে চেপে ধরে দেয়ালে। দেয়ালে কাল্পনিক গল্পকার মাদার গুসের ছবি আঁকা। আমার মনে হয়, সবকিছু এখনই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হয় না। মেয়েটি ছেলেটির প্যান্ট খুলে ফেলে। আমি মাইকে কিছু একটা বলব বলে ভাবি, কিন্তু তারা এত দ্রুত এগিয়ে যায়! কাপড়ের মাঝখানে ছেলেটির খোলা শরীরের পেছনটা দেখে মনে হয়, যেন মেটে আলোয় অবিরাম জ্বলছে একটা গোলক। তারা আরও এগিয়ে যায়। আমি কিছু বলতে পারি না। আমি যে দেখে সুখ নিচ্ছি, এমনটাও নয়। সবকিছু ভেসে আছে এমন ঘরে তারা দাঁড়িয়ে! তাদের মিলনের দৃশ্যই যে আমি কেবল দেখে যাচ্ছি, এমনও তো নয়। বরং তাদের কথাগুলো আমাকে টানছে ভীষণ। তারা একজন আরেকজনকে খুব গভীরভাবে দেখছে। একজনের মুখ আরেকজনের কানে। একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে তারা। বিরতিহীন। কোনো এক সময়ের কোনো একটা রেললাইনের কথা বলছে। বলছে বারান্দা থেকে দেখা বন্য রাজহংসীর গল্প। ছেলেটি মেয়েটির সঙ্গে এক কবরে ঘুমাতে চায়। কিন্তু সবার আগে মেক্সিকো। তারা কী বলছে এসব, বিদেশি ভাষায়? আমার এই ভাষা চাই!
আমি ঠায় দাঁড়িয়েই থাকি। এমনকি ছেলেটি যখন তার শক্ত হাতে বাস্কেটবল ছুড়ে ফেলে, বলটি ছুটতে থাকে ঘরময়, আমি কিছুই বলি না। ঘরের এক কোনার ময়লার ঝুড়িটি উল্টে যায় বলের আঘাতে, আমি তবু চুপ। তাদের আমি এগিয়ে যেতে দিই। তারা শেষ করুক। আমি বাধা দিই না।
একপর্যায়ে খুব ঘন হয়ে আসে ছেলেটির নিশ্বাস। সে ‘“ব্যবিলন” থেমে গেছে’ বলতেই মাইকে কণ্ঠ চড়াই আমি, ‘ঠিক বলেছ।’ সেই বৃদ্ধ দম্পতির মতোই হঠাৎ থমকে যায় তারা। কিন্তু পরক্ষণেই ফিরে আসে নিজেদের জগতে। ছেলেটি আমাকে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘যেখানেই আছিস, বের হয়ে আয়।’ হোস্টেলে আসা নতুন ছাত্রের মতো হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসি আমি। ছেলেটি আমার পেছনে আঘাত করতে থাকে সমানে। মখমলের সেই বল দিয়ে সে আমার ঠোঁটের রক্ত মুছে দেয়। সারা ঘর ততক্ষণে তছনছ।
আমার মনে হয় তারা আমাকে টেনে তুলছে। রাতভর পাহাড় দেখছি যেন, গাছের পাতা দুলছে কল্পনার বাতাসে। আমার পাশে বসে আছে মেয়েটি। তার শরীরের ঘ্রাণ পাচ্ছি। তার শরীরে ব্যবহার করা সুগন্ধির কিছুটা রয়ে গেছে তখনো। ছেলেটি কিছু একটা বলছে। প্রথমে কথাগুলো নিতে পারছিলাম না। খানিক পরে আমিও শুনতে থাকি। মনে হচ্ছে, ছেলেটি যেন দুঃখ প্রকাশ করছে। তার মতে, কোনো একটা নিয়ম ভেঙেছি আমি। সে আরও অনেক কিছু বলছে। শব্দগুলো প্রথমে আদেশ-নির্দেশের মতো শোনাচ্ছিল; পরে এসে সে কথায় পাওয়া গেল নিমন্ত্রণের সুর।
আমাদের গাড়ি একটা উন্মাদ, সুন্দর, বন্য মরুভূমি দিয়ে ছুটছে। সস্তা মদ খাচ্ছি আমরা। আমার মুখে তখনো রক্তের স্বাদ লেগে আছে। তাতে কী? পাহাড়ের ওপর ফুটে আছে গোলাপি রঙের তারা। ছোট ছোট বাজার, অচেনা মানুষের গায়ে গায়ক ক্রসবির সাজ। মরুভূমির পথে আমার দুই পাশে বসে আছে তারা দুজন। আমাদের হাঁটুগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ছেলেটি বারবার আমাকে বন্ধু বলে ডাকছে। অচেনা সুরে অজানা গান গেয়ে আমরা ছুটে চলছি। আমি জানতাম না এই গানগুলো আমার জানা। লোকগান, লোকগাথা থেকে শুরু করে ষাটের দশকের গান। গানগুলোতে আছে মিলে যাওয়ার সুর, আছে পাশের বারান্দার সোনালি চুলের মেয়ের কথা। এত অদ্ভুত আনন্দে কাটছে সময়! আমরা চিৎকার করে গাইছি! দ্বিধাহীন!
খানিক পরে তারা আমাকে ফেলে গেল মরুভূমির বুকে। এক বোতল মদ হাতে পড়ে রইলাম আমি। একটা বড় পাথরের ওপর বসে শেষ করলাম বোতলটা। পাথরটির গায়ে কবে কখন একটা মাউনটেন ডিউয়ের ক্যান থেঁতলে বসে গেছে। আমার ঠোঁটে তখনো প্রচণ্ড ব্যথা। তবু মদের স্বাদ নিতে চাইছি, গান গাইছি। যতদূর যতখানি মনে পড়ে গেয়ে চলছি। একঘেয়ে এই অন্ধকার মরুভূমির সবকিছু এখন জ্বলছে উন্মাদ তারা হয়ে। লাল লাল পাথরগুলোকে তিরের মতো ছুড়ে দিচ্ছি অন্ধকারে। মরুর বুকে বসে একলা আমি এখন কেবল ভাবছি, ভাবছি আর ভাবছি।