গুজব

গুজব
আমেরিকার স্যাটেলাইটে এক অদ্ভুত রকমের দৃশ্য ধরা দিয়েছে। পৃথিবীর কোন এক জায়গায় অসংখ্য নক্ষত্রের মত কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। যেগুলো আলোয় ঝিকিমিকি ঝিকিমিকি করছে। লোকেশন চ্যেক করে নাসার বিজ্ঞানীরা দেখল লোকেশনটা বাংলাদেশের।
তৎক্ষনাত রহস্য উদঘাটনে বিমান নিয়ে বেরিয়ে পরল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। বাংলার আকাশের কাছাকাছি পৌছে দৃশ্য আরো ক্রমশ প্রকাশ্য হচ্ছে। সত্যিই তো এগুলো কি? নক্ষত্র? এত কাছাকাছি এতগুলো নক্ষত্র কিভাবে থাকতে পারে? তারা এর নাম দিল নক্ষত্রপুঞ্জ। তাদের মাঝে গুটিকয়েক আবার আলাদা। তারা শুধু সাদা আলো নয় বিভিন্ন রকমের আলো প্রদর্শন করছে। কখনো হলুদ, কখনো লালা কিংবা কখনো নীল। এগুলো নক্ষত্র নাকি এলিয়েনরা তাদের স্পেসশিপ নিয়ে আক্রমন করেছে বাংলাদেশে? কিছুতেই বুঝতে পারছে না নাসার মহাপরিচালক। চিন্তায় মাথা হট হয়ে গেছে। তারা একটু দূর থেকেই সবকিছু লক্ষ্য করতে লাগল। হঠাৎ দেখল একটা আলো ধীরে ধীরে পতিত হচ্ছে পৃথিবীর মাটিতে। একি? এটা কোন উল্কাপিন্ড তো নয়? তাহলে তো শর্বনাশ। নাসার মহাপরিচালক সঙ্গে সঙ্গে প্রেস মিটিং করে সবাইকে জানিয়ে দিল। পৃথিবী ধ্বংসের মুখে। এখান থেকে রেহায় পাওয়ার কোন উপায় নেই। ধ্বংস অনিবার্য। পৃথিবীর এ মাথা থেকে ও মাথা খবর ছড়িয়ে পরল বিদ্যুত গতিতে।
এত টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে? বিল গেটস তার সব সম্পত্তি বিলিয়ে দিল গরিবদের মাঝে। জেলে রাখা সকল ভয়ংকর অপরাধীদেরকেও মুক্ত করে দেওয়া হল। যার যা মন চাচ্ছে শেষ বারের মত খেয়ে নিচ্ছে সবাই। কেউ কেউ তার ভালোবাসার মানুষটাকে জরিয়ে রেখেছে শক্ত করে। মরলে একসাথে মরবে। শেষ চুমুটা খেয়ে নিল কপালে। ট্রাম্প ফোন করল কিম জং উন কে। ফোন দিয়ে বলল- ভাইরে ভাই এত অস্ত্র, শস্ত্র দিয়ে কি হবে? আজ থেকে কোন শত্রুতা নয়, আজ থেকে আমরা ভাই ভাই। চীনের প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে ক্ষমা চাইল। লাদাখ ফিরিয়ে দিল তাদেরকে। করোনা ছড়ানোর দায় সম্পূর্ন নিজের কাঁধে নিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল।
এদিকে নিউজটা বিদ্যুত গতিতে ছড়িয়ে পরেছে বাংলাদেশেও। কাজের মেয়ে জরিনা যার ফেসবুক আইডি এঞ্জেল জেরিন সে তার ফেসবুকে সবার কাছে নিজের পরিচয় উন্মুক্ত করে দিয়ে ক্ষমা চাইল। এলাকারা কাঠমিস্ত্রি সুমন তার ফেক আইডি “রাতের সূর্য্য” দিয়ে যত জন ছেলের সাথে ফ্লার্ট করেছে সবার কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে শেষ বিদায় নিয়ে নিল। ইসহাক হোসেন তার জমিজমা সব বেঁচে ফ্যামিলি নিয়ে রওনা দিয়েছে মসজিদের উদ্দ্যেশ্যে। যেয়ে দেখে মসজিদে কোন জায়গায় নেই। তার আগেই কানায় কানায় পূর্ন হয়ে গেছে লোকসমাগমে।
ভূবন কুমার তার পরকীয়ার কথা স্বীকার করেছে। তাকে ক্ষমাও করে দিয়েছে তার বউ রাণীদেবি। সবাই সব পাপ কর্ম স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে একে অপরের কাছে। বিশিষ্ট চা খোর রাকিব উদ্দিন তার জীবনের সর্বশেষ এক জগ চা নিয়ে বসে গেছেন। মাহফুজুর রহমান তার সর্বশেষ গানের এলবাম প্রকাশ করে দিয়েছে। এই প্রথম তার গানের প্রশংসা করছে দেশবাসি। কেউ কোন ট্রোল করে নি। সিয়াম তার এক্স রেশমিকাকে ফোন দিয়ে বলল- কি লাভ হল আমায় ছেড়ে যেয়ে? সেইতো তুমিও যেখানে যাচ্ছ আমিও সেখানে যাচ্ছি। কোন মানে হয় এসবের? এদিকে নাসার মহাপরিচালক কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে এবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ধীরে ধীরে এগুতে লাগলো।
একটু কাছে এসেই হাবল টেলিস্কোপ চোখে দিতেই দেখল- তারা যেগুলোকে নক্ষত্র ভেবেছিল সেগুলো আসলে কোন নক্ষত্র নয়। নয় তো কোন উল্কাপিন্ড পতিত হচ্ছিল মাটিতে। এটা বাংলার দামাল ছেলেরা রাতের বেলা কয়রাতে (এক ধরনের ঘুড়ি) লাইট লাগিয়ে উড়াচ্ছিল। একটা কয়রা সুতা গুছিয়ে নিচে নামানোর দৃশ্যই তারা ভুলে উল্কাপিন্ড মনে করে গুজব ছরিয়েছে। নাসার মহাপরিচালক প্রেসের সামনে কান ধরে শপথ নিল, বেঁচে থাকতে আর কখনো বাংলাদেশের কোন রহস্য উদঘাটনে আগ্রহ দেখাবে না কোনদিন।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত