&ভার্সিটির হল থেকে বাহির হচ্ছি এমন সময় গার্লফ্রেন্ড এর ফোন। কতক্ষন থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন রিসিভ করো না কেন? আমি বললাম ফোন সাইলেন্ট করা ছিল তাই ঠিক পাই নাই। অত্যন্ত পরে ফোনটা ব্যাক তো করতে পারতে? আমি নিচু গলায় বললাম আমার ফোনের ব্যালান্স ছিল না। তারপর বললো তাড়াতাড়ি এসো শপিং মলে আছি। পকেট হাত দিয়ে বললাম ১০০ টাকার একটা নোট পকেটের এক কোনে পরে আছে। আমি বললাম আমার কাছে টাকা নাই। এটা বলার পরে ওপাশ থেকে কল টা কেটে দিয়েছে।
~~তারপর থেকে আমার আর ফোন ধরে না। হঠাৎ দেখি ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে উইথ মাই হাবি। তখন বুঝেছিলাম মধ্যবিত্তের প্রেমে মানায় না। মধ্যবিত্তের জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হয়। তাই সব কিছু ভুলে গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছি।
~~~মাসের প্রথমের দিকে টিউশনি করে যা পাই তাতে মেস ভাড়া। বিভিন্ন কাজে খরচ করতে হয়। আর খাওয়ার খরচ দিতে গিয়ে মাসের শেষ ৫ দিন অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। ২৫ দিন খাওয়ার খরচ ভালো মতো চললেও শেষ পাঁচ দিন না খাওয়ার মতো করে চলতে হয়।
“””” তাই এক ভাইয়ের কাছে থেকে মাস শেষে কিছু অল্প পরিমাণ টাকা ধার নিতাম কিন্তু এভাবে আর কত দিন।ভাই সবার সামনে মুখের উপর কথা শুনিয়ে দিল এভাবে আর কত দিন।বাইরে থেকে পড়াশোনার খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই।তাহলে পড়াশোনা করতে বলে কে, কাজ করলেই তো পারিস। আমি তোর চাকর নাকি যখন যা খুশি তাই বলবি আর আমি করবো। আগের মাসের টাকা দিস নাই আর কোন লজ্জায় টাকা ধার চাস। জীবনে প্রথম কেউ এমন অপমান করলো। বাঁচতে আর ইচ্ছে করে না। সব মধ্যবিত্তের কি এমন কষ্ট আর অপমান সহ্য করতে হয়। অপমান না করে ভালো করে বললেই তো পারতো।
~~~এবার জীদ করে একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু এটাও হলো না কারণ তারা অনেক টাকা চেয়েছে। দিন চলে না আর চাকরি করার জন্য এত টাকা কিভাবে দিব। তাই মাস শেষে যাতে কারোর কাছে টাকা ধার না চাইতে হয় সেই জন্যই। মাঝে মাঝে খাওয়ার পিছনে অল্প খরচ করতাম মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকতাম। এখন থেকে আর কারোর কাছে টাকা ধার চেয়ে অপমানিত হতে হয় না। মাস বেশি কষ্ট করে থাকতে হয় না।
~~মানুষ এর মাঝে চলতে চলতে অনেকেই আমাকে কিপ্টা ছোট লোক উপাধি দিয়েছে। কারণ আমার কাছে অল্প টাকার ও দাম আছে। দোকান থেকে কোন কিছু কিনলে তারা দুই টাকার বিনিময়ে টাকা না দিয়ে চকলেট দিয়ে দেই। কারো কাছে টাকা পাইলে কিছু টাকা কম দেই কিন্তু আমি মেনে নিতে পারি না। আমার কষ্ট করা টাকা কম কেন নিব।
~~~ অটো করে আসছিলাম একদিন, ভাড়া ৮ টাকা কিন্তু আমি দশ টাকার একটা নোট দিলাম কিন্তু উনি টাকা ফেরত না দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি বললাম মামা টাকা। মামা বললেন সবাই তো দশ টাকাই দেই। আমি বললাম সবাই আর আমি এক না। যা ভাড়া তাই নিবেন।
“”””উনি আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন মনে হলো আমার মতো ছোট লোক মনে হয় আর নাই। আমি মনে মনেই বললাম মধ্যবিত্তের এমন করেই চলতে হয়। আজ মাসের শেষ। কাল টিউশনির টাকা দিবে। কিন্তু অনেক দিন মাথায় শ্যাম্পু দেওয়া হয় নাই। আজ শ্যাম্পু দেওয়া দরকার। পকেট খুঁজে সেই দুই টাকা পেলাম। টাকা দুটা দেখে একটু মুচকি হাসি দিলা |
~~~রাতে ছাদে বসে আছি এমন সময় মা ফোন দিল। হ্যালো বাবা কেমন আছিস? হ্যাঁ মা ভালো আছি। তোমার সবাই কেমন আছো? আলহামদুলিল্লাহ ভালো। শোন বাবা তোর ছোট ভাইয়ের তো স্কুলে টাকা দিতে হবে। ২ হাজার টাকা দিতে পারবি। আচ্ছা মা ঠিক আছে কাল টিউশনির টাকা দিবে তখন দিব। এটা বলেই ফোনটা কেটে গেল। হয়তো ফোনের ব্যালান্স শেষ! টিউশনির টাকা নিতে গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নাই।
কিন্তু আজকেই তো ছোট ভাইয়ের টাকা দিতে হবে। অবশেষে কোন উপায় না খুঁজে পেয়ে ফোনটা বিক্রি করে দিলাম আড়াই হাজার টাকা দিয়ে। ২ হাজার টাকা বাসায় দিলাম আর ৫০০ টাকা দিয়ে একটা ছোট পুরাতন ফোন কিনলাম। মন কে শান্তনা দিলাম কিছু না হলেও মায়ের প্রথম আবদার টা তো পূর্ণ করতে পারলাম। মোবাইল টা বেশি বড় না। আমার কাছে বড় আমার মায়ের মুখের হাসি। ছোট ভাই কে যেন আমার মতো কষ্ট করতে না হয়।
গল্পের বিষয়:
গল্প