দুখী বাড়ি

এই বাড়িটা দুখী। পাশ দিয়ে যাবার সময় প্রতিবার এ কথাটা ভাবি। বাদামি-হলদে মেলানো রঙ, সময়ের পলেস্তারা পড়ে পড়ে কেমন থম ধরে আছে। অতীতে কতটা উজ্জ্বল ছিল, বোঝার উপায় আর নাই। ধারণাও করা যায় না কিছু। দোতলা, কিংবা বলা ভালো দেড় তলা বাড়িটা। দেড় তলার সামনেটা ছাদ, তাতে কয়েকটা দুখী গাছ। লতা-পাতা ছড়িয়ে নুয়ে আছে। লতাগুলোও বড় দুখী, ঠিক যেমন বাড়িটার স্যাঁতানো দেওয়াল, মরিচাগন্ধি গ্রিল, জানালার কপাট, দরজার নরম হয়ে আসা কাঠ, সানশেডের কালচে সিমেন্ট, তেমনি।

আমি রোজ আসা যাওয়ার পথে এই হাহাকারময় বাড়িটা দেখি। রাস্তার দিকের একখানা জানালা সকালের দিকে খোলা থাকে। হলুদ পর্দা ওড়ে। বিকেলে ফেরার সময় বন্ধ পাই। কাউকে দেখি না জানালার কপাটের ওই পাড়ে। একদিন বিকেলে শুধু একজন মধ্যবয়স্ক নারীকে দেখেছিলাম ছাদের অগোছালো বাগানে, সম্ভবত তিনি ধূপ দিচ্ছিলেন। মহিলার পেছনটা দেখতে পেয়েছিলাম, একটা ছাইরঙা শাড়ি পরা; চুল বেণি বাঁধা। রিকশার দ্রুত গতিতে এইটুকুই তাকে দেখা গেল।

যতক্ষণ রিকশায় বাড়িটা পেরোই, ততক্ষণ শুধু ভাবনাগুলো আসে। কার বাড়ি, কে থাকে, কীভাবে থাকে, কেন এত পুরনো, কেন এত দুখী- এসব ভাবনা ওই কয়েক সেকেন্ড কি মাইক্রো সেকেন্ড সময়ে মাথার ভেতরে বিদ্যুৎ ঝলকের মতো খেলে যায়। তারপর রিকশাটা রাস্তার মোড় পেরোতেই একেবারে মাথা থেকে মুছে যায় ব্যাপারটা। সারাদিনে আর মনেও পড়ে না। বাকি রাস্তা চোখে পড়ে পিজ্জা হাট, জয়পুর সুইটস, বিলবোর্ডে আবেদন উপচানো মডেল, র‌্যাব-ফোর, ট্রাফিক পুলিশ, ফ্লাইওভার, সিগন্যাল, ১০টা বেজে দশ, পনেরো, আঠারো, ছাব্বিশ… অফিসে দেরি হয়ে যায়। আমি ঘেমে নেয়ে উঠি।

একটা এনজিওতে গবেষণা সহকারীর কাজ করি। অফিস মোহাম্মদপুরে। ১০টা থেকে ৬টা অফিস। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ৭টা। বাড়ি মানে ওই আর কি। তিনজন মেয়ে মিলে একটা বাসা ভাড়া করে থাকি কাঁঠালবাগানে। তিনটা ছোট ঘর। মা, দাদী, ছোট চাচা আর ছোট বোন থাকে সিরাজগঞ্জে। আব্বা চলে গেছেন ১০ বছর হলো।

দুখী বাড়িটা লালমাটিয়ায়, একটা মাঠের কোণ ঘেঁষে। ওখানে এমন পুরনো বাড়ি আরও বেশ ক’টা আছে। কিন্তু ওই বাড়িটাই চোখে পড়ে আমার। হয়তো ওই লতানে গাছগুলোর জন্যই। কেমন এক হাহাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাড়িটা, কিন্তু সেই হাহাকারের ভেতরেই তেড়ে-ফুঁড়ে বেরিয়ে থাকে গাছপালা, লতাপাতা। মাঝে মাঝে কয়েকটা রঙিন ফুল উঁকি মারে- ভোরের আলোর মতো হলুদ কি বেগুনি, কখনও সাদা।

বাড়িটার কথা ভাবতে ভাবতে আমি একটু একটু কল্পনাও করে ফেলি একদিন। মানে সেই আমার প্রথম বাড়িটাকে নিয়ে একটু বেশি সময় ভাবা। রিকশাটা ছোট গলি ছেড়ে মেইন রোডে উঠে যায়, কিন্তু আমি ভাবতে থাকি- বাড়ির ভেতরে আর কে কে আছে। সেদিন জানালার পাল্লাটা খোলা ছিল যথারীতি। আর এই প্রথম জানালার গ্রিলের পাশ ঘেঁষ একটা হাত চোখে পড়েছে, চকিতে। হাতটা ঠিক কেমন তা ধরা মুশকিল। তবে ওই কয়েক মুহূর্তে যা মনে হলো, হয়তো কোনো বয়স্ক হাত। বেশ চওড়া আর শিরা বেরোনো।

তো সেই হাতখানা দেখার পর বেশ খানিকটা সময় ভাবলাম। ও বাড়িতে তবে বয়স্ক একজন মানুষ আছেন। নারী? নাকি পুরুষ তিনি? কে জানে! হয়তো অসুস্থ। প্যারালাইজ্‌ড কি? জানালার ধারে না দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে গ্রিলখানা ধরে আছেন কেন? নাকি পায়ে ব্যথা?

হবে কিছু একটা। ভাবতে ভাবতে যাই। রিকশায় দুলতে দুলতে অফিসে পৌঁছাই। এর পর কয়েকটা দিন তুমুল ব্যস্ততা। অফিস থেকে ট্যুরে যাই হাতিয়া দ্বীপে। ওখানে নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। আমি আরেকজন কলিগকে সাথে নিয়ে যাই। সপ্তাহখানেকের ট্যুর। কাজের ক্লান্তিতে হাতিয়ার সৌন্দর্য দেখার সময় পাই না। তবু প্রতিদিন বিকেলে সাগরপারে যাই। মনটা অকারণে হু-হু করে। কারণ খুঁজি। হয়তো মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা। হয়তো নিজেকে নিয়েও। এই ৩২-এ এসেও ব্যক্তিগত জীবনটা গুছিয়ে নিতে পারিনি। সাগরপারে বসে এসব ভাবনা পিলপিল করে জেগে ওঠে। ঠাণ্ডা বাতাস ছাড়ে সমুদ্রটা। ভাবনা ভেসেও যায়। পাশে বসা সহকর্মীর কথা শুনি মন দিয়ে। একটা সিগারেট ধরাই। নম্র-ভদ্র আমার সহকর্মী বিপাশার মুখ কালো হয়ে যায়।

-কী যে আপা বদঅভ্যাস করছেন একটা! ক্যান যে খান?

আমি হাসি। বিপাশার ভালোবাসা মাখানো বকা শুনি।

-আচ্ছা বিপাশা, তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?

-আব্বা-আম্মা, মেজ ভাই-ভাবি, ছোট ভাই আর আমি।

-বড় ভাই কোথায়?

-বড় ভাই মারা গেছে আপা। ওর থ্যালাসেমিয়া ছিল।

-ওহ!

আমি চুপ করে থাকি। বিপাশাও। একটু পরে আবার শুরু করে। আব্বার পায়ে গুলি লেগেছিল একাত্তরে। ক্রাচে হাঁটে। ডায়াবেটিস হয়েছে।

বিপাশার মুখটা মলিন দেখায়। ওর কথা শুনে আমারই আনমনা লাগে। এখন কত সহজেই আমরা বলতে পারি গুলি লেগেছিল। বলতে পারি- একাত্তর…

আমি সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দিই ভসভস করে সমুদ্রের দিকে। বিপাশা আর কিছু বলে না। সন্ধ্যা নেমে আসে। বালির ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি।

-একদিন তোমার বাবাকে দেখতে যাব, বিপাশা।

-এসেন আপা। আব্বা যুদ্ধের গল্প বলতে খুব ভালোবাসে।

আমি কিছু বলি না। যুদ্ধের গল্প নিয়ে আমি ভাবি না। ছোট চাচার কথা ভাবি। ছোট চাচার গুলি লেগেছিল ডান হাতে। সেই হাত কেটে ফেলা হয়েছিল যুদ্ধ চলাকালীন এক ক্যাম্প হাসপাতালে। জন্মের পর থেকে আমি ছোট চাচাকে দেখেছি একটা ইজি চেয়ারে আধশোয়া, ডান দিকের শার্টের হাতাটা ঝুলছে, স্তব্ধ একটা মানুষের অবয়ব, দীর্ঘ নীরবতা!

সমুদ্র একটা অদ্ভুত জিনিস; আমি ভাবি। যা কখনওভাবি না, সেই সব অগোছালো ভুলে যাওয়া সময়কে চোখের সামনে বুকের ভেতরে নাড়িয়ে দিয়ে যায় এই সমুদ্র। যতবার ঢেউ আসে আর যায়, ততবার। বেদম হাওয়ার ভেতরে বসে থাকি আর এটা-সেটা এলোমেলো চিন্তাভাবনার জাল জড়াতে থাকে মনের ভেতরে। হুট করে ওই বাড়িটার কথাও মনে পড়ে যায়। স্যাঁতানো, অন্ধকার-ক্লান্ত লতানো গাছে ঘেরা বিষাদ বাড়িটা। ঠিক যেমন মানুষের হয়- দুঃখ-যন্ত্রণা-অবসাদে চেহারা নষ্ট হয়, বলিরেখা পড়ে, তবু ঠিক বেঁচে থাকতে হয়। ওই বাড়িটাও তেমনি। বেঁচে আছে, তবু বেঁচে নেই।

সাগরপারে বসে লালমাটিয়ার অচেনা বাড়িকে নিয়ে ভাবি। আর মনে হয়, আমি আসলে নিতান্তই অলস, এলোমেলো একটা মানুষ হয়ে উঠছি দিন দিন। যাওয়া-আসার পথে দেখা এক অবহেলিত বাড়ি নিয়ে বিনা কারণে ভেবেই চলেছি।

সাগরপার থেকে ফিরে এসে আবার অফিসে আসা-াওয়া। মোহাম্মদপুর থেকে কাঁঠালবাগানের পথ। রিকশায় দুলতে দুলতে যাই-আসি এবড়ো-খেবড়ো পথে হোঁচট খেতে খেতে। আম্মার সাথে কথা হয় ফোনে। বাড়িতে যেতে বলে। কথা দিই; যাব। আমার ইচ্ছে করছে ভীষণ। ক্লান্তি আর একঘেয়েমি পেয়ে বসেছে বেজায়। আমার বাড়ি যাওয়া উচিত। পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে ফেলি। যাবার আগে টুকটাক কেনাকাটা। মা আর দাদীর জন্য শাড়ি, ছোট বোনের জন্য বই আর ওর অর্ডার মতো নানা হাবিজাবি আর ছোট চাচার জন্য একখানা ফতুয়া কিনে ফেলি আড়ং থেকে। বিপাশা আমার সাথে সাথে ঘোরে। দু’জন মিলে আড়ংয়ের সব ফ্লোর ঘুরে বিপাশাকে বলি, চলো আমার বাসায়। আজকে মজার কফি খাওয়াব একটা।

বিপাশা একবাক্যে রাজি। আড়ং থেকে একটা রিকশা ঠিক করি কাঁঠালবাগান অব্দি। আমি আর বিপাশা টুকটুক কথা বলি, অফিসের ভেতরে রাজনীতি, বিশ্রী প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা থেকে শুরু করে কে কবে বিয়ে করছে, কে আর বিয়েই করবে না- এই সব বলি আর হাসি। রিকশাওয়ালা টুংটুাং বেল বাজিয়ে বাঁক ঘোরে। সেই দুখী বাড়িটার রাস্তায় চলে আসি।

বাড়ির সামনে ভিড়। অন্তত জনাদশেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম বাড়িটার সামনের গেট খোলা দেখি। এমনকি সেই জানালাটাও হাট করে খোলা।

বিপাশার হাত চেপে ধরি। বিপাশা অবাক হয়ে তাকায়।

-একটু থামি বিপাশা, এইখানে।

-কেন?

জবাব দিই না। রিকশাওয়ালার পিঠে হাত রেখে বলি, এইখানে একটু রাখো তো ভাই।

রিকশাওয়ালা রাখে। গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলে, কারোর মৃত্যু হইসে?

হুম, বোঝা যাচ্ছে, মৃত্যু এসেছে এ বাড়িতে। ছোট্ট ভিড়টাতে যারা দাঁড়িয়ে তাদের মাথায় টুপি, কয়েকজনের পরনে পাঞ্জাবি। বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছে সুরেলা কোরআন পাঠ।

আমি রিকশা থেকে নামি। অবাক বিপাশাও নামে।

-এই বাড়িটায় কে মারা গেল? আপনি এদের চেনেন?

-না

-তাহলে?

-জানি না। এত ভাবতে ইচ্ছে করছে না। আসো একটু ভিতরে যাই।

-চেনেন না জানেন না, ভেতরে যাবেন? এরা কারা?

-বিপাশা, চল যাই।

আর কোনো কথা বলে না বিপাশা। আমিও না। ভূতগ্রস্তের মতো খোলা গেট দিয়ে বাসাটায় ঢুকি। দুখী বাড়ির দুঃখবতী দেয়াল, ঠাণ্ডা সিঁড়ি, বিষাদভরা সিমেন্টের মেঝে- এসব পেরোই। কেন পেরোই, নিজেও বুঝি না। কাকে খুঁজি, কিসের টানে একটা সম্পূর্ণ অজানা বাড়িতে, সম্পূর্ণ অচেনা কারও মৃত্যুর কথা জেনে আমি কেন এভাবে ঢুকে পড়ি দরজা ঠেলে- বুঝি না। নিজেকে প্রশ্ন করার সময়ও নেই।

গেট পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠি। সিঁড়িঘরের হলদে দেয়াল, ছোপ ছোপ অতীতের দাগ, সিমেন্টের ঘোরানো রেলিং- আমি নীরবে উঠতে থাকি কোরআন পাঠের সুর ধরে।

সিঁড়ি পেরিয়ে একটু বারান্দামতো কিন্তু বারান্দা নয় আসলে, প্যাসেজ বলা যায়, গ্রিল দিয়ে ঘেরা, তারপরই একটা ঘর। জানালার হলুদ পর্দা দেখে বুঝতে পারি, রাস্তার দিকের ঘরটাই।

মাটিতে মাদুর বিছিয়ে রাখা একটা মৃতদেহ। সাদার ওপরে হলদে ফুলের নকশার চাদর দিয়ে ঢাকা। পাশে বসে আছে পাঁচজন মানুষ। তিনটি নারী, দু’জন মধ্যবয়সী পুরুষ। এরা কাঁদছে না। মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে বসে আছে চুপচাপ।

আমি আর বিপাশা দরজা ঘেষে দাঁড়াই। সবাই তাকায়। বেদনাভরা চোখে কৌতূহল। একজন নারী উঠে আসে লাশের পাশ থেকে।

-আপনারা?

-আমরা প্রতিবেশী।

বিপাশা অবাক হয়ে তাকায়। আমি শান্ত মুখে তাকাই সামনে। বলি, কে মারা গেছেন?

-আমার আম্মা।

-ওহ!

-ভেতরে আসেন।

ভেতরে যাই। একটু দূরে একটা কোণ ঘেঁষে বসি। বিপাশা উসখুস করে। সেই পাঁচজন নারী-পুরুষ ফের নিজেদের ভেতরে মগ্ন হয়ে যায়। একটু পর একজন উঠে যায়। ফিরে আসে দুটো আগরবাতি জ্বালিয়ে। ঘরের এক কোণে রাখে। কোরআন পাঠের শব্দ ভাসতে থাকে বাতাসে।

আমরা চুপ করে বসে থাকি। এক সময় বুঝতে পারি, লাশ নিতে লোক এসেছে। গোসলে নেবে। সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আমি আর বিপাশা ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে ধীরে নেমে আসি। গেটের সামনে জটলা বেড়েছে। বাড়িটার দেয়াল ঘেঁষে বেশ ক’জন নারী দাঁড়িয়ে আছে বিষণ্ণ মুখে। ঠিক কী করব, বুঝে উঠতে পারি না। রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষায়। উঠতে ইচ্ছে করে না। বিষণ্ণ জটলার কাছে এসে দাঁড়াই।

-সারাজীবন কষ্ট করে গেলেন। শেষ বেলায় উপযুক্ত সম্মানটাও পাবেন না?

-কে দেবে? কেউ কি খোঁজ রাখছে নাকি?

-সাতচল্লিশ বছর ধরে ভুগলেন!

-কে রাখে খবর? কেউ না।

-যে অত্যাচার সয়েছেন…

-আহা! পেশাবের রাস্তা আর জরায়ুর মুখ ছিঁড়ে এক হয়ে গেছিলো। সাতচল্লিশ বছর ধরে স্বাভাবিকভাবে বাথরুমে বসতে পারেন না!

-সরকার বলে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বীকৃতি দিসে! আপার কথা তো কারও মনেও ছিল না। আজ এই শেষ সময়েও কি তাকে সেই মর্যাদা দেবে না কেউ?

রিকশাওয়ালা টুংটাং ঘণ্টা বাজায়। আমি আর বিপাশা উঠে বসি রিকশায়। রিকশা এগোতে থাকে কাঁঠালবাগানের পথে। আমি আকাশে তাকাই। বিশাল বিলবোর্ডে ঢেকে গেছে লালমাটিয়ার আকাশ। শুস্ক ত্বকে লাবণ্য ফেরানোর ক্রিম মেখে শুয়ে আছে লাস্যময়ী মডেল। আমি মুগ্ধ চোখে তা দেখতে দেখতে দুলতে দুলতে এগোই।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত