ঘন কুয়াশায় চারদিক ঢেকে গেছে। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। রায়না জানালা খুলে বাইরে দেখার চেষ্টা করছে, কিন্তু সবকিছুই কুয়াশায় ঢেকে আছে। সে ভাবলো এতো কুয়াশায় কীভাবে সে ফুল কুড়াতে যাবে? এই এলাকায় মাত্র একটি শিউলি ফুলের গাছ। সাদা পাপড়ি আর লাল ডাঁটার ফুলগুলো দেখতে কী যে সুন্দর লাগে রায়নার, সে রায়না ছাড়া কেউ বুঝবে না।
ফুল কুড়িয়ে প্রতিদিন মালা গাঁথে রায়না। আর ওর বন্ধু আসমাকে দেয়। আসমা বস্তিতে থাকে। ফুল বিক্রি করেই ওর সংসার চলে। রায়না ওর বন্ধু আসমাকে খুব ভালোবাসে। তাই ভোরে উঠেই ওদের বাগানের একেবারে শেষ মাথায় যে শিউলি গাছটা আছে তার কাছে চলে আসে আর জামা ভর্তি করে ফুল কুড়ায়। একটু দেরি হলেই মালি ঝাড়ু দিয়ে সব ফুল ফেলে দেয়।
এসব চিন্তা করে আজও ঘন কুয়াশার মধ্যেই রায়না বের হলো। মালি কাকার আসতে এখনো দেরি আছে, এই সুযোগে জলদি ফুল কুড়াতে হবে, মা জানতে পারলে খুব রাগ করবেন। রায়না খুব তাড়াতাড়ি গাছের নিচে এলো। কিন্তু হায়! একি! একটা ফুলও যে নেই? মালি কাকা কি আরো আগে এসে সব ফুল ফেলে দিয়েছে? কিন্তু সে তো এখনো আসে নি। তাহলে? কে নিল ফুলগুলো?
ফুল না পেলে কী করে চলবে? আসমাকে সে কী দেবে? এসব ভাবতে ভাবতে রায়নার মন খারাপ হয়ে গেলো। সেদিন আসমা এসে মালা পেলো না। দু’জনই মন খারাপ করে বসে রইলো। এভাবে একদিন যায়, দু’দিন যায়, তিন দিন যায়। রায়না রোজ গাছতলায় যায় কিন্তু ফুল পায় না। সাহস করে মালি কাকাকে জিজ্ঞেস করে কিন্তু সে বলে ‘আমি তো কুছ জানি না খুকুমনি, ফুল হামি ঝাড়ু দেই না।’
রায়না বুঝলো অন্য কেউ ওর ফুল নিয়ে যাচ্ছে। ফুল চোরকে ধরতে হবে। কিন্তু কি করে? রায়না পরদিন আরো ভোরে উঠলো। সূর্য তখনও ভালো করে ওঠেনি। চারদিকে আবছা অন্ধকার। তার উপর কুয়াশা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। রায়না চুপি চুপি গাছের কাছে গিয়ে একটা ঝোপে লুকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর ও দেখলো কুশার মধ্য থেকে দুটো ঝিকমিক সাদা ডানা বেরিয়ে এলো। ডানার মধ্যে একটা ফুটফুটে মেয়ে। বুঝতে আর বাকি রইলো না ফুল চোরটা কে?
সাদা পরীটাই যে ফুল চোর তা ভেবে রায়না অবাক হলো। ঠিক করলো পরীটাকে ও ধরবে, চুরির শাস্তি দেবে। রায়না দ্রুত বের হয়ে ঝপ করে পরীটার একটা ডানা চেপে ধরলো। পরীটা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু ওর গলার স্বর এতো চিকন যে রায়নার মনে হলো পাখি ডাকছে। সাদা পরী বলল ‘আমাকে ছেড়ে দাও খুকুমনি।’ রায়না তো কিছুতেই ছাড়লো না। বলল ‘তুমি আমার ফুল চুরি করেছ, আমার বন্ধুকে কষ্ট দিয়েছো, তোমাকে আমি ছাড়বো না।
সাদা পরী বললো ‘আমাদের ভীষণ বিপদ। শীতের সময় আমরা সাদা ফুল দিয়ে কাপড় বানাই। আমার দেশের সব সাদা ফুল শেষ হয়ে গেছে, সবাই শীতে কষ্ট পাচ্ছে, তাই আমি তোমার গাছ থেকে ফুল নিয়ে যাই আর কাপড় বানিয়ে সবাইকে দিই। তুমি আমাকে সাহায্য করবে না খুকুমনি?’
রায়না ভাবে তবে তো সাদা পরীর কোনো দোষ নেই। সে অন্যের উপকারই করেছে। কিন্তু আসমার কী হবে? সাদা পরী বুঝতে পেরে বলল ‘আমি আমার দেশের রঙিন ফুলের গাছ তোমায় এনে দেব। সেই ফুল তুমি বন্ধুকে দিতে পারবে।’ বলেই সাদা পরী তার চকচকে ডানা উড়িয়ে চলে গেলো।
পরদিন রায়না বাগানে গিয়ে খুব অবাক হলো। চারদিকে হলুদ, লাল, নীল ফুলে ভরা তার বাগান। বুঝলো সাদা পরী এসব দিয়ে গেছে। রায়না খুশিতে নাচতে নাচতে আসমার জন্য ফুল তুলতে লাগলো। মালি কাকা তো অবাক হয়ে বললো ‘ইতো ফুলের গাছ কাহাছে এলো খুকুমনি?’ রায়না বললো ‘আমার বন্ধু দিয়েছে।’ তার সে কী আনন্দ! তখন থেকে রায়না, আসমা আর সাদাপরী খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলো।