ডুগডুগি

একটা ঝটকা বাতাস ফস করে এসে লাগলো, আর যে দরজাটা খুলবো খুলবো করছিল সেটা আলগোছে খুলে গেলো। যা হবার তাই হলো। ভালো লাগার রঙিন ফুল, ভুল, রঙ-সঙ সব মজনুর গায়ে মেখে যাওয়ায় শরীরে প্রচণ্ড কাতুকুতু অনুভব করলো। কীভাবে যেন মিলিয়ে গেল কৈশোরের খোলসটা! হাফ প্যান্টটা ফুল প্যান্ট, লুঙ্গি হয়ে গেলো। এখন আর তাকে পায় কে! চারদিকে শুধু ভালো লাগার রঙ। জীবনে এ রকমও ভালো লাগা আছে! যেন সে ভাবতেই পারেনি। যেদিকেই উঁকি দিল সেদিকেই রঙ। বসন্ত বাতাস। বুকের মধ্যে জমাট ভালো লাগা গাঢ় হচ্ছে। গাঢ় হতে হতে সবুজ, সবুজ থেকে নীল, লাল, বেগুনি। পড়াশোনার পাঠ, পত্রিকার পাতার সুন্দর মেয়েদের মুখ, হাটে-মাঠে-ঘাটে মেয়েদের মুখ, সবই সুন্দর মনে হলো। কেমন করে দিন-মাস চলে যাচ্ছে বুঝতে পারে না মজনু। মেয়ে মানুষেরা কানাকানি করছে, মুখ-ঝামটা দিচ্ছে। এই ছোড়া এত বদ তো ছিলো না, যাকে তাকে যা-তা বলছে, তাকাচ্ছে!

বাড়ির প্রতি টান নাই মজনুর। শুধু মাঠে-ঘাটে, পাড়ায় পাড়ায় উড়ে বেড়ানোর পাখা। যেন হাঁটছে না, কেউ তাকে উড়িয়ে নিচ্ছে, সে উড়ছে। ভালো লাগাগুলো উপচে কলস ধুয়ে ফেলছে। এসব দেখে দাঁত বের করে পাড়ার বড় ছেলে শেরু একদিন বললো, মজনু যাবি নাকি?

-কোতি যাবো? মজনু জিজ্ঞেস করে।

-যাবি কিনা বুল, মজার জাগারে।

-যাত্যে তো ইচ্ছা হয়। কিন্তুক ভয় ভয় তো লাগে। শেরু বলে, আমি আছিন্যা? ওই পোরথম পোরথম এটু ভয় লাগব্যে, তারপর দেখবি সুখ আর সুখ। যাত্যে চাহাল্যে বুলিস, এটুকু বলেই শেরু চলে যায়। যৌবন এসে মজনুর শরীরের পেশিগুলোকে নাড়াচাড়া, ধাক্কাধাক্কি করে। আর ভালো লাগার নানা রকম অনুভূতি তৈরি হয়। বাড়ির লোকজনকে তীক্ষষ্টভাবে লক্ষ্য করে মজনু। কেউ তার এ ভালো লাগার ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করছে কি-না? না, বাপজান রোজ সেজেগুজে দোকানে যাচ্ছে আর হাঁক মারছে- মজনু, কলেজ শেষ করে দোকান থেকে বাজারডা আনবি। মজনু বলে, জি বাপজান। এই পর্যন্তই। বড় ভাই হারুণ মাঝে মাঝে তেরচা চোখে দেখে।

কলেজে মেয়েগুলোর হাতের ফর্সা ফর্সা আঙ্গুল কত সুন্দর মনে হয়! খুব ছুঁতে ইচ্ছা করে। ঘোর নামে। মাথায় শুধু মেয়ে মানুষ আর জৈবিক যাতনা কুরে কুরে খায়। কলেজে যাওয়া হচ্ছে শুধু রঙ দেখার জন্য। বইয়ের পাতা খুললেই কেমন বমি বমি লাগে, পড়তে ইচ্ছে করে না। ক্লাসে বসতে ইচ্ছা করে না। মেয়েগুলো চোখের মধ্যে কেমন সুন্দর হয়ে ওঠে! কলেজ তো পড়াশোনার জন্য, মেয়ে দেখার জন্য নয়। তাই সে এক দৌড়ে কলেজ ছাড়ে। কিন্তু সেটা পড়ার জন্য নয়।

বাড়ির টাকা-পয়সা চুরি করে শেরুর সাথে একদিন ভুল পথে হারিয়ে যায় মজনু। শেরু আর মজনু নদীর পাড়ে লালপাড়ার মধ্যে ঢুকে পড়ে। সেখানে নোংরা হবার মজা। দু’জন মিলে সারা পাড়া ঘোরে আর পছন্দের মেয়েগুলোর ঘরে ঘরে খরিদ্দার হয়। কট্‌ কট্‌, কড় কড়, কড়া কড়া, কুরুত কুরুত ডুগডুগি বাজায়। শেরু আর মজনু ডুগডুগির সাথে নেচে-গেয়ে হারিয়ে যায়। শেরু যেটা আগেই হারিয়েছে; আজ মজনুও সেটা হারিয়ে ফেললো। এখন মজনু যেটা হারিয়ে ফেললো, সেটা যদি পৃথিবী তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়ায়, তবুও সে আর ফিরে পাবে না। উপলব্ধি করলো, সে কিছু একটা হারালো। যা হারালো তা খুঁজতে যাওয়া বৃথা।

এভাবে ক’দিন শেরুর সাথে উড়নচণ্ডির মতো পাক খেলো। শরীরে ভালো লাগাগুলো যত ডাকে, সে তাতে তত সাড়া দেয়। মেয়ে মানুষ দেখলেই কেমন তেরচা করে তাকায়। বাপে সেটা বুঝে গেলো এবং শাসালো। তাই বাপের ভয়ে চাচার বাড়ি, মামার বাড়ি পালিয়ে বেড়ায়। শেষ পর্যন্ত বাপের আশ্বাসে বাড়ি ফিরে আসে মজনু। বাপ জুলমত বুঝতে পারে, তার ছেলেকে সে হারিয়েছে, আর ছেলেও বুঝতে পারে। মজনুর বাপ শুধু বলে, পড়াশোনা না করলে মোড়ের দোকানে বস, আমি জমিতে লাঙল দিই। মজনু মাথা কাত করে দোকানে বসে। বাপ মজনুকে জীবন-যৌবন নিয়ে হাজারো উপদেশ দেয়। মজনু মাথা নিচু করে শোনে। লজ্জা লজ্জা ভাব দেখায়। দোকানের মাল-মসলার মধ্যে ঘেরা পড়ে যায়। কিন্তু যৌবন কি আর বাঁধ মানে? আর না মজনু নিজে বাঁধ দেয়। সে শুধু যেদিকে যাবি চল, বলে পোষা সাপের মতো যৌবনকে ছেড়ে দেয়। দোকানে আসে পাড়ার মেয়ে খরিদ্দার, তরুণী বউ-ঝি- সবাইকে তার জৈবিক বাসনা দিয়ে শুঁকে শুঁকে দেখে। বাপ জুলমত রোজ হিসাব নেয়। তবুও সে টাকা সরায়। শেরুকে চোখ টিপে টিপে রাখে, আবার যাবো বাণিজ্যতে।

চৌধুরীবাড়ির ছোট মেয়েটা নবম শ্রেণিতে পড়ে। লকলকে যৌবন, তাকে তার খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। সে এলে তার বুক ধক্‌ধক্‌ করে। কম দামে জিনিস দিয়ে দেয়। একদিন এলো চাল কিনতে। মজনু আদর করে-করে কথা বললো আর তার লকলকে শরীরের যৌবনকে তার ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি স্বাদ দিয়ে জড়িয়ে নিলো। সে মাত্র পঁয়ত্রিশ টাকা দরে পাঁচ কেজি চাল দিয়ে দিলো। ভাবলো, অন্যভাবে এটা পুষিয়ে নেয়া যাবে। ভালোবেসে চাল দিয়ে মনে মনে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। তাকে নিয়ে কল্পনায় ফুলবাগানে নাচানাচি করছিল মজনু। এমন সময় চৌধুরী সাহেব স্বয়ং সামনে এসে দাঁড়ালেন। হাতে তার একটা ছালার বস্তা। বললো, কোন চালটা তুমি পঁয়ত্রিশ টাকায় দিলে সেটা আরো এক মণ দাও তো। মজনুর মাথায় বাজ পড়লো। মনে মনে বললো, তোর মেয়েকে দিয়েছি ভালোবেসে। তুই তো পুরুষরে শালা। মাথা ঠোকে মজনু। সত্যিকার পঁয়ত্রিশ টাকার চালটা দেখিয়ে বলে, এটা দিয়েছি। চৌধুরী মুষ্টি খুলে দেখালেন, এই চাল। এর সাথে এর মিল নাই। অগত্যা চল্লিশ টাকার চালে ধরা দিয়ে এক মণ চাল মেপে দিলো চৌধুরীকে। চৌধুরী মনে মনে হাসেন, কম দামে ভালো চাল পেলাম- এমন অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। মজনু মাথায় হাত দিয়ে যৌবনের জন্য খেসারত দেওয়ায় চুল ছিঁড়তে লাগলো। এই ধরা খাওয়ার কথা কীভাবে কীভাবে যেন তার বাপের কানে চলে গেলো। বাপ গরু মারা ডাণ্ডা দিয়ে মজনুর পাছায় এঁকে দিলো বড় বড় ছবি। তারপর লাথি দিয়ে দোকান থেকে নামিয়ে কাঁধে লাঙল তুলে দিলো। মজনু মাঠে লাঙ্গল বয়। রোদে পুড়ে দু’দিনেই জীবন-যৌবন খসখসে হয়ে যাবার যোগাড়। যেন চোখে শুধু সর্ষে ফুল। তারপর ক’দিনে সব রয়ে-সয়ে গেলো। চোখ আবার রঙিন হলো। শুনলোম দূরে মেলা বসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে পসরা আসে মেলায়। মেয়েরা আসে, নাচা-গাওয়া হয়। একদিন শেরুর সাথে কথা হয়, বিকেলে মেলায় যাবে। মাঠ থেকে ফিরে ক্লান্ত মজনু একটু ঘুমাবো বলে জিরিয়ে নেয়।

তারপর মেলার ঝুমঝুমি, খিলখিল হাসি, খলখল লজ্জা, চুলবুল চুলবুল শব্দে মেলা সরগরম। কত যে রঙ! শরীর-মন কেমন কেমন করে ওঠে! শেরু আর মজনু এক মাঠ, দুই গাঁ পার হয়ে মেলাতে এসেছে। রাস্তার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, যখন তাদের চোখে রঙ বেরঙ ভেসে ওঠে। একদিকে পণ্যের মেলা, সে মেলায় কত নারী, যুবতী, বালিকা; কেউ কেউ কী যে চনমনে, কেউ মলিন, সুন্দর, অসুন্দর। তবু সুন্দর। এত ছেলে, বুড়ো, যুবক যেন তাদের চোখে পড়ে না। অন্যদিকে জুয়ার আসর বসেছে। একদিকে বানর খেলা, পুতুল নাচ, রঙ-বেরঙ দ্রব্য, তাড়ি-গাঁজার গলি-ঘুপচি, আরেক গলিতে চোখে ঝলকানি, মজার মিষ্টি, বুক হিম করা হাসি, চোখ টেপাটেপি, ঠোঁট রাঙা সুন্দরীর পসরা।

পাগল হতে থাকে শেরু আর মজনু। ঘোর লাগে চোখে। পকেটে টাকায় হাত দেয়। আর আছে আছে, হবে হবে, এমন হিসাব করে। সময়টা আন্দাজ বিকেল। লাফাতে লাফাতে মন ছুটে যায় এ গলি থেকে ও দোকানে। নতুন রঙ করা ঠোঁট, তাকালে চোখে ঝলক লাগে। উঠতি যৌবনা মেয়েদের মিষ্টি মুখের হাসির তীর বুকে বিঁধে ছিঁড়ে যায়। শেরু আর মজনু আজ যেন যৌবনের আঠালো কাদায় ইচ্ছে করে আটকে যেতে থাকে। গলি থেকে খিল খিল হাসি শেরুকে ডাকে। শেরু জিজ্ঞেস করে, যাবো? মজনু বলে, যা না- কী বুলে দেখ। আমার তো ভালো লাগ্যছে। শেরু ফিরে এসে বলে, মজনু, তোখে ডাকে। মজনু লজ্জা পায়, খিলখিল মেয়েটার হাসির মধ্যে মৃত্যু আছে। মনে হয়, তাকে মেরে ফেলবে। মজনু ভয়ে-লজ্জায় মরতে যায়। বলে, ভালোবাসা পাবি, টাকা দিবি। মজনু ভাবে, টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায়, কী মজার কথারে!

আশেপাশে মানুষের কথাবার্তা, দাম-দর, বাচ্চাদের বাঁশির আওয়াজ আর খিলখিল হাসি ভেদ করে এক জাদুকরের ডুগডুগি বেজে ওঠে- ডুগ-ডুগ, ডুগ-ডুগ, ডুগ-ডুগ, কট-কট, কট-কট, কড়াৎ কড়াৎ, ডুগুর-ডুগুর, ডুগুর-ডুগুর, কড়া-কড়াৎ, টক টক টক, টকার টকার। হাঁক ওঠে- লাগ লাগ লাগ, চোখে-মুখে লাগ, লাগ ভুলকি লাগরে, চোখে-মুখে লাগরে। মিকসু মাকাসা, ফুস মন্তর ফুস, গুরুর ফুস। লোকজন গোল হয়ে ঘিরে ধরেছে জাদুকরকে। ছোড়া, বুড়ো, পাড়ার তরুণ, যুবক, কিশোর শ্রেণি বেশি। দু’চারজন মেয়েও আছে। চাদুকর একেকটা জাদু দেখায়- আর হাত তালি পড়ে তড়বড়, পটপট। শেরু-মজনু খিলখিল হাসির স্পর্শ ছেড়ে এসে দাঁড়ায় জাদুকরের চক্করের বেড়াতে। সামনে একটা বড় ঝুড়ি, সেটা বড় একটা গেরুয়া কাপড় দিয়ে ঢাকা। না জানি, তার মধ্যে কী আছে! কৌতূহলী সবাই। এর মধ্যে ডুগডুগি বাজছে, হাঁকডাক চলছে সমানে। লোকজন ভিড় করে জাদুকরের কেরামতি দেখতে থাকে। এরই মধ্যে দুই হাতে জাগলিং হলো, দড়ি কেটে জোড়া লাগালো। একজনকে পানি খাওয়ায়ে তার কান দিয়ে সে পানি বের করলো। জাদু দিয়ে পায়রা উড়ালো। ফুল বের করলো টুপির মধ্য থেকে। আলখেল্লা পরা জাদুকর একে একে ভেলকিবাজি দেখাতে দেখাতে মুগ্ধ করে দিলো সবাইকে। এবারে হাতের ছড়ি ঘুরিয়ে সকলকে আহ্বান জানালো- জনাব, আমার এই খেলা দেখে কি আপনারা মজা পেয়েছেন? সবাই সমস্বরে বললো, ‘জি জনাব, মজা হয়েছে।’ তাহলে দয়া করে আপনারা আমাকে যতটুকু পারেন বকশিস দিন। যার কাছে টাকা আছে তারা না দিয়ে যাবেন না জনাব। যার কাছে টাকা নাই তিনি চলে যাবেন জনাব। এই কথা হতে হতেই দু’চারজন করে ঘেরাও থেকে ভেগে যেতে লাগলো। দু’চারজন অনুগ্রহ করে দু’টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা করে ছুড়ে দিলো। কিন্তু আশি ভাগ স্বীকৃত মজা ভোগকারী, জাদুকরের চক্র থেকে সামান্য দু’ধাপ সরে গিয়েছিলো। প্রায় সরে এসেছিলো শেরু আর মজনু। এরই মধ্যে জাদুকর আবারো চেঁচিয়ে উঠে বললো- জনাব দেখে যান, দেখে যান, এই যে আমার বড় ঝুড়িটা গেরুয়া কাপড়ে ঢাকা! হুঁশিয়ার, কেউ যাবেন না- হুঁশিয়ার। শেষ জাদুটা আপনারা কোনো টাকা ছাড়াই দেখে যান। লোকজন জাদু দেখার জন্য আবারো বেড়ার মতো ঘিরে স্থির হলো। জাদুকর মেয়েদের সসম্মানে সরে যেতে অনুরোধ করলে দু’চার জন মেয়ে লোক ছিলো চলে গেলো।

জাদুকর নতুন উদ্যমে দাঁড়িয়ে বললো, এই যে দেখেন আমার হাতে ডুগডুগি বাজে। এমন ডুগডুগির মতো আজব ডুগডুগি আপনাদের সবার কাছে একটা করে আছে জনাব। সবাই অবিশ্বাসের চোখে জাদুকরের দিকে তাকালো! জাদুকর বললো, বিশ্বাস না করলে নাভির নিচে যান; দেখবেন আজব এক ডুগডুগি ঝুলে আছে। লোকজন প্রথমে না বুঝে হাঁ হয়ে থাকলো, পরক্ষণে বুঝতে পেরে লাজুকতা নিয়ে হেসে উঠলো হা-হা, হো-হো করে। জনাব, আপনারা স্থির থাকুন, কেউ নড়বেন না, আপনারা যারা বখশিস দেননি তারা বখশিস দিন। তারপরও এক টাকাও কেউ দিলো না। জাদুকর মন্ত্র পড়ে শূন্যে ফুঁকে দিলো। বললো, এবারে আমি আমার ঝুড়ির কাপড় সরাবো। এখানে আপনাদের সবার ডুগডুগি চলে এসেছে জনাব। যারা অকাজ-কুকাজ করে বেড়ান তারা দেখুন, তাদের ডুগডুগি নিজের কাছে নাই। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক, ভয়, কান্নামিশ্রিত আওয়াজ উঠলো- তাঁদের নির্দিষ্ট স্থানে তাদের ডুগডুগি আর নাই, ভ্যানিশ। লুঙ্গি ধরে কেউ কেউ চেঁচিয়ে উঠলো। জাদুকর বললেন, যাদের কাছে তাদের ডুগডুগি আছে তারা সসম্মানে প্রস্থান করুন। কেননা, তারা তাদের ডুগডুগির হেফাজতকারী। ভিড়ের মধ্য থেকে সাত-আটজন হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল। কিন্তু শেরু আর মজনুর চোখে-মুখে আতঙ্ক। ‘অকাজ-কুকাজ’ শব্দটা মাথায় আঘাতের মতো এসে লাগলো। তাদের স্বাদের ডুগডুগি কোথায় গেলো! শরীর র্থ‌ র্থ‌ করে কেঁপে উঠলো।

অকাজ-কুকাজের জন্য অনুশোচনা হতে লাগলো- হাউ-মাউ করে উঠলো সকলে। জাদুকরের ডুগডুগি আবার বাজলো। ভয় নাই, ভয় নাই, ভয় নাই, সবার ডুগডুগি ফিরিয়ে দেয়া হবে। এ কথা শুনেও লোকজন আধা বিশ্বাসের মতো মুখ হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলো। জাদুকর তার ঝুড়ির গেরুয়া কাপড়টা উন্মোচন করলেন। দেখা গেলো, সবার ডুগডুগিতে ঝুড়ি ভরে আছে। কিলবিল-কিলবিল করছে। এ কেমন করে সম্ভব! জাদুকর আহ্বান করলেন, যার যেটা ডুগডুগি এখানে থেকে বেছে নিয়ে যান জনাব। এ কথা শুনে লোকজনের মধ্যে আরো আহাজারি উঠলো, হায় হায়! জাদুকর হাত তুলে স্থির হতে বললেন। তারপর গেরুয়া কাপড় দিয়ে আবারো ঢেকে দেওয়া হলো ঝুড়ি। বললেন, যারা সামর্থ্যবান তাদের কাছে শুধু দশটি টাকা বখশিস চাই। সবাই যার কাছে যা ছিলো সব টাকা ফেলতে শুরু করলো। কিন্তু জাদুকর দশ টাকার বেশি কারও কাছ থেকে নিলেন না। শেরু আর মজনু তাড়াহুড়া করে দশ টাকা করে দিয়ে দিলো। জাদুকর আবার ডুগডুগি বাজালো, চোখ বন্ধ করে মন্ত্র ছুড়ে দিলো আকাশে। তারপর গেরুয়া কাপড় উন্মোচন করলেন। দেখা গেল, সেটা শূন্য; কিছুই নেই। সবার মুখে হাসি ফুটলো কিন্তু মজনু তার লুঙ্গি হাতড়াতে লাগলো এবং ভরা সন্ধ্যায় খাট থেকে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মজনুর বাবা তাড়াহুড়া করে ঘরে ঢুকে দেখলো, মজনু লুঙ্গি হাতড়াচ্ছে। বাবা বললো, কী খুঁজছিস রে মজনু? মজনু চোখ কচলে হাঁ হয়ে বললো, ডুগডুগি বাপ, ডুগডুগি! এমন সময় মজনু শুনলো দূরে কে যেন ডুগডুগি বাজাচ্ছে- ‘ডুগডুগ, ডুগডুগ, কড়াৎ কড়াৎ, ডুগুর ডুগুর, ডুগ ডুগ।’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত