পোকা

দুজনকে কেন যে এত ভালো লাগে মুজাম্মেলের কে জানে, মুগ্ধ না হয়ে পারে না মুজাম্মেল। কী সুন্দর একসঙ্গে উঠে নামে, একসঙ্গে বেরিয়ে যায়, একসঙ্গে ফিরে।

নিজেদের মধ্যে বিভোর হয়ে কথা বলতে বলতে যখন লিফট দিয়ে নেমে লবিতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যায়, পেছনে ছড়িয়ে দিয়ে যায় মুগ্ধতার সৌরভ, কী মাখে বাবা গায়ে অনেকক্ষণ মম করতে থাকে কাউন্টার?

ভদ্রমহিলার একটা হাত আলতু ছুঁয়ে থাকে ভদ্রলোকের পাঞ্জাবিতে, বোঝাপড়ার নৈকট্যটুকু স্পর্শে এমন নরম কোরকে ফুটে উঠে কাউন্টারে বসে থাকা যে কেউ মুগ্ধ চোখে না তাকিয়ে পারে না, মুখে আপনি ফুটে উঠে ভালো লাগার হাসি।

এ সেদিন এই দম্পতি এফ-১০ এ এসে উঠেছে। স্বামী-স্ত্রী তো নিশ্চয়ই, সম্ভবত কোনো ছেলে-পুলে নেই, তবে বয়সটা সন্তান না থাকার মতো নয়, একটু ভারিক্কির দিকেই, তবে এ ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না, দুজনকে নিয়ে দুজনে এমনই বিভোর, উঠাবসা, খাওয়া চলা বেটোফেনের সুর মূর্ছনার মতোই ছন্দপতনহীন, একেই কি বলে মানিকজোড়? … ভাবে মুজাম্মেল।

মানিকজোড় কথাটার অর্থ অবশ্য মুজাম্মেলের কাছে খুব স্পষ্ট নয়, অনেক দেখে শুনেও তার একটা জমাটি রূপ দিতে সে পারেনি, তবে তার ধারণা এমনই একটা কিছু হবে।

ওদের আসা-যাওয়ার সময়টা একদম মিস করতে চায় না মুজাম্মেল। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বেরিয়ে যায় ওরা, আর ফেরে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। দুজনই চাকরি করে।

যত যাই হোক এসময়টায় কাউন্টারে এসে বসা চাই-ই মুজাম্মেলের। গাড়ির হর্নও তার চেনা, দূর থেকেই গাড়ির শব্দটাও কি শুনতে পায় মুজাম্মেল? তা না হলে দৃশ্যমান হওয়ার আগেই গেট খোলার তাগিদ দেয় কীভাবে? ইনটিউশন আসলে ইনটিউশন-ফিউশন কিছু নয়, আসল হল আগ্রহ। যার যে দিকে নজর, কাকের নজর।

ভাগাড়ে, ঘুষখোরের টাকায়, আর হা-ভাতের নজর পেটে, আর মুচির নজর জুতোর দিকে। এটাই আসল কথা। ডিউটিতে থাকলে মালেক দারোয়ান ফিচেল হাসি হাসে, মুজাম্মেলের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করে… ‘ওই যে স্যার আসতেছে।’ মুজাম্মেলের খুব রাগ হয়, ব্যাটা ফাজিল তুই এর মর্ম কী বুঝবি? জানিস তো গাঁজা টানতে আর বৌ পেটাতে, পেটাতে পেটাতে বৌটাকে তো হারকাঠি বানিয়ে ফেলেছিস, এই লিকলিকে কাঠির ওপর এখন হাওদা হস কীভাবে আল্লাই জানে?

মালেকের ইঙ্গিতটা পাত্তা দেয় না মুজাম্মেল, কাউন্টারে ঝিম মেরে বসে থাকে সেই অনিন্দ্য দৃশ্যটা দেখার জন্য। চকিতে গাড়িটা এসে থামে, হাসি-খুশি ফর্সা চাপ দাড়িওলা ড্রাইভার দরজা খুলে দেয়, নিজেদের মতো ড্রাইভারও জোগার হয় কোত্থেকে কে জানে বাবা, ওরা কথা বলতে বলতে বিভোর হয়ে উঠে যায় ওপরে, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে মুজাম্মেল, বুঝে পায় না কী করে এমন ঝা চকচকে থাকে সকাল-সন্ধ্যা, এতটুকুও টসকায় না? ফরমালিনমুক্ত নাকি? মাঝে মধ্যে সন্দেহ হয় মুজম্মেলের। অফহোয়াইট পাঞ্জাবিতে ভদ্রলোক সবসময়ই সুদর্শন, ভদ্রমহিলা রঙিন, রঙিন শাড়িতে।

ওদের দেখলেই ময়নার কথা মনে পড়ে যায় মুজাম্মেলের। ময়নার মুখটা সবসময় উৎ-খিচুড়ি তিতো-গেলা। কেন যে? তাকে সুখী করার চেষ্টার কি কমতি করে মুজাম্মেল?

নিত্যদিন একশ’ একটা ফ্যামিলির একশ’-দুই রকমের সমস্যা গিলে যে বিশ হাজার টাকা কামাই করে তা থেকে শাড়ি, চুড়ি, স্নো-পাউডার নিতে কখনও কি ভুল করে মুজাম্মেল? তার আয়ের চৌদ্দ আনাই তো টসকে যায় সংসারের পিছে। তারপরও বিয়ের পর কয়দিনই বা হাসতে দেখেছে ময়নাকে?

তখন রাত নেমে গেছে, হারিকেনের আলোয় এই মাত্র ভাত খেয়ে উঠেছে মুজাম্মেল; বিয়ের তিন মাস পর এই প্রথম এলো বাড়িতে। বিয়ের সাত দিনের মাথায় কাজে চলে যেতে হয়েছিল, তার চাকরিটাই এমন বদখত, দামি একটা কোম্পানির অ্যাপার্টমেন্ট ম্যানেজার। ছুটি-ছাটা নেই বললেই চলে, একশ বিশটা ফ্যামিলির উনকুটি ঝামেলা কি কম?

কার কল নষ্ট হয়েছে ঠিক করো, এসি চলছে না লোক খবর দাও, কাজের মেয়ে পালিয়েছে তত্ত্বতালাশ করো, ওপর থেকে ময়লা ফেলছে কোন নচ্ছার, বিটকেলে বাচ্চাটা বাপের মোবাইলটা নিচে ফেলে দিয়েছে, পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে এক দারোয়ানকে- এক হাজার এক কুটি ঝামেলা। ছুটি চাইলেই মালিকের মুখ ভার।

চাইবার ফুসরতই বা কই, কাজের আংটায় লটকে আছে সে। বেরিয়ে আসা কি সোজা? কত কসরত যে করতে হয় কি বুঝবে ময়না? তিন দিনের ছুটি বের করতেই তো কুকুর জিহ্বা। দায়িত্ব নিতে গিয়ে এবারও কি কম গাঁইগুঁই করেছে মামুন? কড়ার করতে হয়েছে তিন দিন মানে তিন দিন, শিং গজিয়ে চার দিন কখনও না।

গাঁইগুঁই করবে নাই বা কেন? গত সপ্তায় মালিককে না বলে মামুনকে দায়িত্ব দিয়ে একদিনের জন্য গিয়েছিল আশুলিয়া, সজল আর তার বৌকে নিয়ে, এমন করে ধরল সজল কাটাতে পারল না কিছুতেই।

ছোটবেলার বন্ধু জিগরি দোস্ত, সবে বিয়ে করেছে, বৌয়ের ফ্যান্টাসি কিংডম দেখার বড় শখ। সজল ফোন করেই বৌকে ধরিয়ে দিল, নিপা এমন মিষ্টি করে বলল ‘আপনি না গেলে আমি কিন্তু যাব না’, মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি গলাটাও, কিছু কিছু মেয়ে কেন যে এমন, কী দিয়ে বানায় আল্লা তাদের কে জানে?

না গেলে অবশ্য মিসই হতো। কত যে মজা হল সারা দিন, এত এত ছবি। ফিরে দেখে এলাহীকাণ্ড। বি-৬ এর কাজের মেয়ে ভেগে গেছে দারোয়ান রহিমের সঙ্গে, তাই নিয়ে থানা পুলিশ হুলুস্থুল, মালিক তো রেগেমেগে ফায়ার, চাকরিটাই তার যায় আর কী, অনেক বলে-কয়ে তবে রক্ষে, ভাগ্যিস চাকরির লগবুকটা ছিল ভালো, তা না হলে কী হতো কে জানে? মোবাইলে অবশ্য মামুনের কল দেখেছিল বেশ কয়েকটা, ইচ্ছা করেই ধরেনি সেদিন, ধরলেই তো ক্যাচাল।

ময়না এখনও কল পাড়ে। একটু শুচিবাই আছে মেয়েটার, এই এত রাতেও হারিকেনের আলোয় সব হাঁড়িকুড়ি ঝকঝকে না করে ছাড়বে না। থালাবাসন, হাঁড়িপাতিল বাঁশের মাচানে উপুড় করে রেখে তবে শান্তি।

আগে মা এই ঘরের মাচানটায় লাকড়িখড়ি রাখত, ময়না আসার পর ওগোলো চালান হয়েছে গেছে রান্নাঘরে, মাচাটা ঘষে-মেজে চকচকে করে এখন বাসনকোসন রাখার কাজে ব্যবহার করে ময়না। হাঁড়িপাতিলগুলো জায়গা মতো রেখে মাটির কলসটা একটু নেড়ে দেখল ময়না, জল যেন একটু কম, কল তলে ঘষে ঘষে হাত মুখ ধুয়ে কলসটা ভরে বাঁ কাঁখে নিয়ে ডান হাতে হারিকেন ধরে ঘরে ঢুকে ময়না।

দরজার কাছে হারিকেনটা রেখে কলসটা জায়গা মতো রাখে। দরজাটা বন্ধ করে কোণের টেবিলটা থেকে চিরুনি আর ক্রিমের কৌটাটা নিয়ে খাটের কিনারে বসে প্রথমে ঘষে ঘষে হাতে-মুখে স্নো লাগায় তারপর লম্বা চুলগুলো খুলে আঁচড়াতে থাকে। মুজাম্মেল ডান পায়ের ওপর বাঁ পা তুলে দিয়ে আয়েশ করে সিগারেট টানতে টানতে ময়নামতির চলাফেরা দেখছিল এতক্ষণ, এবার সে বলে ‘আর কতক্ষণ ময়না?’

‘এইতো’ বলে ময়না আঁচড়ান শেষে চিরুনির সঙ্গে উঠে আসা চুলগুলো থুথু দিয়ে খাটের নিচে ফেলে, চুলগুলো আলগা করে বালিশে ছড়িয়ে দিতে দিতে মুজাম্মেলের পাশে শুয়ে পড়ে, শোয়ার আগে কাত হয়ে হারিকেনটা ডিম করে দেয়। মুজাম্মেল কোমর ধরে কাছে টানতেই ময়না সজোরে মুজাম্মেলের গলা জড়িয়ে ধরে।

কিছুক্ষণ পর মুজাম্মেল ময়নার ওপর থেকে নেমে পাশে শুতে শুতে বলে ‘দাঁড়া তোকে একটা জিনিস দেখাই।’ মুজাম্মেল টেবিলের ওপর থেকে হাতরিয়ে হাতরিয়ে মোবাইলটা নিয়ে সে দিনের তোলা ছবিগুলো ময়নাকে দেখাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর মুজাম্মেলের খেয়াল হয় ময়নামতির যেন তেমন সাড়া নেই।

মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে, কালো মুখটা আরও অন্ধকার। মেয়েটার এই এক দোষ, এই মেঘ এই বৃষ্টি। হাসবে যখন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বে, তারপরই ছুতানাতায় গম্ভীর, তল পাওয়া যায় না।

বিয়ের পরপর হাসতে লাগলে মা বলতো ‘ও বউ তুই হাসিস না কাঁদিস কিছুই তো বোঝা যায় না?’ মুজাম্মেল ময়নার কালি হয়ে উঠা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ‘কী হল ময়না গম্ভীর হয়ে গেলি যে?’ ময়না গম্ভীর হয়েই বলে ‘কিছু না’ তারপর পাশ ফিরে শক্ত হয়ে থাকে।

মুজাম্মেল বুঝল সজলের বৌয়ের সঙ্গে তোলা ছবি কয়টায় ক্ষেপেছে ময়না। তাকে বারকয় টানাটানি করেও নরম করতে পারল না মুজাম্মেল। সেই থেকে ময়নার সন্দেহ, তার ধারণা ঢাকায় মুজাম্মেলের কেউ না কেউ আছে তা না হলে বাড়ি আসতে তার এত অনীহা কেন? তার কামাই বা যায় কই? কম কি আর কামাই করে?

ঢাকা শহরে কোম্পানির চাকরি, তার বেলায়ই যত কিপটামি। এই পাঁচ বছরেও তা থেকে রেহাই নেই মুজাম্মেলের, আসলে ওসব কিছু নয়, বাহানা কেবল, একেকটা মানুষের মনের গঠনটাই ওই রকম, জিলিপির প্যাঁচ, সোজা করে কার সাধ্য।

কথায় কথায় দুই-এক দিনের মধ্যেই ধুন্ধুমার লেগে যায় দুজনের, ঝড় যায় দুই বছরের ছেলেটার ওপর দিয়ে, ঝগড়ায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে ময়না দুমদুম মারতে থাকে ছেলেটাকে।

সবকিছু অসহ্য লাগে মুজাম্মেলের, ছুটির দুই-একদিন থাকতেই সে ঢাকার পথ ধরে, ফিরে আসে নিজের ডেরায়, এফ-১০ এর দাম্পত্য সৌরভ কিছুটা প্রলেপ বুলায় সেই ক্ষতে, নয়টা-পাঁচটা তাই ঘাপটি মেরে বসে থাকে কাউন্টারে, দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলে কিছুটা।

এই মাত্র গেল… না বস?

রুবেলের সঙ্গে মুজাম্মেলের এও এক মজার খেলা।

– হ্যাঁ

– তাই তো তুমি কাউন্টার থেকে নড়ছ না?

– তুইও তো এসে বসলি?

– আমার কথা ছাড়, তুমি মনে হয় ওই মহিলার প্রেমে পড়েছ?

– আরে না ওই মহিলার না, ওই দাম্পত্যের প্রেমে পড়েছি। সত্যি বল তো রুবেল এমন আরেকটি দেখেছিস?

– সত্যি বলব বস, সত্যি এমনটি আর কোথাও দেখিনি, ওদের জগতে দুঃখ বলে মনে হয় কিছু নেই?

– এমন একটা জীবন কে না চায় কিন্তু কজন পায় বল? এই তো একটু আগে সিকিউরিটি তুলতে গেলাম এফ-১৫তে। ভদ্রমহিলা দরজা খুলল। দেখি ঘরের মধ্যে কালবৈশাখী, ভদ্রলোক সোফায় টান হয়ে বসে আছে, ভদ্রমহিলার মুখ গনগনে। সার্ভিস বিল চাইতেই গম্ভীর গলায় ‘পরে আসেন’ বলে দরজা লাগিয়ে দিল।

এই যে এই লিফ্ট দিয়ে হররোজ কত স্বামী-স্ত্রী ওঠানামা করছে কয়জনের মুখে হাসি দেখিস বল? একজন উত্তর মুখি তো আরেকজন দক্ষিণ। উত্তর দক্ষিণের বিবাদ আর মিটলনারে রুবেল?

আমার জীবনেও উত্তর-দক্ষিণের দ্বন্দ্ব। তোরাই ভালো আছিস দ্বন্দ্বহীন জীবন… ঐরকম একটা জীবনের স্বপ্ন তো অন্তত দেখতে পারিস।

– ঠিকই বলেছ ওস্তাদ খুব কম ফ্যামিলি দেখেছি সুখী। এই অ্যাপার্টমেন্টেই কম তো দেখলাম না, চোখের সামনে কয়েকটা ফ্যামিলি ডাবল থেকে সিঙ্গেল হয়ে গেল।

সবচেয়ে খারাপ লেগেছিল সি-৫ এর কাপলটার জন্য। কী সুন্দর কাপল, যেমন ছেলেটা তেমন মেয়েটা, ছিমছাম, ঝকমকে, তারপরও তো একসঙ্গে থাকতে পারল না।

কি যে হচ্ছে আজকাল আল্লাহই জানেন, বড় ভয় করে। যাই বস এ-১০ এর কল নাকি নষ্ট ঠিক করে দিয়ে আসি,

রুবেল উঠে গেলেও মোজ্জাম্মেল ওখানে বসেই কত কী যে ভাবতে থাকে।

– বস খবর শুনছ?

– কোন খবর?

ছুটিতে তিন দিন বাড়ি থেকে সকালে ফিরে এসেছে মুজাম্মেল। এখন বাজে প্রায় পাঁচটা। আজকে দশ রোজা। ইফতারির জোগার-যন্ত্র করতে করতে কি এফ-১০ এর অপেক্ষাই করছিল মুজাম্মেল? বা হাতে বাড়ি থেকে আনা একটা আম, ডান হাতে ছুরি। ইফতারির জন্য আমটা কাটবে মাত্র, রুবেল এসে কথাটা বলে

– খবর তো মারাত্মক বস। তুমি যেদিন গেলে তারপর দিন তো শুক্রবার। আমি তখন ডিউটিতে, কাউন্টারে বসে আছি, সকাল দশটা এগারটা হবে, এক অনিন্দ্য সুন্দরী আট নয় বছরের একটা ফুটফুটে মেয়ে নিয়ে উপস্থিত, এফ-১০ এ যেতে চায়। ইন্টারকম করলাম। ভদ্রমহিলার নাম শুনতে ওপর থেকে নিষেধ করল। ভদ্রমহিলাও নাছোড়, লিফ্ট খুলতেই লিফটে উঠে গেল। আমিও সঙ্গে সঙ্গে গেলাম। ভদ্রমহিলা অনেকক্ষণ বেল বাজানোর পর দরজা খুলল ভদ্রলোক নিজে। খুলেই ভদ্রমহিলাকে মারল এক ধাক্কা। অশ্রাব্য গালিগালাজের মধ্যে বারবার বলতে লাগল ‘তুমি কী চাও এখানে? তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই।’ ভদ্রমহিলাও ছাড়ার পাত্র নয়। চিৎকার-চেঁচামেচি চলতেই থাকে।

একসময় ভদ্রলোক লিফ্ট খুলে মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। মহিলা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। পরে যা শুনলাম, ভদ্রমহিলা এ ভদ্রলোকের স্ত্রী, কুষ্টিয়ায় থাকে।

ভদ্রলোকের সঙ্গে যে মহিলা এখানে থাকে সে তার বন্ধুর বউ, বন্ধু বিদেশ যাওয়ার সময় বউকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিল বন্ধুকে, বন্ধু সেই দায়িত্বই পালন করছিল এতদিন।

বউকে চাপ দিচ্ছিল বিয়ের অনুমতি দেয়ার, বউ কিছুতে রাজি নয় বরং আইন আদালতের দ্বারস্থ হয়, ফলে ভদ্রলোককে ঘনঘন অ্যাপার্টমেন্ট বদলের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ওই ঘটনার পরদিনই ওরা তলপি তলপাসহ হাওয়া, এই হল তোমার মানিকজোড়ের ইতিহাস।

সব শুনে মুজাম্মেল একেবার হাঁ, রোজা ভাঙার আজানও পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই। আমটা কাটতেই পিলপিল করে বেরিয়ে এল এত্ত বড় একটা পোকা। মুজাম্মেল আবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, এত্ত সুন্দর টকটকে আমটার ভেতরে কোথায় ছিল এত বড় পোকা?

সূত্র: যুগান্তর

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত