এই মাসেই যদি তুমি আমাকে সন্তান হওয়ার সু খবর না দিতে পারো তাহলে আমি সামনের মাসেই আরেকটা বিয়ে করবো।কথাটা মনে রেখো।
-এমন কথা বলবেন না প্লিজ।আমি আপনার পায়ে পড়ছি।আম্মু আব্বু সহ্য করতে পারবেনা।খুব বিশ্বাস করেন তারা আপনাকে।
-অনেক হয়েছে আর না।আর আমার পক্ষে একটা বন্ধ্যা নারী নিয়ে সংসার করা সম্ভব না।
-দেখুন,বাচ্চা তো আমি চাইলেই বানাতে পারবোনা।আমার তো এখানে কোন হাত নেই।
আল্লাহ্ না চাইলে কোথা থেকে আমি আপনাকে সন্তান এনে দিবো? একটু দয়া করুন।একটু দয়া করুন। আল্লাহ্ নারাজ হবেন তার কাজে নাখোশ হলে। তিনিই তো বলেছেন,আমি যাকে ইচ্ছে ছেলে সন্তান দিবো,যাকে ইচ্ছে মেয়ে সন্তান দিবো,আর যাকে ইচ্ছে সন্তান দিবোনা। এখানে আমার দোষ কোথায় বলুন? কেউ কি চায় নিঃসন্তান থাকতে? কেউ কি চায় মা ডাক না শুনতে?
-আমি অতশত বুঝিনা,এই মাসে যদি কোন সুখবর না পাই,তাহলে আমি ২য় বিয়ে করবো এটাই জানি।তোমার ইচ্ছে হলে তুমি এ বাসায় থেকো,নইলে চলে যেও। এই বলে আরাফ বাড়ীর বাইরে চলে যায়। এদিকে আয়রা কাঁদতে থাকে। আর বলতে থাকে, কি এমন পাপ করেছি আমি আল্লাহ্। যার ফলে তুমি আমাকে এত বড় শাস্তি দিচ্ছো? কেন আমার সংসার টা তুমি ভেঙে দিচ্ছো? আর যদি ভেঙেই দিবে তাহলে কেন তুমি তার সাথে আমার জীবন গড়লে? আমিতো তাকে ভালবেসে বিয়ে করিনি। তবুও তার সংসার করে যাচ্ছি সমাজ আর বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে।চেষ্টা করেছি তার পরিবারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে।
তাহলে কেন প্রথমেই তুমি তার থেকে আমাকে দূর করে দিলে না? আয়রা আর আরাফের বিয়েটা দুই পরিবারের পছন্দে হয়েছে। আয়রা ওর বাবা মায়ের পছন্দেই আরাফকে বিয়ে করে। বিয়ের ৪ বছর শেষ কিন্তু আয়রার কোল জুড়ে কোন সন্তান আসেনি। আরাফ তাই এবার আয়রাকে বলে দিয়েছে,এ মাসে যদি আয়রা প্রেগন্যান্ট না হয় তাহলে আরাফ আরেকটা বিয়ে করবে। আয়রার হাতে এই একটা মাসই সময়। কিন্তু এই মাসেও আয়রা আরাফকে কোন সুখবর দিতে পারেনা। তাই আরাফের কথা মত আরাফ দু দিন পরই এক মেয়েকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসে। আর আয়রার স্থান হয় ওর বাবার বাড়ী। আয়রা বাবার বাড়ী চলে যায়। ২২ বছর পর হঠাৎ আরাফের সাথে আয়রার দেখা।
-কেমন আছো?
-জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্।
-আপনি?
-এইতো চলছে।
-আপনার স্ত্রী সন্তান কই?তাদের যে দেখছিনা।বিয়ে খেতে একাই এসেছেন?
-কেউ নেই আমার।আমি একা।
-একা কেন?
-মেরিনার সাথে ৬ বছর সংসার করার পর একদিন ও আমার টাকা পয়সা,সোনা দানা নিয়ে এক জনের হাত ধরে পালিয়ে যায়।
তারপর এক বছর একাই থাকি।এরপর আবার বিয়ের পিড়িতে বসি,নিসঃঙ্গতা কাটাতে। কেয়ার সাথে ১০ বছরের সংসার আমার। হুট করে চলে গেলো আমায় ফেলে। আমি নাকি ওকে কোন সুখই দিতে পারিনা,না পারি দিতে বিবাহিত জীবনের সুখ,না পেরেছি দিতে সন্তানের সুখ। তাই চলে গেলো। এইতো এখন একাই আছি।একাই চলছি।
-সন্তান হয়নি আপনাদের?
-নাহ্!
-কেন?সমস্যা তো আমার ছিলো।তাইতো আপনি কোন যাচাই বাছাই না করেই বিয়ে করে নিয়েছিলেন।
তাহলে কেন আমার পর দুইটা বিয়ে করার পরও আপনি সন্তানের বাবা ডাক শুনতে পারলেন না?
-আর লজ্জা দিও না আমায় প্লিজ আয়রা।আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। আর তখনই আয়রাকে আয়রার বর আদিত্য ডাকতে আসে।
-আয়রা,তুমি এখানে?এখনি আমাদের আদিরার বিয়ে পড়ানো হবে। চলো চলো। ওহ্ আরাফ ভাই আপনিও এখানে, পরিচয় করিয়ে দেই, ইনি হচ্ছেন আমার অফিসের কলিগ। আর ইনি হচ্ছেন আমার ওইয়াইফ আদিরার আম্মু।
-হ্যাঁ আমরা কথা বলেছি।
-আচ্ছা আমি যাই,ভালো থাকবেন।
আদিত্য,যে নাকি আয়রার ভালবাসা ছিলো। কিন্তু পরিবারের কারণে ভালবাসাটাকে কুরবানি দিতে হয়েছিলো আয়রাকে। কিন্তু আয়রার দুঃসময়ে সেই আদিত্যই আবার আয়রার হাত ধরে। আজ আদিত্য আর আয়রার মেয়ে আদিরার বিয়ে। জীবন বড়ই অদ্ভুত।কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় বলা যায়না। আজ আদিত্য আর আয়রা ওর মেয়েকে হাসি মুখে বিয়ে দিচ্ছে। আর ওদিকে আরাফ বুক ভরে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প