ফয়সল মুকিতকে একটা খোঁচা দিয়ে বলল, ‘কী মামাতো ভাই, নতুন মোবাইল নিয়ে কোনো লাভটাভ হল?
মুকিত জানত ফয়সল এই কথা বলবে। তবু সে জানতে চাইল, কী লাভ?’
‘মোবাইল থাকলি কত পদের লাভ! লাভের ইয়ত্তা আছে? লাভ! লাভ! লাভ!’
‘হয়, তুই কইস তোর কতা!’
‘তোর কথা না, সত্যি কথা। আমি তোর আগে মোবাইল নিচি- আমি জানি কী লাভ!’
‘তুই আমার আগে মোবাইল নিচিস তা কী হইচে? যার লাভ হয়, তার মোবাইল থাকলিও হয়, না থাকলিও হয়। তোর যে লাভ হয়, সে কি মোবাইল নেয়ার পরে? মোবাইল নেয়ার আগে দিয়েই তোর লাভ! তুই শালা ভগবান রজনীশ।’
‘হইচে, আর টাইনে বাড়াইস না, মানষি শুনলি কবে কী?’
কিন্তু মানুষ শুনবে কোত্থেকে? এই বয়সের ছেলেরা পরস্পর যেসব কথা বলে, তা বলার সময় ভাবে, সারা দুনিয়াদারি তাদের কথা শোনার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। কিন্তু এখনকার কথা কারও শোনার সুযোগ নেই। রাস্তা থেকে অনেকখানিক আঙিনা ছেড়ে এসে মুকিতদের দালান। সামনের দিকে টানা বারান্দার দুই পাশে দুটো ঘর, মাঝখানে তিনটে। বারান্দার বাঁ কোনার ঘরটায় মুকিত থাকে। ভিতরের ঘরগুলোর সঙ্গে এখানে যোগাযোগ একমাত্র মুকিতের পাশের ঘর থেকে অন্য ঘরে গেলে। সেটা বসার ঘর। তারপর একে একে পাশের ঘরগুলো। সেখানে মুকিতের ছোট ভাই আর বোন থাকে। যার পরের ঘরে বাপ-মা। এরপর পিছনের বারান্দা। তারপর উঠোন-পুকুর ইত্যাদি। সে তুলনায় ফয়সলদের দোতলা বাড়িটা প্রায় রাস্তার ওপর। মুকিতদের বাড়ি থেকে বড়োজোর শ’দুয়েক গজ উত্তরে এগোলে। মাঝখানের সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতে হয়। নিচের ডান পাশের অংশ ভাড়া দেয়া। বামের অংশের দুই রুমের একটাতে ফয়সল থাকে। অন্যটায় থাকে ফয়সলের বড় ভাই ফারুক। বোনেরা উপরের তলায়, বাপ-মার সঙ্গে। ফয়সলের বড় বোন কিটি, আর ছোট এলা। এই বাড়ির ফয়সলের রুমে বসে এই কথা বললে, অন্য কেউ শোনার হয়তো সুযোগ থাকত। রাস্তার পাশেই। সামনের রুম। হঠাৎ হঠাৎ কেউ না কেউ আসে। অন্তত এলা আসে যে কোনো সময়। ছোটদা অন্তপ্রাণ। আসতে পারত সামনের বাড়ির যে কোনো মেয়ে, এলার বান্ধবী; যেমন আফরোজা কি আসমানি।
কিন্তু মুকিতের ঘরে কেউ আসবে না। এমনকি মুকিতের সঙ্গে তার বোন শুভ্রারও এক প্রকার দূরত্ব আছে, যা ফয়সল এলার সঙ্গে তুলনা করলে বুঝতে পারে। আর মামাতো ভাই ডাকটা এক প্রকার ডাকার জন্য ডাকা। দূর থেকে একটা সম্পর্ক আছে। ফয়সলদের মামাবাড়ি মুকিতদের গ্রামে। সেই সূত্রে মুকিতের বাবা ফয়সলের মামা, মুকিত মামাতো ভাই। মুকিতও কালেভদ্রে ফয়সলকে ডাকে ফুফাতো ভাই। এসব আসলে সহপাঠী হিসেবে শুধুই ইয়ার্কি!
ফয়সলের শেষ কথায় মুকিতই বরং একটা লজ্জা পেল। এটা স্বাভাবিক। মেয়ে নিয়ে কোনো কথা হলেই মুকিত লজ্জা পায়। ফয়সল মুকিতের লজ্জা পাওয়া মুখখানা দেখলে খুশি হয়, জানে, এই লজ্জার ভিতরেই ধীরে ধীরে মুকিতকে উসকে তোলা যাবে। আর এদিকে মুকিত লজ্জা পেলেও, ফয়সলের ওপর তার খোঁজ খবর নেবে, জানতে চাবে নতুন কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে কিনা। দেখা হয়েছে কিনা। যদিও দেখা হওয়ার বিষয়টা মুকিত জানবেই। ফয়সল তখন তাকে সঙ্গে করে নিয়ে সেই পাড়ায় যাবে। আর একান্ত অনুগত গার্ডের দায়িত্ব পালন করবে এই মুকিত। কিন্তু মুকিত নিজে কিছুই পারে না। সে ফয়সলের সঙ্গে কোনো পাড়া ঘুরে, এই রকম টহল দিয়ে, অথবা কোনো দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ নিরিখ করেই খুশি। তখন ফয়সল গিয়েছে অভিসারে। মুকিতকে বলে গেছে এই গলি দিয়ে পরিচিত কেউ আসলে কী করতে হবে। মুকিত তাই করে।
কিন্তু তাতে মুকিতের অভিজ্ঞতা হয় ঠিকই, কিন্তু সাহস হয় না। সে আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে পারেনি, তাকে তার ভালো লাগে। এমনকি ভালো লাগালাগি বাদই থাক, ফয়সল যেমন হঠাৎ কাউকে একটা কথার ইঙ্গিত দিতে পারে, তাও পারে না সে।
এই যেমন, কয়েক মাস আগে সন্ধ্যার মুখে পিটিআই রোডে ইভার ছোট বোন ইতুকে দে খেই বলল, ‘ও ইতু আছো ভালো?’ ইতু ক্লাস সেভেনে পড়ে, ইভা টেনে। ফয়সলের এই কথায় ইতু বেশ জড়োসড়ো। প্রাইভেট পড়ে ফিরছে। সে মাথা নিচু করে রাস্তার উল্টো পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। ফয়সলের কথায় কোনো উত্তর দেয় না। আর ফয়সল তখন বলে, ‘তোমার আপারে এট্টু কইয়ো, আমি তার ভালো পাই।’
ইতু একবার ঘাড় তুলে ফয়সলকে দেখল, তার বড় বোন বলা এই কথায় তার ফর্সা মুখখানা লাল। ফয়সল যেমন উল্টো দিকে হেঁটে যাচ্ছিল, সেভাবেই হেঁটে গেল। সঙ্গে যে মুকিত- বিষয়টা তার এই মুহূর্তে মাথায় নেই, যেন সারাটা রাস্তায় সে আর ইভা। ইভাকে একটা কথা জানানো দরকার তাই সে জানাল। তাতে মুকিত আবারও অবাক। সে ফয়সলকে বলল, ‘এই কথা ক’লি কী কইরে?’
ফয়সল জানাল, ‘কইচি তার হইচে কী। পেয়ার মহব্বতের কথা। ওই যাইয়ে ইভারে কবে। ইভা জানবে- ফয়সল তারে ভালোবাসে।’
‘যদি অন্য মানষিরে কইয়ে দে?’
‘ওরে না, কেউরে কবে না।’
‘তাই নাকি?’
‘হয়, ক’লিই বা কী? ওর বড়ভাই আমারে ঠেঙাবে? মাখা খারাপ! ঠেঙালি ওর ছোট ভাইডারে ঠেঙাব। কয়দিন বাদে ইতুরেও কব- আমি তোমারে ভালো পাই-‘
‘তুই পারিসও।’
‘পারতি হয় মামাতো ভাই, ছয় জায়গায় নয় জায়গায় না ক’লি হয়? তোমার মতো আমার কোনো দিল দিওয়ানা ব্যাপার নেই।’
মুকিত তাকিয়ে থাকে, ‘আমার কোনো ব্যাপারই নেই।’
‘হবে হবে। দেইখে যা। একবার এক জায়গায় হইয়ে গেলিই পারবি- কিন্তু মেলা জায়গায় ট্রাই করতি কোনো সমস্যা আছে?’
মুকিত ফয়সালের মুখের দিকে একটু অবাক তাকিয়ে থাকে। তাতে কোনো বিস্ময় অবশ্য নেই। ছোটবেলা থেকে চেনে ফয়সলকে। একসঙ্গে স্কুল, একসঙ্গে এই কলেজ জীবন। ইন্টারমিডিয়েটের পরও একই সঙ্গে কলেজে যায়। হরিহর আত্মা তাদের বলা যায় না, আবার দিনের নির্দিষ্ট সময় তারা একসঙ্গে থাকে। সেই দিক থেকে প্রায় মানিকজোড়, কিন্তু ভিতরের কাজের আচরণে একেবারে ওস্তাদ-সাগরেদ। ফয়সল যা করার করে, মুকিত শুধু সঙ্গী। স্কুল জীবনেও প্রায় তাই ছিল। বাকি সহপাঠীরা অথবা পাড়ার সমবয়সীরা যখন খেলার মাঠে, ফয়সলের সঙ্গে মুকিত তখন পাড়া বেড়ানিতে। এই অভ্যাস তাদের একদিন দু’দিনের নয়। আগে সাইকেলে পাড়ায় পাড়ায় টহল দিত, এখন দেয় হেঁটে। আবার কখনও কখনও ফয়সলের কারণেই, কোথাও যায় না। আড্ডা দেয় মুকিত অথবা ফয়সল- যে কোনো একজনের রুমে।
সেখান থেকে কোনো দিন সন্ধ্যা রাতে, অথবা আরও একটু পরে ফয়সলের কোনো মিশন থাকলে মুকিত সঙ্গে যায়। যেমন, কয়েকদিন আগে আমলাপাড়ার এক বাড়ির দেয়াল বেয়ে উঠেছিল ফয়সল। মুকিত সেই দেয়ালের গলির মুখে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল, কেউ দেখে কিনা। দেয়াল বেয়ে একেবারে কোনায় পৌঁছলে মমির রুম। মমিকে ওই দেয়ালের ওপর উঠে ফয়সল শুধু ‘হাই’ বলবে; এইটুকু বলতে মুকিতকে দাঁড় করিয়ে রেখে গেছে। যাওয়ার আগে মুকিত বলেছিল, ‘ফয়সল, এই রাত্তির বেলা অন্য বাড়ির দেয়ালের উপর ওঠা কি ঠিক হবে?’
ফয়সল বলেছিল, ঠিক বেঠিক কী? এইটুকু করলেই মমি বুঝতে পারবে- আই লাভ হার! আমার এই ক্রেজ!’
‘মমির বাপ দেখলি?’
‘আরে দেখপে না। আর তুই তো এই জায়গায় আছিস, কেউ আসলিই শিস দিবি। আর নয় গান গাবি- কী জানি গানডা?’
‘আমার ওসব গান মনে আসে না। তয় মমির ছোট কাকারে দেখলি কিন্তু পইড়ে দৌড় দেবানে-‘
‘সে আসপে নানে। সে এখন ক্লাবে তাস খেলতিচে।’
‘তোরে কইয়ে খেলতি বইচে তো, এহোন আসপে নানে-।’
মুকিতের ভয় করে। ফয়সল অকুতোভয়। আবার, ফয়সল আছে তাই মুকিতকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গলির এদিকে যায়, ওদিকে যায়। ফয়সল দুটো সিগারেট কিনে দিয়ে গেছে। বলেছে একটা খেতে, বাকিটা ফয়সল ফিরে আসলে খাবে। সেই সিগারেটটা একটু অন্ধকারে যেয়ে টানে। আবার হাতের মুঠে নিয়ে গলিতেও আসে। কেউ যেন না দেখে এমনভাবে টেনে ধোঁয়া ছাড়ে। পেচ্ছাপ করার ভঙ্গিতে বসে গলিতে ঢোকা মানুষজন নিরিখ করে। মমিদের বাড়ির কেউ আসলেই বসে থাকবে। সে গেট দিয়ে ঢোকার পরে এক দৌড়ে চলে যাবে ওই দেয়ালের কোনায়, তারপর শিস দেবে। তখন ফয়সল ফিরে আসবে।
কিন্তু এতকিছু করার আগেই ঘটনা উল্টে যায়। সেই দেয়ালের উপরে কিছু দূর যেতেই ফয়সল পা ফসকে পড়ে। যদিও একেবারে নিচে পড়েনি, কোনোমতে দেয়াল ধরে উল্টো পাশের ডোবামতন পুকুরে পড়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু যেভাবে পড়েছে, তাতে বেশ শব্দ হয়েছে। মুকিত তখন সরে সিগারেটটা ধরিয়ে একবার টহল দিয়েছে। সেটা ফেলে ছুটে যায়। দেয়ালের এই কোনায় নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে। একবার একটু নিচু গলায় বলে, ‘ও ফুপোতো ভাই, সব ঠিক তো?’
কিসের কী ঠিক! ফয়সল পড়ামাত্র মমির বাবা টের পেয়েছে। সেই দিকের ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে জানতে চেয়েছে- কে? ফয়সল তখন কোনোমতে দেয়ালের উপরে উঠে, যতটা দ্রুত সম্ভব গলিতে লাফিয়ে নামে। মমির বাবা তখন গেটের কাছে। ফয়সল আর মুকিত দৌড়ে গলি ছেড়ে রাস্তায় আসতে আসতে জানতে চায়, ‘এই ছেলেরা দাঁড়াও, কোন বাড়ির ছেলে তোমরা? তোমাদের গার্জেনকে বলব। রাতের বেলা মানুষের বাড়ির দেয়ালে ওঠো।’
গলির মুখ পর্যন্ত আসতে আসতে ফয়সল বলে, ‘বাড়িতে মেয়েটেয়ে থাকলে এট্টু দেয়ালে উঠতিই হয়। নাকি?’ যদিও একথা মমির বাবা শোনেনি। এরপর ডান হাতটা ঝাঁকি দেয় শূন্যে। মুকিতকে বলে, ‘হাতে ভালোই লাগিছে।’
মুকিত বলে, ‘লাগবেই। এই রাত্তিরে উঠিছিস্। কয়দিন আগে বৃষ্টি হইচে।’
‘কাইল মমিরে ক’ব টাকা দেও। তোমার সাতে দেখা করতি যাইয়ে হাত ছালিচে। হাতে ব্যথা পাইচি। ওষুধ খাতি হবে। পয়সা ছাড়ো-‘
‘হয় দেবেহানে! দেয়ার জন্যি বইসে রইছে!’
‘ও দেবে না, ওর বাপ দেবে!’
‘ওর বাপ-কাকারা তোমারে পালি সাঙ্গড় ভাইঙ্গে দেবে!’
পয়সা মমি দিক বা নাই দিক, পরদিনে কলেজে ফয়সলের সঙ্গে মমি হেসে কথা কয়। মুকিত তাদের একটু পাশে পাশে হাঁটে। মমি জেনে গেছে, ওই রাতে ফয়সল গিয়েছিল ওই দেয়ালের উপর। জানে না যে, মুকিতও সঙ্গে ছিল। একটু মুখচোরা প্রকৃতি মুকিত ওদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে এই সব শোনে। আর একটু পরে দেখে, ফয়সল মমির কাছ থেকে একশ’ টাকাও আদায় করে ছাড়ল এই বলে, ‘তোমারে দেখতে যেয়ে আমার এই অবস্থা, এখোন ওষুধ খাওয়ার টাকা দেও।’
‘টাকা দিলে খাবা তো সেই সিগারেট।’
‘যা-ই খাই, সিগারেটে ভিটামিন আছে।’
‘হয়। আর ভিটামিন খাইয়ে না। মাইরেও ভিটামিন আছে। কাকা দেকলি দেত মাইর।’ বলতে বলতে মমি একশ’ টাকা বের করে দেয়, ‘এর চেয়ে অ্যাট্টা মোবাইল কিনলি পারো? পয়সার অভাব?’
‘ওয়া কেমনে চালায়!’
‘ঢঙ। কেনো, নিজেই শিখে যাবা। এসএমএস পাঠাবা। মিস্ড কল দেবা। কখনো কখনো কল করবা।’
‘এক কল তিন টাকা। তালি আর সিগারেট খাতি হবে না।’
‘আগে কেন, মানি ইজ নো প্রব্-
এর এক সপ্তাহের ভিতরেই ফয়সল মোবাইল কেনে। কোনো এক কাজে গ্রামের বাড়ি যায়, কিছু নারকেল সুপারি লুকিয়ে বিক্রি করে আর তার মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নেয়। কিন্তু যে মমির কারণে এত কিছু সেই মমির সঙ্গেই তার কিছু দিন পরে আর কোনো যোগাযোগ রাখে না। ফয়সল তখন অন্য ডালে।
মুকিত এই নিয়ে একদিন জানতে চায়, ‘মমির জন্যি মোবাইল কিনলি, আর তার সাতেই এহোন তোর কোনো যোগাযোগ নেই।’
‘দরকার নেই মামাতো ভাই-‘
‘একদিন গেইলাম খুলনায়, ক্যাসেল সালামে- একবারই তো আর কত, ওই ঘ্যানঘ্যান টানার মদ্যি আমি নেই।’
‘কী, কেস ফিনিশ?’
‘অত কতা জানতি চাও কেন? তোরে নিয়ে আর পারলাম না। বড় মাছ এট্টু বড় নদীতে না যাইয়ে ধরলি হয়? এই জন্যি ক্যাসেল সালামে গেছি-‘
হোটেল ক্যাসেল সালাম- মুকিত ফয়সলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই বলে মোবাইল কিনতে টাকা-পয়সা শেষ। এই মায়ের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে বলে, এই আবার মমিকে নিয়ে ক্যাসেল সালাম! হতে পারে। ফয়সলের বাবা বড় নেতা, ফার্স্ট ক্লাস কন্ট্রাক্টর; মুকিতের বাবারও ব্যবসাপাতি ভালোই। কিন্তু ফয়সল যে কী দিয়ে কী করে? এই সব সময়ে, প্রায়শ মুকিত ফ্যালফ্যাল করে ফয়সলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখনও তাই থাকল।
তখন ফয়সল বলল, ‘শোনো মামাতো ভাই, মডার্ন যুগ, এনজয় ইওরসেল্ফ। জীবনটা অনেক বড়। এই তো জীবন শুরু। মডার্ন টেকনোলজির সঙ্গে থাকো। একটা মোবাইল কেনো, শালা। এতবার কই!’
মুকিত সেই একই কথা বলে, ‘মোবাইল কিনলি কী হবে?’
‘কী হবে তো দেকতিই পাচ্ছ। মোবাইলে এসএমএস, আমি দুইদিনের জন্য খুলনায় যাচ্ছি। আমিও লিখলাম, আমিও থাকব। তারপর একদিন থাকলাম ডিলাক্সে, কিন্তু ভাব মারলাম আছি ক্যাসেল সালামে। এক ফাঁকে দেখা হল, এট্টু ঘুরলাম, নিউ মার্কেট নিয়ে গেলাম। গিফ্ট দেলাম। পরদিন এক সময় ক্যাসেল সালামে আসতি ক’লাম। আসল দুপুরের পর পর। আর কী শুনতি চাও? কেল্লা ফতে! তোমার মতো কোনো দিল-দিবানা কেস নেই। ধরো তক্তা মারো পেরেক।’
মুকিত ফ্যালফ্যাল করে ফয়সলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এ কোন ফয়সল? এই ফয়সলকে আগে দেখেনি সে। কতদিন ধরে ফয়সলকে সে চেনে। তার সঙ্গে সাইকেলে গিয়েছে শহরের এ-মাথা ও-মাথা। হেঁটে বেড়িয়েছে শহরের এ-গলি ও-গলি, এ-রাস্তা সে-রাস্তা। আর একের পর এক মেয়েকে ফয়সলের পছন্দ হওয়ার কথা শুনেছে। সঙ্গে ওদের সামনের বাড়ির আফরোজা আপার সঙ্গে কোনো কাণ্ডকীর্তির কথা বলেছে। আফরোজার বিয়ে হয়ে গেলে একই সম্পর্ক সে চালিয়ে গেছে আসমানির সঙ্গে। কিন্তু তাও তো কালেভদ্রে। প্রায় লুকিয়ে-চুরিয়ে। বাড়িতে ফয়সলের বড়ো বোন কিটি আছে। আছে ছোটো বোন এলা। যদিও কিটি নিচে প্রায় আসেই না, একমাত্র বিকেলে এলার সঙ্গে সামনের রাস্তায় তাকে হাঁটতে দেখা যায়। তার বর ইউএসএ-তে থাকে। দুলাভাই এবার এসে কিটি আপাকে স্টেটস-এ নিয়ে যাবে। এ কথা ফয়সলের কাছে শোনে, আবার মুকিত ওদের বাসায় গেলে এলাও বলে। এর ভিতরে আসমানিকে কখনও কোনো সুযোগে আর তেমন সে পায়। কিন্তু পাক বা নাই পাক, কালেভদ্রে যদি দেখা হয়, তাও হতে পারে। তখন ফারুক ভাই যদি না থাকে, সাইটে যায়। এত কিছুর ভিতরে ফয়সলের কোনো নির্দিষ্ট মেয়ের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ নেই। যে জন্যে হয়তো সে মুকিতকে বলে, ‘তোর মতন কোনো দিল-দিওয়ানা কেস আমার নেই। ওসব বাদ দে, অ্যাট্টা মোবাইল কেন।’
মুকিত বলে, ‘দিল-দিওয়ানা?’ এ কথার অর্থ মুকিত বোঝে, কিন্তু কেন ফয়সল তাকে বারবার এই কথায় বলে?
‘দিল-দিওয়ানাই তো! সেই কবে রেল রোডে লাকির প্রেমে পড়িলি, সেই চিন্তা কইরে কাটাইয়ে দিলি সারাডা জীবন!’
মুকিত হাসে। সে নিজেই তো সে কথা ভুলে যায়। লাকিরা শহর ছেড়ে গেছে আজ কতদিন। ফয়সলের ওইসব এখনও মনে আছে। অথচ দেখে মুকিতেরই মনে থাকে না। আসলে বিষয়টা কখনোই মুকিতের কাছে অমন কিছু ছিল না। লাকিকে ভালো লেগেছিল, ব্যস। ফয়সলের মতো করে ভাবেনি। এখনও খুব চেষ্টা করলে লাকির মুখখানাই ভেবে নিতে পারে। এর বেশি কিছু না। তাছাড়া সে বিষয়টা গড়িয়েছিল ফয়সলেরই কারণে। ফয়সল তখন রেল রোডের কাছে আলিয়া মাদ্রাসা রোডের শেষ দিকে, প্রায় খাদ্বারের কাছে নীলার সঙ্গে দেখা করতে যেত। সে দেখাও একটু রাস্তায় হাঁটা, ফাঁকে যদি একবার কোনোক্রমে দেখা হয়ে যায়। আর খাদ্বারের ছেলেরা সেটা বুঝতে পারলে তাদের দুজনের পায়ের গোড়ালি ছুটিয়ে দিত, তাও তাদের জানা ছিল। এই সময় ওই আলিয়া মাদ্রাসা রোড থেকে রেল রোড হয়ে ফেরার পথে লাকির সঙ্গে দেখা হলে বলেছিল, ‘মুকিত ভাই, শুভ্রারে বলবেন, আমি কালকে স্কুলে যাব না। আমার নানা অসুস্থ, কালকে আমরা সবাই পিরোজপুর যাব!’ এই পর্যন্ত। তার পর থেকেই মুকিতের কানের কাছে ফয়সলের ঘ্যানর ঘ্যান, ‘মামাতো ভাই, হইয়ে গেইচে। লাকি তোমারে ভালো পায়।’
মুকিত বলত, ‘ধুস, ফাও কতা কইসনে। শুভ্রার সাথে পড়ে, এর মধ্যি আবার ভালো পাওয়া খারাপ পাওয়া কী?’ মনে মনে ভাবে, কোথায় শিখেছে ফয়সল এই ‘ভালো পায়’ কথাটা!
ফয়সল বলত, ‘বুঝি বুঝি, চোখ দেখলি সব বুঝি, আমারে তুমি কাঁচা মানুষ পাইচো?’
তা ফয়সল আচ্ছা সেয়ানা। কাঁচা তাকে মুকিত ভাবতে যাবে কোন দুঃখে। একেবারে ওস্তাদ মানে। কতবার কথায় কথায় বলেছে, ‘তুই অ্যাট্টা রোনালদো! খালি গোল দিস আর গোল দিস। ব্রাজিলে রোনালদো আর বাংলাদেশে ফয়সল, সর্বোচ্চ গোলদাতা!’
‘সাব্বাস! এই না হ’লি মামাতো ভাই! দোস্ত, একেবারে জব্বর একজামপল্-‘
মুকিত ফয়সলের মুখ দেখে। তাকিয়ে থাকে। আর তখন ফয়সল তাকে বলে, ‘অ্যাট্টা মোবাইল কেন, তুইও গোল দিবি। আইজকাল আর দেয়ালের উপর উঠে কিছু হয় না!’
‘কেনব।’
‘আমার মামার তো পয়সার অভাব নেই। তোর মতো ছ’লরে অ্যাট্টা মোবাইল কিনে দিতি সমস্যা কী?’
মুকিত জানে, এমনিতেও মোবাইল তাকে একটা কিনতে হবে। কিনবেও।
২.
কিন্তু ফয়সল যে জন্যে মুকিতকে মোবাইল কিনতে বলেছে, সে বিষয়ে মুকিতের ভীরুতা বা জড়তা কোনোটাই কাটেনি, কাটবেও না। মুকিত জানে। কলেজে পরিচিত মেয়েদের অনেকের মোবাইল আছে, বেশিরভাগই ব্যাগে রাখে, ক্লাস চলাকালীন সুইচ অফ করে রাখে, আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া-প্রতিবেশীতে পরিচিত মেয়েদেরও কারও মোবাইল আছে, কিন্তু তাদের নাম্বার চাওয়ার সাহসও সব সময় মুকিতের হয় না। অথচ ফয়সল- তোমার মোবাইলে এই অ্যাপ্লিকেশন আছে, ওইটা আছে; দেও, কল ব্লক করার সিস্টেম বলে দি, ওমুক মোড তমুক মোড, ওমুক অপশন তমুক অপশন সবই ফটাফট বলতে থাকে। মেয়েদের কাছ থেকে মোবাইল নেয়, ঠিকঠাক করে দেয়, তার নাম্বারে একটা কল করে নম্বরটা সেভও করে নেয়। কেননা, মেয়েরা অনেক সময় ভুল নাম্বার বলে। এইসব ফয়সলের সঙ্গে থেকে থেকে মুকিত দেখে আর অবাক হয়। এই যে কায়দা-কৌশল, এসব মুকিত যে জানে না, তাও না। অথচ সে কোনো মেয়ের কাছে থেকে মোবাইল নিয়ে কখনোই ওসব করতে পারেনি। কারু নাম্বার নিয়ে মিস্ড কলও দেয়া হয় না। এমনকি যে মেয়েদের নাম্বার তার ফোনে আছে তাদের কাউকে কখনও প্রয়োজন ছাড়া ফোনও করেনি, মিস্ড কল দেয়া দূরে থাক। মুকিত ভাবে, সে জানে না, প্রয়োজন ছাড়া ফোন করে সে কী বলবে। ফয়সলকে বলে, সে জানে না, কী বলতে হয়!
এই মুকিত একদিন সহপাঠী শিলার ফোন নাম্বার নিজের ডায়াল লিস্টে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ভাবে- করবে নাকি একটা ফোন? কিন্তু তা করার মতো সাহস সে সঞ্চয় করতে পারে না, অথবা কেন করবে- সেই যুক্তিও খুঁজে পায় না। তবু কল করার সাহস না-পেয়ে মুকিত মিস্ড কল দেয়। কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। মুকিত জানে, মেয়েটির কাছে তার ফোন নাম্বার সেভ করা আছে। মুকিত বিব্রত হয়। আর মিস্ড কল দেয়ও না। অনেকক্ষণ পরে, যুক্তি উল্টে অনেক খানিক সাহস সঞ্চয় করে সে কলই দেয়।
মুকিতের ফোনে শিলার কণ্ঠস্বর, হ্যাঁ, মুকিত। মিস্ড কল দিয়েছিলে, আমার ফোনে ব্যালান্স ছিল না। বলো, কেমন আছো?’
মুকিত কোনোমতে বলে, ‘ভালো।’ বলে কথা হাতড়ায়, তারপর কোনোমতে বলে, ‘তুমি কেমন আছো?’
শিলা বলে, ‘ভালো। তা বলো, কেন ফোন করেছিলে?’
এবার মুকিত আর কোনো কথা খুঁজে পায় না। কেন ফোন করেছিল, সত্যি, সে জানে না। আবার শিলাকে তো সে ফোন করতে চেয়েছে, তাকেই ফোন করেছে, সে ফোন রিসিভও করেছে, কিন্তু কেন ফোন করেছে, মুকিত জানে না। আসলে, সে তো শিলার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল, তাই ফোন করেছে। কিন্তু, কী বলবে? অথচ ফয়সল হলে এতক্ষণে কত কথা বলে ফেলত। তার কিছুই সে বলতে পারছে না। ফয়সল বলত, তোমায় মনে পড়েছে, তাই ফোন করলাম। কোনো সমস্যা? জানো তো, তোমাকে আমার মনে পড়তেই পারে, সব সময় ফোন দেয়াও যায় না, তাই কখনও কখনও মিস্ড কল দিতে ইচ্ছে করে, যখনই তোমাকে মনে পড়ে। এখন থেকে মাঝেমধ্যে মিস্ড কল দেব, তুমি কিছু মনে করতে পারবে না। এসব কথা এক একজনকে ফয়সল কতভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কতবার বলেছে। ফয়সল পারেও। মুকিত পারে না। মুকিত জানে, শিলাকে বলতে পারল না কেন ফোন করেছে। তাই ফোন রাখতে রাখতে বলল, ‘এমনি, না মানে আসলে একটা কথা ছিল, পরে বলব কেন ফোন করেছিলাম।’
ফোন রাখার পরে ফয়সল বলল, ‘কী, কথা চালাতি পারলি না?’
মুকিত মাথা নাড়ল। একটু অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকল ফয়সলের মুখের দিকে। ফয়সল মুকিতের পিঠে ছোট্ট চাপড় দিতে দিতে অভয় দিল, ‘হবে, মামাতো ভাই হবে। কচুগাছ কাটতি কাটতি মানুষ ডাকাইত হয়। তুইও পারবি একদিন শিলার মনের ঘরে ডাকাতি করতি-‘
‘ধুস! এইসব আমাদের দিয়ে হবে না-‘
‘আরে হইয়ে গেইচে। আজ এক লাইন বললি- শিলা কি বুঝিনি যে তুই তারে কিছু একটা বলতে চাস। আমি হলে অবশ্য আজকেই কথা জমাইয়ে ফেলতাম। বিকালে কি কাল কলেজ টাইমে ষাটগম্বুজ যাতি কতাম, প্রথম প্রথম গাঁইগুঁই করত, তার দেখতি দুই দিনেই সাইজ!’
মুকিত আরও অসহায়। ফয়সলকে তার চেয়ে ভালো আর কে জানে! মুকিত জানে, ফয়সল একটুও বাড়িয়ে বলেনি। দুই দিনে কি তিন দিনে না হোক, ফয়সলের সঙ্গে দেখা করতে সপ্তাহখানেকের মাথায় শিলা ঠিকই ষাটগম্বুজ যেত। অথবা দড়াটানা ব্রিজ!
মুকিত আরও যেন অসহায়। ভিতরে ভিতরে আরও ক্ষয়ে যাওয়া, আরও ভ্যাবাচেকা, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তার জন্যে ফয়সলের সাগরেদ হয়ে থাকাই উচিত। ফয়সল যতই বলুক, এইসব হবে না তাকে দিয়ে।
এ সময়ে ফয়সলের রুমে এলা আসে। এলা ফয়সলের মতোই সপ্রতিভ। কলেজে ওঠার পরে মুকিতের সামনে এলার জড়তা আরও কমেছে। ফয়সল এলা ঘরে ঢোকামাত্রই বলে, ‘এই যে আইচে প্রিয়াংকা চোপড়া- দেখিচিস মুকিত, চুল কাটিচে কীভাবে?’
‘চুল কাটিচি তা হইচে কী? মুকিত ভাই, কন আমারে খারাপ দেখায়?’ বলেই এলা চুলের সামনের দিকে হাত চালায়, ‘বুঝলেন মুকিত ভাই, দাদা কোনো দিনও আমার ভালো দেখতি পারে না।’
‘হয়, হইচে।’ ফয়সল বলে, ‘তুই এহোন যা, আমাগো জরুরি আলোচনায় বাম হাত দিস না।’
‘আমার তো খাইয়ে কাজ নেই, তোমাগো আলোচনায় বাম হাত দেব। আমার বাম হাতেরও দাম আছে। তোমাগো ওই ফাও আলোচনা শোনে কেডা? কোন মেয়েরে মিস কল দিচো, কার সাতে কথা কইচো- এইয়ে শুইনে আমার লাভটা কী?’
‘তুই গেলি-‘ ফয়সল এলাকে কপট ধমক লাগায়।
এলা বলে, ‘যাই। মুকিত ভাইর সাতে আমার কথা আছে। শেষ করি। এক মিনিট।’
‘কর। আমি বাইরে যাব? জরুরি আলোচনা?’
‘ফাও কতা কইয়ে না।’ মুকিতকে বলে, ‘মুকিত ভাই, আপনি নাকি মোবাইল নিচেন, শুভ্রা ক’ল। নাম্বার দেলেন না তো, দাদার কাছদে নিলি নিতি পারতাম, কিন্তু আপনিও তো আমারে দিতি পারতেন। দেন আপনার নাম্বার!’
এই মুহূর্তে মুকিত একটু জড়তা কাটাল। অথবা ফয়সল আর এলার আচরণ তাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। ভাইবোন কত ফ্রি! শুভ্রা তার সামনে প্রায় কথাই বলে না। মুকিত বলল, ‘তোমার নাম্বার বলো, আমি মিস্ড কল দি-
ফয়সল বলে, ‘আমি দেবানে তোরে ওর নাম্বার।’
এলা বলে, ‘না আমি দেব। আমি দিলি কী হয়? আমার মুকিত ভাইর সাথে কতা আছে, শুভ্রার সাথে কতা আছে। এর মধ্যি তুমি কেডা? না কী কন মুকিত ভাই?’
মুকিত এলার নাম্বার তোলে। তারপর মিস্ড কল দেয়। জানতে চায়, ‘তোমার ফোন কই?’
‘আছে উপরে। আমার রুমে। আমি সেভ করে নেব। এখন যাই-‘ ফয়সলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘করো তোমাগে জরুরি আলোচনা।’ যেতে যেতে এলা মুকিতের দিকে তাকিয়ে একবার চুলে হাত চালায়।
৩.
পরদিন দুপুরের আগে মুকিতের কাছে এলার ফোন, ‘মুকিত ভাই, আপনি কোথায়?’
‘বাসায়; কেন?’
‘এমনি, ঘুমোচ্চেন?’
‘না শুয়ে আছি-‘
‘শুয়ে আছেন? কোনো মিশন নেই?’
মুকিত উত্তর দেয়ার আগে এলা আরও জানতে চায়, ‘শুভ্রা কোথায়?’
‘কেন? ও তো কোচিং ক্লাসে গেল।’
‘এমনি; ওর টেনের ম্যাথ বইটা এট্টু লাগত-‘
‘তুমি কলেজে যাওনি?’
‘না। আপনি যাননি কেন?’
‘আমাগো আইজকে ক্লাস নেই।’
‘দাদা যে গেল-‘
‘ওগো ডিপার্টমেন্টে আইজকে নবীনবরণ!’
‘তালি তো ওর আইজকে ঈদ! আপনাগো ডিপার্টমেন্টে কবে?’
‘ডেট হইনি।’
‘আহা! ঠিক আছে আমি আসতিচি-।’ এলা ফোন কেটে দেয়। এদিকে মুকিত অসহায় বোধ করে!
একটু পরে এলা আসে। আসার আগে মুকিত শোয়া থেকে উঠে একবার টেবিলের সামনের চেয়ারে বসেছে, কিছুক্ষণ পায়চারি করেছে। জানলা দিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় দেখেছে। বুঝে পায় না, শুভ্রা নেই- জানার পরেও এলা কেন আসছে! কী বলবে? মুকিতের রুমের দরজা দিয়ে ঢুকেই এলা বলে, ‘কী? নাম্বার নেলেন, একদিন কলও দেলেন না, মিস্ড কলও দেলেন না! আপনি লোকটা কেমন, মুকিত ভাই!’
‘এমনি। দেয়া হয়নি।’
‘শুধু দাদার সাতে এহানে-ওহানে টাংকি মারেন, আর বইসে বইসে দুইজনে কত পদের কথা আর কথা! দাদা আপনারে বুদ্ধি দেয় আর আপনি সেই বুদ্ধি খাটাতিও পারেন না, ওদিকে দাদার কাণ্ডকীর্তি দেখেন আর সাগরেদি করেন!’
মুকিত বিস্ময়ে এলার দিকে তাকায়, ‘তোমারে ক’ল কেডা?’
‘আমি জানি। এইরাম সাগরেদের কথায় কেউ গলবে নানে। এট্টু চোখ-কান খোলা রাখতি হয়!’
‘আসলে-‘
‘ওই জন্যি নিজেই চইলে আসলাম!’
বিস্মিত মুকিত এলার চোখে তাকায়। অস্ম্ফুট বলে, ‘হুঁ-‘
‘খুব তো আলোচনা করেন। এহোন দেখি আমারে সামনে পেয়ে গলাতি পারেন কিনা? আমার দাদা আপনারে কীরম কী শিখাইচে!’
সূত্র: সমকাল