আম্মুর কাছে সাজেশন চাইলাম আমার বান্ধবীর জন্মদিনে কি দেওয়া যায়? উৎসাহে গদগদ হয়ে আম্মু বললো,”২ টা কাঁঠাল দিয়া দে। সিজনাল ফল খাইতে হয়। আর তোর বান্ধবী তিথী যে চিকনা, কাঁঠাল খাইলেই মোটা হইয়া যাবো। ওরে বলিস কাঁঠাল দুইটা যেন কারোর সাথে ভাগাভাগি করে না খায়। একলা খাইতে বলবি।” এত সুন্দর গিফট দিতে বলবেন আমি আশাও করি নাই। আমার ধারণার বাইরে ছিলো এটা। বড়সড় একটা শক পেয়েছি। সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। উনি এখন কাঁঠাল দুইটা মহা উৎসাহে র্যাপিং পেপার দিয়ে মোড়াচ্ছেন। এটাই নাকি আমাকে গিফট দিতে হবে। এটা না দিলে উনি আমাকে গিফট কেনার জন্য কোনো প্রকার টাকা পয়সা দিবেন না। স্তব্ধ হয়ে শুধু উনার কান্ড কারখানা দেখছি।
যত যাই হোক এটা নিয়ে আমি আমার বান্ধবীর বাসায় যেতে পারবো না। যথাসময়ে শরীর খারাপের নাটক করে শুয়ে পরলাম। মন খারাপও হলো। কত প্ল্যান ছিলো বান্ধবীরা মিলে মজা করবো! সব ভেস্তে গেলো। আমার থেকেও বেশি মন খারাপ হলো আম্মুর। উনি তিথীকে কাঁঠাল খাওয়াতে পারলেন না! এর থেকে দুঃখের কিছু হয়? এই কাঁঠালের দিন আসলে আমাদের অতিষ্ঠ করে তোলার জন্য এক আম্মুই যথেষ্ট। সারাদিন কাঁঠাল খাওয়া নিয়ে কানের কাছে ঘ্যানরঘ্যানর করতেই থাকেন। কাঁঠাল উনার এতই প্রিয় যে, ১-১০ পর্যন্ত সিরিয়ালে যদি উনার প্রিয় ফলের কথা জিজ্ঞাসা করা হয় উনি ১-১০ এ শুধু কাঁঠালের নামই বলবেন। সেদিন আম্মুকে বললাম,
: আম্মু, ঘুম পাইতেছে না। কি করি বলো তো?
: কাঁঠাল খা। কাঁঠাল খাইলে প্রচুর ঘুম ধরে। ঘুমের ট্যাবলেটের থেকেও কাঁঠাল বেশি কার্যকর।
কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বাটি কাঁঠাল আমার সামনে রেখে বললেন এখন যদি তুই কাঁঠাল না খাস তাইলে আমি ঘুমামু না। এই কাঁঠাল খা কাঁঠাল খা বলে আমাকে বারবার ডিপ্রেশনে ফেলে দিচ্ছেন উনি। আমি যদি এই কথা উনাকে বলি,উনার উত্তর হয় তুই যদি কাঁঠাল না খাস তাইলে আমিই ডিপ্রেশনে যামু। মানে আমি আর জাস্ট নিতে পারছি না আম্মুর এই অসহ্য অত্যাচার। উনি যদি শুধু আমাকেই এই অত্যাচার করতেন তবু মেনে যাওয়া যেতো। আমার মাসুম, নিষ্পাপ ছোট বোনটাকেও তিনি রেহাই দেন না। জোর করেই কাঁঠাল খাওয়ান। কাঁঠাল না খেলে রান্না বন্ধ করার হুমকি দেন। জোর করে কাঁঠাল খাইয়ে ছোট বোনের দিকে ইঙ্গিত করে উনি আমাকে বলেন,”ছোট বোনটারে দেখে কিছু শেখ! দ্যাখ কিভাবে কাঁঠাল খায়। তুই তো কাঁঠাল খাসই না। কুত্তার পেটে ঘি হজম হয় না তো! এইজন্য এত সুখাদ্যও তোর পেটে হজম হয় না।”
উনাকে যদি বলি আম্মু কাঁঠাল খেলে তো গরম লাগে প্রচুর। উনি ধাক্কা দিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে দেন। তারপর এক বাটি কাঁঠাল দিয়ে বলেন,”নেহ্, গোসল করতে করতে খা। তাইলে আর গরম লাগবে না।” উনি যদি শুধু কাঁঠাল খাওয়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতেন তবু একটা কথা ছিলো। কিন্তু না। কাঁঠাল আমাকেই ভাঙতে হয়। হাত আঁঠা দিয়ে মাখামাখি হয়ে যায়। সেই আঁঠা বহু কষ্টে তুলতে হয়। আমার এই অসহায়ত্বের কথা কে বোঝায় আম্মুকে! আহা অদৃষ্ট! কাঁঠাল যদি খেতে না পারি তাহলে উনি কাঁঠালের রস করে খেতে বলেন। সেই রস দেখেই আমার বমি করতে করতে কোমায় চলে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু পারি না।
সবচেয়ে ভয়ংকর কথা, উনার মতে কাঁঠাল খেলে নাকি করোনা হয় না। আমরা কাঁঠাল না খেতে চাইলে উনি বলেন, “যারা কাঁঠাল খায় তাদের কোনোদিন করোনা হবে না। আমাকে দ্যাখ। আমার করোনা হয় না কেন? এই কাঁঠাল খাই দেখেই তো। আমার মুখে কোণ ব্রণ আছে? আমার স্কিন ফ্রেশ। তোরটা দেখছোস? আমার গায়ের রঙ একদম পাকা কাঁঠালের মতো। আর আমার কত বুদ্ধি দেখস না? কাঁঠালের খোসার মতোই আমার বুদ্ধি শার্প। এগুলা কেন? বল? কারণ, আমি কাঁঠাল খাই। তুই খাস না। কাঁঠালের যে কি গুণাগুণ ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া।” তিথীর জন্মদিনে যে কাঁঠাল দুইটা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, সেই কাঁঠাল এখন আম্মু আমাকে ভাঙতে বলছেন। হায়! আমি যদি আগেই ভেবে নিতাম! তিথীর জন্মদিনে কাঁঠাল না নিয়ে গেলে এই কাঁঠাল আমাকেই খেতে হবে, তাহলে আমি গিফট হিসেবে কাঁঠালই দিতাম ওকে।
চরম ডিপ্রেশন নিয়ে কাঁঠাল ভাঙছি। এই কাঁঠাল আমি কিছুতেই খাবো না। দরকার পরলে কোমায় চলে যাবো তবুও খাবো না। কাঁঠাল থেকে নিস্তার পেতে জ্ঞান হারানোর ভান ধরে শুয়ে পরলাম। আম্মু আমার মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে বলছেন,” আশ্চর্য! কাঁঠালটা খেয়ে তো অজ্ঞান হতে পারলি না?”
গল্পের বিষয়:
গল্প