ইছামতী আমার গ্রামের নাম। ক্যাং ফ্রি প্রাইমারি স্কুল থেকে চলে গেলাম রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। সে সময় গ্রামের পাঠাগারের গল্পের বইয়ের বন্ধু-জগতে নাড়া বাঁধি, বইয়ের সঙ্গে সেই লাল সুতোর বন্ধন আজও ছেঁড়েনি। স্কুলে যাওয়ার আগে ইছামতী নদী অথবা পুকুরে স্নান করে উঠতে উঠতে দেখি ঘাটের নিচে কাদায় পা-ওয়ালা টহলদার গুলি মাছ কাদার ওপর বসে থাকে। মাথার ওপর দু’পাশে ড্যাব ড্যাব করছে একটু উঁচু হয়ে থাকা চোখ দুটি। থপ থপ করে কাদার ওপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়েও ছুটতে পারে। আবার টলটলে কাদায় ছোট কুমিরের মতো গা ত্যাড়াবেঁকা করে। এ রকম প্রাণী হচ্ছে আদিকালের স্টিগোসেফাস ডিপ্লোকটোস। খুদে জাতের এ রকম আরেক প্রাণীর নাম স্টিগোসেফাল ব্রংখিসরস। এই ভালোবাসা আমাকে লিখতে শিখিয়েছে ‘নোভায়া জেমলায়ার বিভীষিকা।’
ভিটের সীমানা ও উঠোনের কাছে কয়েকটি সুপারিগাছ ছিল। পায়ের সঙ্গে দড়ির ফাঁসকল লাগিয়ে কাঠবেড়ালির মতো ওঠা রপ্ত করে নিলাম। মা ছোটবেলায় মারা যায়, ঠাকুমা সব রকম দৌরাত্ম্য সয়ে যায়। আর পূর্ণিমা-অষ্টমী-অমাবস্যায় ভিক্ষু ধর্মানন্দ থেকে শুনে আসা জাতকের কাহিনী শোনাত- কী যে আকর্ষণ আর ভালোবাসা ছিল সেই কাহিনীগুলোয়! সেই ছয় খণ্ডের জাতক মহাগ্রন্থে কত গাছ-ফুল-ফল ও জীবজন্তুর নাম- সেই অচেনা বন্ধুত্বের রাজ্যে গিয়ে ফিরে আসি ঘোরগ্রস্ত হয়ে। বিদুরপণ্ডিত জাতকের নাগরাজের সুন্দরী কন্যা ইরন্দতী মন হরণ করে নিল।
আমাদের ভিটেয় বাঁশের ঝাড় ছিল না। কিন্তু বাঁশ সম্পর্কে পড়ে, বাঁশির মন ভোলানো সুরে শ্রীমতী রাধা কুল-মান ছেড়ে কানাইয়ার সঙ্গে মিলনের জন্য ছুটল। বর্ষা রজনীতে রাধা বেরিয়ে পড়েছে। গ্রামের একটি-দুটি-তিনটি পরিবারে বাঁশির চর্চা চলত। ব্যস, সূর্য উৎসবের মাঘ মাসের মেলা থেকে বাঁশি কিনে নিয়ে এলাম দু-তিন আনা দামের। ঘরে দিদি ও বোন বাঁশির সুরে মুগ্ধ না হয়ে তেড়ে আসতে লাগল।
একদিন নদীর তীরে এক গজ লাল ফিতে খুঁজে পেলাম, নতুন। এবার পড়লাম নতুন সমস্যায়। দিদি বা বোনকে দেব না, ওরা আমাকে পাত্তা দেয় না। নদীর তীরে গেলাম। দেখি আমার দু’ক্লাস ওপরের নবম শ্রেণির সুন্দরী নীপমালিকা দক্ষিণপাড়া থেকে আসছে। নদীর ধারের পথ। মাদার ফুটে টগবগ করছে লাল রঙের বাহার দেখিয়ে। আমিও আমাদের মাদার গাছের সেই ছায়াহীন তলায় ওর মুখোমুখি। দুম করে ওর সামনে গিয়ে ফিতেটি বাড়িয়ে দিলাম।
ওটা কী!
ফিতে, এইমাত্র এখানে কুড়িয়ে পেলাম। তোমাকে দিলাম।
চোখ বড় বড় করে সে বলল, সত্যি! তোর দিদিদের না দিয়ে আমাকে দিচ্ছিস!
তুমি খুব সুন্দর তাই। আমি বললাম। তারপর লজ্জায় পথ খুঁজে না পেয়ে ঘরের জন্য তোলা ফুল কোচর থেকে ওকে নিতে বললাম। আমি ততক্ষণে থর থর করে কাঁপছি, যদি দিদিদের বলে দেয়! তার চেয়ে সে বিড় বিড় করে কী যেন বলে আমাকে আলিঙ্গনে নিয়ে গালে কষে চুমু খেলো। ওর সারা গায়ে কী সুন্দর গন্ধ, কী কোমল আলিঙ্গন, কী আদর। কী মিষ্টি!
অমনি আমার মনে হলো কেউ দেখে ফেলল না তো একেবারে পথের ওপর! একটা সাদা-কালো মাছরাঙা তখন কী-লী-লী-লী ডেকে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে নদীর বুকে শূন্যের ওপর থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি আলিঙ্গনে থেকে ওকে দেখতে লাগলাম। মাদারের মতো লাল হয়ে টগবগ করে ফুটছে ওর মুখ। বড় হয়ে ওকে নিয়ে পরে লিখেছি ‘আকাশে প্রেমের বাদল’ গল্প, বইয়ের নামও ওই।
নদীর ভাঙনে সেই মস্ত বড় ভিটে এখন ওপারে বালির চর হয়ে জেগে আছে। চাষবাস হয়, গ্রামের যুবক এক চাষির কাছে বছর বছর লাগিয়ত করি। নীপমালিকা মারা গেছে বছর চারেক আগে। সে ‘আকাশে প্রেমের বাদল’ পড়ার সুযোগও পায়নি হয়তো। এ রকম এক রত্তি সুঘটনা থেকে কত গল্প হয়ে যায়! বেদনাও কম নয়। কর্ণফুলীর ভাঙনে দুই একর উর্বর জমিতে ফলতো আউশ ও নানা রকম তরিতরকারি। ফাল্কগ্দুন মাসে শেয়াল নামত ফুটি ও তরমুজ খেতে। রাত জেগে পাহারা দিত চাষিরা। আমিও শখ করে পাহারা দিতে যাই কয়েক বার। সেই শেয়ালদের নিয়ে বিভীষিকার গল্প বুনেছি। সঙ্গী হিসেবে নিয়ে যাই আমার প্রিয় পোষা কুকুর। পাশে জেলেপাড়া। প্রাথমিক স্কুলের সহপাঠী জেলে প্রভাত। ওকে নিয়েও গল্প আছে শেয়ালদের আক্রমণাত্মক হওয়ার বিভীষিকা নিয়ে। ওরাও বন্ধু আমার।
আমি দুর্মর ভালোবাসি এবং বিশ্বাস করি এই পৃথিবী মানুষের সম্পত্তি নয়। ২০০০ সালে ‘ভোরের কাগজে’ প্রকৃতি বিষয়ে লেখার অবসর খুঁজে বের করি। তারপর স্টিফেন হকিং আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করে। এ সময় রেড ইন্ডিয়ানদের সর্দারের লেখা একখানা চিঠি পড়ি কোনো এক মাসিক সাময়িকীতে। আমি শিহরিত হয়ে উঠি। মনে হলো, আমার হৃদয় খুলে গেছে সেই সু-দুর্ঘটনায়। তার বেশ কিছু অংশ এখানে তুলে দিলাম-
‘১৮৫৪ সালে ওয়াশিংটন থেকে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সিয়াটল উপজাতির লোকদের নির্দেশ দেন তাদের নিজেদের বসতি এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। কেননা সেখানে তৈরি হবে আধুনিক সভ্য শহর অঞ্চল। ঠিক যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই বাঁধ দেওয়ার জন্য সেই পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮-৫৯ সালে চাকমা-মারমা-ত্রিপুরী-তঞ্চঙ্গা প্রভৃতি জাতিসত্তাকে নদীর তীর ও উর্বর কৃষি জমি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুকুম দিয়েছিল। কারণ কর্ণফুলীতে বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, যে বিদ্যুৎ পাহাড়ি জাতিসত্তার জমি হারানোর বদলে কিছুই নয়। ওয়াশিংটনের নির্দেশের উত্তরে সিয়াটল উপজাতির প্রধান (অর্থাৎ লালদের সর্দার) একটি চিঠি দেন ওয়াশিংটনের বড় সাদা সর্দারকে (অর্থাৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে)।
এই চিঠি বা দলিলটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোনো কবিতার মতো, যা রচিত হয়েছিল ১৬৪ বছর আগে লাল মানুষদের কলমে। একটি শ্রেষ্ঠ কবিতার মতোই এতে নিহিত আছে ভাব, আবেগ, ভালোবাসা, সত্য ও দর্শন। কী অকপটে ও অনায়াসে বলেছিলেন, ‘পৃথিবী মানুষের সম্পত্তি নয় বরং মানুষই পৃথিবীর।’
এই দলিলটি রাষ্ট্রসংঘ গ্রহণ করেছে আদিবাসী জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রস্তাব হিসেবে। সেই দলিলটির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো এখানে- বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ও প্রাণিজগৎকে ভালোবাসার দলিল।
সিয়াটল উপজাতির প্রধানের চিঠি :১৮৫৪ সাল
‘কী করে তোমরা বেচাকেনা করবে আকাশ, ধরিত্রীর উষ্ণতা? আমরা তোমাদের চিন্তা বুঝতে পারি না।
‘বাতাসের সতেজতা, জলের ঝিকিমিকি- আমরা তো এগুলোর মালিক নই, তবে তোমরা (আমাদের থেকে) এগুলো কিনবে কেমন করে?
‘এই ধরিত্রীর প্রতিটি অংশই আমাদের লোকদের কাছে পবিত্র। পাইনগাছের প্রত্যেকটি চকচকে ডগা, বালুকাময় প্রতিটি সমুদ্রতট, অন্ধকার বনভূমিতে জমে থাকা কুয়াশা, প্রতিটি প্রান্তর, প্রত্যেকটি পতঙ্গের গুনগুন আমার লোকদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিতে পবিত্র। প্রতিটি বৃক্ষের ভেতর দিয়ে যে বৃক্ষরস প্রবাহিত হচ্ছে তারা লাল মানুষদের (উপজাতি/আদিবাসীদের) স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে।
‘সাদা মানুষের (আধুনিক মানুষদের)- মৃতেরা তাদের নিজেদের দেশকে ভুলে দূর আকাশের তারার কাছে (স্বর্গে) চলে যায়, আমাদের মৃতেরা এই সুন্দর পৃথিবীকে কখনও ভোলে না, কেননা এই পৃথিবী লাল মানুষদের মা।
‘আমরা এই পৃথিবীর অংশ, এও আমাদের অংশ। সুগন্ধ ফুলগুলো আমাদের বোন; হরিণ, ঘোড়া, বিশাল ঈগল পাখি- এরা আমাদের ভাই।
‘পাহাড়ের পাথুরে সব গহ্বর, সরস মাঠ, ঘোড়ার বাচ্চার গায়ের যে উষ্ণতা আর মানুষ- সব কিছু মিলে আমাদের একই পরিবার।
‘তার জন্য ওয়াশিংটনের বড় সাদা সর্দার (তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট) যখন বলে পাঠায় যে, সে আমাদের দেশ নিতে চায়- তখন সে আমাদের বাস করার জন্য একটা সংরক্ষিত অঞ্চল দেবে, যেখানে আমরা আরামে থাকব। সে আমাদের পিতার মতো হবে, আমরা তার সন্তানের মতো হবো। সুতরাং আমরা তার কথা বিবেচনা করে দেখব।
‘কিন্তু এটা এত সহজ নয়। এই ভূমি আমাদের কাছে পবিত্র।
‘যদি আমরা এ ভূমি তোমাদের দিয়ে দিই, তাহলে তোমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই ভূমি পবিত্র। তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের নিশ্চয়ই করে শেখাবে এর পবিত্রতার কথা। তাদের শিখিও যে, এখানকার হ্রদগুলোর পরিস্কার জলের মধ্যে দেখতে পাওয়া যে, কোনো রহস্যময় ছায়াই আমাদের মানুষদের জীবনের কোনো না কোনো ঘটনার স্মৃতি।
‘ঝরনাগুলো জলের মর্মরে আমার বাবার ও তার পিতৃপুরুষদের স্বর শোনা যায়।
‘নদীরা আমাদের ভাই, তারা আমাদের তৃষ্ণা মেটায়। নদীরা আমাদের ক্যানো (এক রকম নৌকো) বয়ে নিয়ে যায়, আমাদের ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার জোগায়। যদি আমাদের দেশ তোমাদের দিয়ে দিই তাহলে তোমরা মনে রেখো, তোমাদের ছেলেমেয়েদের শিখিও যে, নদীরা মানুষের ভাই, সুতরাং তোমরা নদীদের সে রকমই যত্ন করো যেমন তোমরা তোমাদের ভাইদের করো।
‘আমরা জানি সাদা মানুষেরা আমাদের ধরন-ধারণ বোঝে না। তার কাছে পৃথিবীর এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের কোনো তফাত নেই। কেননা সে ভিনদেশি- রাত্রির অন্ধকারে আসে, নিজের যা দরকার মাটির কাছ থেকে কেড়েকুড়ে নিয়ে চলে যায়। এই ধরিত্রী তার আত্মীয় নয়, তার শত্রু। সে একে জয় করে, তারপর ফেলে দিয়ে যায়।
‘সে পেছনে ফেলে দিয়ে যায় নিজের পিতার কবর, কিছুই মনে করে না। নিজের সন্তানের কাছ থেকে পৃথিবীকে সে চুরি করে, কিছুই তার মনে হয় না। ‘তার পিতৃপুরুষের কবর, তার সন্তানের অধিকার সে ভুলে যায়। তার মা এই ধরিত্রী, তার ভাই আকাশ- এসবকে সে মনে করে ভেড়া কিংবা রঙিন পুঁতির মতো কেনাবেচা করার, লুট করার জিনিস।
‘তার লোভ এই পৃথিবীকে খেয়ে ফেলবে, পড়ে থাকবে কেবল এক মরুভূমি।
‘আমরা এসব বুঝতে পারি না। আমাদের ভাবনা অন্যরকম।
‘তোমাদের শহর লাল মানুষদের ব্যথা দেয়। অবশ্য আমরা লাল মানুষেরা জংলি, তার জন্যই হয়তো এমন হয়।
‘সাদা মানুষদের শহরে কোথাও শান্ত নিরিবিলি জায়গা নেই- যেখানে বসে বসন্তকালে পাতায় কুঁড়িগুলোর খুলে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়।
‘অবশ্য আমরা জংলি বলেই আমাদের এ রকম মনে হয়। এত গোলমাল মনে হয় যেন তার মানুষের কানকে অপমান করছে। জীবনের কী মূল্য আছে একজন লোক যদি জলের ঘূর্ণির মধ্যে আপন মনে একাকী গুনগুন করার শব্দ শুনতে না পায়? কিংবা রাতে ব্যাঙদের বকবকানি? আমি একটা লাল মানুষ, আমি এসবের কিছু বুঝতে পারি না (অর্থাৎ শহরের)।
‘আমরা লাল লোকের ছোট পুকুরের জল ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের হালকা শব্দ শুনতে ভালোবাসি, ভালোবাসি দুপুরের বৃষ্টিতে ধুয়ে পরিস্কার হয়ে যাওয়া বাতাসের নিজস্ব গন্ধ, পাইন বনের গন্ধ।
‘লাল মানুষদের কাছে বাতাস পবিত্র আর মূল্যবান, কেন না জন্তু গাছ মানুষ- সবার নিঃশ্বাস একই বাতাসের মধ্যে ধরা আছে।
‘সাদা মানুষেরা সে বাতাসে নিঃশ্বাস নেয় তার দিকে মন দেয় না। অনেক দিনের বাসি মৃতদের মতো হয়ে গেছে তারা, তাদের চারপাশের বাতাসের দুর্গন্ধ তারা আর বোধ করে না।
‘কিন্তু আমরা তোমাদের দিয়ে দেব আমাদের জমি, মনে রেখো এই বাতাস আমাদের কাছে মূল্যবান। বাতাস যে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে তার সঙ্গে মিশে থাকে। যে বাতাস আমাদের পূর্বপুরুষের বুকে তার প্রথম বাতাসটি দিয়েছিল, সেই তার শেষ নিঃশ্বাসটি ধরে রেখেছে।…
‘জীবজন্তু ছাড়া মানুষ কী! যদি পৃথিবীতে কোনো জানোয়ার না থাকে, তার আত্মার একাকিত্বে মানুষ নিজেও মরে যাবে।
‘জন্তু-জানোয়ারের যা হবে, কিছুদিন পর মানুষেরও তাই হবে। সবকিছুই একে অন্যের সঙ্গে বাঁধা।
‘এই পৃথিবীর যা হবে পৃথিবীর সন্তানদেরও তাই হবে। জীবনের এই ছড়ানো জাল, মানুষ একে বোনেনি- সে কেবল এর একটি সুতো মাত্র। এই জালটিকে সে যা করবে, তার নিজেরও হবে ঠিক তাই।
‘আজ তোমরা ভাবো ঈশ্বর তোমাদেরই। যেমন তোমরা আমাদের এই দেশকে দখল করে নিতে চাও তোমাদের নিজেদের বলে, কিন্তু তা তোমরা পারবে না। সব মানুষের ঈশ্বর সে, তার দয়ার কাছে সাদা এবং লাল মানুষ একই রকম।’ (অসমাপ্ত)
লাল মানুষের সর্দারের এই কথাগুলো এত স্বচ্ছ, এত অন্তরঙ্গ, এত মরমী, সুরেলা, কাব্যিক, হার্দিক ও এত লক্ষ্যভেদী যে, কোনোভাবেই তাকে অবহেলা করা যায় না। ফেলা যায় না। অবজ্ঞা করা যায় না। কিন্তু প্রতিনিয়ত তাকে আমরা দলিত করছি। দুর্বল মানুষকে হাতে ধরে সঙ্গী করে নিই না। ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান, ‘মানুষ মানুষের জন্য… পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি…।’ আর আজ বন্ধুত্ব নয়, শুধু জয় চাই- এই মর্মবাণী তো মানুষের হতে পারে না। প্রকৃতির মর্মবাণী ও ভালোবাসায় সদা উজ্জ্বল। এসো হে সখা, বৃক্ষ রাঙিয়ে তুলি…। অনন্ত নক্ষত্রবীথি ও জগৎ প্রকৃতি সখা, এসো তুমি।
সূত্র: সমকাল