কুয়াশার পরাজয়

কুয়াশার পরাজয়
প্রতিবার ঢাকা থেকে যখন গ্রামে আসি। নাইমা দেখামাত্রই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরবে। এটাই সবসময় হয়। আমি যে চাকরি করি। তিন মাস পরপর এক সপ্তাহের জন্য ছুটি পাই। দীর্ঘ একটা সময়ের পর যখন স্বামী বাড়ি ফেরে। স্ত্রীর উচ্ছ্বাসের সীমা থাকে না। সে উচ্ছ্বাসের কারণে অনেকক্ষণই জড়িয়ে রাখে। কিন্তু এবার আসলাম।
নাইমা এসে জড়িয়ে ধরল না! বেশ ম্লান কণ্ঠে বলল— এসেছ? ব্যাগ দাও। আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো? কথাগুলো স্বাভাবিক। কিন্তু সে বলছে দার্শনিকদের মতো। কোনো কারণে সে উদাস। গত সপ্তাহে সে ফোন করেছিল। আমি তখন কাজে ব্যস্ত। একজনের সাথে রাগারাগি হয়েছে। এমন সময় নাইমার ফোন পেয়ে ওই লোকের রাগ ঝাড়লাম নাইমার উপর। এই কারণেই কি নাইমার এই উদাসিন ভাব? যদিও আমি পরে ফোন করে মাফ চেয়েছি। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছি। সে ভুলেও গিয়েছিল। নাইমা শহরেই বড় হয়েছে। গ্রামের চালচলনে অভ্যস্ত হতে পারে না। সবার সামনেই আমার হাত ধরে বসে। কাঁধে মাথা রাখে। কিন্তু এবার এসব কিছুই হচ্ছে না! হাতমুখ ধোয়ার পর মা বলল— কাতলামাছের তরকারি রান্না করেছি। খেতে আয়। আমি বললাম— নাইমাকে নিয়ে বাইরে গিয়ে খাব। ওর মন মেজাজ ভালো না মনে হয়। বাইরে গিয়ে খেলে যদি ঠিক হয়? মা যেন আকাশ থেকে পড়ল— নাইমাকে নিয়ে?
— হ্যাঁ, নাইমাকে নিয়ে! কেন?
মায়ের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আমি অন্য কারো বউ নিয়ে বাইরে যেতে চাচ্ছি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলল— আচ্ছা।
নাইমাকে বললাম— বাইরে যাব খেতে। অনেকদিন হয়ে গেল। তোমাকে নিয়ে বাইরে খেতে যাওয়া হয় না।
এই কথা শুনে নাইমার খুশিতে লাফানোর কথা। বিয়ের পরে তাঁকে এরকম প্রস্তাব খুব কম দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু সে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। বলল— বোরকা পড়ব না শাড়ি?
আমি বললাম— বোরকা পড়ো। সে বোরকা পড়ে নিল। আবার বললাম— তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নাইমা। নাইমা নকল হাসি দিয়ে বলল— ধন্যবাদ! নাইমার এরকম আচরণের কারণ কি আমিই? আগেও তো ওর সাথে কত ঝগড়া হয়েছে। এরচেয়ে কত বড় ঝগড়া। মারামারি পর্যন্ত হয়েছে। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ হয়তো কাউকে একবার জড়িয়ে ধরেছে। সব শেষ। কিন্তু এবার নাইমা এমন করছে কেন! আমি খেয়াল করছি নাইমার সাথে কথা বলার সময় বাড়ির লোকেরা চোখ চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাচ্ছে! মানুষ নিজের বউয়ের সাথেও বাইরে যেতে পারবে না? নাইমাকে বললাম— নাইমা। আমার উপরে কি এখনো রেগে আছ? নাইমা বলল— না তো!
— তাহলে এরকম আচরণ করছ কেন? তোমার এরকম আচরণের সাথে আমি অভ্যস্ত নই। কষ্ট হচ্ছে। আমাকে মানাতে সে হালকা করে জড়িয়ে ধরে বলল— কিছুই হয়নি বোকা। চলো যাই। মুখে সে বলল কিছুই হয়নি। বাস্তবে সে আগের মতোই রসকষহীন থাকল। নাইমার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হচ্ছি। বাড়ির মানুষজন এমন ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে আমি কত বড় পাপ করছি! কিছুক্ষণ হাঁটলেই রিকশা পাওয়া যাবে। নাইমার হাত ধরে হাঁটছি বলে রাস্তাঘাটের লোকেরাও দেখি কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে! ভাবখানা এমন আমি কোনোদিন আগে নাইমার হাত ধরে গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে যাইনি! আগেও নাইমার সাথে বের হলে আমি ওর হাত ধরে থাকতাম। তখন কেউ এমন করে তাকাত না। বরং বেশ খুশি হত। মুরুব্বিরা বলতেন— সুখে থাকো বাবারা। তোমাদের দেখলেও সুখ লাগে। আর তাঁরাই আজকে কেমন করে তাকাচ্ছে! নাইমা বলল— হাতটা ছাড়ো।
— কেন?
— দেখো না সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে!
আশ্চর্য হলাম! যে যাই বলুক। সেই প্রেমসূচনাকালথেকে নাইমা বলে আসছে— যে যাই বলুক তুমি আমার হাত ছাড়বে না। বড্ড একলা লাগে তোমার হাতে আমার হাত না থাকলে! আর সেই কি না বলে হাতটা ছাড়ো! দেখো না সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে! হাত ছেড়ে দিলাম আমি। রিকশা ডাকলাম একটা। রিকশাওয়ালা বলল— কই যাইবেন?
— কটিয়াদি।
— ভাড়া পঞ্চাশ টাকা একজনের।
— আলাদা করে একজনের বলার কী দরকার? দুইজনের একশ টাকা লাগবে বললে হয় না?
রিকশাওয়ালা বোধহয় আমার কথা বুঝতে পারেনি! আমি বললাম— চলেন যাই। নাইমাকে নিয়ে উঠে বসলাম। রিকশা একটা রোমান্টিক যানবাহন। এই যানবাহনে উঠে কেউ উদাসীন থাকতে পারে না। রিকশার এই বিশেষ ক্ষমতা। কারো মনে যত দুঃখই থাক। রিকশায় উঠে বসলে তাঁর মন প্রফুল্লচিত্তে ভরে ওঠে। নাইমার ব্যাপারেও তাই হলো। সে এবার আমার হাত ধরল। কাঁধে মাথা রেখে বলল— কীসের এত চিন্তা তোমার আমাকে বলবে?
— আমার আবার কীসের চিন্তা? নাই তো।
— তাহলে শুকিয়ে যাচ্ছ কেন? খাও না? মেসের খাবার ভালো না?
— তোমার কি ভুলে যাওয়ার রোগ হয়েছে নাইমা? আমি মেসে খাই না! নিজে রান্না করে খাই!
— ওই মেস তুমি একটা হলেই হয়। খাওয়া হলো বড় কথা। খাও না কেন?
— খাই তো!
— মনে তো হচ্ছে না! আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো। আমি তোমাকে মজার মজার রান্না করে খাওয়াব।
— এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। ভাবছি গ্রামেই কোথাও কাজ খুঁজে নেবো।
— প্লিজ, এইটাই করো। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগে না!
— করব, এবার গিয়েই একটা ব্যবস্থা করব।
— প্রমিস?
— প্রমিস।
নাইমা দাঁত বের করে এবার হাসল। বহুদিন পরে তাঁর দাঁতগুলো দেখলাম। ভালো লাগছে। এরমাঝে একবার রিকশাওয়ালা বলল— ভাইজান আপনি কি পাগলাগারদ থেকে আসছেন?
— আজব কথা! পাগলাগারদ থেকে আসব কেন? আমাকে দেখে কি পাগল মনে হয়? রিকশাওয়ালার এই কথা শুনে নাইমার হাসি থামে না। সে বলল— জি ভাই। ও পাগল। পাগলাগারদ থেকে আসছে। কিন্তু ভালো পাগল। কারো ক্ষতি করে না। রিকশা থেকে নেমে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। খালি একটা টেবিলে গিয়ে দুজন পাশাপাশি বসলাম। নাইমাকে জিজ্ঞেস করলাম— কী খাবে?
— তুমি যা খাও।
— আমার তো খুব খিদে পেয়েছে। ভাত খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
— তাহলে ভাতই খাব। বোয়ালমাছ দিয়ে ভাত। মজা হবে। তুমি অর্ডার দাও।
রেস্টুরেন্টে এসে আমরা কখনোই ভাত খাই না! আজকে সে ভাত খাবে! বিস্মিত হয়ে ভাতের অর্ডার দিলাম দুজনের জন্য। ওয়েটার ছেলেটার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে আমরা ভিন্ন গ্রহের প্রাণী! দুইবার এসে জিজ্ঞেস করে গেল— দুই জনের জন্য ভাত?
— হ ভাই ভাত! ভাত নাই? মাছ নাই?
— থাকবে না কেন ভাই? আছে, আনছি।
নাইমা বলল— সারাদিন এদিক ওদিক করতে করতে ওদের মাথায় জটলা বেঁধে যায়। কিছু মনে থাকে না। এজন্য রাগ করতে হবে?
— ক্ষুধার্ত পেটের অপরাধ মেনে নেওয়া লাগে! মেনে নাও!
— কতবার বলেছি যে বাইরের মানুষকে রাগ দেখাবে না। দরকার পড়লে আমার রাগ উপরে ঝাড়বে! মানুষ বদদোয়া দেয় বুঝো না?
— এই শেষ! আর হবে না!
কথাটা আমি কিন্তু ওয়েটারকে নরম গলাতেই বলেছি! তবুও তাঁর মনে হলো আমি রাগ দেখিয়ে বলেছি! ওয়েটার দুই প্লেট ভাত আর মাছের তরকারি এনে দিল। দুজনে খেতে শুরু করলাম। খাওয়ার শুরুতেই নাইমা বলল— আমি তোমাকে খাইয়ে দিব। তোমার হাত মাখানো লাগবে না।
— এটা ঘর না নাইমা!
— তো কী হয়েছে?
— মানুষ এমনিতেই কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে দেখছ না?
— রাখো মানুষের কথা। গ্রামের মানুষ একটু এরকমই। তুমি হা করো।
আমি হা করছি। নাইমা এক লঙ্কা (লোকমা) করে আমার মুখে তুলে দিচ্ছে। আরেক লঙ্কা নিজে খাচ্ছে। আর রেস্টুরেন্টের বাকি লোক সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে! মনে হচ্ছে সাথে করে বিয়ের কাগজটা নিয়ে আসা উচিত ছিল। সবাইকে দেখাতাম, ভাই এই মেয়ে আমার বউ! প্রেমিকা না! পাশের টেবিলেই দেখলাম একজন প্রেমিকা তাঁর প্রেমিককে তুলে খাওয়াচ্ছে। সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই! কেন রে ভাই, আমাদের দিকে এভাবে কী দেখছিস? আমরা কি মানুষ না? খাওয়া শেষ করে বিল দেবো। কাউন্টারের লোক বলল— ভাই আপনার টাকা দেওয়া লাগবে না!
— সেকী! কেন?
— এমনিই ভাই! আপনার টাকা আমি নিতে পারব না! ভাবখানা এমন আমি এলাকার কোনো গুণ্ডা টাইপ বড় ভাই!
— কেন নিতে পারবেন না? সমস্যা কী?
— কোনো সমস্যা নাই ভাই! থেমে কী যেন ভেবে আবার লোকটা বলল— আমরা প্রতিদিন একজনকে ফ্রি খাওয়াই। লাকি কাস্টমার হিসেবে। আপনি হলেন আমাদের লাকি কাস্টমার!
— আমরা তো দুজন খেলাম! তাহলে একজনের টাকা রাখেন?
— তবুও সমস্যা নাই!
কোনোভাবেই টাকা দেওয়া গেল না। আসার পর থেকে একের পর এক আজব কাণ্ড দেখছি। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে নাইমা বলল— এই বাজারে না কি ভালো মাটির থালা পাওয়া যায়?
— যায়, মাটির থালা দিয়ে তুমি কী করবে?
— মাটির থালায় খেতে না কি অনেক স্বাদ?
— জানি না। আমি কোনোদিন খাইনি।
— তাহলে চলো দুটো মাটির থালা কিনে নিয়ে যাই।
বাজারের ভেতর দিকে যেতে হলো। মাটির থালা কেনার সময়ও একই কাহিনী! ভদ্রলোক আমাদের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছেন মনে হচ্ছে আমরা ডাকাতি করতে এসেছি! আমি জিজ্ঞেস না করে আর পারলাম না— মুরুব্বি, এইভাবে কী দেখেন?
— অ্যাঁ? কিছু না তো!
— দুইটা মাটির থালা দেন তাহলে। তিনি দুটো মাটির থালা দিলেন। আমি নাইমাকে জিজ্ঞেস করলাম— পছন্দ হয়েছে?
— হুম। ঠিক আছে। আরেকটা বড় থালা নাও। মাঝেমধ্যে দুজনে এক থালায় খাব। মজা হবে। আমি লোকটাকে বললাম— আরেকটা বড় থালা দেন। তিনি বড় থালা দিলেন। এই লোক অবশ্য টাকা নেওয়ার সময় কোনো আপত্তি জানায়নি। মাটির থালা হাতে পেয়ে নাইমা তীব্র খুশি। যেন হেঁটে হেঁটেই বাড়ি চলে যাবে! রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলাম। আমার হাতে মাটির থালা দেখে মা বলল— এটা দিয়ে আবার কী করবি?
— নাইমা বলল মাটির থালায় খাবে!
— ওহ, ভালোই হয়েছে।
মুখে বললেন ভালোই হয়েছে কিন্তু চোখ বলে অন্য কথা! নাইমা মেয়েটাকে মা অপছন্দ করা শুরু করল কবে থেকে কে জানে? অথচ মা পছন্দ করেছিল বিধায় বিয়েটা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া কারোরই মত ছিল না। রাতের দিকে টেবিলে খাবার দেওয়া হলো। খাবার দেওয়ার এক পর্যায়ে ছোট বোন কান্না শুরু করে দিল! সে আমার প্লেটেই খাবার দিল নাইমার প্লেটে দিল না। আমি বললাম— কান্না করছিস কেন? নাইমার প্লেটে ভাত দে। সে উত্তরে কিছুই বলল না! রুমে চলে গেল। মা বলল— ওর হঠাৎ কান্নার বাতিক হয়েছে। অকারণেই কান্না করে! তারপর মা নিজের হাতে নাইমার প্লেটে ভাত দিল। প্লেট বলতে মাটির থালায়। দুজনে খেয়ে এসে রুমে ফ্যান ছেড়ে শুয়ে পড়লাম। ছোট বেলার স্মৃতিচারণ করতে লাগলাম আমরা। নানান বিষয়ে কথা হচ্ছে। এরমাঝে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে নাইমা বলল— আমি তোমার জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছি না?
— কী বাজে কথা! তোমার মতো কাউকে পেয়ে আমি সত্যিই অনেক খুশি। তোমার এরকম মনে হচ্ছে কেন?
— বাড়ির সবাই তোমার সাথে কেমন ব্যবহার করে যে!
— এরকম কিছু না বোকা।
— আমি বোকা?
— হুম।
— বোকা ভালো লাগে না?
— কী বাজে কথা! ভালো লাগবে না কেন?
— লাগে?
— বললে তো বিশ্বাস করবে না! কী করলে বিশ্বাস করবে সেটা বলো!
— থাক, কিছু করতে হবে। এমনিতেই অনেক কষ্ট করো।
আর কথা হয়নি। সে পুতুলের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি উঠোনে কয়েকজন মুনশি। হঠাৎ মুনশিদের আগমনের কারণ কী? মা বলল— বাইরে আয়। তোর চাচা তোকে ডাকে। কী নিয়ে যেন কথাবার্তা বলবে। আমি সালাম দিলাম। উনি সালাম নিয়ে বললেন— কাজকর্ম কেমন চলছে?
— জি চাচা। ভালো।
লোকটা পরম আদরে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন— তুমি তো অনেক বড় হয়েছ। তোমাকে একটা কথা বললে বুঝবে।
— কী কথা?
— তোমার ঘরওয়ালি বেঁচে নেই! চারদিন হলো মারা গেছে!
হঠাৎ মৃত্যু বাবা! রাতে ভালো মেয়ে ঘুমাতে গেল। সকালে আর উঠে না! তুমি শুনলে বেশ কষ্ট পেতে তাই জানানো হয়নি! এসেই বা কী করতে? মরা মানুষকে তো আর জীবিত করা যায় না। বাড়ির পেছনেই কবর দেয়া হয়েছে। গিয়ে দেখো। লোকটার কথা শুনে মা মুখ ঢাকলেন। ছোট বোনের কান্নার আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। এরা পাগল হয়ে গেল না কি বুঝতে পারলাম না! নাইমা তো ঘরে! ঘুমাচ্ছে। বললাম— চাচা এটা কী বলেন? নাইমা তো ঘরে ঘুমাচ্ছে!
— ওটা তোমার চোখের ভুল বাবা!
আমি কোনো কথা না বলে আবার রুমে ফিরে আসলাম। এসে নাইমাকে দেখলাম না! আমার সাথেই তো শুয়ে ছিল! গেল কোথায়? কয়েকবার ডাকলাম সাড়াশব্দ পেলাম না। সবার মুখের অবস্থা দেখে বুঝলাম কিছু একটা তো গন্ডগোল আছে! বাড়ির পেছনে চলে গেলাম। বাঁশঝাড় অনেক। দিনদুপুরেও অন্ধকার অন্ধকার লাগে। একটু ভেতরের দিকে গিয়ে দেখি একটা কবর! নতুন কবর! এটা কি নাইমার কবর?
হতে পারে না! আমি বিশ্বাস করি না। আমি চিৎকার দিয়ে ওঠলাম। কেন চিৎকার দিলাম নিজেই বুঝতে পারলাম না! এটা তো নাইমার কবর না! নাইমা এত জলদি মরতে পারে না! পেছনে ফিরে দেখি লোকজন জড়ো হয়েছে। আমি বললাম, কবর খোঁড়েন আবার। নাইমা মারা যায়নি! কেউ কথা শুনছে না! থানায় খবর দিলাম। পুলিশ আসলো। তাঁরা বলছে এমন আচমকা মৃত্যুতে তাঁদের প্রথমেই খবর দেওয়া উচিত ছিল। পরীক্ষা করে দেখা যেত। আমি বললাম— আপনারা কেউ না খোঁড়লে আমি নিজেই খুঁড়ব! পুলিশ পুনরায় খবরটা খুঁড়ল। দেখা গেল নাইমা ঠিকই মারা গেছে! মুখটা ওর একদম সাদা হয়ে গেছে! ওর মুখে হাত রাখতে আমাকে দিলে না কেউ। দূরে দূরে রাখল। থানায় নিয়ে যাওয়া হলো লাশকে। পরদিন পুলিশ জানায় নাইমার মৃত্যু হয়েছে বিষের কারণে! রাতের খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল কেউ!
কে নাইমাকে বিশ খাইয়ে মারবে বুঝতে পারলাম না! পুলিশ জিজ্ঞেস করে জানল ঐদিন রান্না করেছিল ছোট বোন। এবং সে খাবার বাড়ির কেউই খায়নি শুধু নাইমাকে খাইয়েছে! কারণ হলো নাইমার সাথে নাকি ছোট বোনের ঝগড়া বাঁধে! কী বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধে সেটা সে বলছে না। কিন্তু নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে! মুনশি চাচাও বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তাঁকে টাকা দিয়ে সামাল দিয়ে ফেলেছিলেন বাড়ির লোকেরা। উনি তারপর তাড়াতাড়ি জানাজার ব্যবস্থা করেছিলেন! নাইমাকে ছাড়া আমার সাত বছর পূর্ণ হয়েছে পরশু। আমি এখনো মাটির থালায় ভাত খাই। যেখানেই থাকি, নাইমা আমার পাশে আসে। কথা বলে, আমার সাথে খায়। আমি তাঁকে নিয়ে ভালোই আছি। শুধু ধরতে গেলেই নাই হয়ে যায়, এই দুঃখ আর সয় না!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত