সম্পর্কের গোলকধাঁধা

সম্পর্কের গোলকধাঁধা
১৫ বছর এর বড় হওয়া সত্ত্বেও রায়হান এর সাথে বিয়েটা হয়েই গেলো।এই ঈদ আমার শ্বশুর বাড়িতে প্রথম ঈদ আম্মা কড়া গলায় বলে দিয়েছিলেন,বাসায় গুরু জনরে সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে। গাড়ি থেকে নেমে যখন রায়হান আর আমি বাসার ভিতরে ঢুকবো,দরজার সামনে প্রায় ৩০জন দাড়ানো,কয় জনকে সালাম দিব এই ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম।
সালাম দেয়া শুরু করলে রাত শেষ হয়ে যাবে।একদম সামনে দুজন মহিলা দাড়ানো ছিল,রায়হান এর মা এবং দাদি। আগে মা কে সালাম দিলাম,সালাম দিয়ে উঠে বললাম,ঈদ মোবারাক মা। সে আমায় কিছু না বলেই ভিতরে চলে গেলেন। কিছুই বুঝলাম না,হয়তো দাদির আগে তাকে সালাম দিয়েছি তাই রেগে গেলেন।মনে মনে বলতে লাগলাম,রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। যাক, দাদিকে সালাম দিয়ে বললাম,দাদি শরীর ভালো আপনার? দাদি ও কিছু না বলে হন হন করে ভিতরে চলে গেল। চারদিকের সবাই হাসছে,ভাবলাম এ আমি কই আসলাম?সবাই তো দেখি বাংলা সিরিয়ালের মতই উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছে।ছেলে তো আর প্রেম করে নিয়ে আসেনি। এর মাঝেই রায়হান আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে কক্ষে নিয়ে গেল। আমিতো লজ্জা ই পেয়েছিলাম,বুড়া হলেও বউ এর প্রতি কি টান।
আমি:- এই যে বুড়া লজ্জা নাই?সবার সামনে দিয়া নতুন বউ কে নিয়ে রুম এ আসলা যে?
রায়হান:- রুম এ আসছি কি স্বাধে? তুমি আমার বড় বোন কে মা বলছো।
আমি:- তাহলে মা কই?
রায়হান:- তারে তো তুমি দাদি বানাইয়া দিছো। আল্লাহগো,কি মসিবত এ পরলাম আমি।সালাম দিয়া কি ভেজালেই না পরলাম।ওর বড় বোন তাই আমার মায়ের বয়সী। আর ওই বুড়া মহিলা আমার শাশুড়ি। বিয়ের আগে ছবি দেখা উচিৎ ছিল। যাই শাশুড়ির মান ভাঙিয়ে আসি। গিয়ে দেখি সে রুম এ দরজা দিয়ে রেখেছেন। অনেক ধাক্কা দেয়ার পর দরজা খুলছে।
-মা আপনি রাগ করেছেন? না মা আমি রাগ করিনি। মন খারাপ।
-কেন মা?
আসলে আমার নানু খুব অসুস্থ। আমি কতক্ষন হা করে তাকিয়ে বলি আপনার নানু? বলে হি হি করে হেসে দিলাম।আমার কী দোষ,হাসি আসলে হুশে থাকি না। শাশুড়ি আম্মা ক্ষেপে আমায় বের করে মুখের উপর ধপাস করে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমার কি দোষ,শাশুড়ি আম্মাই এক পা কবরে দেয়ার বয়স তার মা ও না,তার নানু এখনো জীবিত। বেশ বয়স পেয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। মন খারাপ করে রায়হান এর রুম এ যাচ্ছি, এমন সময় আমার বয়সী কয়েকজন আমায় পা ধরে সালাম দিল। আমি তাদের উঠিয়ে বললাম,ওঠো ভাইয়ারা।ভাবলাম দেবর-ননদ।ওরা হেসেই বলে,মামি তুমি আমাদের ভাইয়া কেন বলো? খাইলাম আবার বিলা।ভাবছি আজ আর কথা ই বলবো না।আর মুখ খুলবো না।রায়হান এর কাছে গেলাম,ভাবলাম আজ ঈদ এর দিন,রায়হান কে একটা সালাম দেয়া উচিৎ। একমাত্র ওরে সালাম দিয়াই লজ্জা পাবোনা।বুড়া আছে।আবার জামাই মানুষ।
সালাম দিব বলে প্রস্তুত হচ্ছি, ভাবলাম হয়তো ও সিনেমার মতন আমায় তুলে বলবে,ওগোতোমার জায়গা আমার বুকে।নিচু করে বসে সালাম দিতে নিলাম,রায়হান আটকাচ্ছে না।সালাম দিয়ে দেখি সামনে রায়হান নাই,আছে একটা বাচ্চা।আনুমানিক ৫বছর হবে। রায়হান সামনে দিয়া চলে গেছে।আমি ভুলে ওই বাচ্চারেই সালাম দিছি।এই বাচ্চা আবার কে! যেহেতু বুড়া বুড়া পোলাপান ই আমার ভাগ্নে -ভাগ্নি তাহলে এ বাচ্চা মনে হয় আমার নাতি। বিয়ে হতে না হতেই আমি নানী হয়ে গেলাম। : বাচ্চারে কোলে নিয়া বলি,কি বাবু নতুন নানী কে পছন্দ হয়েছে? ও বলছে তুমি তো আমার রাঙা ভাবি। পরে জানি ও রায়হান এর চাচাতো ভাই। কোন ঘরে আসলাম,বুড়া রা সম্পর্কে ছোট আর বাচ্চারা সম্পর্কে বড়। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি,রায়হান কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? ও বলে ওর বড় মা মারা গেছে। বললাল,আমার শ্বশুর আব্বার দুটা বউ আগে জানতামনাতো। এত বড় প্রতারণা করা হয়েছে আমার সাথে!
রায়হান রেগে বললো,আমার মা এর নানীকে বড় মা বলি।আমি আবার আহাম্মক হইলাম। এখন সান্তনা দেয়ার ভাষা ই খুঁজে পাচ্ছিনা।নতুন বিয়ে স্বামীর প্রতি ই মায়া হয়নায় ঠিক মত তার উপর নানী শাশুড়ির প্রতি।যাক একটা স্বান্তনা দেয়া উচিৎ। উঠেই বললাম,রায়হান,সে মারা গেছে তুমি কিছু মনে করোনা। ও আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,না কিছুমনে করবো কেন,সে তো আমার বেয়াইন লাগে। রায়হান ও হন হন করে চলে গেল রুম থেকে। শ্বশুর বাড়ির সবার ই এক রোগ রাগ উঠলেই হন হন করে হাটা দেয়।আমার কী দোষ আমি তো হুশে থাকি না।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত