প্রকৃতির বিচার

প্রকৃতির বিচার
বন্ধু হাবিবের বাসার ঘরোয়া আড্ডায় হঠাৎ এক বন্ধু প্যান্ট খুলে উলঙ্গ হয়ে গেলো, আমরা ক’জন অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।। তারপর বন্ধুটি কোন রকম জড়তা না করে, হাবিবের কাছে একটা লুঙ্গি চাইতে চাইতে বললো- আরে বেটা, মাইয়া মানুষের সামনে ল্যাংটা হইতে হইতে এখন আর কাপড় খুলতে লজ্জা করে না।।
বন্ধুটির কথার অর্থ বুঝতে আমাদের কারও তেমন অসুবিধা হয় নি।। ওর সুদর্শন চেহারা, আর মিষ্টি কথাকে পুঁজি করে ও যে কত মেয়ের সাথে প্রেম করেছে, রুম ডেট করেছে, তার ইয়াত্তা নেই।। আমার ধারণা ও নিজেও হিসাব দিতে পারবে না, ঠিক কতজন মেয়ে ওর এই লালসার স্বীকার হয়েছে।। তবে, বন্ধুটি এখন চুপসে গেছে, ইদানিং ভয়ানক কী এক যৌন সমস্যায় ভুগছে।। আজকাল আমাদের থেকেও আড়ালে চলে গেছে, আমি এসব শুনলাম আরেক বন্ধুর কাছ থেকে।। সাথে সাথে মনে পড়ে গেল, বন্ধু মহলে প্লেবয় খ্যাত ছেলেটা এখন বুঝি ক্লেবয় হয়ে গেছে।।
এখন আমার প্রোফাইলে যে ছবিটা দেওয়া, এটা আমি আর আমার আপন ছোট বোন।। আনুমানিক বছর দুয়েক আগে, একটা বিশেষ গ্রুপে আমার কোন এক পোস্টের নিচে, এই ছবিটাকে নিয়ে একটা ছেলে বাজে মন্তব্য করেছিল।। ছেলেটাকে আমি জবাব দিয়েছিলাম, এটা আমার বোন।। ছেলেটা সরি না বলে উল্টা আমাকে এই ছবি সরিয়ে ফেলার কথা বলে।। আমি কারো কথায় এই ছবি সরাবো এটা ভাবতেই পারছিলাম না, যাই হোক আমি এগুলো জাস্ট এড়িয়ে গিয়েছিলাম।।
ছেলেটা মাস কয়েক আগে, একটা আন্দোলনের লিডিং একটা রোল পেল।। রাতারাতি বেশ সুনাম কামিয়ে ফেলে, অনেক ফ্যান ফলোয়ার হয়ে গেল তার।। কিন্তু ঐ আন্দোলনে আবার সরকার নাখোশ ছিল, ছেলেটার উপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো।। পুলিশ গ্রেফতার করার আগমুহূর্তে ছেলেটা ফেসবুক লাইভে বার বার সবার উদ্দেশ্যে বলছিল, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান।। সেই ভিডিওতে তার পিছনের বিছানায় একজন মহিলা বসা ছিলেন।। ছেলেটা গ্রেফতার হওয়ার পর সেই মহিলাকে নিয়ে বেশ কিছু সস্তা অনলাইন পত্রিকা বাজে নারী বা ছেলেটার রক্ষিতা এসব বলে খবর রটাচ্ছিল।। একটা বিশেষ মহল তার বিরুদ্ধে সেই ব্যাপারটাই ফলাও করে প্রচার করতে থাকে।। অথচ ওই মহিলা ছিলেন এই ছেলের শ্বাশুড়ি, ছেলেটা বিবাহিত ছিল।। আমি এসব রটনা দেখে মুচকি হেসে বলেছিলাম, তবে কি প্রকৃতি শাস্তি দিলো?? আমার নানাবাড়ির গ্রামে একজন বনেদি লোক ছিলেন, মধ্যবয়সে হঠাৎ করে একদম প্যারালাইসড্‌ হয়ে যান।। তিনি নিজের ঘাড়টাও নিজে নাড়াতে পারতেন না, হাত পা তো বহু পরের কথা।। যদিও উনি মারা গিয়েছেন বেশ অনেক বছর হলো।।
লোকমুখে জনশ্রুতি ছিল, এই লোক মসজিদের টাকা মেরে খেয়েছে, তাই তার এই দশা।। আমার পরিচিত এক বড়ভাই এলাকার এক মেয়েকে ভীষণ পছন্দ করতেন।। মেয়েটাও ভাইয়াকে অল্প-বিস্তর পছন্দ করতো।। ভাইয়া মাস্টার্স শেষ করে, একটা বেসরকারি ফার্মে জব নেয়।। তারপর পারিবারিকভাবে মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, মেয়েটার বাবা সাফ জানিয়ে দেন সরকারি চাকুরিজীবী ছাড়া তার মেয়েকে তিনি বিয়ে দিবেন না।। ভাইয়া যখন এই ব্যাপারে মেয়েটার মতামত জানতে চায়, মেয়েটাও জবাব দেয়- পরিবারের ইচ্ছার বাইরে সেও যাবে না।।
একটা চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, ভাইটির সম্ভবত ছত্রিশতম বিসিএসে আয়কর বিভাগে চাকুরি হয়ে যায়।। আরিব্বাস মেয়ের পরিবার পারে না তো এবার গিয়ে ভাইটির বাবা মায়ের হাতে-পায়ে ধরে।। না, উনি আর ওমুখো হন নি, বিয়ে করেছে নিজের সমমানের একজনকেই।। বিএনপি সরকারের আমলে একজন উপমন্ত্রীর ভাগ্নে আমাদের স্কুলে পড়তো।। ওই ছেলেটা স্কুলে থাকতেই যে ভয়ানক দাপটে দেখাতো, ভাব দেখাতো যেটা কল্পনার বাইরে।। আমাদের তো পাত্তা দিবে দূরের কথা, পারে না তো স্যারেরাই উল্টা তাকে হুজুর হুজুর করে।। এখন তার কি অবস্থা সেটা কি আর বলে দিতে হবে!! অনুমান করে নিন।।
উপরের সবগুলো সত্য উদাহরণ শুনে চিত্তে একটা সুখ পাওয়া যায়।। প্রকৃতি সব কিছুর হিসাব চুকিয়ে দেয়, এমন কিছুই তো নির্দেশ করে ঘটনাগুলো।। সত্যিই তাই, প্রকৃতি হিসাব বাদ রাখে না, রাখতে চায় না।। হয়তো, আমার সাথে এমন করেছে তাই ওর সাথে ওমন হয়েছে, ব্যাপারগুলো এমন না।। আমি হয়তো আপন মনে আমার মতো করে মিলিয়ে নিয়েছি।।
তবে “Revenge of Nature” একটা অদ্ভুত সমীকরণ, এই সমীকরণের হিসাব কিভাবে কখন মিলে যাবে সেটা কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।। মানুষ তার খারাপ কাজের শাস্তি পাবে, হয়তো খানিক আগে, খানিক পরে।। আজ বা কাল, পরশু কিংবা তরশু তাকে এটা পেতেই হবে।। হয়তো একটা খারাপ কাজের জন্যে সে কি শাস্তি পাচ্ছে, আমরা আপাতদৃষ্টিতে মিলাতে পারবো না।। কোন অপরাধে কোন ভুলে কি শাস্তি পাচ্ছে, নির্দিষ্ট কোন পাপের ফল ভোগ করছে তা বোঝা যাবে না।। হয়তো আমরা কাউকে কষ্ট দিয়ে, কাউকে ঠকিয়ে, কারো মন ভেঙে দিয়ে, কাউকে অপমান করে, কাউকে কাঁদিয়ে বেমালুম ভুলে যাই!! কিন্তু প্রকৃতি!! প্রকৃতি কেনো যেনো ভুলে না।।
বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, প্রকৃতি কিছুই ভুলে না, আপনি ক্ষমা করবে কি করবেন না আপনার ব্যাপার কিন্তু প্রকৃতি ক্ষমা করবে না।। এমনকি, ধরুন আপনি এখন যার সাথে অন্যায় করে গর্বে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সে হয়ত আপনার কিছুই করতে পারছে না, সে হয়তো দূর্বল, তার সেই ক্ষমতা নেই।। কিন্তু আপনার দেওয়া কষ্ট থেকে তার নিম্নমুখী শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস, আপনার জন্যে অনেক ভারী হয়ে যাবে।। বিধাতা কাউকে ঠকায় না, বিধাতা যে কারো একার না, বিধাতা সবার।। আমি মন্দ আছি কাউকে কষ্ট দিয়ে, আপনিও মন্দ আছেন কারো হক মেরে দিয়ে।। তাই, কোন অন্যায় করার আগে ভাবুন, আবার ভাবুন, ছাড় কিন্তু পাবেন না, এপারেও না ওপারেও না!!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত