ভূতের নাম তুংতুং হাদা

ভূতটার নাম তুংতুং। সে ছিল খুবই বোকাসোকা। তাই ভূতসমাজ তাকে ডাকত তুংতুং হাদা বলে। তার মায়ের ছিল ভূৎজার দোকান। মানুষের খাবার যেমন পিৎজা, ভূতদের তেমনি ভূৎজা। মা অবশ্য একাই সব সামলান, কিন্তু কাজের চাপ বেশি হলে বাড়ি বাড়ি ভূৎজা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে তুংতুংয়ের কাঁধে। এক সকালে মা বললেন, শহুরে এক ভূতের বাসায় ভূৎজা পৌঁছে দিতে হবে। ছোট্ট স্কুটিটার পেছনে একগাদা ভূৎজা বেঁধে নিয়ে ভটভট শব্দ করে রওনা হলো সে।

শহুরে ভূত থাকে একচল্লিশ নম্বর বাড়ির ছাদে, পানির ট্যাংকে। তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই তুংতুংয়ের বুক ধড়ফড় করতে লাগল। এদিকটা মানুষে ভর্তি। আর মানুষকে ভয় পায় তুংতুং। ছাদে ওঠার জন্য মন্ত্র পড়ল সে, ‘ঢ়উ ঢ়উ দছাংকি!’ মন্ত্র পড়তেই ঘটল বিপত্তি। তুংতুং মানুষে রূপ নিল। মন্ত্র পরীক্ষায় তিন-তিনবার ফেল করলে যা হয়! এদিকে এক ঘণ্টা পেরোনোর আগে ভূতের রূপে ফেরার উপায় নেই। আবার অন্য কোনো মন্ত্রও কাজ করবে না এ সময়। অগত্যা নিজেকে দু-চারটে গালমন্দ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল ও।

তিনতলা অবধি উঠতে না উঠতেই তুংতুং হাঁপিয়ে গেল। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল ছয়-সাত বছর বয়সী ছোট্ট এক মেয়ে। অদ্ভুত পোশাকের লোকটাকে দেখে তার বেশ মায়া হলো। সে নিজ থেকে কথা বলতে এল, ‘একদম হাঁপিয়ে উঠেছ দেখছি! আমার নাম আনিকা। তুমি আমাদের বাসায় বসে একটু জিরিয়ে নাও।’ তুংতুং মানা করতে থাকে, কিন্তু আনিকা জোর করে তাকে বাসার ভেতর নিয়ে যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আনিকা একগাদা গল্প বলে ফেলে। তার আপুর বিয়ে। সবাই শপিংয়ে গেছে। বাসায় সে, মামা আর ফাতেমার মা। সে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল আপুর জন্য। ইত্যাদি ইত্যাদি। হঠাৎ ওর চোখে পড়ল তুংতুংয়ের ব্যাগের দিকে।

– ব্যাগে কী?
– এগুলো ভূৎজা।
– ভূৎজা আবার কী?
– ভূতদের প্রিয় খাবার।

চোখ কপালে তুলে আনিকা প্রায় চেঁচিয়ে বলল, ‘তুমি ভূত?’ তাকে কিছু বলার আগেই আনিকার মামা রুমে ঢুকলেন। ঘরে তুংতুংকে বসে থাকতে দেখে তাঁর সন্দেহ হলো। জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভুতুড়ে পোশাক-আশাক পরা এই লোক কে?’

‘আমি ভূত। নাম তুংতুং। ভূতের খাবার ভূৎজা বিক্রি করি।’ তুংতুং জবাব দিল। মামা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ভূতের কাজ ভয় দেখানো। ভয় না দেখিয়ে তুই এসেছিস খাবার বিক্রি করতে?’ তুংতুং কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, মামা তাকে সেই সুযোগ দিলেন না। রেগে আগুন হয়ে বললেন, ‘ফাতেমার মা, রশি নিয়ে আসো। বাড়িতে বাটপার ঢুকেছে।’

মামার চিৎকার শুনে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকল ফাতেমার মা। কিছু না বুঝেই সে বলল, ‘ও আল্লাহ! ডাকাইত! আমি খালুরে খবর দিতাছি।’
একটু পর দেখা গেল সে ফোনে বলছে, ‘খালুসাব, বাড়িতে ডাকাইত পড়ছে। আমগোরে বন্দুক ধইরা কইছে, এই বাড়িতে নাকি বিয়া? বিয়া বন, আগে টেকা দে!’

মামা তখন তুংতুংয়ের ব্যাগ তল্লাশি করছিলেন। ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে বললেন, ‘চকলেটের মতো দেখতে এইটা কী?’
তুংতুং জবাব দিল, ‘ভকলেট। খুবই মজার খাবার।’

মামা অবজ্ঞা করে বললেন, ‘বাটপারের বাটপার। আমারে ভকলেট শিখাস? দেখি তোর ভকলেট খাইতে কেমন।’ মামা ভকলেট মুখে দিয়েই বমি করতে ছুটলেন। ফাতেমার মা তাই দেখে চিৎকার করে উঠল, ‘ভাইজানরে ডাকাইতে বিষ খাওয়াইসে! আমি খালুরে এখনই খবরটা দিতাসি…’
আনিকা সুযোগ পেয়ে তুংতুং নামক পাগল লোকটাকে বলল, ‘তুমি জলদি চলে যাও, এই সুযোগ। তবে যাওয়ার আগে মামাকে ভালো করে দিয়ে যাও।’
‘ওনার কিছু হয়নি। উনি ধরেই নিয়েছেন উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছেন। তাই বমি করছেন।’ বুঝিয়ে বলে তুংতুং।

আনিকাদের ঘর থেকে বের হতেই ভূতরূপে ফিরে এল তুংতুং। নিশ্চয়ই মন্ত্রের রেশ কেটেছে। পুরোনো কাস্টমারকে দেরিতে ভূৎজা দেওয়ার পরও তিনি বিল দিয়ে দিলেন। সব ঝামেলা মিটিয়ে বাসার দিকে পা বাড়াল তুংতুং।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত