ছোট বোনকে একটি ছেলের সাথে আবাসিক হোটেলে ঢুকতে দেখে আমার রক্তে এক হিম শীতল স্রোত বয়ে গেলো। হ্যা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মালিহা একটি ছেলেকে নিয়ে ভাই ভাই আবাসিক হোটেলে প্রবেশ করলো। আমি এখন ঠিক কী করবো বুঝতে পারছিনা যদি হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করি তবে হয়তো হোটেল কর্তৃপক্ষ ঘাড় ধরে বের করে দিতে পারে। তাই চিন্তা করলাম বাবা মায়ের সামনেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। বেশকিছুদিন যাবৎ বোনের ব্যবহার কীরকম উদ্ভট লাগছে। প্রতিদিনই বাবার নিকট থেকে এক হাজার দুহাজার করে টাকা নেয়। বোন আমার আগে এমন ছিলনা কিন্তু হঠাৎ এই পরিবর্তন আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। একমাত্র ছোট মেয়ে হওয়ায় বাবা মা কখনো মালিহার কোন আবদার অপূর্ণ রাখেনি। আমি যে বোনকে কম ভালোবাসি তাও কিন্তুনা এক কথায় বোন আমার কলিজা। রাত ১০ট বাবা মা আর আমি মালিহার জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু এখনও ওর আশার নাম নেই। কিছুক্ষন পর মালিহা ঘরে ঢুকেই যখন নিজের রুমের দিকে পা বাড়াবে তখনই আমি ডাক দিলাম,
-মালিহা। আমার ডাক শুনে আমার দিকে তাকালো।
-এতো রাত করে বাড়ি ফিরলি কেন?
-বান্ধবীর বাসায় ছিলাম এ্যাসাইনমেন্টের জন্য।
-মিথ্যে বলা আবার কবে থেকে শুরু করলি? আমার কথা শুনে চমকিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো,
-মিথ্যা কেন বলবো? আর বাবা মা যেখানে চুপ করে আছে তুমি সেখানে কৈফিয়ত চাও কেন? ওর কথা শুনে এবার সত্যিই আমার মাথা গরম হয়ে গেল,
-মানে, আমি তোর বড় ভাই আর আমি কৈফিয়ত চাবোনা। আর এতো বড় বড় কথা কীভাবে বলিস বেয়াদবের বাচ্চা? বিকালে যে একটি ছেলের নাহ আর বলতে পারলাম না। কারণ এসব কথা বাবা মায়ের সামনে বললে এর থেকে লজ্জার আর কিছু থাকবেনা। আমি আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলাম। রাগে আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে বেশি রাগ হচ্ছে বাবা মায়ের উপরে কারণ তারা কিছুই বললেন না বরং নিশ্চুপ শ্রোতার মতো সবকিছু শুনে গেলেন। তাদের অতি আহ্লাদের ফলে আজকে তাদের মেয়ে যে এতো নিকৃষ্ট হয়ে গেছে এটা তারা কখনোই বিশ্বাস করবেনা উল্টো মেয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে। যেখানে বাবামা নিশ্চুপ সেখানে ভাইয়ের কথার কোন মূল্য নেই। একসময় এর মর্ম মা বাবা বুঝতে পারবে কিন্তু তখন হয়তো অনেক দেরী হয়ে যাবে। সকাল ৭টার দিকে হঠাৎই অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে এক পুরুষ কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
-হ্যালো মারুফ বলছেন?
-জ্বী আপনি কে?
-আমি কে সেটা মূখ্য বিষয় নয় আপনার বোন আমাদের বড় ধরনের এক ধোকা দিয়েছে।
-মানে? কীসের ধোকা?
-আমাদের থেকে ৫০০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে পালিয়েছে যার বাজারমূল্য ১লক্ষ টাকা। যদি এগুলো ভালোয় ভালোয় ফেরত না দেয় তবে ভবিষ্যতে ওর জন্য কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে। আগেই সাবধান করে দিলাম।
-হ্যালো হ্যালো
নাহ কলটা কেটে দিলো। এবার আর আমি স্থির থাকতে পারলামনা। লোকমুখে অনেক শুনেছি ইয়াবা তরুণ সমাজকে ধ্বংসের বুকে ঠেলে দেয় আর মালিহা কীনা ভাবাভাবি বাদ দিয়ে উসাইন বোল্টের গতিতে মালিহার রুমের দিকে ধেয়ে আসলাম আর শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে দরজায় একটি লাথি মারলাম। লাথি মারতেই দরজা খুলে গেল। হঠাৎ এভাবে আসাতে মালিহা অবাক হয়ে গেলো আর কিছু একটি লুকানোর চেষ্টা করলো। আমি ওর নিকট যেয়েই জোড়পূর্বক লুকানো জিনিসগুলো ছিনিয়ে নিলাম। ভালো করে দেখতেই আমি অবাক হবার চূড়ান্ত সীমায় পৌছে গেলাম। কতগুলো দুটাকার নোট, মোম আর ইয়াবার লাল ট্যাবলেট গুড়ো করা। তার মানে মালিহাও নেশা করে? আমি রুক্ষ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-বাকী ট্যাবলেট গুলো কোথায়?
-কীসের ট্যাবলেট? সজোড়ে এক চড় বসিয়ে দিলাম মালিহার গালে। বাবা মা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললেন,
-কী হয়েছে? মালিহা কান্নার অভিনয় করে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-দেখো মা শয়তানটা আমাকে জোড়ে এক চড় দিয়েছে।
-এখনো অনেক কিছু দেখার বাকী আছে বল বাকী ট্যাবলেট গুলো কোথায়? বলেই আবার মালিহার নিকট ধেয়ে আসলাম। এবার বাবা আমার গালে চড় বসিয়ে দিলেন,
-তোকে কে শাসন করতে বলেছে ওকে? চড় খেয়ে আমি বাবার দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হেঁসে বললাম,
-বাহ। ভালো করে আহ্লাদ দাও মেয়েকে। কখনও খবর রেখেছো যে ও এতোটাকা দিয়ে কী করে? এইযে দেখো এগুলো কী? যেই মেয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট ছিনতাই করে নেশা করতে পারে সেই মেয়ের পক্ষ নিয়েই থাকো। পস্তাতে হবে তোমাদের দেখো। এসব বলছি হঠাৎই আমার চোখ গেলো মালিহার ভ্যানিটি ব্যাগের দিকে। আমি ওটা ধরতেই মালিহা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। এক ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিয়েই ব্যাগের ভিতর থেকে একটি প্যাকেট বের করলাম। হ্যাঁ প্যাকেটটিতেই সেই কাঙ্খিত ইয়াবা ট্যাবলেট ছিলো। বাবা মাকে এসব দেখাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন তারা। তাদের চোখ যেনো ভুল দেখছে তারা বিশ্বাসই করতে পারছেনা তাদের মেয়ে একজন ইয়াবা আসক্ত। মা এসব দেখেই কেঁদে দিলেন মালিহা নিষ্পাপ বান্দার মতো দাঁড়িয়ে আছে মনে হয় কিছুই জানেনা।
-আজ থেকে তোর বাহিরে বের হওয়া বন্ধ। এই বলে বাবা মা কে নিয়ে মালিহার রুম থেকে বের হতেই ওর রুমটা বাহির থেকে তালা দিয়ে দিলাম। বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
-চাবি আমার কাছে থাকবে। বাকীটা আমি দেখবো।
মা এখনো কান্না করেই যাচ্ছেন। একমাত্র মেয়ের এরকম বিচ্যুত হওয়া দেখে সব মায়ের কান্না আসবে এটাই স্বাভাবিক। হঠাৎ কিছুক্ষন পর মালিহার রুম থেকে প্রচন্ড ভাঙ্গাভাঙ্গি ও চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছি। আমি জানি যে সময়মতো নেশার উপকরণ না পেলে পাগলের মতো করবেই। আমার মা বারবার দরজা খুলে দিতে বলছে কিন্তু আমি তা কখনোই করবোনা। ১৫দিন পর এখন মালিহা আর সেই মালিহা নেই আজ ও একজন অর্ধপাগল মেয়ে। এতদিনে ওকে কন্ট্রোল করেছি এই ইয়াবা দিয়েই কারণ এই নেশা ওকে এমনিভাবে আকড়ে ধরেছে এটা ব্যতীত ওকে কন্ট্রোল করা দুষ্কর। আজ ওর রুমে ঢুকে দেখি বাচ্চাদের মতো একটি পুতুল নিয়ে খেলা করছে। এই বাচ্চামি দেখে আমার চোখের কোণে কিছুটা অশ্রু জমা হলো। ওর নিকট যেয়েই বলি,
-মালিহা ছাদে চল তোর জন্য ট্যাবলেট এনেছি। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-সত্যিই ভাইয়া চলো তারাতারি আমার আর অপেক্ষা ভালো লাগছে না। ছাদের কর্ণার এর দিকে ওকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় ও বললো,
-ট্যাবলেট দাও তারাতারি।
-দিবোতো। একটু পিছনে ফিরে তাকা।
আমার কথামতো পিছনে ঘুরতেই আস্তে করে একটি ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিলাম মালিহাকে। আর হয়তো বোনের থেকে ভাইয়া ডাক শোনা হবেনা। আর হয়তো বাবামা একমাত্র মেয়ের নিকট থেকে কাঙ্খিত ডাক শুনবেনা। তবে আমি চাইনা বাবা মা ওর জন্য তিলে তিলে কষ্ট পাক। কারণ ক্ষনে ক্ষনে কষ্টের ব্যথা বিষফোঁড়ার মতো। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো যেটা আমি করে দেখাতে পেরেছি এটাই আজ আমার নিকট এক বড় প্রাপ্তি।
গল্পের বিষয়:
গল্প