মেহেদির সাথে পার্কে দেখা করতে এসেছি। এসেই দেখি মেহেদি রীতিমত অপেক্ষা করছে। আমি পেছন থেকে গিয়ে ওর চোখ ধরলাম। ও আমার হাত সরিয়ে বললো, একদিন তো একটু আগে আসতে পারো। ভাবলাম কি আর হলো কি? কোথায় ভাবলাম, ও আমার হাতটা ধরে একটু রোমান্টিক আলাপ করবে তা না। যাই হোক, শোন রাস্তায় জ্যাম ছিল। লেটে আসা নিয়ে আমাকে তুমি আর কিছু বলবে না। আমি রেগে গেছি দেখি ও বললো, “আচ্ছা বলবো না”।অনেক সময় ধরেই দেখতে পাচ্ছি একটা ছোকড়া মানে একটা ছেলে ফলো করছে। মনে মনে বললাম, মেহেদি যদি বুজতে পারে না তোর বারটা বাজাবে। মুখের কথা মুখেই রইলো, মেহেদি দেখি ছেলেটাকে টানতে টানতে আমার সামনে নিয়ে হাজির।
-কি মেয়ে দেখো নাই কোনদিন? এই নাও কাছ থেকে দেখো। আমি অবাক হয়ে মেহেদির দিকে তাকিয়ে আছি। না জানি আর কি কি হয়। ও আবার বলতে শুরু করলো-
-তখন থেকে দেখছি, আমার গার্লফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে আছো? সমস্যটা কি? ছেলেটা বলতে শুরু করলো-
-ওটা আপনার না আমার গার্লফ্রেন্ড। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। এই ছেলে বলে কি? ভালো করে চিনিও না। আর বলে কি না আমি তার গার্লফ্রেন্ড।
-ও আমার গার্লফ্রেন্ড। আমার সাথে আছে দেখতে পাচ্ছিস না।
-আমাকে ছ্যাকা দিয়েই আপনার সাথে আছে। আমাদের মধ্যে একটু ভুলবোঝা বুঝি হয়েছে। যার কারনে ও রাগ করে আপনার সাথে রিলেশন করেছে। ছেলেটার কথা শুনে আবেগে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। মেহেদির দিকে তাকিয়ে সমানে না না বলে মাথা দুলাচ্ছি।
-কি প্রমান আছে ও তোর গার্লফ্রেন্ড?
-ওনার নাম সাদিয়া। উনার গল্পের ভিষন ভক্ত আমি। এবার মেহেদি কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম-
-বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি আমি একে চিনি না।কেনদিন দেখিও নি। আমার সম্পর্কে কিভাবে জানলো জানি না। মেহেদি আবার ছেলেটার দিকে তাকালো-
-কি বিশ্বাস করবে? আপনি আমার সাথে প্রেম করেননি? রাতের পর রাত মেসেজ দেননি। আমার এমবি কিনতে যত টাকা খরচ হয়েছে সব টাকা ফেরত দিন। আপনি তো আমাকে ভালোবাসিও বলেছেন। এমনকি এটাও বলেছেন, এবার থেকে মেহেদিকে নিয়ে না আমার নাম দিয়ে গল্প লিখবেন।
আমি মেহেদির দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বললাম- সত্যি বলছি আমি ওকে চিনি না। আর তোমাকে ছাড়া আমার গল্পতো হয়ই না। কল্পনা ও করি না তোমাকে ছাড়া গল্প লিখব। মেহেদির হাত থেকে ছেলেটাকে টান দিয়ে নিজের হাতে কাছে নিয়ে এসে উরুম ধুরুম মারা শুরু করলাম আর বলতে লাগলাম- ওই ছোকড়া আমার সংসারে আগুন কেন লাগাতে এসেছিস রে তুই। আমি তোর সাথে কবে প্রেম করছি। আমি কি তোকে বলেছিলাম এমবি কিনতে।এখন টাকা ফেরত নিবি।দেবো না তোর টাকা কি করবি কর।
মেহেদির দিকে চোখ পরতেই দেখি ও হা করে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম-
-ঠিক করেনি বলো।ওর টাকা দেব না। ব্যাটা মিথ্যাবাদী।
মেহেদি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, আচ্ছা তোমরা ভালো থেকে। সরি ভাই। আমার একটু বুঝতে ভুল হয়ছিল।এখন সব পরিষ্কার। ভালো থেকো। আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম- ভালো থাকবে মানে। আমি সত্যি বলছি আমি ছেলেটাকে চিনি না। তুমি বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি। মেহেদি চলে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতেও পারছি না। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। আশে পাশে লাঠি খুঁজতে লাগলাম। একটা পেয়েও গেলাম।লাঠি উঁচু করতেই দেখি ছেলেটা দৌঁড়াচ্ছে।
-এই দাঁড়া বলছি। প্রেম করার শখ না তোর আয় এবার।পালাচ্ছিস কেন? বাসায় ফিরে কয়েক বার মেহেদিকে কল দিলাম।ফোন ধরে একই কথা, “তুমি এমন করতে পারলে”। আমি যতই বলি আমি সত্যি বলছি ও কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। রাগে দুঃখে ছয়-সাতটা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে দিলাম।
ফোনে একটা মেসেজের শব্দ হলো।ভাবলাম হয়তো মেহেদি দিয়েছে ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু চেক করতেই দেখি আননোন নাম্বার।মেসেজটা এমন ছিল- “সরি আপু। অনেক কষ্টে আপনার নাম্বারটা যোগার করেছি। সকালের দুর্ঘটনার জন্য দুঃখিত। আসলে আপনি সেজে একটা ছেলে আমার সাথে কথা বলতো।ফোনে কথা বলা হয়নি বলে বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম ওটা আপনি। আপনার সমস্ত গল্প কপি করে ও আমাকে দিত। আমিতো ভেবেছিলাম আমি আপনার সাথেই প্রেম করছি।সব কিছুই ওই ফেক আইডির কাজ।কিছু সময় আগে ছেলেটা সব দোষ স্বিকার করে নিয়েছে। আমাকে ক্ষমা করবেন। মনে মনে গালি দিলাম ব্যাটা আমি মরে যাচ্ছি আর তুই এখন সরি বলছিস। এত গুলো ঘুমের ঔষুধ।কি হবে এখন আমার। চিৎকার দিয়ে বাইরে চলে গেলাম-“আম্মুগো আমি ঘুমের ঔষুধ খাইছি আমাকে বাঁচাও”। কিন্তু আম্মুর মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্ত দেখলাম না।তার একমাত্র মেয়ে মারা যাচ্ছে আর সে চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে।
-আম্মু তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না।আমি সত্যি ঘুমের ওষুধ খাইছি।
-কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করিস না তো।যা ভাগ।
-বিশ্বাস করো।সত্যি বলছি। তারপরও কোন সাড়া না পেয়ে নিজেই ডক্তরের কাছে গেলাম।
-ডাক্তার সাহেব আমি ঘুমের ঔষুধ খাইছি আমাকে বাঁচান।বলেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরে দেখি পাশে মেহেদি।
-একটু থেকে একটু হলেই ঘুমের ঔষুধ খাও কেন?
-তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করলে না।
-মেহেদি লাজুক স্বরে বললো, আমিতো দেখছিলাম তুমি কি করো।ওই ছেলেটার সাথে আমি কথা বলতাম।তুমি সেজে।
-কি?
-আসলে দেখছিলাম আমাকে কতটা ভালোবাসো।
-দেখা হয়ছে।
-হুম।
ডক্টর এসে বললো, আপনি বাসায় যেতে পারেন।আর শুনুন, আপনি ভিটামিন জাতীয় খাবার একটু কম খাবেন।অনেকগুলো ভিটামিন ট্যাবলেট খেয়েছেনতো।
আমি মেহেদির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।মনে মনে ভাবছি তাহলে আমি ঘুমের ঔষুধ খাইনি ভিটামিন ট্যাবলেট খেয়েছি।
-এভাবে তাকানোর কি আছে।এটা আমার কাজ না।তোমার আম্মুর কাজ।
-আবেগে কাঁন্নাজরিত কন্ঠে বললাম,শেষমেশ আম্মু ও……
গল্পের বিষয়:
গল্প