কার্ডটা হাতে নিয়ে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার। সেই মুখে লাল-নীল-হলুদের বর্ণচ্ছটা। বেশির ভাগ সময় অহেতুক বিরক্তিতে কুচকে থাকা কপালের ভাঁজ নিমেষে মসৃণ টানটান। বাঁকা ঠোঁটে এক বিরল হাসি ছড়িয়ে উর্মি আপা বলে ওঠে—
ইট্স রিয়েলি এ সারপ্রাইজ ফর মি! আমি ভাবতেই পারি নাই তুমি আমার বার্থডে মনে রাখছ। একদিন কথা প্রসঙ্গে বলছিলাম, আর মনে রাখলা! ইউ আর জিনিয়াস। কথা প্রসঙ্গে না উর্মি আপা, হাত দেখা প্রসঙ্গে।
তাইলে বলতে হবে জ্যোতিষ হিসেবেও তুমি এক্সট্রা অর্ডিনারি, যার হাত দেখো তার জন্মতারিখ মনে রাইখা দাও!
কেন, আপনাকে পছন্দ করি, এ জন্য মনে রাখতে পারি না! আর যদি কারো জন্মতারিখ মনে রাখার বিষয়টা আসে তাহলে যার জন্মদিন মনে রাখতেছি সেই মানুষটা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টা তো থাকতেছেই।
তা অবশ্য পার, তুমি যে আমাকে পছন্দ কর এই বিষয়টা মাথায় আসে নাই। তার মুখটা এখন আরো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। কিছু টেকনিক্যাল কথা বলে অবন্তী তার এই খুশিটা মাটি করে দিতে চাচ্ছে না। অবন্তী আসলে যখন কারো হাত দেখে, তখন ওই ব্যক্তির জন্মতারিখটাকে ঠিক একটা তারিখ হিসেবে দেখে না। সেটাকে দেখে সংখ্যার বিচারে। এই যেমন কারো জন্মতারিখ ২২ মে সে ওটাকে দেখবে ২+২=৪, ৪ সংখ্যা হিসেবে। নিউমরোলজি অনুযায়ী জন্মসংখ্যা বিচার করা আর কি!
এখন যদি উর্মি আপাই প্রসঙ্গটা না ঘোরায় তাহলে সে স্বস্তিও পাচ্ছে না। কিন্তু হাত দেখার প্রসঙ্গ যখন উঠেছে তখন উর্মি আপা কি আর সহজে অন্য প্রসঙ্গে যেতে চাইবে! হতাশ মানুষদের এই এক সমস্যা।
তার মানে তোমার কাছে আমি ইম্পরট্যান্ট?
না তো কি! এ কি ফেসবুকে উইশ করা যে নোটিশ পাইলাম আর বলে দিলাম, হ্যাপি বার্থডে!
উর্মি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। অবন্তী তার কলিগ ঠিকই তবে ওর ক্লাসটা আলাদা। কত ডিগনিফাইড একটা ফ্যামিলি ওদের। যদিও অফিসে কারো সাথে সেরকম কোনো অ্যাটিচিউড নেই, তারপরও। উর্মি একটু অবাকই হয়।
উর্মি আপা, এভাবে খামবন্দি কার্ডটাকে হাতে নিয়ে বসে থাকবেন, দেখেন না ভেতরে কী আছে!
কেন ভেতরে আরো কোনো সারপ্রাইজ?
হতেও পারে, দ্যাটস আপ টু ইউ। বলতে বলতে অবন্তী নিজেই খামটা খুলে কার্ডটা বের করে। অফিস ক্যান্টিনে আড্ডারত দু-একজন কলিগ উঁকি দিচ্ছে কার্ডটার ওপর। কার্টুন পিক, লম্বা মোটা এক মহিলাকে সিএনজি অটোরিকশা ডেকে দিচ্ছে তার চেয়ে বেটে মোটা একটা ছেলে।’
এর মানে কি?
‘এর মানে খুব সোজা। উর্মি আপা এ বছর আর একা থাকবে না, একজন সঙ্গী জুটে যাবে’। ওপাশ থেকে টিপ্পনি কাটে জুঁই। এ মেয়েটার একটু গায়ে পড়া অভ্যাস আছে। উর্মি মনে মনে ওকে অপছন্দ করলেও মুখে কখনো প্রকাশ করে না। তবে আজকে ওর কাটা টিপ্পনি তার খারাপ লাগেনি।
লাঞ্চ শেষে যে যার কেবিনে ঢুকে গেলে উর্মি অবন্তীর হাত চেপে ধরে।
থমকে দাঁড়ায় অবন্তী, – কিছু বলবেন?
হ্যাঁ, আচ্ছা- ব্যাপারটা কি তোমার প্রেডিকশান থেকে এসছে, নাকি এইটা নিছক একটা কার্ড?
অবন্তী ভেতরে ভেতরে একটু দমে যায়। উর্মি আপার চোখে এক গভীর জিজ্ঞাসা। এমনটা হবে সে আগে ভাবেনিই। সে জাস্ট ফান করার জন্য এরকম একটা কার্ড পছন্দ করেছে। কিন্তু উর্মি আপাকে তো বেশ সিরিয়াস দেখাচ্ছে। তারপরও অবন্তী বেশ সপ্রতিভ ভঙ্গিতেই বলল, কেন বলেন তো, এরকম হলে তো ভালো হয়। এরকম একজন বন্ধু জুটে গেলে দোষ কি!
কিন্তু তুমি তো আমার হাত দেখে আমাকে বিয়ে করতে নিষেধ করছিলা। আমার স্পষ্ট মনে আছে, বলছিলা, ‘বিয়ে না করলে কী হয়! মানুষের জীবন তো শুধু একটা বিয়েতে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, মানুষের তো আরো অনেক কাজ থাকতে পারে। আপনার ভিতরের সেই সব গুণগুলাকে খুঁজে বের করেন। সেটাই বেটার হবে।’
আমি যখন তোমারে জোরে-সোরে ধরলাম তখন বললা, আমার বিবাহিত জীবন নাকি সুখের হবে না।
অবন্তী ভেতরে ভেতরে ভীষণ বিব্রত বোধ করে। তার যে মাঝে মাঝে কী হয়! হাত দেখতে গিয়ে সব সময় সত্যি কথা বলতে নেই এই বিষয়টা তার মাথাতেই থাকে না। উর্মি আপার বয়স হয়েছে। এবার বোধ হয় পঁয়ত্রিশে পড়ল। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে এই বয়সী একটা অবিবাহিত মেয়েকে নিয়ে পরিবারের সবার দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তার নিজেকে নিজের একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে। অবন্তী বিষয়টাকে হালকা করার জন্য হেসে বলল, বিয়ে করতে হবে এরকম কেন ভাবতেছেন উর্মি আপা, একজন ছেলে কি একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না!
না, পারে না। একটা সময়ে এসে পারে না। আমি যেরকম সোসাইটিতে, যেরকম ফ্যামিলিতে বিলং করি সেখানে পারে না। আমার বাবা নেই, মা দিন-রাত আমার বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। ভাইয়ারা সবাই দেশের বাইরে থাকে। তারাও কেউ আমাকে তাদের দেশে নিতে চায় না। একে তো মা একা হয়ে যাবে, দ্বিতীয়ত তাদের বৌ-রাও চায় না। ওরা উন্নত বিশ্বে বড় বড় চাকরি করে। ওদের এই শুধু গ্রাজুয়েট বোনকে কোথায় খাটাবে! ক্লাস কনসাসনেস বোনকে যেন-তেন জায়গায় বিয়ে দিতেও সায় দেয় না।
অবন্তীর মুখে এলেও কথাটা বলে না, ভদ্রতাবশত চেপে যায়। উর্মিকে তার ভাইয়েরা ওদেশে নিয়ে গেলে সে কতটা বোঝা হয়ে দাঁড়াত! এখানে সে চাকরি করছে, সেখানেও করতে পারত। ভাইদের ফ্যামিলিতে থাকতে হবে এমন কোনো ব্যাপারও তো নেই। সে চাইলে একাও থাকতে পারত।
মন খারাপ কেন করছেন উর্মি আপা! আপনি স্মার্ট, সুন্দরী, দারুণ ফিগার আপনার!
হ্যাঁ, সুন্দরী! এ দেশে কালো মেয়েকে কেউ সুন্দরী বলে না।
আপনাকে ঠিক কালো বলা ঠিক হবে না। আর আপনি সুন্দরী বলতে যা বোঝায় এটা ‘না’- এ কথা কেউ বলতে পারবে না।
উর্মি আপা এখন নিশ্চয় ভাবছে তাহলে তার বিয়ে হচ্ছে না কেন? ৩৪ বছর পেরিয়ে গেল কেউ বিয়ে করল না কেন? কথাটা মুখে না বললেও তার মুখের প্রতিটি রেখায় এই জিজ্ঞাসা স্পষ্ট।
অবন্তী উর্মির হাতটা ধরে ধীরে ধীরে বলল, বিয়েই কি কারো সৌন্দর্য পরিমাপের মানদণ্ড? কত কুৎসিৎ মানুষও তো বিয়ে করে, ঘর সংসার করে। কত সুন্দর ব্যাচেলর- আছে না!
জানো, কত পুরুষ পাত্র হয়ে এলো কিন্তু কোনো সম্বন্ধই বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না। কেন বলতে পারো?
ভেবে দেখেন, আপনি চাননি কিন্তু আপনাকে চেয়েছে এরকম মানুষও তো কম নাই।
উর্মিকে স্মৃতি হাতড়াতে হয় না এ জন্য। এ যেন দগদগে ঘা তার স্মৃতিকে অনেকটা আহত অবস্থায় রেখেছে এমন ভঙ্গিতে বলল, হ্যাঁ, একজন চাইছিল, অনেক আগে। তখন ভাইয়া রাজি হয় নাই, ব্যবসা-পত্র ভালো ছিল না বলে। কিন্তু সে এখন অনেক স্টাবলিশ, বড় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক।
ভাবেন তাহলে, নিজেকে এভাবে ছোট ভাবার তো কোনো কারণ নাই।
কিন্তু সেজন্য ভীষণ রিগ্রেট হয় এখন। কাউকে ভালো লাগল, হয়তো মনের এক কোনে আবছা এক ভালোবাসার বোধ জন্মাল কিন্তু তার তখনকার অবস্থানের জন্য তাকে মেনে নিতে পারি নাই, এতদিন পর এসে এই যে রিগ্রেট! মাঝে মাঝে মনে হয় এত রিগ্রেট নিয়ে তো বাঁচা যায় না।
এবার অবন্তী রেগে যায়। আপনার ঠিক সমস্যাটা কোথায় বলেন তো? বিয়ে না করে কি বাঁচা যায় না? সংসার না করে কি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না?
পারে হয়তো! কিন্তু আমার এটা ভাবতে খুব কষ্ট হয় জানো, একটা ছোট্ট শিশু আমাকে মা বলে ডাকবে না, একটা ছোট্ট হাত আমার হাত ধরে স্কুলে যাবে না, পার্কে বেড়াবে না।
এক্ষেত্রে অবন্তীর কিছু বলার থাকে না। তবে অবন্তী জানে, এই মেয়েটা বিয়ে না করলেই ভালো থাকবে। জীবনের জটিলতা আরেকটু কম দেখতে হবে। তার হাতে কোনো সন্তান রেখা সে দেখেনি। তাই কি সত্যি! এটা কি হতেই হবে! একটা অকাল্ট সায়েন্সের ওপর ভিত্তি করেই বা সে এতটা নিশ্চিত হচ্ছে কী করে! কিন্তু কিরো-বেনসন থাম্ব থিয়োরি কী বলে? শুধু শুধু জ্যোতিষ রাজ্যে ঢোকার কী দরকার! জীবনকে কি জীবনের মতো চলতে দেওয়া যায় না! ভালো-মন্দ, উত্থান-পতন পেরিয়ে যাওয়াই তো জীবনের ধর্ম। কতগুলো বানানো শাস্ত্রের কথা দিয়ে কেন একে বেঁধে ফেলা! হতাশ মানুষের এই এক দোষ বিজ্ঞানের যুক্তিবাদী সীমার বাইরে তারা ঘুরে বেড়াতে চায়। আর বিজ্ঞান! বিজ্ঞান কী বলে? বিজ্ঞান বলে, এই বিশ্বের ঘটনাবলি বেনিয়মী বা খামখেয়ালি না। পরস্পর যোগসূত্রে বাঁধা।
গতকাল-আজ-আগামীকাল যেন শেকলে বাঁধা। আজ যা কিছু ঘটছে, সবই গতকালের ঘটনাবলির সূত্রে। আগামীকাল যা ঘটবে তা আজকের পরিণাম। এ ধারার ব্যতিক্রম হবে না কখনো। যাকে বলে ডিটারমিনেজম। নির্ধারণবাদ। তাই যদি সত্য হয়, তাহলে কতগুলো রেখা, জন্মক্ষণ, সেই সময়ে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে কেন কারো ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া যাবে না! আইনস্টাইনের মতে সবই তো নির্ধারিত। আজ থেকে ৫০০ হাজার বছর পরে পৃথিবীর কোন কোন জায়গা থেকে সূর্য গ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ কত ঘণ্টা কত মিনিট কত সেকেন্ডে দেখা যাবে তা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আজ বলে দিতে পারেন। কারণ, পৃথিবী, সূর্য কিংবা চাঁদের চলন নির্ধারিত, কোনো খামখেয়ালি না। যুক্তিটা জ্যোতিষশাস্ত্রকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য মন্দ না। অবন্তী মনে মনে প্রমাদ গোনে, তার শখের হাত দেখা আবার না ব্যবসায় বদলে যায়!
অবন্তী চকিতে ভাবে- না, এভাবে তার একটা ভিত্তিহীন ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য কারো জীবনের স্বাভাবিক গতি থেমে থাকতে পারে না। সে তৎক্ষণাৎ উর্মিকে বলে, উর্মি আপা বলেন তো, আপনি কি এখন আমার করা ভবিষ্যদ্বাণীর ভয়েই বিয়ে করতেছেন না! এটা একদম করবেন না। আমি ভাবছিলাম আপনি বিয়ে করতে চান না, তাই আপনাকে আরো উৎসাহ দিতাম। আসল কথা তো তখন বলেন নাই! জ্যোতিষশাস্ত্রকে বিশ্বাস করার মতো বোকামি কেউ এ যুগে করে নাকি! জীবন অনেক বড় উর্মি আপা। এখনো সময় আছে, কোনো ভালো ছেলেকে পেলে বিয়ে করে ফেলেন।
২.
অবন্তীর ভবিষ্যদ্বাণীকে দূরে ছুড়ে দিয়ে একদিন উর্মির বিয়ে হয়ে গেল। মেয়ের বয়স বেশি বলে ব্যাচেলর পাত্র জোটাতে পারেনি তার ভাইয়েরা। পাত্র বিপত্নীক। দেখতেও কিছু একটা সুশ্রী না, তার ওপরে এক সন্তানের জনক।
কথাটা শুনে অবন্তী মনে মনে ভাবল, বাহ ভালোই হয়েছে, রাতারাতি বাচ্চার হাত ধরে পার্কে হাঁটার ব্যবস্থাও হয়ে গেছে। তবে উর্মি আপা বিয়ে করে যতটা নির্ভার হয়েছে ভেবেছিল অবন্তী, তা কিন্তু না।
উর্মি আপার বর মোটা-সোটা পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থায় পোস্টিং। তবে ইদানীং তার গোয়েন্দাগিরিটা চোর-ডাকাত-খুনি-সন্ত্রাসীর বদলে বৌ-এর ওপর ফলাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সে তার স্ত্রীকে সারাক্ষণ সন্দেহ করে। স্ত্রীর মোবাইল কল লিস্ট চেক করে, ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চায় এবং ছলে-বলে-কৌশলে তা দিতে বাধ্য করে। চাকরি করার দরকার কী বলে চাকরিটা ছাড়িয়ে নেয়। ক্রমান্বয়ে তার বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে তাকে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসী করে ফেলে। আর সেই দ্বীপে একাকী উর্মিকে বিগত স্ত্রীর রূপে গড়ে তোলার চেষ্টা চালায় লোকটা। কথায় কথায় তার তুলনা চলে আসে। তার তুল্য করে তুলতে চায় বাবা এবং তার সন্তান। কিন্তু এই স্বৈরাচারের মনগড়া যদি হতে পারত সেই নারী তবে তাকেও তো অকালে এই দুনিয়া ছাড়তে হতো না! এটা বুঝতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না উর্মির।
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দুই বছর ধরে এই অত্যাচার সয়েছে উর্মি কিন্তু আর না।
৩.
অবশেষে উর্মি মুক্ত করে নেয় নিজেকে। কিন্তু সে কি সত্যি মুক্তি পেয়েছে! সব কলুষতা, সব জটিলতা থেকে তার মন কি মুক্ত হতে পেরেছে! অথচ তার এই জীবনটা এই বিয়েটা অন্যরকম হতে পারত। এসব জটিলতা নাও থাকতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। ওই যে অবন্তী তার হাত দেখে একদিন বলে দিল, ‘শুক্র উন্নত না, বিবাহ রেখা বক্র হয়ে নিচের দিকে ঝুলে রয়েছে। বিবাহিত জীবন সুখের হবে না!’
কথাগুলো বারবার তার মনে ঘুরে ঘুরে বেজেছে। বেজে চলেছে এখনো। আবার সেই রিগ্রেট তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। কেন সে এটা করতে গেল! ডিভোর্সির চেয়ে তো আনম্যারিড ভালো ছিল।
অনেক দিন পর উর্মি আবার তার ফেসবুক আইডি অ্যাকটিভ করেছে।
অবন্তীর হোম পেজে ভেসে উঠেছে উর্মির বদলে যাওয়া প্রোফাইল পিকচার। ছবিটার দিকে তাকিয়ে অবন্তীর মনের ভেতরে অন্য রকম এক দুঃখবোধ, অপরাধবোধ জেগে ওঠে। সেই কবে থেকে সে আর কারো হাত দেখে না। কারো আয়ুরেখা সীমিত, কারো জটিল রোগে ভোগার সম্ভাবনা, কারো পিতৃ-মাতৃ বিয়োগ, সন্তান বিয়োগ সম্ভাবনা! এসব আগেভাগে জেনে, জানিয়ে কী লাভ তার! শুধু শুধু কষ্ট পাওয়া, কষ্ট দেওয়া। এই যে এতদিন পরও আজ কষ্ট হচ্ছে উর্মি আপার প্রোফাইলে সিঙ্গল স্ট্যাটাস দেখে! এ শুধু সিঙ্গল নয়, এ এক গভীর একাকিত্ব। একলা একজন মানুষ অস্তগামী সূর্যকে পেছনে রেখে ম্লান হাসছে তার প্রোফাইল পিকচারে।