জারা শহরে থাকে। ঢাকা শহরে। জারা ইংলিশ মিডিয়ামে ‘ও’ লেভেলে পড়ে। তার নানার বাড়ি গ্রামে। অনেক দিন হলো সে গ্রামে যায় না। এবার তার মামা কানাডা থেকে এসে সরাসরি জারাদের বাসায় উঠেছেন। অনেক দিন পর মামাকে কাছে পেয়ে জারা মহাখুশি। যেন তার সামনে স্বয়ং চাঁদ মামা এসে হাজির হয়েছেন। জারা আরও খুশি এই জন্য যে, তার পছন্দের অনেক কিছু জিনিস নিয়ে এসেছেন মামা। একে একে জিনিসগুলো দেওয়ার সময় জারাকে মামা বললেন, ‘জারা মামডু, এগুলো সব তোমার। কিন্তু একটা শর্ত আছে।’
জারা মুচকি হেসে বলল, ‘মামা, কিসের শর্ত।’
‘তুমি বলো পালন করবে কি না সে শর্ত।’
‘মামা আমি বুঝেছি। তুমি কি শর্তের কথা বলতে চাও। যাও আমি সে শর্ত পূরণ করব।’
‘তুমি কি বুঝলে মামডু।’
‘আমি বুঝেছি। তুমি আমাকে পড়ালেখার মনোযোগ দিতে বলবে আরও বেশি করে তাই তো। কি মামা আমি কি ঠিক বলেছি?’
‘না মামডু, তুমি ঠিক বলোনি।’
‘তাহলে আমাকে আবার কিসের শর্ত দেবে।’
‘আচ্ছা, আমি বলছি তুমি শোনো, শর্ত হলো। আমার সাথে গ্রামে যাবে।’
‘মামা আমি তো গ্রামে যেতে চাই। তাহলে মাকে বলো। মাকে তুমি রাজি করাও। মা যদি যেতে দেন তাহলে তো আমি অবশ্যই যাব।’
‘তোমার মাও যে এবার যাবেন।’
‘তাই মামা! কি যে মজা হবে মামা।’ এই বলে জারা রুমের ভেতর আনন্দে চরকির মতো ঘুরতে লাগল। মা এসে দেখতে পেলেন। জারা চরকির মতো ঘুরছে ঘটনা কী!
মা বললেন, ‘জারা তোমার কি হয়েছে? তুমি চরকির মতো ঘুরছ যে।’
জারা ঘুরতে ঘুরতে বলল, ‘মা আমি অনেক আনন্দে আছি। মামা বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। তাই ঘুরছি।’
মা খুশি হয়ে বললেন, ‘পাগলী মেয়ে আমার। এখন ঘোরা বন্ধ করো। মাথা ঘুরে আবার পরে যেতে পার।’
জারা মায়ের কথা রাখলেন। ঘোরাঘুরি থামালো। তারপর বলল, ‘মামা কখন তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হব?’
মামা বললেন, ‘কাল তুমি স্কুল শেষ করে বাসায় আসবে। তারপর আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে গাড়ি নিয়ে বের হব।’
‘ঠিক আছে মামা। তবে মা তুমি সব গুছিয়ে নাও।’
‘ঠিক আছে জারা। আমার সব প্রস্তুতি আছে। তোমার কোনো চিন্তা করতে হবে না।’
‘ওকে মামা।’
মামা বলল, ‘জারা আজ সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে কিন্তু শপিং করতে যাব।’
‘ঠিক আছে মামা। কার জন্য কি উপহার কিনবে।’
‘গ্রামের অনেকে আছেন। তাদের কিছু উপহার দিতে হবে। বিশেষ করে তোমার মতো অনেককে।’
‘ঠিক আছে মামা।’
মামা আর ভাগনি অনেক রকমের গল্প করতে লাগল। সন্ধ্যায় তারা শপিং করতে গেল। পরদিন তারা গ্রামের উদ্দেশে রওনা হলো।
গ্রামের বাড়ি যেতে মাঠে দেখতে পেল কিছু ছেলেমেয়ে বৌচি খেলছে।
জারা মামাকে বলল, ‘মামা এই খেলার নাম কি ?’
মামা বলল, ‘তোমার মাকে জিগ্যেস কর। কারণ তোমার মা ছোটবেলায় এটি প্রচুর খেলেছে।’
মায়ের দিকে তাকিয়ে জারা বলল, ‘তাই মা।’
মা বললেন, ‘হ্যাঁ, মা। আমরা কত খেলেছি। এখন এমন খেলাধুলা চোখেই পড়ে না। সব হারাতে বসেছে।’
‘তাই, মা। এ খেলাগুলো রক্ষা করা যায় না।’
‘কীভাবে রক্ষা করবে। এখন যুগ আধুনিক হয়েছে না। এই যে তোমার কথাই ধরি। তুমি তোর আর মাঠে খেল না। এখন খেল ট্যাবে বা মোবাইল ফোনে।’
‘তুমি তো ঠিক কথা বলেছ মা।’
‘আচ্ছা মা। বাবাকে বলে স্পন্সর করে এই খেলাগুলো তো ধরে রাখার ব্যবস্থা করা যায়।’
‘তুমি তো ভালো কথা বলেছ জারা।’
মামা বললেন, ‘জারা, তোমার পাশে তোমার মামা থাকতে তুমি তোমার বাবার কথা বললে। আমি কি পারব না স্পন্সর করতে। সবাই করতে পারব।’
‘ঠিক আছে মামা তুমি কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামবাংলার খেলাগুলোর আয়োজন করবে তোমার উদ্যোগে।’
‘ঠিক আছে মামা।’
মা বলল, ‘জারা তোমার কি মনে আছে। গ্রামবাংলার খেলাগুলোর কথা।’
‘না মা। আমার তো মনে নেই।’
‘তাহলে শোনো। হাডুডু, বৌচি, কানামাছি, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, কাবাডি, নৌকাবাইচ এলাটিং বেলাটিং, কুতকুতসহ আরও কথা খেলা আছে।’
‘মা এগুলো খেলা কি আমি এখন খেলতে পারব না।’
‘এ খেলাগুলো যে এখন কেউ তেমন খেলে না।’
‘না মা। আমি খেলতে চাই।’
‘ঠিক আছে। বাড়ি গিয়ে তোমার মামাতো ভাইবোনদের গিয়ে একটা টিম বানিয়ে খেলার ব্যবস্থা করে দেব নে। কিন্তু তুমি পারবে কি না কারণ তোমার তো আবার এসব খেলার অভ্যাস নেই।’
ওরা বাড়িতে ঢুকল। নানা নানু মামাতো ভাইবোন সবাই জারাকে পেয়ে খুশি হলো। জারা নানুকে বলল, ‘নানু তোমার সাথে আমার খেলা আছে।’
নানু বললেন, ‘কি খেলা নানুভাই। তো কিন্তু কম্পিউটার কিছু খেলতে পারব না।’
‘না না নানুভাই। আমি বলছে তুমি আর আমি লুডু খেলব।’
জারার কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল। মামাতো ভাই পাপন পাশের ঘর থেকে একটা লুডু নিয়ে এলো। তারপর নানুর সাথে জারা খেলতে লাগল। মামাতো ভাইবোনরা জারাকে বলল, ‘আমরা কি তোমার সাথে কিছু খেলতে পারব না।’
জারা বলল, ‘হ্যাঁ, তোমাদের সাথে তো খেলতে হবে। তোমার খেলার আয়োজন করো। কাল খেলব।’
পরদিন ওরা খেলার আয়োজন করল। তারপর জারা বিভিন্ন রকমের খেলা খেল। পরদিন সকালে আবার ঢাকার উদ্দেশে মায়ের সাথে চলো এলো জারা।
সূত্র: ঢাকাটাইমস