বউয়ের পাশে শুয়ে আছি এমন সময় ফোনে একটা মেসেজ এলো ” রিফাত আমি ডিপ্রেশনে আছি। তোমার সাথে কথা বলতে চাই। যদি কথা না কও,আমি সুইসাইড কইরা তোমারে ফাসায় দিয়ে যামু”। বুঝতে বাকি রইলো না।এটা কোনো প্রাক্তন প্রেমিকার মেসেজ।
অনেক কষ্টে আছি এই বউয়ের সংসারে। খালি কথায় কথায় সন্দেহ করে। আর যদি কোনো ভাবে জানে আমার কারণে কোনো মেয়ে ডিপ্রেশনে মইরা গেছে তাইলে পুলিশের আগে বউয়ের হাতে মরণ এই হিসাবে কোনো গরমিল নাই। চুপি চুপি উঠে বারান্দায় গিয়ে কল দিলাম। হ্যালো, তুমি জানো না আমার ঘরে বউ আছে। তুমি এমন সব মেসেজ দেও কেন। ভয় লাগে আমার। বউয়ের বাপের ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনো আইডিয়া আছে। এক্কেবারে চৌদ্দপুরুষ কে জেলের ভাত খাওয়াবে। এই করোনার মধ্যে আমি ও আমার পরিবার জেলে যাইতে চাই না। তুমি ফোন রাখো প্লিজ।
না, না রিফাত তুমি আমার ফোন রাখবা না। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। সে আমার জীবন থেকে চলে গেছে অন্য এক মেয়ের কাছে। আমার চিন্তা করেনাই। তাই আমিও মুভ অন করতে চাই। তোমার মনে আছে আমার সাথে তোমার সেই অনলাইনে লুডু খেলার কথা? আমি তোমাকে খাইতাম। তুমি আমাকে খাইতা। ছিঃ। কিসব কথা কও তুমি। আমার বউ শুনলে তোমাকে আস্তা খাইয়া ফেলবে। তুমি এইসব কথা বলবা না। আমি তোমাকে কখনো খাইনাই। অই হারামজাদা আমি লুডুর গুটি খাওয়ার কথা কইছি বেদ্দব। ও আচ্ছা,তাই বলো। আমি তো বাসর রাতে আমার বউয়ের কাছে বলছি আমি ভার্জিন। তাই কইলাম আরকি। রিফাত তুমি আমার কাছে মিথ্যে বলছো?
পিছনে ফিরে তাকায় দেখি বউ কখন যেন ঘুম থেকে উঠে পিছনে দাঁড়িয়ে চুপিচুপি আমার কথা শুনছে।আমি বললাম” বিশ্বাস করো জান,আমি তোমার কাছে কোনো মিথ্যা কথা কইনাই”। বউ বললো ” তাইলে ফোনে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে”? ইয়ে না মানে একটা মেয়ে বন্ধু মাঝ রাতে কল দিয়ে বলতেছে সে নাকি ডিপ্রেশনে আছে। তাই কথা বলছিলাম। আরে বলো কি? ডিপ্রেশন। কথা চালায় যাও। ডিপ্রেশন খুব খারাপ জিনিস। তোমার দায়িত্ব দিলাম যেভাবেই হোক এই মেয়েকে ডিপ্রেশন থেকে বের করবা। আচ্ছা দেও ফোন আমার হাতে দেও। আমি কথা বলে উনার ডিপ্রেশন তাড়ানোর ব্যবস্থা করতাছি। আর তুমি রুমে যাও,ঘুমাও। আমি কথা বলে আসছি।
আমি রুমে শুয়ে আছি আর বউ বারান্দায় প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে কথা কয়। বড় বিচিত্র দৃশ্য। মনে মনে কথা গুছায় রাখলাম। বউ এসে কি কি প্রশ্ন করবে।আর আমি কি কি উত্তর দিবো। এই প্রাক্তন প্রেমিকা গুলাও না। প্রেমের সময়েও জ্বালাইছে। প্রেমের পরেও জ্বালায়।যেভাবেই হোক বউকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেওয়া যাবে না
বউ রুমে এসে বললো ” সমস্যা সমাধান। মেয়েটা কাল আমাদের বাসায় আসছে। তুমি চিন্তা করো না। সব সমস্যা ঠিক করে দিবো ইনশাআল্লাহ। তার আগে তুমি কও এই মেয়ে সম্পর্কে আমাকে তো কখনো কিছু কও নাই।
আমি আমতা আমতা করে বললাম ” আরে ও আসলে আমার ভালো বন্ধু ছিল। একসাথে পড়তাম। খুব ভালো মেয়ে। এখনো বিয়ে হয়নাই। ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী তো। তাই এবার বিসিএস দিবে। মনে হয় লকডাউনে থেকে থেকে ডিপ্রেশনে চলে গেছে। বউ বললো ” কিন্তু মেয়েটা যে বললো”। আরে রাখো তুমি ওর কথা। ও সব সময় মজা করে দেখার চেষ্টা করে বন্ধুবান্ধবদের বউ ওদের স্বামীকে কতটা বিশ্বাস করে। এইজন্য তোমাকে হয়তো অনেক কথা বানায় বানায় বলছে। তুমি সেসব বিশ্বাস করছ তাইনা? বোকা বউটা আমার। এসব কথা একদম বিশ্বাস করবে না। আর কাল ও আসলে সামনাসামনি সব প্রমাণ করে দিব৷ কি যে ভাবো তুমি আমাকে। (বউকে এসব বলছি। আর মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছি। যেমন করেই হোক বউকে বিশ্বাস করাতেই হবে। এই মেয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না)। কিন্তু মেয়েটা কে। শালার নাম ও শুনিনাই।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো বউয়ের ডাকে। এই উঠো দেখো কে এসেছে। চোখ খুলে উঠে তাকায় দেখি ” মেস জীবনের পাশের বাসার সেই আন্টি তার দুইটা ছেলে নিয়ে দাঁড়ায় আছে। যিনি মেসে থাকাকালীন চুপিচুপি পায়েস রান্না করে পাঠিয়ে দিতো। আর গোপন চিঠি দিতো। আমি বললাম ” আন্টি আপনি? তিনি ধমক দিয়ে বললেন ” দেখো রিফাত তুমি আমাকে আন্টি বলবা না” আমার নাম নূপুর। তুমি আমাকে নূপুর বলে ডাকবা। আরে এটা সেই ফেইক আইডি নূপুর না। যার সাথে একসময় অনলাইন লুডু খেলতাম। পাশে দেখি বউ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে আমার দিকে তাকায় আছে। বুঝলাম আজ কপালে শনি আছে।
পাগলের ভান ধরলাম। সেদিন সকালের পরে থেকে কাউকে চিনি না। বুয়াকে বউ আর বউকে বুয়া ডাকি। শ্বশুরকে বাড়ির দারওয়ান বলে বাসা থেকে বের করে দিছি পর্যন্ত। সব বউয়ের হাতের মাইর খাওয়ার ভয়ে। আমি যেদিন পাগলের ভান ছাড়মু সেদিন বউয়ের হাতের মাইর খাওয়া সুনিশ্চিত। এই ভেবে আমি এখন ডিপ্রেশনে আছি।
গল্পের বিষয়:
গল্প