শুকনো পাতা

শুকনো পাতা
রুবেল তোর মোবাইলে এমবি আছে?’ আম্মার কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম। আম্মা হঠাৎ এমবির কথা জিজ্ঞেস করলো কেন? নিশ্চয়ই নানু বাসায় ইমুতে কল দিবে। একবার মোবাইল নিলে সারাদিন আর মোবাইল পাবনা। আমি পটাপট বললাম….
-নাহ এক এমবিও নাই আম্মা।
–সত্যিতো?
-নানার কসম পাক্কা।
–তোকে না বলছি আমার বাবার নামে কসম করবিনা।
-সরি মম!
–মম কি?
-আম্মাকে আদর করে মম বলা হয়।
আম্মা গালি দিয়ে চলে গেলো। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক এখন আর টের পাবেনা। গতকালই আব্বার পকেট থেকে টাকা চুরি করে মোবাইলে এমবি তুলছি, মারিয়ার সাথে কথা বলার জন্য। মারিয়াকে ভিডিও কল দিলাম, রিসিভ করতেই বললাম….
-আমার বাবুটা কি করে?
–বসে আছি বাবু তুমি?
-আমিও বসে আছি বাবু, খাইছো?
–তুমি খাইয়ে না দিলে খেয়েছি কখনো?
-ইসস সোনা বাবুই, হা করো!
–হাআআআ…
-এই যে দিলাম বিরিয়ানি!
–গাপুসগুপুস, উমমম বাবু তোমার বিরিয়ানি কি ট্যাশশশ। লাপ্পিউউ বাবু..!
সাথেসাথে রুমে আম্মা হাজির। আমি অমনি কল কেঁটে দিলাম। আম্মা কোমড়ে হাত দিয়ে অগ্নীচোখে তাকালো। আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। আম্মা কি কথা শুনলো নাকি? এত আস্তে আস্তে কথা বলি তাও কেমনে শুনলো। আম্মা বলল….
–তুই না বললি এমবি নাই, তাহলে ভিডিও কলে কার সাথে কথা বললি?
-কই ভিডিও কলে কথা বললাম?
–রোদেলাকে বলেছি তোর খেয়াল করতে। ও দরজার চিপা দিয়ে শুনছে তুই নাকি তোর বাবু নামের কোন ফ্রেন্ডের নামে কথা বলছিস!
উফফফ! আল্লাহ বাঁচাইছে। তারমানে আম্মা টের পায়নি। আর রোদেলা শুনেছে জন্যই বেঁচে গেছি। ছোট মানুষ তাই বাবুর মানে বোঝেনি। মারিয়া মেসেজ দিলো..’কুত্তা কল কাটলি কেন? আমায় ইগনোর করস। এখনি ফোন দে!’ আমি মেসেজ টাইপিং করতে যাব, আম্মা বলল….
-তুই যদি মোবাইল না দিস, এখনি আছাড় মেরে ভাঙব।
–কি আজব! মোবাইলের কি দোষ?
-তুই মিথ্যা কেন বললি?
–সরি।
-এখনি তোর মামার মোবাইলে ইমুতে ফোন দে, অনেকদিন কথা বলিনা।
–অল্প কথা বলবা, এমবি কম।
-আচ্ছা দে, ১০ মিনিট কথা বলব।
আমি মারিয়াকে মেসেজ দেওয়া চান্স পেলাম না। ওকে মিউট করে রাখলাম। মামার ইমুতে কল দিলাম। আম্মা ছো মেরে মোবাইল নিয়েই চলে গেলো। তারপর কথা বলা শুরু করলো। ১০ মিনিট হতেই আম্মাকে ইশারা করে ফিসফিসিয়ে বললাম….
-সময় শেষ মোবাইল দেও।
–আর ৫ মিনিট!
বলেই আম্মা রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়েই আগে দরজা বন্ধ করলো। লও ঠেলা, এ কেমন খেলা, এবার জমবে মেলা। আম্মা খাটের উপর বসে হেসে হেসে কথা বলছে আমার কলিজায় আঘাত লাগছে। আমার চুরি করা এমবি গুলো আজ শেষ করবে। রোদেলা আমায় টেনে ওর রুমে নিয়ে গেলো। উদ্দেশ্য লুডু খেলবে। কিন্তু আমার মন মোবাইলে, আমার এমবি গেলোরে। রোদেলা বলল….
–ভাইয়া গাপ্পুত গুপ্পুত করে কেমনে খায়?
-ওটা গাপুসগুপুস, গাপ্পুত গুপ্পুত না।
–কিভাবে খায় অমনে?
-হা করে।
–হা করে কিভাবে?
-মুখ চওড়া করে।
–চওড়া কি!
-তর নানি হারামি। এত কথা পেচাস কেন?
–কিইইইহ! নানি চওড়া?
-বইন মাফ চাই, তুই কথা পেঁচাইস না।
–কথা পেঁচায় কেমনে ভাইয়া?
-এইযে এভাবে কথায় কথায় ঘাউড়ামি করে।
–ঘাউড়ামি কি আবার? আমগো নানা?
-না, তর তালোই খাচ্চুন্নি।
–তালোই কাকে বলে?
কিছু বললাম না। রাগে শরীর জ্বলছে। এমনিতেই মা ফোন নিয়ে কথা বলছে। তার উপর এই কুটনির উল্টাপাল্টা কথা৷ হতচ্ছাড়ি এমন ঘাউড়ামি শিখলো কেমনে! চিন্তার বিষয়। আরো ২০ মিনিট পর আমি দরজার চিপা দিয়ে দেখলাম আম্মা কথা বলেই যাচ্ছে। থামাথামির কোন নামগন্ধ নাই। আমার বুকে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। আহারে আমার চুরি করা টাকার এমবি গুলো গেলোরে। উপায়ন্তর না পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় গেলাম। মাথায় শুধু এমবির চিন্তা ঘুরছে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা এদিক সেদিক ঘুরে আবার বাসায় আসলাম। আম্মাকে দেখলাম রান্না ঘরে কানে হেডফোন লাগিয়ে হেসে কথা বলছে। আমি ছন্দ আবৃতি করলামঃ মাগো তুমি আমার প্রতিটি শ্বাস নিঃশ্বাস, মারিয়া যদি ব্রেকাপ করে গলায় দিব ফাঁস! কেন আজ ১০ মিনিটের কথা বলে দিচ্ছ আমায় বাঁশ। ২ ঘণ্টা পার হলো এখনো কথা শেষ হয়না। এটা কেমন সায়েন্স আজও বুঝলামনা। আমার মনে ঝড় বইছে আজ আর মোবাইলের রক্ষা নেই। আম্মার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। আম্মা ফিসফিসিয়ে বলল….
-কি চাস?
–মোবাইল দাও!
-একটা চড় খাবি যা এখন, রান্না করছি ডিস্টার্ব করবিনা।
–দেও একটু, ১০ মিনিট তো কখন হইছে।
-মোবাইল কিন্তু চুলোয় দিব!
আমি মন খারাপ করে চলে আসলাম। আম্মা এমন কিনু? কিউ এমন? কিনু এমন! নাহ আর সহ্য হয়না। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে রইলাম। আম্মারনরান্না করা শেষ। তবুও কানে হেডফোন লাগিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে। কি কাণ্ড! চৌদ্দ গুষ্টির সাথেও তো কথা বললে শেষ হওয়ার কথা। আমি আর রোদেলা একটু লুডু খেললাম। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা পর আম্মা আমার কাছে হাজির৷ আবুল মার্কা হাসি দিয়ে বললেন….
–মোবাইল লাগবে?
-১০ মিনিট শেষ হইছে?
–তোর জালায় ২ মিনিটও কথা বলে শান্তি আছে? নে ধর ফোন, আর কথাই বলবনা। মোবাইল দিয়ে আম্মা হনহন করে চলে গেলো। কথা বলল ৪ ঘণ্টারও বেশি ২ মিনিট হলো কেমনে? এমবি চেক করে দেখি অর্ধেকের বেশি শেষ। আম্মা খেতে বললেন, বললাম….
–খাবনা আমি, তোমাদের এত প্যারা আর ভাল্লাগেনা। রোদেলা পটাস করে বলল….
-ভাইয়া আমার পেয়ারা ভালো লাগে। তোমার ভালো না লাগলে আমায় পেয়ারা এনে দিও, আমি গাপ্পুত গুপ্পুত করে পেয়ারা খাব।
–তুই চুপ কর হতচ্ছাড়ি।
-হতচ্ছাড়ি কি?
–আমার মাথা!
-আচ্ছা তখন বললেনা তালোই কাকে বলে।
রাগে কটমট করে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। এই বাসায় আমি কেমনে বাস করি! এত প্যারা নিয়ে একটা জীবন আর চলেনা। মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখি মারিয়ার মেসেজ…’তোর মতন কেয়ারলেসের সাথে আমি আর রিলেশন করবনা। তুই আমাকে ইগনোর করিস। থাক তুই হারামি, ব্রেকাপ।’ বলেই মারিয়া ব্লক করেছে। যাহ শ্লা এ জীবন রেখে কি লাভ! জীবনডা কোলবালিশ।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত