চলন্ত বাইকে বসে বউ চেচিয়ে উঠে “ইয়াহ পায়ছি পায়ছি” বাইক কোনো রকম কষ্টে কোন্ট্রলে এনে বলি।
– কি পেলে।রাস্তার উপর দাম কিছু হারিয়ে গেছিল নাকি? এরপর যা শুনলাম রাসেল ভাই আপনি নিজ কানে না শুনলে কখনই বিশ্বাস করতেন না।বউ খুশিতে আউট অফ কোন্ট্রল হয়ে লাফিয়ে উঠে।সে নাকি ১ ঘন্টায় “৩০০ লাভ রিয়েক্ট পায়ছে” এটা শোনার পর আর কোন্ট্রলে রাখতে পারলাম না।আমার হাত-পা, চোখ-মুখ, নাক সব কাপাকাপি শুরু করে দিলো।পিছন থেকে একটা ট্রাক বাইকে ধাক্কা মারে।ছিটকে গিয়ে পরলাম কয়েক মিটার দূরে। মাথায় হাত দিয়ে দেখি রক্তে ভেসে গেছে কপাল।রক্ত মাখা হাত আমার দিকে বারিয়ে বউ শেষ বারের মতো স্লো মোসানে ডাকলো “সোহআন” হামাগুরি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম একটু একটু করে তার কাছে। গাল দুটো চেপে ধরে…
– সোহান শেষ বারের মতো একটা কথা রাখবা।আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। চোখ থেকে কান্নার জল পরছে নিজেও বুঝতে পারিনি।এই প্রথম অর্ণিয়া’কে (আমার বউ) হারানোর ভয় করছে।আমি মাথা উপর নিচ করি।সে আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে…
– এটাই সেই সুযোগ ফেসবুক সেলিব্রেটি হওয়ার।তুমি আমার কয়েকটা পিক তুলে ফেসুবকে আপলোড করে প্লিজ।রাতারাতি সেলিব্রেটি হয়ে যাবো সাথে তুমিও। আমার খুব রাগ হলো ওর এমন কান্ড দেখে।বেশ কয়েকটা পিক তোলার পর বলল।
– ভালো একটা ক্যাপশন দাও।ভুলেও আমার আইডিতে দিবা না।তোমার ফেইক আইডিতে দিও। দু’চোখে আস্তে আস্তে ঝাপসা দেখতে শুরু করে দিলাম এতক্ষণে।রাস্তার উপরেই ধপাস করে পরে যায়।যখন চোখ খুললাম তখন ঘড়িতে রাত ৭ বেজে ৩০ মিনিট। ডাক্তার পাশে বসে বলে।
– সময় মতো আপনাদের এখানে না আনলে হয়তো বাঁচতেই পারতেন না।সেই মানুষটাকে ধন্যবাদ জানাবেন। একটু একটু করে মনে হতে শুরু পরতে করলাম আমি। জীবনের বড় ভুল হচ্ছে বিয়ে করা আর তার থেকেও বড় হচ্ছে এই মেয়েকে বিয়ে করা।বাসর রাতে দরজার ছিটকেরি লাগিয়ে ১ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পরও মেয়েটা আমাকে সালাম করেনি।মুখের উপর কিসের যেন আলো পরছে তার। বিরক্ত হয়ে বলে ছিলাম “সালাম কি তুমি করবে নাকি আমি করবো”। মুখ তুলে তাকিয়ে ছিল। বিরক্ত ভরা মুখে বলে।
– ফেসবুকে একটা পোস্ট করতাছি।টাইপিং করা হলেই আপনাকে সালাম করবো।একটু ওয়েট করেন। হঠাৎ ডাক্তারের কথায় চমকে উঠলাম।কাধের উপর হাত রেখেছে।কিছুটা বন্ধুত্ব্যর মতোই ব্যবহার বলা চলে।আমাকে কিছু বলে…
– কি হলো কিছু ভাবছিলেন নাকি? আমি মাথা উপর নিচ করে “হ্যাঁ” বলে দিলাম।এক গালে হেসে বলে।
– বউ থাকলে একটু তো প্যারা থাকবেই।সেটা বুদ্ধি দিয়ে সামলিয়ে নিতে হয়। কিছু দিন পর হসপিটাল থেকে ফিরি আমরা।অফিস থেকে ফিরে বউকে ক্লান্ত শরীরে বলি।
– এই শোন না।একটু ফ্যানটা চালিয়েও দিও।আর খুব ক্ষুধাও পাইছে।কিছু থাকলে খেতে আনো। ফোন টিপতে সে ব্যস্ত।যেন আমার উপর তার কোনো দায়া-মায়া হয় না।টিপছে তো টিপছেই এক নজরে টিপছে।চোখের পলক পরে কিনা সেটাও বেজায় পরিমাণ সন্দেহ হয় আমার।এক বার মুখে তুলে তাকিয়ে আমাকে দেখলো তারপর আবার ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে বলে।
– কষ্ট করে নিজেই ফ্যানের সুইচ টিপলে কি হয়।দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছো। টাই ঢিলে-ঢালা করে সোফায় শরীর লাগিয়ে দিলাম।ফ্যানের বাতাসে ঘামে ভেজা শার্ট যেন এসির মতো কাজ করছে।শাক-ভাত সামনে রেখে আবারও ফোন টিপতে টিপতে চলে যাচ্ছিলো।পিছন থেকে হাত বারিয়ে ডেকে বলি তখন…
– এসব কি দিচ্ছি।কোথায় ভালো মন্দ কিছু খেতে দিবা তা না করে শাক-ভাত।নিকুচি করি তোমার ফেসবুকের।
– যা দিয়েছি সেটাই খাও।নাহলে কিছুই জুটবেনা।দেখছো না ফেসবুক লাইভে আছি।অসময়ে কেন বিরক্ত করো।
মুখে দিতেই কুঁচকে গেলো ঠোট।লবণ একটুও হয়নি উল্টো চিনি দিয়ে বিষাক্ত করে দিছে।মনে হয় ফেসবুকিং করতে করতে লবণের জায়গায় চিনি দিয়ে দিছে।অনেক কষ্টে আঁধ প্লেট খেয়েছি।পিচ্চি মেয়ে নিশী গলা ফাটিয়ে কাঁদছে।ফিডার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে মেয়েটার।বাজারের জন্য বের হচ্ছিলাম।পকেট হাত ঢুয়ে দেখি ম্যানিব্যাগ নেই।বউকে চেচিয়ে বলি “ম্যানিব্যাগটা দিয়ে যাও তো”। রাগ দেখিয়ে বলে…
– আমার হয়েছে যত জ্বালা।একটুও কি শান্তিতে ফেসবুকিং করতে দিবা না তোমরা! ফেসবুকিং করতে করতে এসে নিশীর মুখের ভেতর ম্যানিব্যাগ ঢুকে দিয়ে আমার হাতে ফিডার ধরিয়ে দিলো। ফেসবুক জিনিসটা কি? যাকে দেখি সেই একাউন্ট খুলে চালাচ্ছে।বাজার থেকে ফেরার পর ফোনে আমিও ফেসুবক চালানো শুরু করে দিলাম। কাজিনের থেকে একাউন্ট খুলে নিয়েছি।রাত ১০টার সময় বউ পাশে বসতেই বললাম।
– আমাকে একটা প্রোমট দিও।নিউ রিয়েক্টর নাম আইডির।
– তা না হয় দিবো কিন্তু বাজার কি করছো।বাজার না করলে তো না খেয়ে মরতে হবে।
– মেগাবাইট শেষ তাই রিচার্জ করছি বাজারের টাকা দিয়ে।আর ফেসবুক তো আছেই।ক্ষুধা লাগলেই ফেসবুকিং করবা, কমে যাবে আবার ক্ষুধা পাবে আবার ফেসবুকিং করবা। বউ খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।এখন থেকে আমরা এক সাথে ফেসবুক চালাবো।এই খুশিতে একটা সেলফি আপলোড দিলাম।বাজার করার জন্য আবার টাকা দিলো।সাথে বউকেও মেগাবাইট রিচার্জ করে দিলাম।
পরিশিষ্টঃ আমাদের মেয়ে নিশী বড় হয়ে গেছে।চোখে তেমন আর আগের মতো দেখতে পারিনা।চশমা ব্যবহার করতে হয়।নিশীকেও আইডি খুলে দিছি ওর আইডির নাম “রিয়েক্টর কুইন” চায়ের কাপে চুমুক দিতেই মেয়ে এসে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে “আব্বু আমার আইডিতে সমস্যা হচ্ছে স্টিকার কমেন্ট করো প্লিজ” পান্জাবির পকেট থেকে ফোন করি আমি।
গল্পের বিষয়:
গল্প