বাসায় এভাবে বসে না থেকে গাছ থেকে একটা কাঁঠাল পেরে নিয়ে আয় যা।’ আব্বার হুকুম পেয়ে ঘুম থেকে এক লাফে উঠলাম। গাছে চড়া আমার সখের মধ্যে একটি। গাছ তলায় গিয়ে দেখি রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে। তারপাশেই মোখলেস। ওর হাতে রশি, আর ব্যাগ। লুঙ্গি কাচা দিয়ে গাছে ওঠার জন্য রেডি। আমি বললাম….
–দে ব্যাগ, রশি দে গাছে আমি উঠবো।
-এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, গাছে আমি উঠব।
–এটা তোদের গাছ? মাতব্বরি না করে ব্যাগ, রশি দে।
-না আমি উঠমু।
–আচ্ছা লটারি দে..!
দুইটা কাগজে দুজনের নাম লিখলাম। লটারি দিলাম, কাগজ উঠালো রোদেলা। মোখলেসের নাম উঠলো। আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম….
–দেখ তোর তো গার্লফ্রেন্ড আছে, যদি পরে যাস সমস্যা।
-আমি পরে যাই আর নাহয় গাছে বান্দরের মতন ঝুলে বসে থাকি আমার ব্যাপার আপনার কি? আমি ডিগবাজি দিয়ে মোখলেসকে ঘুষি মারলাম। তারপর নিজেই গাছে ওঠার জন্য রেডি হলাম। মোখলেস সাথেসাথে বলল….
–ভাই গাছে উইঠেননা।
-কেন? আমাদের গাছ আমি উঠব।
–আমি রাতে স্বপ্ন দেখছি গাছ থেকে পরে আপনার পাছার হাড্ডি ভেঙে গেছে।
-তাই তোর কি! যা হবার হবে।
–দুনিয়ার এত মাইনষের উপর ঠাডা পরে, আপনের উপর কেন পরেনা?
-এটাই সায়েন্স।
মোখলেস অসহায় ভঙ্গিতে তাকালো। আমি লুঙ্গি কাচা দিয়ে গাছে উঠলাম। টিপে টিপে দেখছি কোন কাঁঠাল পাকা৷ রাস্তার পাশেই গাছ হওয়ায় সুবিধা আছে। উপর থেকে সুন্দরী মেয়ে দেখা যায়। পাশের বাসার দিকে তাকিয়ে দেখি ক্রাশ চেয়ার পেতে বসে আছে। অবশেষে একটা ছোট পাকা কাঁঠাল পেলাম। ডালের দুই পাশে পা ঝুলিয়ে কাঠাল খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি মোখলেস আর রোদেলা ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে। আমি কাঁঠালের রুয়া মুখে দিয়ে বললাম….
–কিরে রুয়া খাবি? ইন্দোনেশিয়ার রুয়া।
-ভাই বাটপারি করেন কেন?
–তোর কি!
-আপনার পাতলা পায়খানা হইবে, টয়লেটে যাওয়ার আগে আপনি অজ্ঞান হয়ে পরে থাকবেন।
–ওকা বাই! আমি রুয়া খেয়ে বিচি গুলো নিচে ফেলছি। মোখলেসের মাথায় বিচি ফেলতে ভালোই লাগছে। ও নিচ থেকে বলছে….
–ভাই একটা রুয়া দেন।
-হা কর।
মোখলেস হা করলো। আমি মুখে রুয়া না দিয়ে বিচি দিয়ে ঢিল দিলাম। বেচারার মুখে গিয়ে পরলো বিচি৷ ও ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দিলো। এবার রুয়া দিয়ে ঢিল দিলাম। রুয়া ওর মাথায় গিয়ে লাগলো। মোখলেস বিরক্ত হয়ে সরে গেলো। বাকি ছিল রোদেলা, রোদেলাকেও রুয়া দিয়ে ঢিল দিলাম। বেচারী বকতে বকতে বাসার ভিতরে গেলো। নিচে এক মেয়েকে দেখলাম কোথায় যেন যাচ্ছে। অমনি রুয়া ছুড়ে মারলাম। মেয়েটা ভয় পেয়ে লাফ দিলো। আমি হাসতেই মেয়েটা উপরে তাকিয়ে বলল….
–এইযে মিঃ সমস্যা কি?
-এই ভরদুপুরে কোথায় চুরি করতে যাচ্ছ?
–ফাজলামো করছেন?
-না টিপতেছি।
–হোয়াট?
-কাঁঠাল টিপতেছি, দেখছি পেকেছে কিনা।
–রাবিশ।
-গাছে উঠবে? আসো গাছে ওঠো তোমায় ডিগবাজি শিখাবো।
–আপনি একটা ইয়ে..!
আমি কোন কথা না বলে বিচি দিয়ে ঢিল দিলাম। মেয়েটার মাথায় লাগতেই বকা দিলো। এবার আবার ঢিল দিলাম। ভয়ে মেয়েটা তাড়াতাড়ি চলে গেলো। পাশের বাসায় তাকিয়ে দেখলাম ক্রাশ আগের মতই বসে আছে। আমি কাঠালের বিচি দিয়ে ঢিল দিতেই ক্রাশ আশেপাশে তাকালো। আমি শিস বাজিয়ে বললাম….
-মারিয়া এখানে আমি?
সে শুনলনা। আবার আশেপাশে তাকালো। উঠে রাস্তার দিকে আসলো। এক্কেবারে গাছের নিচে ক্রাশ। একবার মন চাইলো। পুরো কাঁঠাল দিয়েই ঢিল মারি। নাহ পরে অক্কা পেয়ে উপরে চলে যাবে। আমি আবার ডাকলাম সে উপরে তাকালো। বিরক্ত হয়ে বলল….
–আপনার কি খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই?
-আছে, বিচি ঢেলানো কাজ।
–মানে?
-এইযে কাঁঠালের বিচি গুলো তোমাদের টিনের চালে ঢিল মারব। বলেই আমি টিনের চালে ঢিল মারলাম। ক্রাশ চোখ পাকিয়ে বলল….
–দেখুন আপনি কিন্তু রীতিমত বাড়াবাড়ি করছেন?
-রুয়া খাবে? রুয়া খেলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়…!
–আপনি খান রুয়া, ইডিয়ট।
-আচ্ছা তোমাদের বিচি আছে?
–হোয়াট?
-না মানে বিচি না থাকলে আমি কাঁঠালের বিচি দিই রান্না করে খেয়ো।
–আপনি গায়ে পরে ঝগড়া করছেন কেন বলুনতো?
-ভালো লাগছে। তোমার বান্ধবী রুবিনার খবর কি? ওকে ফোন করে বলোতো বিচি লাগবে কিনা।
–আপনার বিচি আপনি খান, ফাজিল একটা৷
-সেমটু ক্রাশ।
–টুটটুট..! (গালি দিছে)
আমি উপর থেকে রুয়া দিয়ে দিলাম ঢিল। ক্রাশ সরে দাড়াতেই আবার বিচি দিয়ে ঢিল দিলাম। মাথায় ঢিল লাগতেই ক্রাশ আউচচ বলে চিৎকার দিলো। ওরে ন্যাকামি আবার বলে আউচ! খাচ্চুন্নি মেয়ে! তারপর দু’টো কাঁঠাল পেরে গাছ থেকে নামলাম। এর-ই মধ্যে ক্রাশ এসে বাসায় এসে বিচার দিছে। রোদেলা কাঁদছে। ওর গালে রুশা ঘষে দিলাম। মোখলেসের দিকে বিচি ঢিল ছুড়তেই বেচারা টুনটুনি চেপে দৌড়ে রুমে গেলো। ইসস ঢিল মিস্টেক! আব্বা হুংকার দিলেন, দিনদিন নাকি আমি রটে যাচ্ছি। ভাব মেরে কাঁঠাল নিয়ে রুমে এসে রুয়া খাচ্ছি, আজ পুরো কাঁঠাল টা খেয়ে ফেলব। যেসব মেয়েদেট বিচি লাগবে ইনবক্সে ইমু নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করো৷ আমি তোমাদের সুপারম্যান।
গল্পের বিষয়:
গল্প