নীল ডায়েরী

নীল ডায়েরী
সারাদিন অফিস করে এসে এখন বিশ্রাম না নিয়ে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারব না। এতটা নেকামী আমার ভালো লাগেনা, ভুলে যেও না এখন আর তুমি আমার প্রেমিকা নও আমার বউ। এসব তোমাকে মানায় না। রাহাত এর এই কথাগুলি তীরের মতো এসে আঘাত করলো। যদিও সে ভুল কিছুই বলেনি। রাহাতের সাথে প্রেমের বিয়ে।
দীর্ঘ ৫ বছর প্রেমের পর দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের ১ বছর পর থেকেই রাহাত বদলে যেতে লাগলো। শাড়ি, গয়না কোনো কিছুর অভাব নেই, অভাব শুধু রাহাতের সময়ের। আমাকে দেয়ার মতো সময় ও তার নেই। শেষ কবে মন খুলে দুজন কথা বলেছিলাম মনে নেই। প্রেগনেন্সির পুরোটা সময়ই আমি তার অবহেলায় দিন পাড় করেছি। অথচ এই সময়টাতেই একটা মেয়ের মানসিক সাপোর্ট খুব বেশি দরকার। সব সময় নিজেকে একা মনে হতো। মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খেতো। রাহাত পরকিয়ায় আসক্ত না তো, সে আমায় ছেড়ে যাবে না তো, বাচ্চাটা সুস্থ ভাবে জন্মাবে তো। মাঝে মাঝে মনে হতো হয়তো পাগল হয়ে যাচ্ছি। উদ্ভট চিন্তাও মাথায় আসতো। কাউকে বলতে পারতাম না।
হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যেতো কান্না পেতো। ভালোবাসার মানুষটির অবহেলা গুলি সহ্য করতে খুব কষ্ট হতো। তার বদলে যাওয়া মেনে নিতে পারতাম না। ভালো সময় গুলি মিস করতাম ফিরে পেতে চাইতাম সব কিছু। হতাশা কাজ করতো। আল্লাহকে ডাকতাম এক মনে। জিকির করতাম। নামাজে বসে আল্লাহর সাথেই সব কষ্ট শেয়ার করতাম। অনেকটাই হালকা লাগতো নিজেকে। এভাবেই আমার প্রথম সন্তান জন্ম নিলো। সেই সাথে আমিও মাতৃত্বের স্বাদ পেলাম। সন্তানকে পেয়ে একাকীত্ব অনেকটাই কমে গেলো। রাহাত এর অবহেলা গুলি নরমালি নেয়া শুরু করলাম। তাকে তার মতই ছেড়ে দিলাম, কারন জোর করে কিছু আদায় করার পক্ষে আমি কখনোই ছিলাম না।
যখন তখন বায়না ধরা ছেড়ে দিলাম, তার সাথে রাগ ভালোবাসা অভিমান কোনোটাই প্রকাশ করতাম না।
সন্তানকে পেয়ে মনে অনেকটাই জোর পেয়েছিলাম। মনে হতো আমি আর একা নই আমার ছেলে আছে। এভাবে ১ বছর কাটতেই ছেলে যখন বাবা বলে ডাকা শুরু করলো তখনই ঘটলো মিরাকল। রাহাত আবার আগের মতো হয়ে যেতে লাগলো। অফিসের পরে যতো টুকু সময় পেতো ছেলেকে দিতো। বাসায় থাকলেই আগের মতই যত্ন নিতো। অবহেলার চাদরে চাপা পরা ভালোবাসা জেগে উঠলো। ভালোবাসা কমে যায়নি শুধু সময়ের ব্যবধানে তা অনেকটাই মলিন হয়ে গিয়েছিলো। যা আল্লাহর রহমত হিসেবে আমার ছেলে ফিরিয়ে এনেছিলো।
রাহাত আমাকে প্রথম যেদিন ভালোবাসি বলেছিলো সেদিন যেমন চোখে পানি ছলছল করছিলো, এখন প্রতিনিয়তই চোখে পানি ছলছল করে যখন ছেলের আর আমার কপালে চুমো খেয়ে বলে ভালোবাসি তোমাদের। আল্লাহর রহমতে ২২ বছর সংসার জীবনে আর কখনোই ভালোবাসার কমতি হয়নি। অবহেলা নামক সেই কঠিন সময় আর পাড় করতে হয়নি। ২য় সন্তানের জন্মানোর আগের প্রতিটা পদক্ষেপেই তাকে ছায়ার মতো পাশে পেয়েছিলাম। আমি হতাশা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম কারন বিশ্বাস করতাম, হতাশা চিরস্থায়ী না। ধৈর্য ধরুন সুদিন আসবেই। হতাশা কাটবেই।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত