গুডবয়

গুডবয়
ঘড়িতে রাত ২ টা বেজে ১৫ মিনিট সাফওয়ান ডায়েরিটা হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বয়স তার ৪৫ছুঁই ছুঁই। চুলে পাক ধরেছে। চোখেও আগের তুলনায় কম দেখে। মনে পরে গেলো তার অনেক বছর আগের স্মৃতি।
এইচএসসি শেষ হয়েছিলো কেবল।পরের দিন ই তুমি আমাদের বাসায় এলে।দীর্ঘ ৮ বছর পর আমাদের দেখা কত ছোট ছিলে তুমি। ৮ বছর পর ও খুব একটা বড় হওনি।ক্লাস ৯ এ পড়লেও স্বভাবপুরো বাচ্চাদের মতোই ছিলো।
তোমার এই বাচ্চামিতেই যে কবে আমি প্রেমে পড়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি। তোমার হাসিতে হাজারবার মরতে রাজি ছিলাম। কোনো মেয়েকে পাত্তা না দেয়া আমি তোমাতে পাগল ছিলাম। বেহায়া মনকে অনেক বুঝিয়েছিলাম এটা ঠিক না। বাট মন কি আর বুঝে। তুমি যে আমার কাজিন ছিলে।কিভাবে আমাদের মধ্যে কিছু হতো বলো।ভালোবাসাটা নিজের মধ্যেই রেখে দিয়েছিলাম। জানো যেদিন বুঝতে পেরেছিলাম তুমিও আমাকে ভালোবাস কতটা খুশি যে হয়েছিলাম সেদিন।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো এত খুশি হয়ে লাভ কি তোমাকে তো পাওয়া হবে না আমার।দিনকে দিন ভালোবাসা শুধু বেড়েই গেলো।ভয় হতো তোমাকে হাড়ানোর। কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারিনি যে কতটা ভালোবাসি।
তোমাকে যখন ইগনোর করতাম তোমার সাথে যখন খারাপ বিহেব করতাম খুব বেশি কষ্ট হতো আমার। কিন্তু আমি যে নিরুপায় ছিলাম।আমাদের যে দূর্বল হলে চলবে না। সামনে যে অনেক কঠিন কিছু অপেক্ষা করছিলো।এর মদ্ধে পার হয়ে গেলো ৮ টি বছর। তোমার বাসায় বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো।তুমি যখন আমাকে বলতে আমার ভেতর টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেতো।কিভাবে যেতে দেই তোমাকে অন্য কারো কাছে। ভেবেছিলাম স্ট্যাবলিশ হয়ে তোমার বাসায় প্রস্তাব দিবো।হয়তোবা তারা রাজি হবে।কিন্তু তারা যে আমাকে প্রতি পদে পদে বুঝিয়েছে আমার সাথে তোমার বিয়েটা হবেনা।তারা তোমার জন্য আরও ভালো আর ও স্ট্যবলিশ ছেলে চায়।আমার আত্মসম্মানবোদ বরারবর ই বেশি।তাইতো চাইতে পারিনি তোমাকে।
আমাদের জন্য ফ্যমিলিতে কোনো প্রবলেম হোক তা তো চাইনি।আর তুমিওতো তাতে রাজি হয়েছিলে।তোমার অনেক ইচ্ছে ছিলো আমার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনার কিন্তু কেনো জানি আমি তা বলতে পারিনি।বলবো কি করে তাহলে দেখা যেতো তুমি পাগলামি শুরু করে দিতে।আমার পাগলি যে তুমি। তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।ঐদিন আমার কোনো অনুভূতি কাজ করেনি।এটা তো আমার অজানা ছিলো না। তুমি যে অন্য কারো ঘরের বউ হবে।বিশ্বাস করো তোমার বিয়ের দিন যত কাছে আসছিলো বুকে চিন চিন ব্যাথাটা ততটাই বাড়ছিলো।
তোমার শেষ আব্দারটা আমাকে জ্যান্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছিলো। কবুল বলার সময় আমি যাতে তোমার সামনে থাকি এ কেমন আব্দার করেছিলে তুমি? একটুও কি আমার কথা ভাবোনি? নাকি এতদিনের ইগ্নোরের শোধ নিলে।
বিয়ের দিন তোমাকে আমার লাল পড়ির মতো লাগছিলো।যেমনটা আমি চেয়েছিলাম।আমার ছোট্ট বউ।তিনবার কবুল পড়ে তুমি অন্য কারো হয়ে গেলে সারা জীবনের জন্য আমার চোখের সামনে। কিছু করতে পারিনি সেদিন। বাসায় এসে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। আব্বু আম্মু মনে হয় বুঝতে পেরেছিলো।বুঝে আর কি ই বা হবে তখন।
তোমার বিয়ের পর পর ই চলে গেলাম কানাডায়। আগেই এপ্লাই করেছিলাম।কারণ তোমার বিয়ের পর দেশে থাকা যে সম্ভব নয়।
১ বছর কেটে যায় কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখিনি। হঠাৎ একদিন মন টা যেনো কেমন করছিলো মনে হলো খুব খারাপ কিছু হবে।তার ঠিক ৩ দিন পরই খবর আসে তোমার নাকি ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। এটা শুনার পর নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছে করছিলো।যেই ভালোর জন্য তোমাকে অন্য কারো কাছে বিয়ে দিলো তাহলে আজ তুমি ভালো নেই কেনো? তোমাকে অনেক কল করেছিলাম কিন্তু তুমি ধরোনি। তার ঠিক ৬ মাস পর তুমি আমাকে নিজ থেকে কল দিয়ে যখন বললে তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাও মনে হচ্ছিলো সব ছেড়ে ছুড়ে ঐদিন ই তোমার কাছে ছুটে আসি।কিন্তু আসতে আসতে ২দিন দেড়ি হয়ে গেলো। প্রায় দেড় বছর পর তোমাকে দেখে আমি চমকে যাই। কি হাল করেছিলে নিজের।চোখের নিচে কালি। সবসময় হাসতে থাকা মেয়েটা আজ হাসতে ভুলে গিয়েছিলে।সবার কাছে শুনেছিলা তোমাকে এক জানোয়ারের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়ছিলো কত অত্যাচার ই না করেছিলো তোমাকে।কিভাবে পারলো প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তোমার সাথে এমন করতে তারা।
তোমার লেভার পেইন শুরু হয়ে যায়।আমি ভেবেছিলাম বাচ্চাটা হয়ে গেলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। আমি তুমি আমাদের বাচ্চা একসাথে থাকবো।একদম আমার নিজের করে রাখবো।কিন্তু সবার কপালে কি সুখ সয় নাকি। আমি তোমাকে আবার হাড়িয়ে ফেললাম। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে তুমি যখন আমাকে হাত ধরে বলেছিলে তোমার কিছু হয়ে গেলে যাতে আমি তোমার বাচ্চাটার খেয়াল রাখি।তখনও বুঝিনি আমি যে আমার সাথে কি হতে চলেছে। তোমার খুব সুন্দর মেয়ে হয়েছেচ।একদম তোমার মতো দেখতে। বাচ্চাটাকে প্রথমে আমার কোলেই দিয়েছিলো।
আজ ২০ বছর পর দেখেছো আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গিয়েছে।তুমিতো ওকে আমার কাছে দিয়ে ঐ আকাশের তাড়া হয়ে গিয়েছো। নিয়ামাকে নিয়েই আমার জীবন।ও শুধু আমার মেয়ে। তুমি চলে যাওয়ার পর নিয়ামা আর তোমার লিখা ডায়েরিটা নিয়ে আমি কানাডায় চলে আসি। তোমার ফ্যামিলি একটা কথাও বলতে পারেনি।তাদের মধ্যে ছিলো এক অপরাধবোধ।সেদিন শুধু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়েছিলাম তাদের দেখে। তোমার পর আর কাউকে ভালোই লাগেনি আমার।তাইতো আর বিয়েও করিনি।আমি আর আমার মেয়ে খুব সুখে আছি আমাদের এই ছোট্ট জীবনে। আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে অনেক বেশি ভালোবাসি প্রিয় অনেক বেশি।আফসোস হয় কেন গুড বয় হতে গিয়েছিলাম সেদিন।তা না হলে আজ তুমি আমার থাকতে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত