ফেসবুকে তিনমাস প্রেম। নতুন প্রেমিকার সাথে প্রথম ডেটিং আজ। তাই মনের আনন্দে নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগেই পার্কে এসে পড়েছি। ঢুকতেই হঠাৎ দেখি আমার প্রাক্তন সাদিয়া এক ছেলের কাধে কাধ লাগিয়ে বসে গল্প করছে। আমি দেখে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-কি খবর? সাদিয়া আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে আমতা আমতা করে বললো, সিফাত? সাদিয়ার প্রেমিক ইশারায় ওকে জিজ্ঞেস করলো, কে ইনি?
সাদিয়া আবার ভীত চোখে তাকিয়ে আটকে আটকে বললো, ও সিফাত আমার ছোট ভাই! তোমাকে বলছিলাম না?
সাদিয়ার কথা শুনে আমার আবেগে কান্না চলে আসলো। এতো ভালোবাস ছিলাম ওরে, শেষে কিনা আমারে ছোট ভাই বানায়া দিলো। যাইহোক, মনে মনে ভাবলাম ও আমারে এতো বড় অপমান করলো। ওরে একটা শিক্ষা দিবো। সাদিয়ার প্রেমিক সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, জি ভাইয়া। সাদিয়া এবার বললো, কিরে ছ্যাচড়া তুই এখানে কি করিস? সাদিয়ার কথা শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। মনে হলো মাইয়ারে শিক্ষা না দিলে চলবেনা। আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম, আপু আমি তোমার কাছেই আসছি। দুই হাজার টাকা দাও খুব দরকার। কালকে দিয়ে দিবো। সাদিয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকালো। আমি ভেঙ্গচি দিয়ে বুঝালাম না দিলে সব ঘটনা ফাঁশ হয়ে যাবে। সাদিয়া বাধ্য হয়ে পাঁচশ টাকার চারটা নোট বের করে দিলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বুঝালাম, শিক্ষা হইছে না?
সাদিয়া মন খারাপ করে ওর প্রেমিকরে নিয়ে বাইরে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে আমি ওর বয়ফ্রেন্ডরে বললাম, আপু কিন্তু অনেক চালাক ভালোভাবে দেখে শুনে রাইখেন। সে শুনে হাসি দিয়ে হ্যান্ডশিক করে চলে গেলো। আমি মনে মনে খুব খুশি। সাদিয়ার টাকায় নতুন প্রেমিকার সাথে তাহলে ডেটিংটা ভালোভাবেই হয়ে যাবে। একটু পর আমার নতুন প্রেমিকা সাথি চলে আসলো। তার সাথে আরও তিনজন বান্ধবী। আমি ওদের বললাম, আপনারা এইদিক দিয়ে ঘোড়াঘুড়ি করেন। আমরা একটু আলাদা ভাবে ঘোড়াঘুড়ি করি। আমার কথা শুনে সাথি বললো, বাবু ঘোড়াঘুড়ি পরে। খিদা লাগছে খুব, আগে রেষ্টুরেন্টে চলো খাবো। মাইয়ার কথা শুনে হার্টবিট বেড়ে গেলো, বুঝলাম আজকে আমি গেছি। আমি মন খারাপ হয়ে গেলো। কৃত্তিম ভাবে মুচকি হেসে বললাম, আচ্ছা বাবু চলো।
রেষ্টুরেন্টে গিয়ে চারজন উড়াও ধুরাও অর্ডার করে চার হাজার টাকা বিল তুললো। আমার চোখে পানি চলে আসলো। মনে মনে ভাবলাম সাদিয়ার সাথে চিটারি করার ফল পাইলাম, সাদিয়া আমারে ক্ষমা করে দিও। তো বিল দিয়ে বের হোলাম। বের হতেই, পরিচিত কন্ঠে “ভাইয়া” ডাক শুনে তাকিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দেখি সাদিয়া দাড়িয়ে আছে। সাদিয়া এগিয়ে এসে বললো, ভাইয়া তুমি এখানে? আমি এবার আটকে আটকে বললাম, এমনি। তুই এখানে? সাদিয়া দুই তিনজন মেয়েকে দেখিয়ে বললো বান্ধবীদের সাথে ঘুড়তে এসেছি। আমার নতুন প্রেমিকা আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললো, কে ইনি? আমি বললাম, আমার ছোট বোন সাদিয়া। সাদিয়া বললো, ভাইয়া এটা ভাবি নাকি? অনেক সুন্দর! সো কিউট। ভাবি ভাইয়াকে দেখে রাইখেন। ভাইয়া কিন্তু খুব বোকা।
সাদিয়ার কথা শুনে মেয়েটা মুচকি হাসি দিলো। মনে মনে বললাম আল্লাহ আমি কি ভুল করছিলাম সবগুলা শাস্তি একসাথে দিলা। সাদিয়া বললো, ভাইয়া চার হাজার টাকা দাওতো? আমি বললাম, কেন কি করবি? সাদিয়া বললো, ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুড়তে আসছি। টাকা দরকার। সমস্যা নাই কালকে তোমাকে দিয়ে দিবো। আমি ওর দিকে ক্ষমা চাওয়ার দৃষ্টিতে তাকালাম। সাদিয়া মুচকি হেসে বললো, দাও নাহয় কিন্তু বাসায় গিয়ে বলে দিবো সব। পরে বুঝবা। আমি মন খারাপ করে চার হাজার বের করে দিলাম। মাসের প্রথমেই টিউশনি আর হাত খরচের টাকা পাইছিলাম সব গেলো। আবেগে আবারো চোখ দিয়া পানি বের হয়র আসলো।
সাদিয়া চলে যাওয়ার পর মন খারাপ করে, আমিও সাথির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। ভাবতে লাগলাম, কোন মেয়েই ভালো না। শুধু খাওয়ার ধান্দা। জীবনে আর কোন প্রেমই করবোনা। রাগে দুঃখে ফেসবুকে ঢুকলাম ভাবলাম ফ্রেন্ডলিষ্টের সব মেয়েকে ব্লক করে দিবো। ঢুকতেই নিউজফিডে দেখি সাদিয়ার পোষ্ট। সাথি আর ওর সাথের ঐ তিন জন বান্ধবী সহ সাদিয়া। পাঁচজনে মিলে, রেষ্টুরেন্টে খাবার সামনে নিয়ে সেলফি। আর ক্যাপশনে লেখা, “পাঁচ জান্টুস অনেকদিন পর একসাথে চিল। বিদ্রঃ জানি পোষ্টটা দেখে একজন জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে, নিজের মোবাইল ভেঙ্গে ফেলবে।” সাথে ভেঙ্গচানোর ইমুজি দেওয়া। ক্যাপশন পড়ার সাথে সাথে দেখি, নিজের অজান্তেই আছাড় দিয়ে মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলেছি।
গল্পের বিষয়:
গল্প