মায়া

মায়া যা করে, সবই দ্রুতগতিতে; আমাকে পড়ার ঘর থেকে ডেকে ডাইনিং রুমে নিয়ে বসায়- যেন হরিণীর গতি তার, একাই সবকিছু সামলায় দশ হাতে-সুন্দর করে টেবিল সাজায়, প্লেটে বিরিয়ানি মিহিদানার মতো ছড়িয়ে থাকে, বড় বড় খোসাসহ আলু আর মুরগির রানের বড় টুকরা এমনভাবে মেশানো দেখে জিভে জল আসে। আমি মাথা গুঁজে খেতে শুরু করি আর মায়াকে বলি, ‘তুমি খাবে না?’

‘বাবা-মার সাথে খাবো। দি ফাদার আর দি মাদার আমার উপর রাগ করে আছে! একসাথে খেয়ে একটু সফ্‌ট করবার চেষ্টা করি!’ বলতে বলতে মায়া আবার দৌড়ে যায় রান্নাঘরের দিকে, ‘বেবি, বোরহানি করছি। ভুলে গেছি, দাঁড়াও, আনতেছি!’

মায়ার সবকিছুতেই এমন যত্ন আর দ্রুততা- কখনও কখনও দ্রুততার জন্য তাকে আমার অস্থিরও মনে হয়; এটা যে পুরোপুরি ভুল, তা-ও না। ‘দৌড়াদৌড়ি বাদ দিয়ে একটু পাশে বসো। আমি খাই, তুমি আকুল হয়ে আমার দিকে তাকাও।’ আমি বলি।

‘অ..আমার মফুরে…তালপাখা দিয়া বাতাস করতে হবে! বউরে বইলো…তালপাখা দিয়ে বাতাস দিবে!’ পাশের চেয়ারে বসে মায়া হাসতে হাসতে বলে, ‘আচ্ছা, তোমার সেই সুইটি আপা কোথায়? সাবিনা ইয়াসমিন সুইটি আপা? কী যে পাগল হইছিলা!’

জাহাঙ্গীরনগরে দ্বিতীয় বর্ষে আকস্মিক সরকারি ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার হয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে বছরখানেকের মধ্যে বিরস বদনে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসি- অর্থাৎ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে আবার নিয়মিত ছাত্র হয়ে যাই। দেখি, ইতিমধ্যে অনেকটাই পেছনে পড়ে গেছি, প্রথম বর্ষে প্রথম হয়ে সবার প্রিয় হয়ে উঠি- সেই আমি জেলফেরত ক্যাডার সবার সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হতে থাকি; বুঝতে দিই না কাউকে, মায়া মাঝেমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়ায়; অবশ্য ইতিমধ্যে সে-ও বুয়েটের আর্কিটেকচারের সেই লম্বা চুলের জিনিয়াস ছাত্র শাহবাজের প্রেমে পড়ে গেছে! মাঝে মাঝে কলাভবনের পাশের লেকে দেখি মেয়েদের মতো ঝুঁটি বাঁধা দাড়িওলা একটা ছেলের সাথে বসে আছে মায়া; এই শাহবাজকেই পরে সে বিয়ে করে।

এ রকম এক সময়ে, সেদিন- বিকাল ৩টার মতো বাজে, কলাভবন থেকে বেরুচ্ছি- পেছন থেকে এক মেয়ের কণ্ঠ- ‘এই যে প্রথম বালক?’

আমি চমকে উঠি। প্রথম বালক! প্রথম বালক মানে কী? পেছনে তাকিয়ে দেখি, সুইটি আপা- আমাদের থেকে এক ক্লাস উঁচুতে পড়েন- জাহাঙ্গীরনগরের যে রেওয়াজ; এক ক্লাস উঁচু মানে বিরাট সিনিয়র- আদব-কায়দার সাথে কথা বলতে হয়; এর মধ্যে আমি আবার ক্যাডার-ট্যাডার হয়ে বিশ্রীভাবে অনেকের কাছে উপস্থাপিত; সংকুচিত হয়ে তাই বলি, ‘আমাকে বলছেন? প্রথম বালক মানে কী আপা?’

‘তুমি ফার্স্ট হইছিলা ক্লাসে। ফার্স্ট বয়। আমি এইটার বাংলা করলাম।’ সুইটি আপা হাসেন আর বলেন- ‘শোন, প্রথম বালক, আমার কিছু নোট তৈরি করতে হবে। হেল্পার লাগবে। করবা? বিনিময়ে আমি তোমাকে আমার সব নোটপত্র দিব। তোমার কাজে লাগবে।’

‘আপনি কি প্রথম বালিকা নাকি?’ তাকে জিজ্ঞেস করি।

সুইটি আপা হাসেন- ‘দুষ্টু ছেলে! প্রথম বালিকা না হলে নোট নিবে না?’

সেই শুরু, সুইটি আপার ধীর লয়ের সরল কথা আর সুন্দর হাসি আমার ভালো লাগে; শ্যামলা গায়ের রঙে সুইটি আপা দেখতে বেশ-অন্তত আমার কাছে বেশ সুন্দরীই মনে হয় তাকে। তারপরও বন্ধুরা আমাকে ক্ষ্যাপায়; বিশেষ করে প্রশান্ত- ‘শেষ পর্যন্ত তুই বুড়া ধুমসির প্রেমে পড়লি!’

‘কী যে বলিস? ধুমসি কোথায় দেখলি!’

‘সুইটি তো ওজনে তোর তিনটার সমান!’

বিরিয়ানি খেতে খেতে সম্ভবত অন্যমনস্ক হয়ে যাই; মায়া আমার ঘাড়ে রীতিমতো ঘুষি বসায়, ‘আহারে, প্রাক্তন প্রেমিকার কথা বলায় একেবারে কোথায় হারিয়ে গেলে বেবি?’

‘দূর…পুরনো সব কথা! বাদ দাও।’

‘সত্যি করে বলো তো… তোমরা বিয়ে করলা না ক্যান? হইছিলো কী?’ মায়া বকেই চলে; আমি কথা না বলে খাওয়া শেষ করি। মায়াকে বলি, ‘ ক্লে-র রিপোর্টগুলো মিলিয়ে ফোন দিও আমাকে।’

‘ইশ্‌শ..মুখটা কেমন থমথমে হয়ে গেছে! সুইটি আপা ফেসবুকে আছে আমার সাথে। সুখী পরিবারের ছবি দেয়। হি-হি-হি। দেখো না তুমি? তুমি নাই ফেসবুকে তার সাথে?’

‘শাহবাজের সাথে আবার কী নিয়া ঝগড়া করলা? দুই দিন পরপর এতো কী নিয়া ঝগড়া তোমাদের!’ প্রশ্নটি করেই বুঝি, বিরাট বিপদ ডেকে এনেছি: মুহূর্তে দপ করে মায়ার হাস্যোজ্জ্বল মুখটা কালো হয়ে যায়; মায়া বলে, ‘বলছি না; তুমি এই ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করবা না। তোমার এতো কী আগ্রহ?’

‘কী কাণ্ড! তুমি আমারে দুনিয়ার প্রশ্ন করতে পারো। আমার সবকিছু খোঁচায় বের করতে পারো; আর আমি তোমার জামাইরে নিয়া প্রশ্ন করলে রেগে যাও। এইগুলার মানে কী?’

‘যা বুঝো না, তা নিয়া কথা বলবা না।’

‘কী এমন রকেট সায়েন্স- তোমার সাথে শাহবাজের ঝগড়া; আমি বুঝবো না! ‘

‘গোঁয়ারের মতো চিল্লাইয়ো না। এখন যাও। রাত হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মা’র খাওয়ার সময় হইছে।’

কথা না বলে মায়ার বাসা থেকে বের হয়ে আসি; জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠবো- প্রেসক্লাব নামবো, সেখান থেকে হেঁটে যাবো পল্টন- আমার ছোট ফ্ল্যাটে।

বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াই- দাঁড়িয়েই থাকি, পরপর দুটো বাস চলে যায়, বসবার মতো জায়গা নেই দেখে আর উঠি না; দাঁড়িয়ে যেতে পারবো না এখন, কেমন যেন অভিমান হতে থাকে আমার; কার উপর- নিজেই জানি না।

‘কী বাস পাইছো?’ মায়ার ফোন।

‘না, এখনও পাই নাই। যা ভিড়, একটু ওয়েট করি। পেয়ে যাবো।’

‘বেবি, তোমার মন খারাপ? সত্যি করে বলো- মন খারাপ করায় দিছি?’

‘না, মন খারাপ করবো কেন?’

‘পৌঁছায়া ফোন দিবা আমাকে।’ মায়া বলে।

কে বলবে এই মেয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলো; আর এখন কী মিষ্টি গলায় বলছে- ‘ফোন দিবা!’…ডাকিনী একটা। আর ফোন দিছি!

আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই ডাকিনীর পাল্লায় আর যদি পড়ি!

একটা বাস থামে, বেশ কয়েকটা সিট ফাঁকা- আমি অনায়াসে বাসে উঠে বাসের মাঝ বরাবর জানালার ধারের সিটে বসি; আসন্ন শীতের হালকা বাতাস- বেশ লাগে। যথেষ্ট হয়েছে- মায়া চ্যাপ্টার ক্লোজ্‌ড! আমি আর আসছি না এখানে, কত বড় অহংকারী! বলে কিনা, শাহবাজের ব্যাপারে আমি কিছু বুঝবো না! বুয়েট থেকে ফার্স্ট ক্লাস পাইলেই হলো; সে বিরাট তালেবড় হয়ে যায়; আর আমি কোন রকমে প্রত্নতত্ত্বে এমএ পাস করছি দেখে আমাকে যা-খুশি তাই বলা যায়!

মায়ার প্রতি এ রকম রাগ আমার এই প্রথম নয়। সেই সুইটির সময়ও একই ঘটনা ঘটে।

সুইটি আপা চোখের পলকে আমার কাছে শুধু সুইটি হয়ে যায়; আমি তাকে ডাকি- সুইটি, সে আমাকে ডাকে মাহি। আমরা সকাল-সন্ধ্যা জাহাঙ্গীরনগরের মাঠ-ঘাট সব হেঁটে বেড়াতে থাকি।

এর মধ্যে মাঝে মাঝে মায়া আসে আল বেরুনী হলে আমার রুমে। শাহবাজের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা তার লাটে, আমার সুবিধা হয়েছে- সুইটির নোটপত্র সব আমি পাই; মাত্রই গতবার পরীক্ষা দিয়েছে সে; তাজা নোটপত্র- মায়া আসে সেই নোটপত্রে ভাগ বসাতে; এসেই মহাযজ্ঞে নেমে যায়- এইটা কোন মনুষ্যপ্রজাতির ঘর? উফ্‌ফ, কাপড়-চোপড় পর্যন্ত ধোও না নাকি কোনদিন? আর মেঝেয় এতো ময়লা কেন? একটা সিঙ্গেল রুম পাইছো, সেটা স্টোর রুম বানাইছো। আল্লারে…!’

‘নোটপত্র নিতে আসছো, নিয়া যাও। এইগুলা তোমার দেখতে হবে না।’ আমি বলি।

‘কেন? এইগুলা খালি সুইটি আপা দেখবে? দেখার এই অবস্থা? সে আসে না তোমার ঘরে। নাকি তোমরা রক্ষণশীল? প্লেটনিক লাভ করো?’

‘আহা! মায়া…প্যাঁচাল রাখো। নোট নিয়া যাও তো। আমি ঘুমাবো।’

‘বাপরে…ঘুমাবা! তোমার সুইটি বেগম কোথায়? সে কি তোমাকে ঘুমাতে দেবে? তোমরা আদারে-বাদারে বেড়াবা না? না বেড়ালে ভাত হজম হবে?’

‘সুইটি দেশে গেছে; সপ্তাহখানেকের জন্য। খুলনা। বাবার অসুখ।’

‘আল্লারে…এক সপ্তা। তুমি তারে ছাড়া বাঁচবা! দেখি..দেখি…বেবি…তোমার হার্টবিট দেখি তো…এই তো এই তো একটু স্লো হয়া গেছে। সুইটি বেগম একটা নির্দয়া মহিলা।’

মায়া মজা করে, ঝরঝর করে হাসে; আর এমন সব কথা বলে আমি গোমড়া মুখে থাকতেই পারি না। মায়ার হাসির কথা ভাবলেই আমার মনে হয়, ঝরঝর করে হাসা- ঝরঝর করে কান্নার কথা শুনেছি, কিন্তু মায়ার হাসির শব্দটা এমন নিখাদ আর অন্তরঙ্গ- ঝকঝকে আর বিশুদ্ধ মনে হয়; মনে হতে থাকে, বুকের ভেতর থেকে একটা দমক আসে তার- যেন বিশুদ্ধ হাওয়া মেশানো, এমন রিনরিনে আর অন্তরঙ্গ তার শব্দ- আমার কেমন যেন লাগে!

‘সুইটি বেগম যতদিন না থাকবে, ততদিন তুমি এভাবে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকবা নাকি!’

‘আমি কী করবো না করবো, তাতে তোমার কী? তোমার তো ঝুঁটিওলা দাড়িয়াল আছে! যাও…তার কোলে বসে থাকো গিয়া!’ আমি রেগে বলি। কেন যে রাগ করি- তাও বুঝি না।

‘ তুমি শাহবাজরে নিয়া এভাবে কথা বলবা না! সে একটা জিনিয়াস। এনসাইক্লোপিডিয়া। দুনিয়ার এমন কিছু নাই যে সে জানে না!’

‘তাইলে একটা ডিকশনারিরে বিয়া করলেই পারো! মানুষের দরকার কী?’

‘তোমার পেটভর্তি হিংসা। শোন…আমি ওই জিনিয়াসের জন্য মরে যেতে পারি।’

‘আমিও সুইটির জন্য মরতে পারি।’

‘তাহলে তো হয়েই গেল..কাটাকাটি। তাইলে আর রাগ কিসের? এইবার মরণশীল প্রেমিক…আপনার ঘরখানা আমাকে একটু গোছাতে দেন। এইটা মানুষের ঘর আর নাই।’ মায়া বলে আর নিপুণ হাতে সব গোছাতে শুরু করে; বালতি করে পানি এনে আমাকে হুকুমের স্বরে বলে, ‘এই যে মিনমিনা প্রেমিক…নিজ হাতে ঘরখানা মোছেন। যদি ভেবে থাকেন, ঘর মোছা মেয়েদের কাজ; তাহলে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করছেন।…’

আমি ঘর মুছি। মায়া দাঁড়িয়ে দেখে ঠিকমতো মুছতে পারছি কি-না! ঘর মোছা শেষ হলে বলে, ‘পরিস্কার থাকা একটা আর্ট। বুয়েটের হলে শাহবাজের রুমে গিয়া দেখ- আর্ট কাকে বলে? হ্যান্ডমেড পেপার আর সবুজ গাছ দিয়ে কী সুন্দর রুম সাজাইছে!’

‘কথায় কথায় শাহবাজ শাহবাজ করবা না তো! পাইছে একটা ঝুঁটিয়াল!’

‘আমার শাহবাজরে ঝুঁটিয়াল যে বলো…আমি কি তোমার সুইটি বেগমরে ধুমসি বলি?’

‘খবরদার- ধুমসি বলবা না। ওর গড়নটা একটু ভারী; ধুমসি না।’

‘আহারে…গড়নটা। রবীন্দ্রনাথ হইছো! গড়ন….আবার ভাব দেখাও প্লেটনিক লাভ করো…তা রুমটা এমন গোয়ালঘর বানায়া প্রেম করো কেমনে তোমরা? ছিঃছিঃ!’

‘মায়া…সুইটি একদিনও আমার রুমে আসে নাই। সে ফার্স্ট ক্লাস পায়া টিচার হবে, এখন জুনিয়রের রুমে এসে প্রেম করলে তার রেজাল্ট গোল্লা হবে!’

‘আহারে…তাইলে তো তোমরা নাজেহাল দশায় আছো? ঝোপঝাড়ই ভরসা? হায় আল্লা….’

মায়ার মতো এতো তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলবার সামর্থ্য আমি আর কোন মেয়ের মধ্যে দেখি নাই; এটা আমার এতো ভালো লাগে যে; আমি এক সময় খেয়াল করি- নিজের অজান্তে আমি মায়া আর সুইটির মধ্যে তুলনা করতে শুরু করি, যদিও তা সচেতনভাবে করতে চাই না; হয়ে যায়…

‘কতদূর গেলা…’ মায়া ফোনে জিজ্ঞেস করে।

‘শাহবাগ।’

‘তোমার কে মরছে?’

‘মানে কী?’

‘গলা এমন লাগে কেন? মরছে কেউ?’

কথা না বলে ফোন রাখি। জানি, এখনই আবার ফোন করবে- কেন না বলে ফোন রাখলাম। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু করবে মায়া! আমি ফোন সুইচ অফ করে দিই।

মায়ার এইসব আচরণের আসলে অর্থ কী? তার অস্থিরতা? রাগ?…কিংবা মায়া এ রকমই; আমি বুঝলেও সুইটি তা বুঝতে চায়নি। সোজা একদিন আল বেরুনী হলে এসে পারলে সে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে-

‘তোমার মতো ভোগী, লোভী মানুষ জীবনে আর দ্বিতীয়টা দেখি নাই!’

‘কী করলাম আমি?’

‘মায়া তোমার ঘরে আসে। দরজা বন্ধ করে তোমরা কী করো? আমি কিছু বুঝি না; না?’

‘এইসব কী বলো তুমি! মায়া আমার বন্ধু..ওর প্রেমিক আছে। শাহবাজ। একটা জিনিয়াস।’

‘ওই জিনিয়াসই আমারে বলছে…মায়া খালি তোমারে নিয়া ব্যস্ত থাকে!… সে আপসেট! তোমারে নিয়া তাদের ঝগড়া হয়!’

আমি আকাশ থেকে পড়লাম। শাহবাজ বলেছে এই কথা! শাহবাজ কেন সুইটিকে বলতে যাবে! তার জানবার কিছু থাকলে সে সরাসরি মায়াকেই জিজ্ঞেস করবে; কিংবা আমাকেও সে চেনে-আমাকে জিজ্ঞেস করবে! কিন্তু সুইটিকে কেন!..মায়া ঘুনাক্ষরেও এই নিয়ে আমাকে বলেনি কিছু।

‘আমি বুঝি না- মনে করছো? তুমি আমার মুখের দিকে তাকায়া কারে খোঁজ; বুঝি না, মনে করছো! তুমি কার মতো আমারে বানাইতে চাও দিনরাত; আমি বুঝি না!’ সুইটি আমার জামার কলার ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘তুমি আরেকজনের মতো আমাকে বানাইতে চাও! মায়াকে তোমার খুব ভালো লাগে; তার মতো আমার হইতে হবে!…লোভী কোথাকার! ভোগীর ভোগী!’

নাহ্‌, মায়ার জন্য অনেক জটিলতা এসেছে আমার জীবনে; আমি আর এইসবে নাই। একটা সরল জীবন যাপন করতে হবে!

আজই শেষ- বাস বেশ সর্পিল গতিতে চলছে; আজ রাস্তার ভিড়ও কম- ভাবতে থাকি, মায়া নিজের দাম্পত্য নিয়ে কোন কথা এই জীবনে আমাকে বলে না; আর আমি বশংবদের মতো তার পিছু ঘুরঘুর করি…সে কী মনে করে আমাকে? তার এনসাইক্লোপিডিয়াকে আমি বুঝবো না! মহাজ্ঞানী আইনস্টাইন আসছেন শাহবাজ! যা খুশি তা-ই বলে মায়া; হাসির ছলে হলেও-মফু বলে! অসহ্য! না, আর সহ্য করবো না।

বাসায় পৌঁছে লিফটে ওঠার আগে ফোন খুলি। ১৯টা মিসড্‌ কল। সব মায়ার; রুনকির প্রিয় কাজ হচ্ছে- আমার ফোনের কললিস্ট চেক করা। এতোবার মায়ার নাম দেখলে খবর আছে!

রুনকি, আমার বউ; ছেলেমানুষ ধরনের- অল্পতে রেগেমেগে বাড়ি মাথায় তোলে।

আবার ফোন আসে- মায়া।

‘ফোন বন্ধ করছিলা কেন?’

‘চার্জ শেষ হয়ে গেছিল!’ কেন যে মিথ্যা বলি, বুঝি না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত