ঘরের মানুষ

ঘরের মানুষ
দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুন নেভানোর জন্য রাকিব প্রায় আধা বোতল পানি ঢেলে দিল। এতে আগুন নিভলো না। লাভের মধ্যে যা হলো- আগুনের তীব্রতা আরও বেড়ে গেল। এই আগুন পানিতে নিভবে না। আগুন নেভাতে একটা আস্ত হামবার্গার কিংবা এক প্লেট নান্নার বিরিয়ানি লাগবে।
ঘটনা হচ্ছে- আগুন জ্বলছে রাকিবের পেটের ভেতর। সে সকাল থেকে কিছুই খায়নি। আজ শুক্রবার বলে সকাল সকাল টিউশনিতে বের হয়েছে। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়, আজ স্টুডেন্টের মাও কিছু খেতে দেয়নি। রাকিব ব্যাপারটা আগেও লক্ষ্য করেছে। যেদিন সে নাস্তা করে বের হবে সেদিন সব স্টুডেন্টের মা’রা নাস্তা খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। আর সে যদি তাড়াহুড়ো করে নাস্তা না করেই বের হয়ে পড়ে সেদিন কেউই এই প্রসঙ্গটা আনবে না। অবশ্য ইদানীং কোন গার্ডিয়ানই আগের মতো নাস্তা খেতে দেয় না।
রাকিব নাস্তা করে এসেছে কি-না এটাও জিজ্ঞেস করে না। গত শুক্রবার স্টুডেন্টের মা ভুল করে একবার জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল। জরিমানা হিসেবে তাদের ৪ টা পরোটা আর একটা ডিম গায়েব। রাকিব বুঝতে পারল, সকাল বেলা না খেয়ে বের হওয়াটা বোকামি হয়েছে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে আশেপাশের সবকিছু খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। সুকান্ত ভট্টাচার্য চাঁদকে রুটির সাথে তুলনা করেছিলেন। এখন আকাশে চাঁদ নেই। মাথার উপর মস্ত বড় একটা সূর্য জ্বলজ্বল করছে। রাকিবের মনে হলো, কেউ নীল রঙের কড়াইয়ে একটা ডিম পোচ করছে। সেই ডিমের চারদিকে তেল ছিটকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে একটু ভালো করে সূর্যের দিকে তাকালেই ডিম ভাজার ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।
রাকিব মেসে ফিরেই আরেক ঢোক পানি খেলো। ঘরে পাউরুটি আছে। ডিম আছে। এটা একটা স্বস্তির কারণ। এখন শুধু একটা ডিম ভেজে নিলেই হলো। ডিম ভাজতে গিয়ে দেখা গেল তেল নেই। রাকিব তেল কিনতে বের হলো এমন সময় দ্বিতীয় টিউশন থেকে ফোন এলো। ছাত্রীর মা রাগী গলায় বলল, “ পরশু নুপুরের ক্লাস টেস্ট। অথচ তুমি নিয়মিত আসছো না। এটা কেমন কথা? ” রাকিব নিয়মিতই পড়াচ্ছিল। কিন্তু আন্টির সাথে তর্কে যাওয়া যাবে না। যার হাত থেকে মাস শেষে ৫ হাজার টাকা বের হয়, তার সব কথাই ঠিক। সে যদি বলে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে, রাকিব হাসতে হাসতে বলবে, “ ঠিক বলেছেন আন্টি।
আমিও সবাইকে বলি। অথচ এই কথাটাই কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। ছোট কাল থেকে দেখতেছি সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে।” রাকিব তেলের বোতল দোকানে রেখেই টিউশনে চলে গেল। টিউশন শেষ করে ফিরে এসে দেখল-দোকান অফ বন্ধ। আজ জুমার দিন বলে বোধহয় একটু দ্রুতই দোকান বন্ধ করে ফেলেছে। একটা মানুষ নামাজ পড়তে গেছে তার উপর রাগ করা যায় না। রাকিব ভেবেছিল ডিম সেদ্ধ করেই খেয়ে নেবে। সাথে দুই এক কামড় রুটি। কিন্তু বাসায় ফিরে ওর আর খেতে ইচ্ছে করল না। খিদে মরে গেছে। ক্ষুধাকে শক্তিতে পরিণত করে ও নামাজে চলে গেল।
নামাজ শেষ করে এসে দেখলো বুয়া আজ খিচুড়ি রান্না করেছে। সাথে মুরগির মাংস। এতক্ষণ খিদেটা টের পাওয়া যাচ্ছিল না। খিচুড়ির ঘ্রাণ নাকে ধাক্কা দিতেই রাকিবের মনে পড়ে গেল সে সকাল থেকে কিছুই খায়নি। খুশিতে ও হাত না ধুয়েই খেতে বসে যায়। লেবু কচলে রস ছিটিয়ে দেয় প্লেটের অর্ধেকটায়। সাথে শশা আর টমেটোর মিক্স সালাদ। প্লেটের দিকে তাকিয়ে রাকিবের মনে হয়, জীবনটা আসলে মন্দ না। জুমার দিনে নামাজের পর এমন খিচুড়ি খাওয়ার জন্যই বেঁচে থাকা যায় হাজার বছর। প্রথম লোকমা মুখে দেবার আগেই ফোন বেজে উঠল। রাহেলা খালার স্বামী মানে বড় খালুর ফোন। রাকিব লোকমা নামিয়ে রাখলো। খালু সাহেব বললেন, “ রাকিব, কোথায় তুমি?” “ আমি বাসায় খালুজান।”
“ বাসায় কেন থাকবে তুমি? আজ মিমকে দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ। অথচ তোমার কোন খোঁজ নেই। ঘরের মানুষ হয়ে এরকম পালিয়ে বেড়ালে তো হবে না। তোমাকে পনেরো মিনিট সময় দেয়া হলো। যেই অবস্থায় আছো চলে আসো।” রাকিবের ইচ্ছা হলো বলে- আজ যে মিমকে দেখতে আসবে আমাকে আগে বলেননি। এখন হুট করে ডাকার মানে কি? কিন্তু এটা বলা সম্ভব না। রাকিব বলল, “ পনেরো মিনিট লাগবে না। আমি দশ মিনিটেই চলে আসছি। শুধু রিকশা পেতে যতক্ষণ লাগে।”
রাকিব অন্য একটা প্লেট দিয়ে খিচুড়ি ঢেকে রাখলো। দুপুরে ঐ বাসায় খেতে হবে জানলে আজকের মিলটা বন্ধ রাখা যেত। লেবুর রস আর সালাদে মাখানো খিচুড়ি নিশ্চয়ই রাত পর্যন্ত থাকবে না। তবু কী আর করা। খিচুড়ির মায়া ত্যাগ করেই রাকিব রওনা হলো। রিকশায় উঠেই রাকিব আবিস্কার করল খিচুড়ির জন্য এখন আর অতটা খারাপ লাগছে না। কারণ খালার বাসায় নিশ্চয়ই অনেক আয়োজন করে রান্না করা হয়েছে। ছেলে পক্ষ দেখতে আসলে বিয়ের থেকেও বেশি আইটেম রান্না করা হয়। কাজেই খিচুড়ি না খেয়ে এক হিসেবে খারাপ হয়নি।
পোলাও আর রোস্টের কল্পনা করতে করতে রাকিব খালার বাসায় উপস্থিত হলো। রাকিবের ধারণা সত্যি। গেটের বাইরে থেকেই রান্নার ঘ্রাণ নাকে আসছে। ঘ্রাণ শুনেই রাকিব ঢোক গিলল। এটা তার পুরোনো সমস্যা। ভালো খাবারের ঘ্রাণ পেলেই তার জ্বিবে জল চলে আসে। তখন ঢোক গিলতে হয় বার বার। এটা সবারই কমবেশি হয়। রাকিবের ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি লেভেলে পৌছে গেছে। দরজা খুললেন খালু সাহেব। মনে হলো রাকিবকে দেখে তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। হাসিমুখে বললেন, “ এত দেরি করলে কেন? যাও দ্রুত খেয়ে নাও।
পাত্র পক্ষ এখনো আসেনি। তবে যে কোন মুহুর্তে চলে আসবে।” রাকিব হাসিমুখে বলল, ” জী খালুজান।” কথা শেষ হওয়া মাত্রই কলিংবেল বেজে উঠল। পাত্র পক্ষ চলে এসেছে। কনে বাড়ির সবাই খুশি। একমাত্র রাকিবের চোখে জল চলে এলো। মেহমানদের রেখে সে নিশ্চয়ই আগে খেয়ে ফেলতে পারে না। রাকিবের অনুমান ঠিক হল। খালু সাহেব রাকিবকে বললেন, “ বাবা, বাসায় ছেলে মানুষ তো কেউ নেই। ঘরের মানুষ হিসেবে তুমিই আছো। এক কাজ করো- তুই মেহমানদের খাবার সার্ভ করে দাও। পারবে না?” রাকিব বলল, “ কোন সমস্যা নেই। আমি দিচ্ছি , আপনি চিন্তা করবেন না।” তিনি বললেন, “ তোমার মুখ এত শুকনা লাগছে কেন। বেশি ক্ষুধা লাগলে আগে খেয়ে নাও।”
এই জাতীয় কথা শোনা কিছুটা অপমানজনক। রাকিব হাসতে হাসতে বলল, “ নাহ, খালুজান। আমার পেট ভরা। সকালে ডাবল নাশতা খেলাম। কোন সমস্যা নেই।” রাকিব হাসিমুখে মেহমানদের খাওয়াতে লাগলো। নিজ হাতে সবাইকে পোলাও, কাবাব, গরুর মাংস এগিয়ে দিতে হচ্ছে। এদিকে পেটের ভেতর আগুন আবারও জ্বলতে শুরু করেছে। বার বার ইচ্ছে করছে একটুকরো মাংস মুখে পুরে দিতে। সেটি সম্ভব না। রাকিব সবার প্লেটে রোস্ট তুলে দিচ্ছিল। এমন সময় বরের মামা উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের বাবাকে আলাদা ডেকে নিয়ে বললেন, “ ভাই কিছু মনে করবেন না। এই ছেলে আপনাদের কী হয়? খাবার দেয়ার সময় সে বার বার ঢোক গিলছে। রোস্টের থেকে চোখ সরাচ্ছেই না। ঘটনা কী?”
খালু সাহেব কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। তিনি ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিলেন। হাসতে হাসতে বললেন, “ আরে তেমন কিছু না। ওর নাম রাকিব। মিমের খালাতো ভাই। আমি বলেছিলাম আপনাদের ঠিক মতো দেখাশোনা করতে। এজন্য সময় নিয়ে আস্তে ধীরে সবাই দেখে শুনে খাওয়াচ্ছে। আর ও বোধহয় আজ রোজা রেখেছে। নফল রোজা। জানেন তো রোজা রাখলে বার বার গলা শুকিয়ে আসে।” এই কথায় বরের মামা বেশ লজ্জিত হলেন। একটা ভদ্র ছেলেকে নিয়ে তিনি এসব কী ভাবছেন! রোজা রেখেছে এমন একজন খাবার এগিয়ে দিচ্ছে এটাও একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার।
খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর শুরু হলো আলোচনা পর্ব। সবচেয়ে বিরক্তিকর, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মিমকে তারা পছন্দ করেছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্য জায়গায়। ছেলের ইচ্ছা বিয়ের পর অ্যামেরিকা সেটেল হবে। এদিকে মিমের বাবা তার মেয়েকে ঢাকার বাইরেই যেতে দিবেন না। বিদেশ তো দূরের ব্যাপার। এটা নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা। এরকম ঝগড়ার মুহুর্তে রাকিব খালা মনির কাছে গিয়ে বলল, “ খালা, আমি কি এখন খাবো?” জাহানারা শীতল চোখে তাকিয়ে রইলেন। এমন পরিস্থিতিতে কেউ খাবার চাইতে পারে? তিনি চাপা স্বরে বললেন, “ এই অবস্থায় খাওয়াটাই বড় হলো। তুই কি বাইরের কেউ? তুই না আমাদের ঘরের মানুষ! ” রাকিব কিছু বলল না। আসলেই তো, ঘরের মানুষ হয়ে সে এই মুহুর্তে খেতে চায় কীভাবে। রাকিব চুপিচুপি চলে গেল মিমের রুমে। মিম বলল, “রাকিব ভাইয়া, তোমার মুখটা এত শুকনা লাগছে কেন?” রাকিব বলল, “ তুই সত্যি করে একটা কথা বলতো আমাকে।”
“ কী কথা?”
“ ক্লাশ টেনে পড়ার সময় তোকে যে আমি প্রপোজ করেছিলাম, এটা তুই খালা-খালুকে বলে দিয়েছিস?”
“ নাহ তো ভাইয়া। বলিনি। হঠাৎ এতদিন পর এইকথা কেন?”
“ তোর বাপ-মা আমাকে খেতে দিচ্ছে না কেন? আমি তো আসতেই চাইনি। তোর বাপ ফোন দেয়ায় এলাম। এখন শাস্তি পাচ্ছি। বিকেল ৫ টা বাজে, এখনো খেতেই পেলাম না। বলে আমি নাকি ঘরের মানুষ। ঘরের মানুষের কি পেট থাকে না। ঘরের মানুষ কি হাওয়া খেয়ে বাঁচবে?” কথা শেষ না হতেই মিম হাসতে শুরু করল। মেহমানরা হাসি শুনলে সমস্যা হতে পারে। সে মুখে হাত দিয়ে মুখ হাসি থামানোর চেষ্টা করছে। হাসির বেগ কমে এলে বলল, “ খাবার দিতে হবে কেন? তুমি কিচেনে গিয়ে খাবার বেড়ে নাও।” “ কিচেনে গিয়েছিলাম। খালামণির ঝাড়ি খেয়ে ফেরত এসেছি।” এ কথায় মিম আবারও হাসতে শুরু করল।
রাকিব বলল, “ হাসি অফ কর। থাপ্পর খাবি নইলে। পারলে কিছু খেতে দে। আমি যদি না খেয়ে মারা যাই, তুই শান্তিতে বিয়েটাও করতে পারবি না।”
“ ফ্রিজে মিষ্টি আছে। মিষ্টি খাবে?”
“ যা পাব তাই খাবো। তুই বের করে দে?”
“ তোমার কি মাথা খারাপ নাকি।
আমার এখন এই রুম থেকে বের হওয়া নিষেধ। তুমি ফ্রিজ খুলে খাও। বাবা এখন ড্রয়িং রুমে সমস্যা নেই।” ফ্রিজ খোলার সাথে সাথেই খালু সাহেব হাজির হলো। তিনি হন্তদন্ত হয়ে বললেন, “ বাহ, রাকিব তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। ভালোই হয়েছে মিষ্টি বের করেছো। বরের চাচা তখন আসেনি। এই মাত্র এলেন উনি। সাথে আরও দুজন এসেছে। দাও, মিষ্টি গুলো আমিই নিয়ে যাই।” বলেই তিনি দুই প্লেট মিষ্টি নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে ছুটলেন। রাকিব মনে মনে কী বলল সেটা লেখার অযোগ্য। সে মিষ্টির মা-বাপ নিয়ে কিছু একটা বলেছে।
বরের চাচা আসাতে ঝগড়া নতুন দিকে মোড় নিল। তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেন। তার কথা শুনে বুঝার উপায় রইলো না তিনি আসলে কি বলতে চাচ্ছেন। একবার বললেন দেশ হিসেবে অ্যামেরিকা প্রথম শ্রেনীর। সেই থেকে তিনি চলে গেলেন ইরাক হামলা প্রসঙ্গে। নিরীহ মানুষ কীভাবে মারা গেছে এটার বলার সময় তিনি টিস্যু বের করলেন। আরও দুই একজন তার দেখাদেখি টিস্যু বক্সের দিকে হাত বাড়ালো। দেয়ালের সাথে ঢেলান দিয়ে সেখানে রাকিবও দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখ দিয়েও পানি পরছে। সবাই ভাবল ছেলেটার মনটা বড়ই নরম। বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রাকিব উদ্বাস্তের মতো এ ঘর থেকে ও ঘরে হাটাহাটি করছিল। হঠাৎ রাকিবের সাথে বরের মামার দেখা হয়ে গেল। তিনি হাসিমুখে বললেন, “ তা বাবা, তুমি কি মাঝেমাঝেই রোজা রাখো? নফল রোজা তো আজকাল কেউ রাখে না।” রাকিব তার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন সে একজন পাগল। অথবা রাকিব নিজেই পাগল। তিনি দ্রুত
রাকিবের সামনে থেকে চলে গেলেন।
রাত আটটার দিকে রাকিব সাহস করে আরও একবার রান্না ঘরে উঁকি দিল। ঠিক সেই মুহুর্তেই দেখল- কাজের মেয়ের সাথে রাগ করে খালামণি একটা প্লেট মেঝেতে ছুড়ে ফেলেছে। এই দৃশ্য দেখে রাকিব কিছু না বলেই ফিরে এলো।  রাত এগারোটা। রাকিব রাস্তায় নেমে এসেছে। মিমের বিয়ে আজই হয়ে গেছে। বরের চাচা কাজি ডেকে এনেছেন। কাজির সাথে অতিরিক্ত কয়েকজন এসেছে বিধায় খাবার শর্ট পরে গেছে। ঘরের মানুষ কেউ খেতে পারেনি। খালামণি বলেছিল একটু বসতে। তিনি রান্না চড়িয়ে দিয়েছেন। রাকিব আর সাহস করেনি। কোন রকমে দরজা খুলে পালিয়ে এসেছে। বাসার নিচের হোটেলে খাবার পাওয়া গেল না। ছুটির দিন কাস্টমার কম বিধায় এরা আগেই হোটেল বন্ধ করে দিয়েছে। রাকিব ক্লান্ত পায়ে কিছুদূর এগিয়ে বিসমিল্লাহ হোটেলে গিয়ে ঢুকল। হোটেলের ম্যানেজার তার পূর্ব পরিচিত। রাকিব ঢুকতেই সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, “ রাকিব ভাই, বসেন। অনেক দিন দেখি না আপনারে।” রাকিব বলল, “ পরে দেইখেন আগে খাবার দেন।”
“ এত রাইতে আসলেন। তেমন কিছুই তো নাই।”
“ যা আছে তাই দেন ভাই। বেশি কথা বইলেন না। আমার মাথা ঠিক নাই।”
“ খিচুড়ি শেষ হয়ে গেছে ভাই। আছে শুধু সাদা ভাত। তরকারি সব শেষ। তেহারি যেইটা আছে আপনারে দেওন যাইবো না। বাসি হইয়া গেছে।”
“ বাসিটাই দেন ভাই। প্লিজ। রিকুয়েষ্ট। খানা দিতে বলেন।”
ম্যানেজার হাসতে হাসতে বলল, “ আপনে আমার গালে দুইডা চড় দেন। তাও ঐ তেহারি আপনেরে আমি খাইতে দিমু না। সবাইরে তো সব খানা দিতে পারি না। আপনি তো বাইরের কেউ না। আপনি হইলেন গিয়া নিজেদের লোক।”
“তাইলে শুধা ভাতই দেন।” “ আপনে একটু বসেন। সকালের জন্য আলুভাজি বসামু একটু পরেই। আলু নাই দোকানে। আলু আনতে পাঠাইছি। বেশিক্ষণ লাগবো না। বসেন একটু গল্প গুজব করি। আপনেরে হুদা ভাত ক্যাম্নে দেই কন। আপনি হইলেন গিয়া ঘরের মানুষ।” রাকিব করুণ দৃষ্টিতে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে রাগ করতে পারল না। শত হলেও সে ঘরের মানুষ।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত