রুহামদের বাসায় পাঁচটা পিঁপড়া থাকে। মা পিঁপড়া, তার দুই ছেলে আর দুই মেয়ে। বাচ্চা পিঁপড়ারা খুব লক্ষ্মী। সব সময় মায়ের কথা শোনে। এই যেমন মা পিঁপড়া বলে দিয়েছে, ‘রুহামকে কখনো কামড় দিয়ো না।’
ওরা মায়ের কথা শুনেছে। এক বছর ধরে ওরা রুহামদের বাসায় থাকছে, এক দিনও রুহামকে কামড় দেয়নি।
রুহামদের বাসায় আজকে বড় অনুষ্ঠান হলো। অনেক মেহমান এসেছিল। একটা কেক আনা হয়েছিল। রুহাম সেই কেক কাটল। রুহামের জন্মদিন ছিল যে!
পিঁপড়ারাও কেকের ভাগ পেল। মা পিঁপড়া পেট পুরে খেয়ে ঘুমাতে গেল। ওদিকে চার ভাইবোন পিঁপড়া বসে বসে গল্প করছিল। সবচেয়ে ছোট পিঁপড়া বোনটা বলল, ‘আমার মন খারাপ।’
বাকি তিন ভাইবোন একসঙ্গে বলে উঠল, ‘কেন, কেন?’
‘এই যে আমরা মোটে তিন-চার বছর বাঁচি!
ছোট ভাই পিঁপড়া বলল, ‘তাতে কী?’
‘আমরা তো চাইলেও দুই-তিনটার বেশি জন্মদিন পালন করতে পারব না।’
বড় বোন বলল, ‘আচ্ছা আমরা জন্মদিন পালন করি না কেন?’
জবাবটা কেউ দিতে পারল না। হঠাৎ সবার মন খারাপ হলো। মায়ের একটার বেশি জন্মদিন পালন করতে পারবে না।
সবাই ঠিক করল মায়ের জন্মদিন পালন করবে। তবে আগে থেকে মাকে কিছুই জানাবে না। চমকে দেবে।
পিঁপড়া মায়ের জন্মদিন ১১ মে। নানু পিঁপড়ার কাছ থেকে ওরা শুনেছিল।
মে মাস তো চলেই এল। সারা দিন চার ভাইবোন ফিসফিস করে। জন্মদিনে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা।
মে মাসের ১০ তারিখ এসে পড়ল। অনুষ্ঠান করার জন্য ড্রয়িংরুমের একটা কোনাকে বেছে নিল ওরা। এই ঘরে মা পিঁপড়া সাধারণত আসে না। তাই আগে থেকেই মায়ের চোখে পড়বে না। পিঁপড়া ভাইবোনেরা একেকজন একেক কাজে লেগে পড়ল।
বড় ভাই পিঁপড়া বাগানে গেল একটা ফুল আনতে। এত দূর থেকে কাঁধে করে একটা ফুল নিয়ে আসা তো সহজ কাজ না! কিন্তু মায়ের জন্য আনছে বলে তার একটুও কষ্ট লাগল না।
বড় বোন পিঁপড়া গেল রুহামের পড়ার ঘরে। পড়তে বসলেই রুহামের শুধু খিদে পায়। তাই রুহামের আম্মু ওর পড়ার টেবিলে সব সময় কিছু না কিছু খাবার রেখে দেয়। টেবিলের কাছাকাছি গিয়ে দেখল রুহাম পড়া ফেলে বিস্কুট খাচ্ছে। টেবিলের নিচে কার্পেটের ওপর একটা বিস্কুট পড়ে আছে। রুহাম এভাবে খাবার-দাবার গুছিয়ে খায় না বলে অন্য দিন পিঁপড়ারা বিরক্ত হতো। আজকে হলো না। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পিঁপড়া বড় বোন বিস্কুটটা নিয়ে রওনা হলো। আরেকটু হলে রুহামের পায়ের নিচে চাপা পড়ছিল!
রুহামের বাবা গতকাল বাজার থেকে স্ট্রবেরি এনেছিল। ছোট ভাই পিঁপড়াটা গেল রান্নাঘরে। গিয়ে দেখে ফ্লোরে এক টুকরো স্ট্রবেরি পড়ে আছে। সে ওই টুকরোটা নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে রওনা হলো।
জিনিস জোগাড় হয়ে গেছে। পিঁপড়া ছোট বোনটা এবার বসল কেক বানাতে। সব ভাইবোন মিলে ক্রিম দিয়ে জোড়া দেওয়া দুই বিস্কুট আলাদা করে ফেলল। তারপর ক্রিম লাগানো অংশটার ওপর বসাল স্ট্রবেরির কাটা টুকরো। ছোট বোন বলল, ‘এই নাও, হয়ে গেল জন্মদিনের কেক!’ কেক দেখে সবাই খুশি। আনন্দে হাততালি দিল।
আয়োজন শেষ করতে করতে দেখে রাত ১১টা বেজে গেছে। তার মানে মা ঘুমিয়ে গেছে।
রাত ১২টা বাজার একটু আগে সব ভাইবোন গেল মায়ের কাছে। গভীর ঘুম থেকে ডেকে তোলায় মা পিঁপড়া প্রথমে ঘাবড়ে গেল। চোখ কচলে বলল, ‘কী হয়েছে?’
বড় ছেলে মুখ হাসি হাসি করে বলল, ‘কিছু না।’
‘তাহলে এত রাতে ডাকতে এলি কেন?’
ছোট মেয়ে মায়ের হাত টেনে বলল, ‘চলো তো, মা।’
‘কোথায়?’
‘ড্রয়িংরুমে। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’
ড্রয়িংরুমে এসে মা তো অবাক। কেক! ফুল! জিজ্ঞেস করল, ‘এগুলো কী রে?’
বড় মেয়েটা কিছু বলবে বলে মুখ খুলতে যাচ্ছিল। অমনি রুহামদের বাসার দেয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং করে বেজে উঠল। মানে রাত ১২টা বেজে গেছে। সব ছেলেমেয়ে একসঙ্গে সুর করে গেয়ে উঠল:
‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ…হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ…হ্যাপি বার্থ ডে ডিয়ার মা…হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।’
মা পিঁপড়া ভ্যাবাচ্যাকা খেল। এটা দেখে ছোট ছেলে বলল, ‘মা, আজকে মে মাসের ১১ তারিখ! আজকে তোমার জন্মদিন।’
বড় ছেলে মায়ের হাতে ফুল তুলে দিল। মা ফুল হাতে নিল। সবাই মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘মা, তোমাকে ভালোবাসি।’
‘আমিও তোদের অনেক ভালোবাসি।’
সবাই দেখল মায়ের চোখ ভেজা। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। সব ছেলেমেয়ের চোখও ঝাপসা হয়ে আসছে।
তারপর সবাই মিলে গোল হয়ে বসল। কেক খেল। খেতে খেতে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করল। গল্প শেষ করে ছেলেমেয়েরা অনে-এ-এ-ক দিন পর ছোটবেলার মতো মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে গেল।