শুকনো পাতা

শুকনো পাতা
সোফায় বসে টিভি দেখছি। টিভি দেখতে ভালো লাগছেনা। বউকে মেসেজ দিলাম, ‘কি করো টুম্পার আম্মু?’ কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে বউ রিপ্লে দিলো, ‘রান্না করছি। তোমার মতন আজাইরা বসে থাকিনা আমি।’ এ অপমান মেনে যায়? আজ ইচ্ছে করে অফিসে যাইনি আর বউ আমায় আজাইরা বলল!? বউ তৎক্ষনাৎ আবার মেসেজ দিলো…
–এই শোনো, একটু দোকানে যাওতো।
-কেন?
–লবণ ফুরিয়ে গেছে, লবণ নিয়ে আসো যাও।
-কেন আমিতো বাসায় আজাইরা থাকি আমি কেন দোকানে যাব?
–না গেলে ভাত বন্ধ।
রাগের ইমুজি দিয়ে দোকানে গেলাম। না গেলে সত্যি সত্যি ভাত বন্ধ করবে। এই মেয়েরে বিশ্বাস নাই। দোকান থেকে ফিরে এসে আবার সোফায় বসে বউকে মেসেজ দিলাম….
–লবণ এনেছি, নিয়ে যাও।
-তুমি কোন দেশের নবাব হ্যাঁ? লবণ কি রান্না করে দিয়ে যাওয়া যায়না?
–মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। আমি নবাব রুবেলদ্দৌলা।
-আইছে, দেখতে ভাদাইমার মতন সে হবে নবাব। হুউউউহ!
–নিজের স্বামীর নামে এমন কথা কও, লজ্জা করেনা?
-না করেনা। আর এত পকপক না করে লবণ দিয়ে যাও।
–পারবনা।
-ওকে, আজ ভাত বন্ধ।
বলেই বউ ব্লক করে দিলো। কি আজব! এইটুকু ব্যাপারে কেউ ব্লক করে দেয়? তাও আবার সে রান্না ঘরে আর আমি রুমে। অগত্যা রান্না ঘরে গেলাম। লবণ দিয়ে বললাম….
–এই নাও লবণ।
-লবণ আছে।
–তাহলে আনতে বললে কেন?
-তোমায় একটু বেয়াম করালাম হি হি হি..!
–ফাজলামো করো আমার সাথে?
-ওমা নিজের স্বামীর সাথে বুঝি একটু ফাজলামো করতে পারবনা?
–ফাজলামো করে এখন ঢং করে পিড়িত করা হচ্ছে।
-আহারে আমার গুলুমুলু টা রাগ করছে।
বউয়ের এমন পামপুট্টি মার্কা কথা শুনেই বুঝলাম এর সাথে আর ঝগড়া করা যাবেনা। আমি জান্নাতের কাছে গেলাম। সে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম….
–তুমি এত ভালো কেনগো?
-কারণ আমি তোমার বউ!
–খুনসুটি করতে ভালো লাগে বুঝি?
-অন্নেএএক, তুমি ইচ্ছে করেই হেরে যাও তাইনা?
–হেরে যাওয়ার মধ্যেও যে আকাশ সমান ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসার কাছে আমি সারাজীবন নাহয় হেরেই গেলাম।
-বাব্বাহ, এত রোমান্টিক কথা কই শিখলে হু?
–যার এমন সুন্দরী বউ আছে, তার আবার রোমান্টি হতে হয় বুঝি? রোমান্টিকতা এমনিতেই এসে যায়।
-হয়েছে আর দার্শনিক হতে হবেনা। এবার ছাড়ো, রান্না করি। পাছে তরকারি পুড়ে যাবে।
–একদিন নাহয় পোড়া তরকারিই খেলাম। বউ কুনুই দিয়ে পেটে আলতো গুঁতো দিয়ে বলল….
-ভালোবাসা পরে হবে এবার রান্নাতো করতে দাও।
–উহু ছাড়বনা।
-আচ্ছা এভাবেই থাকো, তবে ডিস্টার্ব করবানা।
আমি আর কিছু বললামনা। বউ ডিস্টার্ব করতে নিষেধ করছে। আমি ভাবছি কি করা যায়। জান্নাতকে ছেড়ে দিয়ে বললাম….
–আচ্ছা সব কিছু যদি ‘প’ দিয়ে শুরু হয় তাহলে কেমন হবে? জান্নাত ভ্রু-কুঁচকে তাকালো। কোমড়ে হাত দিয়ে বলল…
-নিশ্চয়ই ফাজলামো করবে?
–আরে সেটা না, ‘প’ দিয়ে সবকিছু শুরু হলে ইন্টারেস্টিং হতো।
-যেমন?
–এইযে আমাদের নামের আগে ‘প’ বসতো। আমার নাম হতো পুবেল পাসান। তোমার নাম হতো পান্নাত।
-এইটা কি দেখছো আমার হাতে?
–খুন্তি।
-এটা তোমার মাথায় মারব শয়তানি করলে।
–আচ্ছা তখন শয়তানিকে কি বলতে? পয়তানি?
-তোমায় মাইরে টানতেছে। যাও ভাগো।
–ওটা ভাগো নয়, পাগো হবে।
জান্নাত এবার কোমড়ে আরো শক্ত ভাবে হাত দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। কিছু বলার আগেই আমি শিস বাঁজালাম। তারপর আবার বললাম….
–একবার চিন্তা করো কত ইন্টারেস্টিং।
-তুমি করো চিন্তা, আমার এসব দরকার নাই।
–ওটা দরকার নয়গো, ওটা হবে পরকার।
-তুমি যাবে নাকি আমি মাকে ডাকব?
–সবসময় মা’কে কেন টানো। একটা কথা শোনো।
-না শুনবনা এখন।
–আরে শোনই না, ‘প’ দিয়ে শুরু হলে কত ভালো হতো তাইনা। তোমার মা আমার শ্বাশুড়ি তাকে বলতাম পাশ্বুরি, আবার শালা,শালিকে পালা,পালি বলতাম, ইন্টারেস্টিং না?
-তুমি ইয়ার্কি বাদ দিয়ে যাবা কিনা?
–আচ্ছা দাদা, দাদিকে কি বলতাম? নিশ্চয়ই পাদা, পাদি হাহাহা… তখন দাদিকে ডাকতাম, পাদি কেমন আছো? জান্নাত ফিক করে হেসে দিলো। তারপর বলল….
-উফফফ! তুমি যাওতো ফাজলামো করবেনা।
–আমি টুম্পাকে আজকে শেখাবো মা-বাবাকে পাদি-পাদা বলে ডাকতে।
-এই একদম না ও বাচ্চা মানুষ ওকে এসব শেখাবেনা তুমি।
–টুম্পাকে কি শিখাবি তুই হ্যাঁ? বলতে বলতেই রান্নাঘরে আম্মা হাজির। আমি আমতা আমতা শুরু করলাম জান্নাত মুচকি হেসে বলল….
-মা ও আপনাদের….
–না মা তেমন কিছু না, তুমি চুপ করো।
-বউমা কেন চুপ করে? আমার নাতিন কি শিখবে আমি জানবনা? বউমা তুমি বলো। জান্নাত আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আমি ঢোক গিললাম। খাইছেরে! জান্নাত আম্মাকে সব খুলে বলল। সবশুনে আম্মা ভ্রু-কুঁচকে তাকালো। আমাকে বলল….
–তোর মাথায় কি শয়তান কিলিবিলি করে?
-ওটা কিলিবিলি নয় আম্মা, পিলিবিলি।
–বউমা খুন্তিটা দাওতো, ওর শয়তানি বের করব আজ।
-আম্মা ভুল কথা বলো কেন? ওটা পুন্তি হবে!
আম্মা আর কিছু বললনা। খুন্তি হাতে আমায় মারতে আসতেই আমি ঘুরান্টি দিয়ে এক দৌঁড়। বহুদিন পর নিজেকে চাঙা লাগছে। কিছুক্ষণ পর বউ মেসেজ দিলো..’বাসায় এসো, পাত খেয়ে যাও।’ যাহ শ্লা এটা কি হলো? ভাত কে পাত? ভাঙ্গিস ‘ত’ এর জায়গায় ‘দ’ ছিলনা। যাক আল্লাহ যা করে মঙ্গলের জন্যই করে। তবে সামনে যে বিপদ আছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। উফফফ, আবারো ভুল বললাম। এটা সন্দেহ নয়, পন্দেহ হবে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত