শ্বেতবনিতার তাঁতঘর

নূরের চাদর কাফন তহবহ ছিল তার সঙ্গে..

ভোগাই নদীতে সন্ধ্যা নামছে। বড় বড় শ্বাস ফেলছে আশপাশের গ্রাম। সোহাগপুরের ধানক্ষেতের পাশে ইটের দেয়াল ঘেরা ছোট এক খ জমি। ভেতরে দাঁড়িয়ে কালো পাথরের স্তম্ভটি ঘন ঘন দম ছাড়ে। দম ছাড়ে নাম জপমালা নিয়ে। কিতাব আলী, মন্নাফ আলী, মোহাম্মদ আলী, মোমিন আলী, হাশেম আলী। উৎকীর্ণ সত্তরজন শহীদের নাম। আরও অনেক অজ্ঞাত জনের কথা। ফিসফিস করে জপে ১৮৭টি নাম।

উল্টানো আসমানের চাড়ি থেকে গল গল করে বের হয়ে আসে অন্ধকার। নদীর বুকে অচিন মাছের মতো ঝপাৎ ঝপাৎ লেজের বাড়ি মারে আন্ধার। গাছপালার ডাল থেকে ডাকিনীর জিভের মতো লকলকে আন্ধার ঝুলতে থাকে। চারপাশে আন্ধারিয়া প্রেতের মচ্ছব। খুলির খাপরা উল্টে পড়ে কালির মতো গুলে যেতে থাকে জল-স্থল-অন্তরীক্ষ। কালো হয়ে যায় ভোগাই, কংস, চেল্লাখালির জল। কালো হয়ে যায় সোহাগপুরের আকাশ। গাঁয়ের সীমারেখা। পথ-ঘাট। এ গাঁয়ের মানুষেরা জানে, এখানে দিন-রাত্তির একই রঙের। লালন সাঁই এলে এ গাঁয়ের ‘জগৎ ভরমিয়া’ দেখতেন একই রঙের রূপ। তা হচ্ছে কালো। কিষনো বন্নই সোহাগপুর গাঁয়ের রঙ। ভোগাইয়ের জল যেন আলকাতরা-মাখা কালা ভূত একখানা জিনের সিন্দুকের মতো গেরামখানিকে সোহাগপুরের মাটির ‘পরে ঢপ মেরে বসিয়ে রেখেছে। আর তার ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে সুখ-শান্তি, হাস্যমুখী জীবনের ফুরফুরা সব লাল নীল সবজে হলদে মালসামান। সিন্দুকের বাইরে, রইল বাকি হারাধনের একটি ছেলে। সেই ছেলে ধলা। সেই ধলা ধলা পোলার সাদা সাদা কলাবউ। তাদের আছে বেওয়া-বসন। সারি সারি সাদা অবয়ব। কিষনো কালা সোহাগপুরের সোহাগি নারীর বসন ওগুলা।

বাট, শাকিলা, উই টক্‌ড টু হার্ডলি সেভেন অর এইট উইডো! সারাদিনে আমরা আট-দশজন বিধবার সাথে কথা বলেছি। ১৮৭ জন বিধবার বাকি সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন?

ইউ আর রং রিচার্ড। সেদিনের হত্যাকাণ্ডে নিহত সব পুরুষই বিবাহিত ছিলেন বা তাদের স্ত্রী বর্তমান ছিলেন, তা নয়। পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহায়তায় গ্রামটিকে পুরুষশূন্য করে ফেলেছিল। সেখানে তরুণ যুবা থেকে শুরু করে বয়স্ক প্রৌঢ় সব পুরুষকেই ওরা হত্যা করেছে। দু’চারজন অক্ষম বৃদ্ধই শুধু বেঁচে গেছেন। সঠিক সংখ্যা এখনও জানি না। তবে শুনেছি, ৬০-৬৫ নারী বিধবা হয়েছিলেন। এর মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। তবে এখনও ৩০ জনের মতো বেঁচে আছেন।

হোয়্যার দ্য রেস্ট অব উইমেন লিভ? লেটস গো টু দেম। ওয়ান্ট টু নো দ্য স্টোরিজ অব টিয়ার্স। আমি তোমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধে সমস্ত নির্যাতিত নারীর বেদনাময় কাহিনী জানতে চাই। আমার মা হয়তো আমাকে বলতেন। কিন্তু ইউ নো, শি ডায়েড টু গিভ বার্থ টু মি। এন, মাই গ্রানমা, আমার নানীমা, যিনি জানতেন আমার মায়ের স্টোরি, তিনি তো কবেই পরপারে চলে গেছেন!

রিচার্ডের এসব কাহিনী জানেন শাকিলা। একাত্তরের তরুণী নামের একটি নারী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাকিলা আক্তার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের নিয়ে গবেষণার কাজে নেমেছে কানাডীয় তরুণ রিচার্ড উইলসন। একজন প্রবাসী আত্মীয়ের সহায়তায় এই তরুণটির খোঁজ পেয়েছেন শাকিলা।

তার পর অনলাইনে কথাবার্তা। একদিন একটি ছবি পাঠায় রিচার্ড। দুই বেণী করা একটি মেয়ের ছবি। তার কোলে একটি সদ্যোজাত শিশু। সরল-সাধারণ একটি গ্রাম্য মেয়ের ছবি। বয়স ২০/২২ বছর হবে। রিচার্ড লেখে, আমার রিয়েল গ্রান্ডমাদার, নানী। নাইনটিন সেভেনটি টুতে মে মাসে একটি সেফ হোমে এই নাম না-জানা নারী জন্ম দিয়েছিলেন একটি কন্যা শিশুর। সাত মাস বয়সী, আমিনা নামের সেই শিশুকে দত্তক নিয়েছিল মন্ট্রিলের একটি নিঃসন্তান পরিবার। রিচার্ড আমিনার ছেলে। মায়ের ছবিও পাঠায় রিচার্ড। ঝলমলে চেহারার মেধাবী মুখশ্রীর এক তরুণী। প্রেগন্যান্সি জটিলতায় বাচ্চা জন্মের সময়েই, মাত্র ২০ বছর বয়সে মারা যান অ্যামি, আমিনা। মায়ের জন্মকথা বলেছেন তার বাবা এডওয়ার্ড। পালয়িত্রী নানীমা মারিয়ার কাছ থেকে পাওয়া মায়ের পুরনো আবছা ছবিটিই একমাত্র স্মৃতি। তার বিশ্বাস, এই ছবিটি দিয়েই একদিন সে তার নানীমার পরিচয় উদ্ধার করে ফেলবে।

শাকিলা ঠোঁটের পরে আঙুল রেখে রিচার্ডকে ইশারা করেন।

চুপ রিচার্ড। সাইলেন্ট, প্লিজ। দেখো, অন্ধকার নামছে চারপাশে। আমরা এই অন্ধকারকে পেরিয়ে যাব একটু পরেই। কিন্তু চেয়ে দেখ, কালো পাথরের ওই স্তম্ভটি। প্রায় চার যুগ আগের এক ভয়াবহ কালো সময়ের ইতিহাস কেমন গাঢ় হয়ে লেপ্টে আছে। এসো আর একবার অভিবাদন জানাই এই নিরপরাধ সাধারণ গ্রাম্যজনদের, যারা আক্রান্ত হয়েও নিজের পরিবার, বাড়িঘর উঠোন, ক্ষেত-খামার আর নিজের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাননি।

লুক শাকিলা, আয়্যাম সিয়িং সামথিং স্পেশাল, দে আর কামিং…।

রিচার্ডের কথায় শাকিলা দৃষ্টি ফেরান।

হ্যাঁ, অস্তগামী সূর্যের ম্লান আলোয় বিশেষ কিছু, একটা চলমান মিছিল দৃশ্যমান হয়ে উঠছে সোহাগপুর গ্রামে ঢোকার সড়কের মাথায়।

পিঞ্জিরার পাখির মতো আমি তারে উইড়া যাইয়া দেখি…..

স্বামীর কথা মনে আছে আপনার?

অজুফা ধুলো ওড়া মেঠোপথের দিকে তাকিয়ে বলেন, হ, মনে আছে। স্যায় একটা গাছের ঠাইল হাতে কইরা পাতরে যাইত। মাতায় গামছা বানতো। লাল রঙ্গা চ্যাক-চ্যাক গামছা। ঠাইলডা দিয়া কাউয়া হালিক টিয়া মিয়া খেদাইতো। ধান খাইয়া হালাইতো পইকে। ঠাইল দেখলে পইক আইতো না।

দেখতে কেমন ছিলেন তিনি?

শাকিলা আক্তার আগেই ভেবে রেখেছিলেন, এই একটি প্রশ্নই করবেন। পুরনো লুকোনো গভীর ক্ষতের ওপর একটু নরম আঙুলের ছোঁয়া শুধু।

যেদিন মিলিটারিরা গ্রাম আক্রমণ করল, সেদিন আপনারা কী করছিলেন, কোথায় ছিলেন, আপনার স্বামী কী করছিলেন, কীভাবে হত্যা করা হলো, এত বছর ধরে কেমন আছেন আপনারা, তাদের স্মৃতি কি মনে পড়ে- এসব প্রশ্ন না। এগুলো ছুরির মতো চিরে দেবে ওদের অন্তর। চামড়া কেটে রক্ত ঝরবে।

শাকিলা ভেবেছেন, নিভন্ত মোমের শিখায় শুধু একটু আগুনের স্টম্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দেবেন। কেমন ছিলেন তার জীবনসাথীটি? দেখতে বা স্বভাবে? এতেই স্মরণের গিঁটগুলো ঢিলে হয়ে আসবে। তারপর আপনাআপনিই খুলে যাবে। চাপাপড়া দীর্ঘদিনের দুঃখগাথা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে।

অজুফা বেগম গালে হাত দিয়ে শাকিলার চেহারাটাই যাচাই করেন। বিড়বিড় করে বলেন, স্যায় কেমুন আছিল দেখতে? এতদিনের কথা…। মনে নাই তো!

তারপরও চেহারা একটুও মনে নেই আপনার? কেমন ছিলেন? কালো, না ধলা? লম্বা, না বেঁটে?

অজুফা আঁচলের প্রান্ত নাকের ডগা পর্যন্ত টেনে মুখ ঢাকেন। মানুষটা তো শুধু নাকফুলটাই চেয়ে চেয়ে দেখত। নাকটা নাকি তার তিলফুল! এই কথা কতবার বলত মানুষটা! তিলকুসমি নাকের উপরে সোনার ডাইল নাকি শীতের রইদে উষের ফোঁটা! চেহারা তো মনে পড়ে না! এই সব আজগুবি কথাবার্তা, তাও তো এতকাল মনে পড়ে নাই! ক্যামনে ক্যামনে আইজকা গাঙ্গের সোঁতায় রূপচান্দার লাহান ফাল দিয়া উটলো!

তবে অজুফা নাক খোলেন না। ঘোমটার নিচে নাকের ভেতর থেকে ফোঁস ফোঁস শব্দ বের হয়। কথা বের হয় না।

সমলা খাতুন, নূরবানু, নসিমন বেওয়াকেও একই প্রশ্ন করা হলো। নসিমন তার স্বামীর চেহারা ভাবতে গিয়ে দেখেন, চোখের সামনে কালো পাথরে খোদাই এক তরুণ যুবা। তার গতরে ঘাম-ভেজা কুরুশ কাঁটায় বোনা নীল গেঞ্জি। নসিমনই বানিয়ে দিয়েছিলেন।

দিনের কাজ শেষ করে বিকেলে গা ধুতো নসিমন। জলের ছোঁয়া পেয়ে সতেজ হয়ে চনমন করে উঠত যুবতী শরীর। মাথায় তেল দিয়ে সিঁথির দুপাশে পাতা কেটে চুল বাঁধত। পেতলের কাজলদানি থেকে শাহাদাত আঙুল দিয়ে এক টিপ কাজল নিয়ে চোখের নিচের পাতায় সূক্ষ্ণ দাগ টেনে দিত। সেই চোখ নাচিয়ে যুবকের দিকে চাইত যখন নসিমন, যুবক হেসে উঠত এমন ভঙ্গিতে যেন বা তার দাঁতের সারি থেকে সকালের খোপ খোলা কইতরেরা আসমানে উড়াল দিল। অথবা জলপাই গাছের নয়া পাতায় ছিটকে পড়ল পানগুয়ার মাতোয়ালা পিক।

নীল গেঞ্জিটি, যে গেঞ্জিতে রাত্রিকালীন যুবাগন্ধ বড় কড়া হয়ে জমে উঠত আর নসিমন তাতে নাকফুল থেকে ঠুসে দিত স্বর্ণালি ফুলকি, গেঞ্জির রঙ বদলে গিয়েছিল। লাল রঙে যেন ডুবিয়ে ওঠানো হয়েছিল। চটচটে লাল গেঞ্জিটি গা থেকে খোলার সময় পাওয়া যায়নি। আরজ আলীকে দাফন করতে হয়েছিল তার বাপের বাড়ি থেকে ‘ব্যাভার’ দেওয়া নেটের মশারি দিয়ে। টাউনের মার্কেট থেকে কেনা গোলাপি রঙের নেটের মশারি। বিয়ের পরে কত মানুষ নেড়েচেড়ে দেখেছিল মশারিটি। মশারি পুরনো হয়ে যাওয়ার পরেও ওটার নিচে শুলে মনে হতো, স্বপ্নপুরীর নিদমহলে শুয়ে আছে।

নূরেমান স্বামীর মুখটি মনে করতে গিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুলের দিকে নজর করেন। দু’আঙুলে নখের কোণাটা মুচড়ে মুচড়ে টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলেন। কী লজ্জা! কী শরম! নূরেমানের সত্তর বছর বয়সী মুখের চামড়ার ভাঁজে মধ্যদুপুরের রোদ্দুর। রোদ্দুরে ফড়িঙের ফিনফিনে পাখনা। পাখনার ছোঁয়ায় শরম জাগে। হায় শরম! শরমের জ্বালায় বিবাহিত জীবনের ছয়টি মাসের মধ্যে লোকটার মুখের দিকে তো তাকানোরই সুযোগ পেল না নূরেমান। বিয়ের পর প্রথম দু’দিন তো বিরাট ঘোমটার নিচে চোখ প্রায় বুজে বুজেই দিন পার করেছে। তার পরদিন মাঝরাতে নূরেমানকে তার মানুষটা যখন ভালোবাসতে বাসতে একটা আগুনের মতো যন্ত্রণা দিয়েছিল আর বাকি রাত নূরেমান কেঁদে কেঁদে দুই চোখ ফুলিয়েছিল। ফজর আলি সারারাত তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়েছিল। সকালে উঠে বিছানার চাদরে ছিঁড়ে পড়া দুটো রক্তজবার পাপড়ি দেখে দু’জনেই লাজ-শরমে খুশিতে লাল হয়ে উঠেছিল।

নূরেমান স্বামীর চেহারা ভাবতে গিয়ে সেই রক্তজবা চাদরটিকেই দেখতে পান। চাদরটা তখনও ছিল বিছানায়। এলোমেলো। শয়নচিহ্ন আঁকা। ফজর আলি ভোরে উঠেই আমনের খেতে গিয়েছিল। ঘন হয়ে ওঠা ধানচারাতে বাছট শুরু করেছিল। আর একদিন হলেই বাছট শেষ হয়ে যাবে। সেই ধানক্ষেতের ওপরে ছিটকানো লালের ওপর উল্টে পড়ে ছিল ফজর আলির দেহ। ধানের সবুজের ওপর নিজের রক্তে রাঙা চাদরে নিথর। কিছু জিয়ন্তে মরা গ্রাম্যজন, ভয়ার্ত শোকার্ত মানুষ হাত লাগায় ক্ষেতে পাথারে হালটে উঠোনে দাওয়ায় ঘরের ভেতরে পড়ে থাকা লাশগুলো তুলে কোনোমতে মাটিচাপা দিতে। জলদি। জলদি কর। নইলে কামরু-ঝামরুর দল আবার হার্মাদ মেলেটারি-গো নিয়া আসবো। আগুনে জ্বালাইয়া ছাই বানাইয়া দিবো লাশগুলারে। ওরা লাশগুলা দলা কইরা গণকব্বর দিবো। নিয়া যাইবো আমাদের পরানের ধন স্বামী, বাবা আর ছেলেদের।

নূরেমান ভয়ে শক্ত হয়ে গিয়েছিল।

ওরে পোড়া-চক্ষু রে, কান্দন ফালায়া থো জাদু! যক্ষের ধনটুকুরে মাটির তলায় লুকিয়ে ফেলতে হবে। আমার জীবনের মধুফুল! সোনারঙা পুন্নিমা!

কিন্তু নূরেমান কী দিয়ে মুড়বে ফজর আলির দেহ? কোথায় পাবে কাফনের কাপড়? কে দেবে এনে? কে দেবে টাকা? ঘরে যা বস্ত্র আছে তাই দিয়ে এখন মুড়ে দিচ্ছে লাশ। জলদি কর। ঘরে ঢুকে হতচকিত নূরেমান বিছানার চাদরটার দিকে থির নয়নে চায়। তার শরমরাঙা চাদর। অতি দ্রুত ফজর আলি সেই চাদরে নিজেকে মুড়ে ফেলে মাটির তলায় ঢুকে গেল।

শাকিলা আক্তারের কথা শুনে নূরেমান ঘাড় ঘুরিয়ে উত্তরের বাঁশখোলা পাথারে তাকান। প্রায় চার যুগ আগের মাটির ঢেলাগুলো কি আর আছে ওখানে? আর তখন, হঠাৎ হাওয়ায় যেন উড়ে আসে একখানা প্রাচীন বস্ত্র। নূরেমান ঘোমটা সরিয়ে অবাক তাকান। আসমান থেকে চার হাত-পা মেলে ধেয়ে নামছে একখানা চাদর। মাঝখানে তার গরিমার চিহ্ন, শরমের ফুল। নূরেমান সেই জাদুকরী বস্ত্রের তলায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসেন।

বাজে পোড়া মাথামুড়োনো তালগাছটার আঁকড়াবাঁকড়া শিকড়ে পাছা লেপ্টে দিয়ে বসে ছিলেন জরিতন বেওয়া। তার দু’হাঁটু আসমানের দিকে মুখ করে খাড়া। তার ফাঁক দিয়ে জরিতনের মাথা বেরিয়ে ডানে-বামে নড়ে। যেন যূপকাষ্ঠে আটকে ফেলা ছাগলের মু ু। খাঁড়াটা কত দূর আছে, তা-ই দেখার চেষ্টা। জরিতনের মাথায় কাপড় নেই। কাঁচা-পাকা ধূসর চুলে ভরা মাথা। জরিতন পণ করেছেন- কিছু বলবেন না।

জমিতে সেচ দেবার জন্য পানির নালা কাটছিল সাবু শেখ। জরিতন বিহান বিহান দুই মুষ্টি খুদ ধুয়ে নিয়েছিল। খুদের ভাত রান্না করে পাতের কিনারে এক চিমটি রসুন-মরিচ বাটা আর বেগুন পোড়া ভর্তা করে রাখবে। সাতবছুরে জমক ছেলে দুটোও, ছোট হলে কী হবে, ঝাল বাটা খেতে পছন্দ করে খুব। ঝাল বাটা খাওয়ার আগেই সাবু শেখের কাটা নালাটা দিয়ে বয়ে গেল তারই রক্ত। সাবুর হাতে তখনও কাদামাটির চাপড়া তোলা কোদাল। কোমরে বাঁধা গামছা। খালি পা। মাথা ভরা ঝাঁকড়া চুল। সবই মুক্তিযোদ্ধার নিশানা। মুক্তিযোদ্ধারা এমনই হয়। কামরু ঝামরু রাজাকার আলবদররা পাকি শয়তানদের কাছে মুক্তিদের এমন চেহারার নকশাই তুলে ধরেছে।

ঝাঁকে ঝাঁকে মুক্তিযোদ্ধা নাকি কৃষকের বেশেই এ গ্রামে লুকিয়ে আছে। এমন খবর পেয়ে ভোর সকালে গ্রাম জেগে ওঠার আগেই মিলিটারি ঝাঁপিয়ে পড়ল সোহাগপুর গ্রামে। দু’ঘণ্টার মধ্যে ওরা তছনছ করে ফেলে বাড়িগুলো। ঘরের মানুষদের টেনে বাইরে আনতে কতক্ষণ!

মুক্তি কী-ধার?

কামারু বদরের চ্যালাচামুণ্ডারা বলে, হুজুর, হেরা তো আছে ছদ্মবেশে! কৃষকের ছদ্মবেশে। উয়ো মুক্তিলোগগুলা কৃষক, মানে ফারমারকা ডেরেস প্যাহনে কিয়া। ট্রেনিং নিয়া দুই প্লাটুন মুক্তি এই গেরামে আইসা সামাইছে।

তব্‌? ক্লিয়ার অল বাস্টার্ড কিরসাকস। প্যাডি ফিল্ড জ্বালিয়ে দাও। মিট্টিকো তাঁবা ক্যার দো। দেন উস জমিন পার মুক্তিকা খুন ডাল দো। কিল দেম। ক্লিয়ার অল মুক্তি। কৃষি জমিগুলোতে চাষাদের লোহু ঢেলে দাও। খুন ডাল দো। ওই রক্তবীজ থেকে জন্মাবে মুক্তিযোদ্ধার চারা। কত জন্মাবে, জন্মাক! ওদের জেনানদের মিট্টিতে আমরা বীজ ঢেলে দিয়ে যাবো। সেখানে সাচ্চা মুসলমান বাচ্চা জন্মাবে।

মাঠে কাজ করা মানুষদের ওপর নেমে এলো মিলিটারিদের আক্রমণ। চাষাদের হাতে লাঙল জোয়াল কোদাল কাস্তেগুলোর কী দৈন্য দশা! কী হবে এ হাতিয়ার দিয়ে? এগুলো দিয়ে কি পাক হায়েনাদের মারা যায়? রাজাকার-আলবদর কুত্তাদের ঘায়েল করা যায়? চাষাদের হাতিয়ারগুলো জমি চেনে। আগাছা সাফ করার পর কেঁচোর গন্ধভরা নরম কালচে মাটির চাঙড় চেনে, বীজতলা চেনে। ধানের শীষ আর সবুজ কোষ্টা ঠাসা পাটগাছের আঁটি চেনে। হাতিয়ারগুলো ভড়কে গিয়েছিল। বৃষ্টির মতো গুলির মুখে মাঠের মানুষ সব প্রাণভয়ে দৌড়ূতে দৌড়ুতে থেমে যাচ্ছিল। হতচকিত হয়ে ধানের গোছা আঁকড়ে ধরেই বসে পড়ছিল। মাটির ওপর উবু হয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। জ্বলন্ত সীসাবৃষ্টির আঘাতে মাটির ওপর লুটিয়ে পড়তে পড়তে কেউ কেউ চেষ্টা করেছিল হাতিয়ারগুলো নিয়ে সৈন্যদের প্রতিহত করতে।

তা হলে তো ওরাই মুক্তি? মুক্তি ছাড়া কি কেউ পাক-সেনাদের দিকে অস্ত্র তাক করতে পারে? প্রাণ বাঁচানোর তোয়াক্কা না করে ধানক্ষেতে লাইন করে বসে পড়ে? দু’হাতে মাটি আঁকড়ে গড়িয়ে যায়? কামরু রাজাকার আর তার স্যাঙাৎরা মৃতদেহ ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে গ্রামের সীমানা পেরিয়ে যায়। পুরা গ্রাম কবলিত করা গেছে। বাহ্‌ রে বাহ্‌! জবরদস্ত নওজোয়ান সেপাই বটে!

অল্প সময়ের মধ্যে পুরো সোহাগপুর গ্রামের মাটি ঢেকে যায় পুরুষের মৃতদেহে। কিশোর তরুণ থেকে শুরু করে অসংখ্য যুবক অজস্র পুরুষ তাদের বীজ-সোহাগী মাঠে লতাপাতার ভেতরে পড়ে থাকে। মা-সোহাগী উঠোনের মাটিতে পড়ে থাকে। বউ-সোহাগী বিছানার চাদর থেকে ছিটকে বেরিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে।

আম্বিয়া খাতুনকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে না- এই কড়াল করে ঘরের বাইরে বের করে এনেছেন শাকিলা। আম্বিয়া ঘরের ভেতর একটি অন্ধকার কোণে বসে ছিলেন। কারও সাথে দেখা করবেন না তিনি। কোনো মাসোহারা বা কম্বল বা ছাগলও তিনি নেবেন না। সরকারি খেতাবও চান না। যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকতে চান। শাকিলা আম্বিয়ার হাত ধরে ১০ মিনিট বসে থাকেন। সামনেই আম্বিয়া খাতুনের পানের ডাবর। শাকিলা নেড়েচেড়ে দেখেন। পুরনো পলিথিনের প্যাকেটে মোড়ানো পান পাতা। ছোট ছোট কৌটোয় চুন-সুপুরি-খয়ের। সরতা নিয়ে নাড়াচাড়া।

কীভাবে ব্যবহার করেন?

হেসে ওঠেন আম্বিয়া। শহরের মানুষ এসব জানবে কীভাবে!

পেতলের ডাবর থেকে আধখানা পান যত্ন করে বানান আম্বিয়া বেওয়া। শহরের মাইয়া লোকটি পান খাবে- বড় মজা পাচ্ছেন আম্বিয়া। শাকিলা পানের খিলি মুখে নিয়ে যত্ন করে চিবান। হুড়ূস করে রস টেনে গিলে ফেলেন। জিভ বের করে হাসিমুখে জানতে চান, লাল হয়েছে?

হ হইছে। সোন্দর লাল হইছে।

বেশি, না কম?

বেশিই। টকটুকা।

আপনের মতন? আপনের তো দাঁতও লাল। টকটকা। বেশি লাল হলে তো সোয়ামি সোহাগ করে, তাই না? বলেই শাকিলা পানরাঙা জিভ দাঁতে কাটে। সরি সরি। ভুল কইরা ফালাইছি। আপনেরে দুঃখ দিছি। মাফ কইরা দেন। শাকিলা সুগোল সুন্দর চর্চিত হাতে আম্বিয়া বেওয়ার দু’হাত জড়িয়ে ধরেন। আম্বিয়া বেওয়া তার তামাটে রঙের দড়া পাকানো রুখুসুখু হাত জোড়া দিয়ে শাকিলা আক্তারের হাত দুটি নেড়েচেড়ে দেখেন।

জুয়ান বস্যে আমার হাত দুইটা আছিল আপনের হাতেরই মতন।

শাকিলা তার মুখের দিকে নজর করেন।

আপনাকে দেখতে মা মা লাগছে। অবশ্য আমার মায়ের চেহারা আপনার মত শার্প না। মানে বোঁচা বোঁচা; আমার মতো।

নিজের নাকের ওপর আঙুল রেখে হাসেন শাকিলা।

তবে আপনার সাথে কোথায় যেন মিল আছে, বুঝতে পারছি না।

হ্যাঁ, বাঁধ দেওয়া লুকোনো নদীটা বেরিয়ে এসেছে। লিচুর মতো ঘোলা রস গড়িয়ে পড়ে।

আমি মা হইতে পারি নাই সোনা। আমার বাচ্চাটারে ইবলিশের দুইটা চ্যালা উঠানের মইধ্যে গালাইয়া ফালাইল। চাকা চাকা বাচ্চার টুকরার মইধ্যে আমার শইলডা অজ্ঞান পইড়া রইছিল। যখন জ্ঞান আইল তখন দেখি ঢেঁকির কাতলার সাথে দুই হাত পিছমোড়া কইরা বান্ধা মানুষটা। ওইভাবেই রক্তে ডুইবা আছে তার লাশ। জানেন, তার লাশ দেইখা কত যে খুশি হইছিলাম! হাসতে হাসতে তারে কবর দিছি আমি। আমি একলা তার দাফন দিছি। আমার শাড়িখান ছিঁড়া ফালা ফালা কইরা ফালাইছিল ওরা। আর কুনু কাপড় তো আছিল না। ক্যালা গাছের বাত্তি-পাতা দিয়া ঢাইকা দিছি তারে। তার চক্ষু দুইখান ঢাইকা দিছি বরই পাতায়। য্যাতে তার পোয়াতি বউয়ের ল ভ শইলডা তারে দেখতে না হয়। যাতে তার বড় হাউসের বাচ্চার গালানো শরীলের লোহুর টুকরা দেখতে না হয়।

শাকিলা চুপ করে বসে থাকেন। নোট বইটি আগেই লুকিয়ে রেখেছেন। কিছুই লিখবেন না আম্বিয়ার সামনে। রিচার্ডকেও তার ক্যামেরা আর রেকর্ডার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। শুধু খুলে রাখ তোমার শ্রুতি। স্মরণের খাতায় লিখে নাও এসব মর্মবিদারী কাহিনী। চোখের রেটিনায় তুলে রাখ ধর্ষিতা বাংলা-মায়ের মুখচ্ছবি।

রিচার্ড অনুচ্চ কণ্ঠে শাকিলাকে বলে, ওকে. লেট হার গো উইথ হার টিয়ার্স। বাট আই নিড টু প্রিজার্ভ হার স্পিচ। প্লিজ, তুমি ওর কাছে অনুমতি চাও। আমার রেকর্ডারটা অন করতে চাই। তুমি ওর কথাগুলো বলতে দাও। ইন্সপায়ার হার!

অস্থির হয়ো না রিচার্ড!

মৃত জীবনের অন্ধকারে নাক-মুখ গুঁজে পড়ে থাকা কয়েকজন নারীর আত্মগত বয়ান কি চাইলেই পাওয়া যাবে? তাদেরকে আলোয় নিয়ে আসতে হবে। তাদের দিন-যাপনের প্রাত্যহিকতায় দানাপানির সাথে যেসব হাসিখুশির টুকরো মিশে থাকে, তার ভেতর থেকে বের করে আনতে হবে রক্তধান। আবার পুরনো কৌটোয় তুলে রাখা অশ্রু জেওরগুলোকে সোনারুর আগুনের মালসায় তাতিয়ে তুলতে হবে। গলিয়ে ফেলতে হবে। ওদেরকে ওদের মতো জ্বলতে দাও। গলতে এবং বয়ে যেতে দাও।

শাকিলা আম্বিয়া বেওয়াকে ফিসফিস করে কানে কানে কিছু একটা বলেন। আম্বিয়া রিচার্ডকে অপলক চোখে দেখেন। রিচার্ডের ২৫ বছরের সুঠাম দেহে সুন্দরবনের কেওড়া গাছের তারুণ্য। কোঁকড়া-ঝাঁকড়া চুল কপালের ওপর ঝুলে পড়েছে। খাড়া নাকের দু’পাশে ঝলমলে কালো দুটি চোখ। কথা বলার সময় দুপাটি অদ্ভুত সুন্দর দাঁত পুরু এক জোড়া ঠোঁটের ভেতর থেকে সামান্য একটু উঁকি-ঝুঁকি দেয়। শাকিলা রিচার্ডকে ইশারা করেন। রিচার্ড এই ইঙ্গিত বুঝতে পারে। সে তার মোবাইল ফোনের পর্দায় একটা ছবি বের করে আম্বিয়া বেওয়ার দিকে এগিয়ে দেয়। সাদা-কালো পুরনো বিবর্ণ একটি ছবি। নবজাতক শিশু কোলে এক তরুণী জননী। কাঁধের দু’পাশ দিয়ে নেমে এসেছে এলোমেলো চুলের বেণী। রিচার্ড ছবির শিশুটির ওপর আঙুল রেখে আম্বিয়া বেওয়াকে বলে, দিস বেবি ইজ মাই মাদার। এন শি ইজ মাই গ্রান্ডমা। নানীমা! ক্যান আই কল ইউ নানী? নানীমা?

পানরাঙা কালচে দাঁতের সারিতে অদ্ভুত একটা হাসির ঝিলিক।

পান দিমু নাতি? পান? পান-এর ইংরাজি জানি না। মূর্খ মানুষ!

লাগে যদি গেরুয়া রঙ মনের বসনে…

সোহাগপুর থেকে ফিরে যাওয়ার পথ ধরেছেন শাকিলা আক্তার আর রিচার্ড উইলসন। ততক্ষণে সূর্য অস্তাচলে। ফিরতি পথে আরেকবার সেই স্তম্ভ। চলো, ওদেরকে বিদায় সম্ভাষণ জানাই।

রিচার্ড হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে। লুক, শাকিলা! আ হোয়াইট ক্যারাভান!

শাকিলা দেখতে পান, সোহাগপুর গাঁয়ের সড়কের মাথায় মিছিল করে এসে দাঁড়িয়েছেন এক দল নারী। আবছা অন্ধকারে নারীদের সাদা অবয়বগুলো পুরনো চাঁদমাখা নদীজলের মতো ধীর লয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। অন্ধকারের প্রেক্ষাপটে একদল বয়সিনীর সাদা অবয়ব অদ্ভুত দেখায়। চিকন পাড়ের বিধবা বসন তাদের দেহ ঢেকে রেখেছে। মুখ ঢাকা পড়ে আছে চার যুগের পুরনো ফ্যাকাসে ঘোমটায়। সড়কের উঁচু-নিচু পাড়ে তারা এক সময় বসে পড়েন।

রিচার্ডের গায়ে ঘোর লাল টি-শার্ট। অদ্ভুত দেখায়। অস্তাচলগামী সূর্যালোকে ক্রুদ্ধ দেবতার চোখের মতো জ্বলে। হালকা শীতের জন্য শাকিলাও গায়ে একটি রঙিন চাদর জড়িয়ে নিয়েছেন। শ্বেতবনিতাদের মিছিলে ওদের দু’জনকে অদ্ভুত দেখায়। রিচার্ড নিজেদের অদ্ভুততা বুঝতে পারে। নারীদের অদ্ভুততা বুঝতে পারে না।

হোয়াই অল দিস উইমেন ওয়্যার হোয়াইট ড্রেস? ইজ ইট উইডোস ইউনিফর্ম?

না, ওরা শুধু ওই তিন যুগ আগে মৃত্যুর সাথে বদলে নিয়েছেন জীবন। মৃত্যুর সাথে বদলে গেছে তাদের বসন। সাথে বদলে নিয়েছেন পোশাক। তাদের রমণীয় রমণী পোশাকটিকে তারা কবরে দিয়েছেন। প্রিয় স্বামীকে কবরে শুইয়ে দেয়ার সময় কাফনের কাপড় তারা পাননি। ভয়, আতঙ্ক, চরম ত্রাসের অন্ধকারে তাদের চোখ অন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। অন্ধকারে সব রঙ হারানোর আগেই রঙিন কাপড়গুলো ওরা জড়ো করে ফেলেছিলেন। আর জড়ো করে নিয়ে এসেছিলেন এখানে সেখানে রক্তের হুল্লোড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা তাদের স্বামী মোমিন, হাশেম, সিরাজ, জসিম, নেকবর, শমসেরকে। শহর আলী, আবদুল লতিফ, কু্‌দ্দুস আলী, সাধু শেখ, মানিক ফকির, সিরিল গাব্রিয়েল আর রমেণ মিছিলকে। বুক চাপড়ে কেঁদেছিলেন মায়েরা। শক্ত হাড়ের বাহুতে দাপটে ধরে রেখেছিলেন প্রিয় পুত্রের দেহ। ধুকপুকে কবুতর মেয়েশিশুটিও গোয়ালের ভিটায় পড়ে থাকা বাপের মুখের দিকে চেয়ে কার কাছে যেন জানতে চেয়েছিল- ওরা তোমাকে মাইরা ফালাইল ক্যান বাবা? শুকুর আলী, কুমেদ মুন্সি, তনা শেখ, কিতাব আলী, খেজুর আলী, মমতাজ আলীদের তখন কান্না শোক আর অবাক প্রশ্নের বেড়াজাল থেকে আপনজনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল; দ্রুত। খুব দ্রুত। ওদের নিজের গাঁয়ের মাটির নিচে রেখে দাও। ওদের লুট হতে দেওয়া যাবে না। রাজাকার শয়তানের দল অনেক লাশ তুলে নিয়ে গুম করে ফেলেছে।

শুনলে না, বধূরা ঘরণীরা স্ত্রীরা কীভাবে দাফনের ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন? নিজেদের পরনের শাড়ি, বিছানার চাদর, মশারি, সুজনি, নকশি কাঁথা, মোহনতাঁতি গামছা আর সোহাগী দোপাট্টা দিয়ে?

সোহাগপুরের বেওয়া নারীদের জন্য কাফনতাঁতে দিনরাত মাকু চলে খট্‌-খট্‌ খটাখট্‌।

নদীর জল লাল হয়ে উঠছে। বদলে যাচ্ছে ভোগাইয়ের চেহারা।

এ প্রকৃতি লাল চায় না। শাকিলা আর রিচার্ডের পোশাকের রঙ চায় না। ঘন ঘন দম ছাড়ে তীরভূমি। জলধারা খামচে ধরে কাদামাখা মাটি। শ্বেতবসনাগণ সূর্যাস্ত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। শাকিলা আর রিচার্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তারা নত-মুখে একে অপরের কাঁধে হাত রাখেন। অতঃপর একটি অশ্রুরেখার মতো কালো পাথরের বেদির দিকে ধাবমান।

সূত্র:সমকাল

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত