শ্বশুর বাড়ি মধুর হাঁড়ি

গোপাল ভাঁড়ের এই গল্পটি অনেকেরই জানা। গোপাল ভাঁড়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী বাড়িতে জামাই এনেছেন। শ্বশুর বাড়িতে আদর আপ্যায়নের আতিশয্যে জামাই আর যেতে চায়না। গোপাল তখন এক ফন্দি আঁটলেন। একদিন জামাইকে ডেকে বললেন, “দেখ বাবাজী, বাড়ির পেছনে একটি ফলন্ত লেবু গাছ আছে। রাতের অন্ধকারে চোরের বড় উপদ্রব। তুমি রাতে একটু খেয়াল রেখো।” জামাই মহা উৎসাহে শ্বশুর মহাশয়ের আদেশ পালন করতে লাগলো। একরাতে গোপাল তার স্ত্রীকে বললেন, “বাগান থেকে লেবু এনে তাড়াতাড়ি ভাত খেতে দাও। পেটটা কেমন করছে।” গোপালের স্ত্রী বাগানে ঢুকলেন। জামাই তখন পাহারা দিচ্ছিল। অন্ধকারে জামাই চোর ভেবে শ্বাশুড়ীকে দৌড়ে এসে জাপটে ধরলো। শ্বাশুড়ী নিজেকে ছাড়াতে চাইলে দু’জনের ধস্তাধস্তি শুরু হলো। চেঁচামেচি শুনে গোপাল বাতি নিয়ে বাগানে এসে দেখেন স্ত্রী আর জামাই পরস্পরকে জাপটে ধওে আছে। গোপাল তার স্ত্রীকে ভর্ৎসনা কওে বললেন, “ছি ছি, এজন্য জামাই আনার এত আগ্রহ !’’ লজ্জায় জামাই তখনি বাড়ি ছাড়ল। শ্বাশুড়ীও আর কখনো জামাই আনার কথা উচ্চারণ করেননি।

শাশুড়িরা বরাবরই জামাইকে রেঁধে বেড়ে খাওয়াতে ভালোবাসেন। জামাইয়ের জন্য এক শাশুড়ী শাক সবজি, মাছ, মাংস সহ নানা পদ রান্না করলেন। প্রথমেই খাবার প্লেটে পাটশাক তুলে দিলেন। তৃপ্তি নিয়ে জামাই সেটি খাওয়ার পর শ্বাশুড়ি বললেন, “ আরও দেবো বাবা ? ” জামাই সম্মতি দিতেই শাশুড়ি আরেকবার পাটশাক খেতে দিলেন। এটিও খেয়ে ফেলার পর শাশুড়ি আবার পাটশাক দিলেন। আবারও সন্তুষ্টি নিয়ে খেলো জামাই। শ্বাশুড়ি আহলাদে গদগদ হয়ে বললেন, “ভালো লেগেছে বাবা ? আরও একটু …….”। শ্বাশুড়ির কথা শেষ না হতেই জামাই বললো, “ আর আপনার কষ্ট করতে হবে না মা । পাটক্ষেতটা দেখিয়ে দিন, আমিই চলে যাচ্ছি।”

জামাই আদও খুব প্রচলিত শ্বশুর বাড়িতে। কোনো কোনো জামাই শ্বশুরের গৌরবে গৌরবান্বিত, কোনো কোনো শ্বশুর আবার গুণধর জামাইয়ের জন্য আপ্লুত। মানুষের আতœপরিচয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। যে ব্যক্তি নিজের পরিচয়ে পরিচিত তিনি উত্তম, যিনি পিতার পরিচয়ে পরিচিত তিনি মধ্যম আর যিনি শ্বশুরের পরিচয়ে পরিচিত তিনি অধম। আরও আছে। যিনি শ্বশুরের মেয়ে অর্থাৎ স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত তিনি নরাধম। হঠাৎ কওে অধম ও নরাধমের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

ছোটবেলায় একটি কথা বয়োজ্যেষ্ঠদেও মুখে প্রায়ই শুনতাম-বুদ্ধি থাকলে বিয়ের আগেই শ্বশুরবাড়ি যাওয়া যায়। প্রতীকী এ বাক্য থেকে আমরা বুঝে নিয়েছিলাম শ্বশুরবাড়ি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন স্থান। তাই আমরাও উদগ্রীব ছিলাম দ্রুত শ্বশুরবাড়ি দেখতে। আমাদেও সবার মনের আশাই কালক্রমে পূরণ হয়েছে।

এক সহজ সরল লোক শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গেছে। বিকেলে শ্বশুর ও জামাই নদীর ধাওে হাঁটতে বেড়িয়েছে। নদীর দিকে তাকিয়ে জামাই বললো, “আব্বা এই নদী কাটতে গিয়েতো অনেক মাটি বের হয়েছে। তাই না আব্বা ?” শ্বশুর বিরক্ত হয়ে বললেন, “হ্যাঁ অনেক মাটি বেরিয়েছে।” “আচ্ছা আব্বা, এত মাটি গেল কোথায় ?” আবারো জামাইয়ের ব্যাকুল জিজ্ঞাসা ! শ্বশুর এবার ক্ষেপে গিয়ে বললেন “এই মাটির অর্ধেক খেয়েছে তোমার বাবা, আর বাকি অর্ধেক খেয়েছি আমি। তোমার বাবা খেয়েছে তোমার মত বেকুবের জন্ম দিয়ে, আর আমি খেয়েছি তোমার মত বেকুবের কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়ে। ”

তবে সব জামাই কিন্তু এমন বেকুব নয়, ধুরন্ধর জামাইও আছে। যেমন এক জামাই তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরালয়ে উপস্থিত হলেন। শ্বশুরকে বললেন, “আমি সন্ন্যাস নেবো ভেবেছি। তাই আপনার ঋণ শোধ করতে এলাম। কারো কাছে ঋণী থাকতে চাইনা।” শ্বশুর অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ আমার কাছে তো কোনো ঋণ নেই তোমার। আছে কি ?” “জামাই বললো, “ঋণ আছে। দশ বছর আগে আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন । আজ সুদ সহ ফেরত দিয়ে গেলাম।”

জামাই আর শ্বশুরের মধ্যে এমন দান প্রতিদান চলেই। কখনো শ্বশুরবাড়ি গ্রহীতা, কখনো জামাই গ্রহীতা। শ্বশুর আর জামাই গল্প করছে। হঠাৎ কওে শ্বশুরের দামী জুতোজোড়ার দিকে নজর গেল জামাইয়ের। বারবার নিজের পায়ের দিকে জামাইকে তাকাতে দেখে শ্বশুর তাকে বললেন, “কী ব্যাপার ? আমার জুতো জোড়া পছন্দ হয়েছে তোমার? “জামাই বললো, “হ্যাঁ খুব সুন্দও জুতো।” শ্বশুর বললেন, “হবেই তো। অর্ডার দিয়ে দিল্লি থেকে বানিয়ে এনেছি। তোমার পছন্দ হলে নাও।” জামাই ইতস্তত কওে বললো, “না, না, আপনার জুতো আমি নেব কেন ?” শ্বশুর বললেন, “তোমার যখন পছন্দ হয়েছে বাবাজী, তুমিই নাও। আমি আবার আনিয়ে নেব।” “কিন্তু লোকে যদি বলে আপনার এত দামী জুতো গেল কোথায়?” জামাইয়ের বিনীত জিজ্ঞাসা। শ্বশুর জবাব দিলেন, “সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আর অগত্যা যদি জিজ্ঞাসা করেই ফেলে, বলবো কুকুর নিয়ে পালিয়ে গেছে।”

বিলেত ফেরত জামাই বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে গেছে শ্বশুরবাড়িতে। শ্যালকের হাতে একটি দামী পারফিউম তুলে দিলেন ভগ্নিপতি। শ্যালক সেটি হাতের তালুতে নিয়ে চেটে খেতে শুরু করলো। হতভম্ব জামাই শ্বশুরের কাছে গিয়ে শ্যালকের কীর্তিও কথা বললেন। শ্বশুর অবাক হয়ে বললেন “এত দামী জিনিসটা হাতের তালুতে নিয়ে খেলো আমার অপদার্থ ছেলে। পরোটার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারতো।”

শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে জামাতার সম্পর্কেও পারদ ওঠানামা কওে অর্থনৈতিক মানদ-ের উপর ভিত্তি করে। শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার জন্য অনেক ব্যাক্তিই বড়লোক শ্বশুর অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকেন। এমন মনোভাবের দুই বন্ধু ধনী গরীব প্রসঙ্গে আলাপ করছে।

১ম বন্ধুঃ বিল গেটস বলেছেন, “যদি তুমি গরীব হয়ে জন্মাও সেটি তোমার দোষ নয়, কিন্তু যদি তুমি গরীব হয়ে মরো সেটি তোমার দোষ।”

২য় বন্ধুঃ কথাটা খুব সহজ। আমার বাবা যদি গরীব হয় সেটি দোষ নয়, কিন্তু যদি আমার শ্বশুর গরীব হয় সেটি আমার দোষ।

এভাবেই এক বড়লোক শ্বশুরের সন্ধান পেয়ে গেল জনৈক মতলববাজ যুবক। বিয়েতে অনেক দামী উপহারও পেলেন। বিপদ হলো কিছুদিন পর পেট্রোলের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে। হতাশ হয়ে জামাতা তখন শ্বশুরকে চিঠি লিখছে-

শ্রদ্ধেয় শ্বশুরমশাই,

আপনিতো জানেন হঠাৎ কওে পেট্রোলের মূল্য ভীষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় আমি বিপন্ন বোধ করছি। দয়া কওে বিয়ের সময় আমাকে দেয়া আপনার গাড়ি অথবা আপনার মেয়ে যেকোনো একটি ফেরত নিয়ে আমাকে বাধিত করবেন। এই দুর্মূল্যেও বাজাওে একসাথে দুটোকে চালাতে পারছিনা।

বিনীত নিবেদক

আপনার গুণধর জামাতা

এক শ্বাশুড়ির দুই জামাতা। তিনি ঠিক করলেন দুই জামাতার একটি পরীক্ষা নেবেন যেন বুঝতে পারেন কোন জামাতা তাকে বেশি ভালোবাসেন। প্রথম দিন তিনি বড় জামাতার সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে নদীতে লাফ দিলেন। দেখতে চাইলেন জামাতা তাকে বাঁচায় কিনা। জামাই নদীতে লাফ দিয়ে শ্বশুড়িকে বাঁচালো। শ্বাশুড়ি খুশি হয়ে তাকে একটি মোটর সাইকেল উপহার দিলেন।

পরের দিন ছোট জামাতার সামনে নদীতে ঝাঁপ দিলেন তিনি। এই জামাতা শাশুড়িকে তেমন পছন্দ করতো না, তাই বাঁচালো না। নদীতে বেচারী শাশুড়ির সলিল সমাধি হয়ে গেল। কয়েকদিন পর দেখা গেল ছোট জামাতা মার্সিডিজ নিয়ে ঘুরছে। বড় জামাতা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “এটা কোথায় পেলে? ” ছোট জামাতা জবাব দিল, শ্বশুর মশায় খুশি হয়ে এটা গিফট করেছেন।

শুধু শ্বাশুড়ির মৃত্যু নয়, কখনো কখনো শ্বশুরের মৃত্যুও কপাল ফিরিয়ে দেয় ভাগ্যবান জামাতার। এক ব্যক্তি তার শ্বশুরের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে কওে সুখে দিনাতিপাত করছে। শ্বশুরের অবর্তমানে জামাই সব সম্পত্তির মালিক হবে। শ্বশুর হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। ডাক্তারের সাঙ্গে কথাবার্তা চলছে জামাইয়ের।

ডাক্তারঃ দুঃখিত, আপনার শ্বশুরকে মনে হয় বাঁচানো যাবেনা। অবস্থা খুব খারাপ। এতক্ষণে বোধহয় আর তিনি নেই।”

জামাই শুনে বেশ পুলকিত হলেন। এমন সময় রোগীর শয্যা থেকে শ্বশুরের মন্তব্য- “কে বলেছে অলক্ষুণে কথা! এইতো আমি বেচেঁ আছি।”

জামাই ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুরকে বললো, “চুপ করুন। ডাক্তার বলেছেন আপনি আর বাচঁবেন না। আপনি কি ডাক্তারের চেয়ে বেশি জানেন?”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত