অনেক রাত এখন, ডাকবাক্স খুললাম… নাহ্… তুমি নেই, ঘুমাচ্ছ, ঘুমাও! হয়তো ঘুমের মধ্যেই আমাদের জীবন পার হয়ে যাবে… হয়তো আমরা ঘুমিয়েই আছি! শুধু মাঝে মধ্যে জেগে থাকার ভান করছি! খুব কষ্ট লাগছে… খু উ ব… মনে হচ্ছে দুনিয়ায় খামোখাই এলাম, কষ্টের কথা বললাম রাগ করো না, কষ্ট তোমায় নিয়ে নয়, তুমি এখনও আমার কাছে এক অপার আনন্দের চিঠি… যে চিঠি খোলার আশায় আমি পরবর্তী সকালগুলোর জন্য খুব সহ্যশক্তি সঞ্চয় করে অপেক্ষা করা শিখছি, আমার জন্য প্রার্থনা কর,
তোমার ছুটির দিনের গল্প শুনে শুনে আমি এখন ভাবি, একদিন আমার জন্যও ছুটির দিন নিশ্চয়ই আসবে… সেই ভাবনায় একটু আরাম লাগে… কিছু কিছু বেদনাকে আর এত অসহ্য লাগে না
জীবনের ওপর আমি চড়ে বসতে পারি নাই, লাগাম আলগা হয়ে গেছে আমার, কিন্তু সব পরাজিত মানুষের মতোই আমি ভাবতে চেয়েছি, এখনও সময় আছে… অনেকটা ভান করার খেলা আর কি!… এই চিঠি হয়তো তুমি পড়বে একটা ছুটির দিন কাটিয়ে… তখন আমি একটা লক্কড়-ঝক্কড় বাসে হাবুডুবু খেতে খেতে আমার নিয়তির দিকে যাচ্ছি, ভালো থাকো, জীবনকে উপভোগ করো।
পিপাসা নাহি মিটিল! এই পিপাসার ভার সইবার শক্তি কি আমার আছে?
তুমি কিন্তু জানতে চাও নাই,
তোমাকে কাছে পেয়ে কি যে ভালো লাগছিল, কি যে আনন্দ হচ্ছিল, আমি আত্মহারা হয়েছিলাম, রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম কই আমার জীবন তো এতটা ব্যর্থ নয়, আমি তো অনেক কিছু পেয়েছি, তবু তোমাকে পাই নাই, পাব না কোনোদিন।
তোমার কাছে এলে তোমায় ছুঁতে এবং চুমু খেতে খুব ইচ্ছা হয়, তোমার বারণ সত্ত্বেও আমি সেটা করি। আজ মনে হলো আমি কি সুযোগ নিচ্ছি?
মন খুব খারাপ হয়ে গেল, তার ওপর তুমি অমন একটা কথা বললে…
তবে মনে হয় তুমি আমাকে একটু অন্যভাবে পড়েছ। আমার কোনো অভিযোগ নেই এই নিয়ে, তোমার এই পাঠ বরং আমার অস্থিরতা কমিয়ে দেবে। চিরতরে নিভিয়ে দেবে (হয়তো) অন্তত একজন মানুষের কাছে বোধগম্য হবার বাসনা।
আমি আর কোনো সুযোগ নেব না। আশা করি, আমার সেই শক্তি অর্জিত হোক… তুমি প্রার্থনা করো। আর সবসময় ভালো থাকো। … প্লিজ… আমার এই চিঠি পড়ার সময়েও।
প্রিয়
কী চমৎকার একটা দিন কাটল বহুদিন পর! এমন সব দিনের আশায় বুঝি মানুষ বেঁচে থাকে! তোমার সাথে ঘুরে বেড়াতে আমার এত ভালো লাগে! আমি আর আমাতে থাকি না, হাওয়ায় উড়ে বেড়াই।
বাজে বাজে কাজে ভরা কতগুলি দিন কাটালাম, আরও কত কত দিন এভাবে কাটাতে হবে কে জানে! এর মাঝে তবু স্বস্তি পাই, অভিযোগ ভুলে যাই, তুমি তো আছ,
এই রাতে আমি কি চমৎকার একা, তোমায় প্রাণভরে চিঠি লেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই আমার। বসে বসে তোমার স্মৃতি, গন্ধ, স্পর্শ নাড়াচাড়া করছি … আর ভাবছি … জগতের কি এমন ক্ষতি হতো যদি এরকম কোনো সুনসান প্রহর নিরুদ্বেগে তোমার সাথে ভাগ করে নিতে পারতাম।
জানি এ সকল ভাবনা মন শয়তানের চক্কর। কিন্তু এই চক্কর এত ভালো লাগে! এই ভালো লাগাকে জড়িয়ে ধরে এখন ঘুমিয়ে পড়ব। হিম, নিস্পন্দ, নিষ্পাপ ঘুম।
তোমার সাথে আবার কবে দেখা হবে? আমরা আবার কবে স্বপ্নে যাব?
হ্যাঁ, তুলনা হয় না কোনো কিছুর সাথে কোনো কিছুর, সবই তার নিজের মতো অনন্য, এটা প্রাচীন সত্য, আর এর চেয়েও প্রাচীন সত্য হইল… তারপরও আমরা তুলনাবিহীনই আছি।
নাহ্ আমার নিচে তাকানোর কোনো উপায় নাই বন্ধু, কারণ পৃথিবীতে আমিই সবচেয়ে নিচে আছি, ‘অ্যাট দ্য ডিপেস্ট বটম… বিলিভ মি!’ এটা সত্যি, একদিন হয়তো বুঝবা,
তুমি ভালো থেকো, নিরাপদ থেকো! শান্তিময় থেকো!
তুমি ভালোবাসা বুঝো না, আমি বন্ধুত্ব বুঝি না… এমন দিন কি আসবে যেদিন আমরা দু’জনেই শত্রুতা বুঝব? আসলে বন্ধুত্ব ব্যাপারটাতে আমার বেশ সন্দেহ আছে। এই শব্দটার ঘন ঘন ব্যবহার আমার মধ্যে দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে। এটা আমি বুঝি না, তবে প্রেম বুঝি।
নানা রকম রোমাঞ্চকর কথা শুনি, পড়ি, কিন্তু মনে হয় যেটি আমাদের মাঝে ঘটছে সেটি তুলনাহীন (ভালো-মন্দ অর্থে নয়), ফলে তুলনাহীনতার দিকে যাওয়ার অ্যাডভেঞ্চারও বলা যায় একে, নাকি? অবশ্য এই আশঙ্কা আমার না, তোমার ছিল তোমার, মনে আছে? আমি ভাবছি অন্য কথা।
আমরা দু’জনেই নিজ নিজ বলয়ে সুখী (আমি অবশ্য এভাবে মনে হয় বলি না) তাহলে কোনো অভাব আমাদের একা দোকা হতে বলল? নাকি পরস্পরকে আমরা নিজ নিজ বঞ্চনার কথায় বিব্রত দেখতে চাই না?
আমি কি কার্যকারণ খুঁজতেছি? এই বিষয়টা কি তোমায় বিব্রত করল?
তাহলে তুমি নিশ্চয়ই জানো যে, কোয়ান্টাম ফিজিক্স আরও তিন দশক আগেই কার্যকারণ নিয়মকে ‘দুটি একসাথে ঘটা আকস্মিক ঘটনা’ বলে বাতিল করে দিয়েছে।
নিশ্চিন্ত! আহ্!
কাল তোমার ফোন পেয়ে কী যে ভালো লাগল, তোমার উদ্বেগ তাও আমার জন্য! বেঁচে থাকা মাঝে মধ্যে কত আনন্দের!
আমি তোমাকে ভালোবাসি … আই ওয়ান্ট টু ডু উইথ ইউ হোয়াট স্প্রিং ডু উইথ দ্য চেরি ট্রিজ!
যদিও আমি তোমাকে আমার নৈতিকতা বোধ দিয়ে প্রভাবিত করতে চাই না, এমনকি আমি বিষয়টা শেয়ার করতেও চাই না, কিন্তু আমার মনে হয় আমার নৈতিকতা বোধ কখনোই আমার আত্মার চলাচলকে ব্যাহত করে না। এটা আমার কথা না, কোনো এক বিখ্যাত দার্শনিকের কথা, কিন্তু সেখানে অর্থাৎ আত্মার চলাচলে অবশ্যই একটা সীমানা থাকবে, কারণ তুমি তোমার আত্মাকে কতখানি উদ্দাম হতে দেবে?
উত্তর হতে পারে- ততটুকু, যতটুকু পর্যন্ত অন্যের জন্য দুর্দশার কারণ না হয়, জন স্টুয়ার্ট মিল এবং কোঁতে এইসব কথাবার্তা লিখেছেন তাদের বইয়ে।
আচ্ছা প্রেমের ব্যাপারটায় বোধহয় কিছুটা দখল হওয়া আর দখল করার ঝামেলা থাকে, তাই না? এই যে গভীর রাতে যখন তুমি ও আমি দুই ভিন্ন বাস্তবতার নিচে ঘুমাচ্ছি বা জাগছি, সেই অসম্ভব ভিন্নতায় রক্তাক্ত হবার ঝুঁকি নিয়ে আমি তোমাকে ‘আমার’ মনে করছি। জগতে যা কিছু ঘটে সবই তো প্রথম মনের মধ্যে ঘটে, নাকি?
তুমি বলছ তোমার যোগ্যতা নিয়া, সেই বিষয়ে আমার মতো সামান্য এবং মিইয়ে যাওয়া মানুষ কতটুকু বলতে পারি? ভাবি একসময় প্রিয় কোনো মানুষের জন্য কত কিছু করে ফেলার স্বপ্ন দেখতাম! ইচ্ছাগুলোর পাতাই কেবল ঝরাই, কোথায় ছিল সেই মানুষ? আজ যখন দু’জন দুই দিগন্তে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা, দু’জনকেই পিছু টানছে তাদের রেসপনসিবিলিটি, কমিটমেন্ট এবং অন্যরকম কিছু ভালোবাসা, তখন কোন গাণিতিক নিয়মে তাদের মধ্যে একটা সমঝোতা হতে চলল? ঈশ্বরের সময়জ্ঞান নিয়া আমার মতো মূর্খ মানুষ কি বলি… যখন প্রকৃতির অনেক কিছু আমরা জানি না, বুঝি না, … আর আফসোস করাও তো কাজের কিছু নয়,
থাক এসব নিয়ে আর নয়, হোয়াটএভার উইল বি, উইল বি।
প্রিয়, একটা চিঠি লেখার জন্য বসলাম, বসার সময় মনে হচ্ছিল হয়তো এমন কিছু লিখে ফেলব, এমন অলৌকিক কিছু ঘটবে লিখতে লিখতে, সো দ্যাট অল মাই মিসারিজ গো উইথ দোস ওয়ার্ডস! এখন লিখতে গিয়ে দেখছি কলম ঝামেলা পাকাচ্ছে, আঙুলকে মনে হচ্ছে অনিচ্ছুক, হৃদয় কথা বলছে বড় ধীরে!
এতসব চরম ঘটনার সাক্ষী হতে আমরা জগতে এসেছি… মাঝে মাঝে কিছু লোককে দেখে খুব হিংসা হয়… মনে হয় যেন ওদের জীবনে প্রাত্যহিকতার বাইরে কোনো ঘটনাই ঘটে না, কি রকম পুকুরের মতো নিথর শান্তির জীবন! তারা জানে আগামীকাল ঠিক কী ঘটবে, আগামী মাসে সে কোথায় থাকবে… মনে হয় তারা যেন তাদের মৃত্যুর তারিখও জানে… এবং সেটা এত নিশ্চিত ভাবে…
ভাবি, এত নির্মম এবং তীব্র জীবনবন্ধন আমার, যেখানে মরে যাওয়াও কোনো ঘটনার জন্ম দেবে না নিশ্চিত, খালি কিছু লোকের অল্প কিছু দিনের নিদ্রা নষ্ট হবে, এই তো!
কোনো সর্বনাশের মুখে আমি দাঁড়াতে পারি নাই, অন্যের চোখে নিজের পরাজিত চেহারা দেখি আর ভাবি কি বেহায়া আমি… জীবনের পক্ষে দরজা খুলে রাখি কিসের নেশায়?
তবু মাঝে মাঝে খোদা রসিক বলেই হয়তো আমায় উপহার পাঠান, এই যেমন তোমায় পাঠালেন, তুমি নীরবে এসে আমার বিস্মরণ চর্চার মধ্যে হাত তুলে দাঁড়ালে, কী এক অধিকার নিয়ে বললে, আমায় হারাতে দেবে না, এতে আজব লাগল! কে এই মেয়ে? কেন সে আমার হারিয়ে যাওয়ার পথে দাঁড়াল?
কি লাভ তার? তার জীবন তো কত সুন্দর সাজানো-গোছানো, তবু সে আমার মতো শরণার্থীর জন্য উতলা হয়ে উঠল কেন? করুণা? নাকি তারও তৃষ্ণা ছিল, যা সে নিজেই জানত না? নাকি খোদা আমায় কি জীবনে কি মরণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দেবেন না বলে ঠিক করেছেন?
যখন মাঝরাতে পা টিপে টিপে বৃষ্টি নামে, আমি টের পেয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই অনিদ্র থাকার পক্ষে একটা অন্তত রোমাঞ্চ খুঁজে পাই, তখন তোমাকে নিয়ে এইসব কথা ভাবি, আর ভাবি ছোটবেলায় একদিন একটা গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। সেই গাছে পাতা ছিল না, ছিল হাজার হাজার চড়ূই, আমি যেন সেই চড়ূই গাছ আমার সবগুলো পাতা চড়ূই হয়ে গেছে, তারা আমায় ঘুমাতে দিচ্ছে না,
আমার একটা জাহাজ ঘাটা আছে, প্রিয় দোয়েলা, সেখানে আমি একদিন ঘুমিয়ে যাব
তুমি ভালো থেকো, খুব ভালো, আমায় ভুলে যেও (না)
তোমার যোগ্যতার কথা বলছ, ওটাই আমার সেই সম্পদ, যার ছিটেফোঁটা স্পর্শে আমার মতো অভাগা তার জীবনটাকে পুরনো ঘোষণা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে! তোমার যোগ্যতা ওইখানে তুমি আমাতে ঐশ্বর্য খুঁজে পেয়েছ,
এই আমাকে একটু আদর দিও, একটু চুমু! (সত্যি ফাজিল হয়ে গেছি)
তুমি সারা জীবন এমনি থেকো সবার কিন্তু ছোট্ট একটু জায়গা আমার!