কমলা বানু তার ছেলে মনিরকে হারিয়ে ফেলেছেন। গ্রামের স্কুলে ক্লাস এইটে পড়তো মনির।
মংডুর তুলাতুলি গ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে রাতে হামলা চালায় সেটা ছিল অমাবশ্যার রাত। বৃষ্টি হচ্ছিলো মুষলধারে। প্রত্যেকে যার যার বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল। কমলা বানুর স্বামী নেই। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্কুল পড়–য়া ছেলে মনিরকে নিয়ে তার দিনগুলো কাটছিল একভাবে। ছেলে লেখাপড়া শেষে কোনো একটা কাজ শুরু করবে, এরপর সংসারের হাল ধরবেÑতেমন একটা স্বপ্ন লালন করে আসছেন কমলা বানু দীর্ঘদিন ধরে।
বর্মী সৈন্যরা তুলাতুলি গ্রামে গভীর রাতে হামলা চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছিল সবকিছুই। বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আগুন থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি থেকে বেরোতেই রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাইকে গুলি করে নয়তো কুপিয়ে হত্যা করছিল স্থানীয় রাখাইন মগ সন্ত্রাসীরা।
কমলা বানু যখন আগুন ধরিয়ে দেওয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছিলেন তখনও সাথে মনির ছিল। ছেলেকে হাতে ধরে রেখে ছিলেন। কিন্তু মগ সন্ত্রাসীদের নির্মমতার শিকার অন্য গ্রামবাসীর দুরবস্থা দেখে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন এই রোহিঙ্গা নারী। প্রাণ বাঁচাতে অন্ধকারে গ্রামের রাস্তা-খাল-বিল অতিক্রম করে দিগি¦দিক ছুটছিলেন সন্তানের হাত ধরে। হঠাৎ প্রচ- ঝড় শুরু হলে মায়ের কাছ থেকে সন্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সেই থেকে আর খোঁজ নেই ছেলের। তার ধারণা, মনির বেঁচে আছে নিখোঁজ হলেও।
মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলা লাখো মানুষের ঢলে কমলা বানু শামিল হয়েছেন। তিনি হাঁটছেন গত ছয় দিন ধরে। অবিরাম হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তি আর ক্ষুধায় সারা শরীর ভেঙে আসতে চাইছে। এক পা এগোতেও সায় দিচ্ছে না শরীর। কিন্তু তারপরও লাখো নারী-পুরুষের মিছিলে শামিল হয়ে ছুটতে হচ্ছে তাকে।
নিজের প্রাণ বাঁচাতে নয়, হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে খুঁজে পেতে এই কাফেলায় শামিল হয়েছেন কমলা বানু। মানুষের জটলা বা ভিড় দেখলেই সেখানে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। যেখানে তিনি খুঁজে ফিরছেন প্রিয় সন্তানটিকে। কিছুক্ষণ পরপর তার আহাজারি শোনা যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া সন্তানের উদ্দেশে আর্তনাদ করে বলছেন, ‘ও মনির, আঁয়ার সাত রাজার ধন, তুই কন্ডে গিয়ছ, আই তোরে খুঁজি মরির, তোরে খুঁজি বেড়াইর, তোরে না ফাইলে আই কনডে যাইয়ুম, কি কইজ্জুম, বাআজিরে তুই ফিরি আয়, ও খোদা, তুই আঁয়ার পোয়ারে আঁয়ার কোলত ফিরাই দাও, আই তো কোনো মাইনসের ক্ষতি নো করি, আঁয়ারে তুই এত্তো বড় সাজা ন দিও, আঁয়ার মনিররে যেন আঁই খুঁজি পাই, রহম করো, হে খোদা।’
আশপাশে যারা তার আহাজারি শুনছেন তারাও নানাভাবে বিপর্যস্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত। বর্মী সৈন্য এবং রাখাইন মগ সন্ত্রাসীদের নির্মমতার শিকার প্রায় সবাই। অনেকে প্রিয়জনকে হারিয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে ভিনদেশে যাত্রা শুরু করেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়।
কমলা বানুর আহাজারি, আর্তনাদ আশপাশের সবাইকে স্পর্শ করছে। সবাই তার জন্য দুঃখ করছেন, তার সঙ্গে কথা বলে আসল ঘটনা জানতে চাইছেন।
নিজেরা চরম দুর্ভোগে এবং কষ্টের মধ্যে থাকলেও অন্য সবাই মাঝবয়সী এই নারীকে সান্ত¦না দিচ্ছেন, সহানুভূতি জানাচ্ছেন।
কয়েকদিন একটানা বৃষ্টির পর আজ আকাশে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে। চারপাশে রোদ ঝলমল করছে।
গভীর জঙ্গল পেরিয়ে কাফেলাটা এক বিস্তীর্ণ সমতলভূমিতে এসে পড়েছে। এখানে তেমন গাছপালা নেই। ফসলি জমি ছাড়াও আশপাশে অনেক অনাবাদি খোলা মাঠ দেখা যায়।
অনেক দিন পর রোদ ওঠায় ভালো লাগছে সবার। গত কয়েকদিন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পথ চলতে হয়েছে। ছোট্ট শিশুদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে এর মধ্যে। প্রচ- জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে কারো কারো। কিন্তু এখানে রোগ-বালাইয়ের চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। বিনা চিকিৎসায় শারীরিক অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। কেউ কেউ সেই লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে তারা। গত ক’দিনে এরকম অসুস্থ বেশ কয়েকজনকে রাস্তায় মারা যেতে দেখেছে কমলা বানু।
পাহাড়ের পাশে বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতের আল ধরে হাঁটছে হাজার হাজার মানুষ। সরু আল ধরে এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর। ধান ক্ষেতের নরম মাটিতে পা ডুবে যাচ্ছে সবার। কাদায় মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে সবার শরীর। দুর্বল শরীর নিয়ে হাঁটতে গিয়ে কেউ কেউ পড়ে যাচ্ছে কর্দমাক্ত ধান ক্ষেতে।
কমলা বানু নিখোঁজ সন্তানের কথা ভাবতে ভাবতে ধান ক্ষেত অতিক্রম করছেন। বেশ কয়েকবার কাদার মধ্যে পড়ে গেছেন। পরনের কাপড়-চোপড় কাদায় মাখামাখি হয়ে আছে।
কিছুদূর যাবার পর একটা ছোট্ট খাল দেখতে পায় সবাই। খালের পানিতে নেমে সবাই শরীরে লেগে থাকা কাদা ধুতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কমলা বানুর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি হাঁটছেন আগের মতো একই ভঙ্গিতে। আশপাশের কোনো কিছুতে যেন আগ্রহ কিংবা মনোযোগ নেই। তার মনে একটাই চিন্তা, কিভাবে নিখোঁজ সন্তান মনিরকে আবার ফিরে পাবেন নিজের বুকে।
বিরাট কাফেলায় আনমনে হাঁটছেন কমলা বানু। আশপাশের সবাই তাকে এর মধ্যে আলাদাভাবে চিনেছে। সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তার দিকে।
বিস্তীর্ণ সমতলভূমি পেরিয়ে সবাই আবার একটা জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় এসে পৌঁছায়।
তুমব্রু সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ আর খুব বেশি দূরে নয়। অল্পকিছু পথ হাঁটলেই সেখানে পৌঁছে যাবে তারা সবাই।
হঠাৎ আশপাশে কাছ থেকে ‘মা’ ডাক শুনতে পান কমলা বানু।
এই জঙ্গলে আবার মাকে ডাকছে কার সন্তান?
হাঁটায় ব্যস্ত থাকলেও আবার ‘মা’ ডাকটা কানে লাগে তার। এবার ‘মা’ ডাকটা খুব পরিচিত মনে হয়, ঠিক যেন তার ছেলে মনির মাকে ডাকছে। আশপাশে কোথায় যেন আছে সে।
হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়েন কমলা বানু। ডানে-বাঁয়ে খুঁজতে থাকেন ‘মা’ ডাকটা কোনদিক থেকে আসছে বোঝার চেষ্টা করেন।
প্রথমে মনে করেছিলেন, এটা হয়তো হারিয়ে যাওয়া ছেলে মনিরের জন্য অনেক বেশি চিন্তাভাবনার কারণে ভুল শুনেছেন। মা বলে কেউ ডাকছে না আসলে।
হঠাৎ একটা বড় গাছের নিচে কাউকে শুয়ে থাকতে দেখেন কমলা বানু। দ্রুত সেদিকে ছুটে যান তিনি। কাছে গিয়ে যা দেখেন, সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য ব্যাপার মনে হয় তার কাছে। এই জঙ্গলে এটা তিনি কল্পনা করতে পারেননি। তার প্রিয় সন্তান মনির গাছের নিচে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে কাতরাছে, যাকে তিনি মংডুর তুলাতুলি গ্রামে প্রচ- ঝড়বৃষ্টির রাতে হারিয়ে ফেলেছিলেন সাত-আটদিন আগে। সেই থেকে নিখোঁজ সন্তানের খোঁজে এখানে ওখানে কত জায়গায় গেছেন তার ইয়ত্তা নেই। সবশেষে লাখো মানুষের কাফেলায় শামিল হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে মনিরকে খুঁজে ফিরছেন তিনি গত ক’দিন ধরে।
কোথাও প্রিয় সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন মা কমলা বানু। তবে তার মনে একটা বিশ্বাস ছিল, মনির মরেনি, বেঁচে আছে, এই পৃথিবীতে একদিন তাকে খুঁজে পাবেনই।
জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ছেলেটির শরীর। ক’দিন ধরে অসুস্থ মনির, জানে না কমলা বানু। জ্বরে রীতিমতো প্রলাপ বকছে ছেলেটি, মাকে দেখেও চিনতে পারে না সে।
সন্তানের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না কোনো মা-ই। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করতে থাকেন কমলা বানু।
‘আঁয়ার পোয়া মনির এন্ডে পড়ি রইয়ে, আই নো জানি, জ্বরে পুড়ি যার তার শরীর, তোওয়রা কে কন্ডে আছ, আঁয়ার পোয়া, আঁয়ার বাছা মনিররো রে বাঁচাও, আল্লাহ্র কাছে হাজার শোকর, আই আঁয়ার পোয়ারে খুঁজি পাইয়ি, ওয়া তোওরা আইওনা, জলদি আইও…’ ও খোদা, আঁয়ার বাছা মনির ও রে তুই বাঁচাও… ’
অনেক পথ হেঁটে আসার পর অসুস্থ মুমূর্ষু সন্তানকে জঙ্গলে গাছের নিচের খুঁজে পেয়েছেন কমলা বানু।
একদিকে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার অনুভূতিতে মনটা ভরে উঠলেও ছেলের অসুস্থতা তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই নিভৃত প্রত্যন্ত জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় জরুরি চিকিৎসা লাভের কোনো সুযোগ নেই। অথচ মনিরের শারীরিক অসুস্থতা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। তার জরুরি চিকিৎসা দরকার। এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো না গেলে ছেলেটিকে বাঁচানো যাবে না হয়তো।
কমলা বানুর আহাজারি শুনে আশপাশের সবাই ছুটে আসে। বেশ ভিড় জমে যায় ওখানে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে গাছের নিচে শুয়ে থাকা মনিরের সেবা শুশ্রƒশায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
কমলা বানু তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে আবার ফিরে পেয়ে অঝোরে কাঁদছেন আর প্রলাপ করে বলছেন ‘ও খোদা, তুই আঁয়ার পোয়ারে ভালা করি দিও, এ বিপদতুন আঁয়ারে বাঁচাও, তুই তো বড় মেহেরবান, আঁয়ার মনির যেন ভালো হই যায় তোঁয়ার রহমতে, রহম কর হে খোদা।’
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ড আর খুব বেশি দূরে নয়। তবে তারা এখনো মিয়ানমার সীমানায় রয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিয়মিত টহল চলে এখানেও। যে কোনো সময় তারা এখানে চলে আসতে পারে। যদি সীমান্তরক্ষীরা চলে আসে হঠাৎ, তাহলে পালিয়ে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
এতটা পথ হেঁটে এসে শেষ পযন্ত যদি বর্মী সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর গুলি খেয়ে মরতে হয় তাহলে আক্ষেপ করার কিছু থাকবে না।
বিপদ বাড়তে পারে উপলব্ধি করে জঙ্গলের গাছ কেটে দুটি ডালায় বিছানার চাদর বেঁধে দোলনা বা স্টেচারের মতো তৈরি করে তাতে অসুস্থ মনিরকে তোলা হয়। কাফেলায় পথচলা কয়েকজন মুমূর্ষু ছেলেটিকে কাঁধে বয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে।
মনির কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। তার শরীর বেশ ফুলে গেছে। কয়েকজন লেখাপড়া জানা মানুষ তাকে দেখে অনুমান করছেন ছেলেটির কিডনিতে হয়তো বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। তাই শরীর ফুলে উঠেছে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করানো না গেলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে উঠবে।
অসুস্থ ছেলের পাশে রয়েছেন কমলা বানু। মেয়ে দুটির খোঁজখবর জানেন না তিনি। স্বামীর সংসারে তারা এখন কেমন আছে কে জানে। তারা কি আদৌ বেঁচে আছে, না কি বর্মী সৈন্যদের নির্মমতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে, কিছুই জানার সুযোগ হয়নি। মেয়ে দুটি যদি বেঁচে থাকে, স্বামী সন্তানদের নিয়ে নিরাপদে মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে তাহলে খুব ভালো হয়।
মংডুর তুলাতুলি গ্রাম ছেড়ে আসার সময়কার ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর কথা মনে হলে কমলা বানুর শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে ভয়ে। কিশোর বয়সী ছেলে মনিরকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বৃষ্টিমুখর রাতে যখন গ্রামের রাস্তা, খাল-বিল অতিক্রম করে প্রাণপণে ছুটছিলেন তখন আশপাশে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল তখন। তার আলোতে পথে-ঘাটে-বিলে পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো দেখছিলেন তিনি। কমলা বানু কিংবা তার কিশোর ছেলে মনির এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েননি। তেমন ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো দেখেই মনির অসুস্থ হয়ে পড়ে তখনই, যা ক্রমেই ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই ভয়াবহ স্মৃতি যেন এখনো তাকে তাড়া করে ফিরছে, যে কারণে হঠাৎ হঠাৎ তার শরীর প্রচ- ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে।
এই দুর্গম প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকায় হাসপাতাল কিংবা উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নো ম্যানস ল্যান্ডে পৌঁছতে পারলে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্যদের বলে কয়ে কোনোভাবে যদি ওখানকার শরণার্থী শিবিরে নেওয়া যায় তাহলে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশা করা যায়। টেকনাফের কুতুপালংয়ে শরণার্থী শিবির খোলা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়িতেও শরণার্থী শিবির রয়েছে বেশ কয়েকটি। ওখানে বাংলাদেশি ডাক্তাররা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছার জন্য আরও সময় দিতে হবে। এখানে সব কিছু সময় মতো ঠিকঠাকভাবে ঘটবে বলা যাচ্ছে না আগে থেকে। মুহূর্তে মুহূর্তে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যাচ্ছে।
সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারলে ছেলেটির উপযুক্ত এবং উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। সময় দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ মনিরকে বাঁচাতে হলে এখন যেকোনো মূল্যে নো ম্যানস ল্যান্ড পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকতে হবে। এই মুহূর্তে অহেতুক সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তুলতে হবে।
ভিটেমাটি ছেড়ে আসা অসহায় মানুষ নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়, শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছতে পারবে তেমন নিশ্চয়তাও নেই। তেমন পরিস্থিতিতে এক মৃত্যুপথযাত্রী কিশোর বয়সী সন্তানকে নিয়ে একজন মা দুর্গম বিপদসংকুল পথের ধারে বসে আছেন। তার আর্তনাদ আশপাশের সবাইকে স্পর্শ করছে প্রচ-ভাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ কিছু করতে পারছে না তাদের জন্য। এক অনন্ত যাত্রায় সবাই পথ চলছে। অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে সবাই ছুটছে প্রাণপণে। এরপর কি ঘটবে তারা কেউ জানে না।